সম্পত্তি দখলে নিতে ভারসাম্যহীন গৃহবধূকে নির্মম নির্যাতন by ইমরান আলী
সম্পদ দখল করার জন্য দীর্ঘ ৫ বছর ধরে রাজধানীর মগবাজারে ভারসাম্যহীন এক গৃহবধূকে নির্মম ও অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার মধ্যবয়সী ওই গৃহবধূর নাম শহিদা মঞ্জুরি লাকি।
দখলবাজরা তাদের স্বার্থ হাসিলের কারণে গৃহবধূ লাকির কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে সন্তানদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। বিষয়টি রমনা থানা পুলিশ অনেক আগে থেকে অবগত হলেও রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে।
লাকি বাবার একমাত্র কন্যা সন্তান। সম্পদ হাতিয়ে নিতে পরিবারের একটি অংশ বার বার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। বর্তমানে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
লাকির পরিচয় : এক সময়ের ডাকসাইটে অ্যাডভোকেট মগবাজারের মমতাজ উদ্দিনের কন্যা শাহিদা মঞ্জুরি লাকি। অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিনরা ৫ ভাই ও এক বোন। ভাইরা হলেন- আলিমুদ্দিন, মোসলেহ উদ্দিন, হালিমুদ্দিন, আজিমুদ্দিন এবং বোন রাবেয়া বেগম। সবাই বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন।
লাকিরা পাঁচ ভাইবোন। ৪ ভাই সবাই মারা যাওয়ার কারণে লাকি হয়ে যান পিতার একমাত্র কন্যা। বাবার পথ ধরে তারও ছিল অ্যাডভোকেট হওয়ার স্বপ্ন। এ তিনি এলএল বি পাশও করেছিলেন।
১৯৯৮ সালে সাইপ্রাস প্রবাসী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় লাকির। অয়ন ও চয়ন নামে দুই সন্তান হয়। দুই সন্তান হওয়ার পরেই মানসিক সমস্যা দেখা দেয় লাকির। যে কারণে অ্যাডভোকেট হওয়ার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায় লাকির।
মানসিক সমস্যার কারণে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর দু’সন্তান নিয়ে লাকি তাদের মগবাজারের বাসায় বাবা-মা’র সঙ্গে থাকতেন। ওই বাসায় জেঠাতো বোন অর্থাৎ মৃত মোসলেহ উদ্দিনের কন্যা মরিয়মও থাকতো।
২০০৭ সালে লাকির বাবা ও ২০০৮ সালে মা মারা যান। মারা যাওয়ার পূর্বে তারা লাকিকে দেখাশুনার জন্য মরিয়ম বেগমের উপর দায়িত্ব দিয়ে যান।
যেভাবে লাকির উপর নির্যাতন : লাকির বাবা ও মা মারা যাওয়ার পর তার এই বিশাল সম্পত্তিতে চোখ পড়ে মৃত মমতাজ উদ্দিনের বোন রাবেয়া বেগমের কন্যা রাজিয়া বেগমের। লাকি যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন তাই তার মগবাজারের বাড়িসহ নরসিংদী ও গাজিপুরের কাপাশিয়ার কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি বাগিয়ে নিতে উঠে পড়ে লাগেন রাজিয়া বেগম।
হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ওয়ারিশ দাবি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আদালত লাকি ও তার দুই সন্তানকে দেখাশুনার জন্য রাবেয়া বেগমকে দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই লাকিকে তার দু সন্তান থেকে আলাদা করে নরসিংদীর বাবুরহাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুই সন্তানকে আলাদা রেখে লাকির উপর চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। মানসিক ভারসম্যহীনতার সুযোগ নিয়ে তার হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। নেশা জাতীয় ইঞ্জেকশন প্যাথেডিন দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হতো।
এরই মাঝে রাবেয়া বেগমের মৃত্যু হয়। এদিকে লাকির উপর নির্যাতনের বিষয়টি প্রতিবেশিরা টের পেলে তাকে নরসিংদী থেকে গাজীপুরে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখানেও চলে এই পাশবিক নির্যাতন। একপর গাজীপুর থেকে লাকিকে মগবাজারের ওই বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
মগবাজারে আসার পর লাকি ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি ৪ তালা থেকে ৩য় তলায় মরিয়মের বাসায় চলে যায়। লাকি চলে যাওয়ার ঘটনায় রাজিয়া বেগম লাকিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই বাসায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালায়। থানায় নির্যাতনের কথা জানানো হলে লাকিকে মরিয়মের বাসায় থাকার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়। এ ব্যাপারে মরিয়ম বেগম রমনা থানায় একটি জিডি করেন।
