গণ্ডারের চামড়ার মানুষ by মোফাজ্জল করিম
আমাদের বাক্যবাগীশ মাননীয় 'উজিরে খামাখা' সাবেক রেলমন্ত্রী বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সপ্তাহ দুয়েক আগে 'স্লিপ' পজিশনে একটা লোপ্পা ক্যাচ তুললেন। কিন্তু কী আশ্চর্য, বাংলাদেশের ষোল কোটি ফিল্ডারের কেউই সেটা লুফে নিল না। এমনকি হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পের মালিকরা, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মকর্তাবৃন্দ- কেউই না।
তিনি বাংলাদেশে এমন একটি দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য চামড়ার অপরিমেয় ও সহজলভ্য মজুদের কথা বললেন, যা রপ্তানি করে রাতারাতি আমরা লালে লাল হয়ে যেতে পারি। কিন্তু আত্মভোলা ও বেখেয়াল বাঙালি যে নিজের ভালো বোঝে না আরেকবার তার প্রমাণ দিয়ে আজ দুই সপ্তাহ ধরে গোটা জাতি নিশ্চুপ। প্রধান বিরোধী দলও যেন ভুলে গেছে 'ক্যাচেস উইন ম্যাচেস'- এই পুরনো সত্যটি।
গত ৭ অক্টোবর প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় 'সুরঞ্জিতের ছেলের ব্যবসা রেলের টাকায়' শিরোনামে যে বোমা-ফাটানো খবরটি বেরিয়েছে, তার কিয়দংশ উদ্ধার করি : '...সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গতকাল তাঁর নির্বাচনী এলাকা দিরাই উপজেলায় এক জনসভায় বলেছেন, তিনি নিষ্পাপ ও নিষ্কলঙ্ক।...কোথাকার কোন আজম। কস্মিনকালেও আমি তাকে দেখিনি। চিনিও না। এখন তাকে দিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এত দিন সে কোথায় ছিল।' (সুরঞ্জিত সেন মহাশয়ের 'এত দিন সে কোথায় ছিল' কথাটি শুনেই আমার আরেক সেনের কথা মনে পড়ল, তিনি জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন। সেই নূপুরনিক্বণের মতো শব্দগুলো : '...এত দিন কোথায় ছিলেন?/পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।' এ ধরনের একটা সিচুয়েশনের টোপ দেখিয়ে ড্রাইভার আজমকে দুদক তাদের তদন্ত কমিটির সামনে হাজির করার চেষ্টা করতে পারেন !)
কিন্তু আসল কথাটি মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন তার পরেই। 'মিডিয়া আমার পেছনে ঘুরছে। তারা আগেও অনেক কিছু লিখেছে। কিন্তু রাজনীতিবিদদের চামড়া গণ্ডারের মতো। তাঁদের অনেক কিছু সইতে হয়।' এটা পড়ে এবার আমার মুখ দিয়ে বের হলো : সত্যি! জানতাম না তো। ছোটবেলায় এক মেষচর্মপরিহিত নেকড়ের গল্প পড়েছিলাম যে এইরূপ ছদ্মবেশ ধরে মেষের পালের ভেতর ঢুকে পড়ে ওই নিরীহ প্রাণীগুলোকে সংহার করত। কিন্তু এই গণ্ডারের চামড়াসংক্রান্ত আত্মস্বীকৃতি এটা কিসের ইঙ্গিত দেয়? রীতিমতো ভাবিয়ে তুলল বিষয়টি। গতকাল আমার এক নিষ্পাপ-নির্বিরোধ ঈশ্বরের মেষ বন্ধুকে ব্যাপারটি বলতেই সে বলল, তা কথাটি তো মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন- দুই সপ্তাহ আগে, কই আজতক তো তাঁর কোনো সগোত্র রাজনীতিবিদ কোনো প্রতিক্রিয়া জাহির করলেন না। তুমি এখন এই বাসি কথা কচলিয়ে চোলাই বানাচ্ছ কেন? জবাবে আমি বললাম, তাদের রি-অ্যাকশন টাইম তো প্রলম্বিত হওয়ারই কথা- বলেই সেই শিকারির গল্পটা আমি বললাম তাকে।
আফ্রিকার গহিন জঙ্গলে এক শিকারি পথ ভুল করে সোজা গিয়ে পড়েছে এক গণ্ডারের সামনে। সে জানে, গণ্ডারকে গুলি করেও কোনো লাভ নেই, বরং গুলি রিবাউন্ড করে এসে তার নিজের গায়েই লাগতে পারে। তখন সে বন্দুক ফেলে দিয়ে গণ্ডারের সামনে হাতজোড় করে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিল : 'হুজুর, আমাকে বাঁচান। আমি আর কোনো দিন আপনার রাজ্যে আসব না। আমাকে মেরে ফেললে আমার নতুন বিয়ে করা বৌটা অকালে বিধবা হয়ে যাবে। হুজুর আপনার পায়ে পড়ি। এই নাকে খত দিচ্ছি, আর কোনো দিন এ রকম বেআদবি করব না।'