এরপর রাজিয়া আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। বারবার ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ওই বাড়িতে হামলা করে লাকিকে হত্যার চেষ্টা করে। শুধুমাত্র লাকির পিতার বিশাল সম্পত্তি নিজ দখল নিতে তিনি এই অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গত সোমবারও লাকিকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
লাকিকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে সন্ত্রাসীরা ওই বাড়িতে থাকা মরিয়ম বেগম ও তার সন্তান মোকছেদাকে আহত করে। বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে। সোমবারের ওই ঘটনার পর থানায় মরিয়ম বেগম মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে আপোষ মীমাংসার নামে কালক্ষেপণ করছে।
অয়ন ও চয়নের মানবেতর জীবন যাপন : বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, অয়ন বর্তমানে তার পিতা আমিনুল ইসলামের নিকট আছেন। অন্যদিকে চয়ন আছে রাজধানীর গাউছিয়া এলাকায় এক এতিম খানায়। তারা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও রাজিয়ার কূটকৌশলে এখন পর্যন্ত তারা মায়ের দেখা পায়নি। চয়নকে দেখাশুনাকারী গাউছিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার এক শিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘চয়ন ভালো আছে। তবে মাঝে মাঝে সে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে। আমরা ইচ্ছা করলেও দেখা করাতে পারিনা। কারণ দেখা করাতে নিষেধ রয়েছে।’’
পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা : লাকির উপর একের পর এক হামলা ও বাড়ি দখলের চেষ্টার অভিযোগে লাকির চাচাতো বোন মরিয়ম বেগম বার বার থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছেন। কিন্তু কোনো অভিযোগ গ্রহণ করেনি থানা পুলিশ। ওসি শাহ আলাম বলেন, ‘‘আমরা উভয়পক্ষ নিয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছি।’’
লাকির চাচাতো বোন মরিয়ম বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমরা লাকিকে রক্ষা করতে চাই। কিন্তু আমাদের পরিবারের একটি অংশ তাকে হত্যা করে সম্পত্তি দখল করতে চায়।’’ তিনি সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের নিকট এ ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন।
রাজিয়া বেগম অবশ্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমরা লাকিকে রক্ষা করতেই বার বার সেখানে গিয়েছি।’’ লাকির ওপর হামলার কথা অস্বীকার করেন তিনি। লাকির দু’সন্তান ভালো আছে বলে তিনি জানান। তবে তারা কোথায় আছে তা জানাতে অস্বীকার করেন তিনি।
লাকির পরিচয় : এক সময়ের ডাকসাইটে অ্যাডভোকেট মগবাজারের মমতাজ উদ্দিনের কন্যা শাহিদা মঞ্জুরি লাকি। অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিনরা ৫ ভাই ও এক বোন। ভাইরা হলেন- আলিমুদ্দিন, মোসলেহ উদ্দিন, হালিমুদ্দিন, আজিমুদ্দিন এবং বোন রাবেয়া বেগম। সবাই বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন।
লাকিরা পাঁচ ভাইবোন। ৪ ভাই সবাই মারা যাওয়ার কারণে লাকি হয়ে যান পিতার একমাত্র কন্যা। বাবার পথ ধরে তারও ছিল অ্যাডভোকেট হওয়ার স্বপ্ন। এ তিনি এলএল বি পাশও করেছিলেন।
১৯৯৮ সালে সাইপ্রাস প্রবাসী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় লাকির। অয়ন ও চয়ন নামে দুই সন্তান হয়। দুই সন্তান হওয়ার পরেই মানসিক সমস্যা দেখা দেয় লাকির। যে কারণে অ্যাডভোকেট হওয়ার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায় লাকির।
মানসিক সমস্যার কারণে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর দু’সন্তান নিয়ে লাকি তাদের মগবাজারের বাসায় বাবা-মা’র সঙ্গে থাকতেন। ওই বাসায় জেঠাতো বোন অর্থাৎ মৃত মোসলেহ উদ্দিনের কন্যা মরিয়মও থাকতো।
২০০৭ সালে লাকির বাবা ও ২০০৮ সালে মা মারা যান। মারা যাওয়ার পূর্বে তারা লাকিকে দেখাশুনার জন্য মরিয়ম বেগমের উপর দায়িত্ব দিয়ে যান।
যেভাবে লাকির উপর নির্যাতন : লাকির বাবা ও মা মারা যাওয়ার পর তার এই বিশাল সম্পত্তিতে চোখ পড়ে মৃত মমতাজ উদ্দিনের বোন রাবেয়া বেগমের কন্যা রাজিয়া বেগমের। লাকি যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন তাই তার মগবাজারের বাড়িসহ নরসিংদী ও গাজিপুরের কাপাশিয়ার কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি বাগিয়ে নিতে উঠে পড়ে লাগেন রাজিয়া বেগম।
হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ওয়ারিশ দাবি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আদালত লাকি ও তার দুই সন্তানকে দেখাশুনার জন্য রাবেয়া বেগমকে দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই লাকিকে তার দু সন্তান থেকে আলাদা করে নরসিংদীর বাবুরহাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুই সন্তানকে আলাদা রেখে লাকির উপর চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। মানসিক ভারসম্যহীনতার সুযোগ নিয়ে তার হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। নেশা জাতীয় ইঞ্জেকশন প্যাথেডিন দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হতো।
এরই মাঝে রাবেয়া বেগমের মৃত্যু হয়। এদিকে লাকির উপর নির্যাতনের বিষয়টি প্রতিবেশিরা টের পেলে তাকে নরসিংদী থেকে গাজীপুরে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখানেও চলে এই পাশবিক নির্যাতন। একপর গাজীপুর থেকে লাকিকে মগবাজারের ওই বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
মগবাজারে আসার পর লাকি ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি ৪ তালা থেকে ৩য় তলায় মরিয়মের বাসায় চলে যায়। লাকি চলে যাওয়ার ঘটনায় রাজিয়া বেগম লাকিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই বাসায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালায়। থানায় নির্যাতনের কথা জানানো হলে লাকিকে মরিয়মের বাসায় থাকার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়। এ ব্যাপারে মরিয়ম বেগম রমনা থানায় একটি জিডি করেন।
এরপর রাজিয়া আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। বারবার ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ওই বাড়িতে হামলা করে লাকিকে হত্যার চেষ্টা করে। শুধুমাত্র লাকির পিতার বিশাল সম্পত্তি নিজ দখল নিতে তিনি এই অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গত সোমবারও লাকিকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
লাকিকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে সন্ত্রাসীরা ওই বাড়িতে থাকা মরিয়ম বেগম ও তার সন্তান মোকছেদাকে আহত করে। বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে। সোমবারের ওই ঘটনার পর থানায় মরিয়ম বেগম মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে আপোষ মীমাংসার নামে কালক্ষেপণ করছে।
অয়ন ও চয়নের মানবেতর জীবন যাপন : বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, অয়ন বর্তমানে তার পিতা আমিনুল ইসলামের নিকট আছেন। অন্যদিকে চয়ন আছে রাজধানীর গাউছিয়া এলাকায় এক এতিম খানায়। তারা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও রাজিয়ার কূটকৌশলে এখন পর্যন্ত তারা মায়ের দেখা পায়নি। চয়নকে দেখাশুনাকারী গাউছিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার এক শিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘চয়ন ভালো আছে। তবে মাঝে মাঝে সে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে। আমরা ইচ্ছা করলেও দেখা করাতে পারিনা। কারণ দেখা করাতে নিষেধ রয়েছে।’’
পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা : লাকির উপর একের পর এক হামলা ও বাড়ি দখলের চেষ্টার অভিযোগে লাকির চাচাতো বোন মরিয়ম বেগম বার বার থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছেন। কিন্তু কোনো অভিযোগ গ্রহণ করেনি থানা পুলিশ। ওসি শাহ আলাম বলেন, ‘‘আমরা উভয়পক্ষ নিয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছি।’’
লাকির চাচাতো বোন মরিয়ম বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমরা লাকিকে রক্ষা করতে চাই। কিন্তু আমাদের পরিবারের একটি অংশ তাকে হত্যা করে সম্পত্তি দখল করতে চায়।’’ তিনি সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের নিকট এ ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন।
রাজিয়া বেগম অবশ্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমরা লাকিকে রক্ষা করতেই বার বার সেখানে গিয়েছি।’’ লাকির ওপর হামলার কথা অস্বীকার করেন তিনি। লাকির দু’সন্তান ভালো আছে বলে তিনি জানান। তবে তারা কোথায় আছে তা জানাতে অস্বীকার করেন তিনি।
No comments