এদিকে হয়েছে কি, ওই গণ্ডার তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে বিষণ্নতা রোগে ভুগছিল। ছয় মাস ধরে সে ঠিকমতো খায় না, নায় না, হাসি-ঠাট্টা-তামাশা একদম বন্ধ। এই লোকটাকে মেরে ফেললে তার কচি বৌটা বিধবা হয়ে যাবে শুনে তার মায়া হলো। অবশ্য নাকের ওপর খৰধারী গণ্ডার সাহেব লোকটার নাকখত দেওয়ার কথা শুনে বিরক্ত হলো মনে মনে। সে ভাবল, ব্যাটা গাধার নাকই নেই আর বলে কি না নাকখত দেবে। সে শিকারিকে বলল, দেখো মিয়া, ছয় মাস ধরে আমার জীবন থেকে আনন্দ-হাসি-গান উধাও হয়ে গেছে। আমি কত দিন প্রাণখুলে একটু হাসি না। আমার হাসি আসে না। তুমি যদি আমাকে একটু হাসাতে পার, তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেব। শুনেই শিকারি সাহেবের কলজেতে পানি এলো। সে গণ্ডারের কাছে গিয়ে তার পেটে, বগলে, ঘাড়ে বেদম কাতুকুতু দিতে শুরু করল। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। গণ্ডারের গোমড়া মুখ আরো গোমড়া হয়ে গেল। তখন শিকারি বলল, স্যার, আমি খুব ভালো হাসির গল্প বলতে পারি। শুনলে হাসতে হাসতে আপনার পেটে খিল ধরে যাবে। হুকুম করেন তো শোনাই দু-চারটা। 'ঠিক আছে, শোনাও,' গণ্ডার বলল। আরম্ভ হলো গল্প বলা। গোপাল ভাঁড় থেকে নাসিরুদ্দিন হোজা, আইরিশ-স্কটিশ থেকে বেলারুশ-রুশ- কিছু বাদ নেই; কিন্তু কোনো লাভ হলো না। গণ্ডার মুখটা সুকুমার রায়ের রামগরুড়ের ছানার মতো করে দাঁড়িয়ে থাকল। শিকারি বুঝল, সব শেষ। সে আবার চিৎকার দিয়ে মরাকান্না জুড়ে দিল : ও বৌ, বৌ গো, তুমি কোথায়। এ জীবনে আর দেখতে পাব না তোমাকে। গণ্ডারের মনটা আবার ভিজে গেল। সে বলল, যা ব্যাটা- তোকে এবার ছেড়ে দিলাম। তুই ফিরে যা তোর বৌয়ের কাছে। কিন্তু জীবনে আর এই পথ মাড়াবি না। শিকারি জান নিয়ে, বন্দুক নিয়ে ভাগল।
গ্রহের ফেরে রাস্তা ভুল করে ওই শিকারি এক মাস পরে আবার পড়ে গেল সেই গণ্ডারের সামনে। কিন্তু এবার সে তাজ্জব হয়ে দেখে গোমড়ামুখো গণ্ডার একা একা শুধু অট্টহাসি হাসছে, আর হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে মাটিতে। শিকারিকে দেখেই গণ্ডার একটুখানি স্বাভাবিক হয়ে বলল, আরে মিয়া, কোথায় ছিলে তুমি গত দু-তিন দিন? তোমাকে কত খুঁজছি আমি। কী সব দারুণ মজার গল্প শুনিয়ে গিয়েছিলে তুমি। আর এমন সব জায়গায় কাতুকুতু দিয়েছ, হাসতে হাসতে আমার জান যাচ্ছে।
শিকারি ভয়ে ভয়ে বলল, কিন্তু গল্প তো বলেছি এক মাস আগে। এখন হাসছ যে? 'কী যে বলো। আমার চামড়া দিয়ে ওই সব গল্পের রস ঢুকতে সময় লাগে না?' গণ্ডারের জবাব।
রাজনীতিবিদদের চামড়ার খবর সুরঞ্জিত সাহেবের বদান্যতায় এত দিনে জানা গেল। আমরা আশা করব, গত সাড়ে তিন বছর যেসব অকাম-কুকাম ঘটেছে, দেশে তার করুণ রস, বীভৎস রস একটু একটু করে হলেও চুইয়ে চুইয়ে এত দিনে কর্তৃপক্ষের মননে-মগজে প্রবেশ করতে পারছে। আর মাননীয় মন্ত্রী তাঁর নিজের এবং সগোত্রদের চামড়া সম্বন্ধে যে সার্টিফিকেটই দেন না কেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই না দেশের মানুষ এত কষ্ট করে ভোট দিয়ে নিশ্চয়ই একটা গণ্ডারকে ক্ষমতায় বসায়নি। তারা কোনো গণ্ডার মার্কা বাক্সেও ভোট দেয়নি।
আচ্ছা, রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে এ রকম ঢালাওভাবে কথাটি বলা কি ঠিক হয়েছে মাননীয় মন্ত্রীর? তিনি নিজের চামড়া সম্পর্কে ১০০ বার যা খুশি বলতে পারেন। সেই চামড়া সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কে বেশি ওয়াকিবহাল হবেন। আইন বিশেষজ্ঞ মাননীয় মন্ত্রী ভালো করেই জানেন, আইনের চোখে নিজের সম্পর্কে তাঁর জবানি শুধু 'এডমিসিবলই' নয়, প্রাইমারি এভিডেন্সও বটে। কিন্তু সব রাজনীতিবিদেরই কি চামড়া গণ্ডারের চামড়ার মতো মোটা, নিরেট, দুর্ভেদ্য? বাইরের জগতের কোনো কিছুই কি তাদের অন্তর্লোকে প্রবেশাধিকার পায় না? মানুষের দুঃখ-দারিদ্র্য, জরা-মৃত্যু, ব্যথা-বেদনা- কোনো কিছুই কি স্পর্শ করে না তাদের? গণ্ডারের স্ত্রীবিয়োগ-ব্যথার কথা শুধু গল্পেই শোনা যেতে পারে, বাস্তবে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসা, হাসি-কান্না, সমবেদনা-সহানুভূতি- এসব শুধু গবেষণার বিষয় হতে পারে। মানুষের মধ্যেও কি তাহলে এসব মানবিক অনুভূতি হ্রাস পেতে পেতে গবেষণার বিষয় হয়ে যাচ্ছে? সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মহাশয়ের ৫০ বছরের রাজনীতি কি তাঁকে সেই পর্যায়ে নিয়ে গেছে? যে নির্বাচনী এলাকায় তিনি তাঁর এবং অন্য সব রাজনীতিবিদের চামড়া গণ্ডারের চামড়া উল্লেখ করে বক্তৃতা দিয়ে এসেছেন, এটা তো সেই এলাকাবাসীর জন্য একটা বড় দুঃসংবাদ। তারা যদি বলে, আমরা নিরন্তর আমাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনায় দোলায়িত রক্ত-মাংসের একজন মানুষকে রাজনীতিবিদ হিসেবে, আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে পেতে চাই, আমরা গণ্ডার-চর্মাবৃত কোনো 'রোবট' চাই না, তাহলে কী খুব ভুল বলবে তারা? রাজনীতিবিদদের চামড়া গণ্ডারের মতো...কথাটা তো আমার মনে হয় অত্যন্ত নিষ্ঠুর শোনায়। এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় না, আপনারা সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত পুত্র শোকে যতই কাতর হোন না কেন, দ্রব্যমূল্যের জাঁতাকলে হোন না কেন, যতই নিষ্পেষিত, শেয়ারবাজারে সর্বস্ব খুইয়ে গলায় দড়ি দিন কিংবা হলমার্ক-ডেসটিনি এই জাতির জালিয়াতির যত বড় হলমার্কই হোক আর নিয়ামক হোক- জাতির ডেসটিনির, আমরা কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেঁধেছি কুলো। আমাদের গায়ের ওপর সাঁটা লৌহবর্ম ভেদ করে কোনো কিছুই আমাদের মর্মমূলে প্রবেশ করতে পারবে না।
অথচ এই রাজনীতিবিদরাই নিজেদের প্রয়োজনে মানুষের পায়ে পড়তেও রাজি। ভোটের সময় তো আছেই, এমনকি মিটিংয়ে লোক নিয়ে যেতেও কত তোষামোদ : লক্ষ্মী ভাইটি, তোমরা না গেলে নেতার কাছে মান-ইজ্জত থাকবে না আমার। ওই সব ঠেকার কালে রাস্তাঘাট বানিয়ে দেওয়া, স্কুল-কলেজে দালান দেওয়া, পোলা-মাইয়ার লেখাপড়া-বিয়েশাদি, অসুখ-বিসুখের চিকিৎসা প্রভৃতির কত ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি। এমনকি আসমানের চান্দ চাইলে তা-ও কবুল। তারপর? কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরালে পাজি। 'স্যার এখন ব্যস্ত, পরে আইয়ো', এসব শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। স্যার তো আর তখন স্যার নয়, অমাবস্যার চাঁদ। যে চামড়াটি ভোটের আগে ছিল নরম কাদামাটির বানানো, এখন ওটা গণ্ডারের। এখন সংবেদনশীলতার সংটুকুই কেবল বাকি।
কিন্তু লোকে তো আপনাদের গণ্ডার হিসেবে দেখতে চায় না, তারা মানুষ হিসেবেই দেখতে চায়। আর এই গণ্ডারই বা কেমন গণ্ডার। পাঁচ বছর পর এর চামড়া আবার বিড়ালের পাতলা চামড়া হয়ে যায়। কখনো গণ্ডার, কখনো বিড়াল, কখনো বা আবার কালো বিড়াল। ভারি মজা তো। রেলের কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে এই মাননীয় মন্ত্রীকেই কত না হেনস্তা হতে হলো। ভাগ্যিস, মাননীয় মন্ত্রীর ভাষ্যমতো তাঁর/তাঁদের চামড়াটি গণ্ডারের। নইলে কী যে হতো। আর ইংরেজিতে একটা কথা আছে না, আ ক্যাট হ্যাজ নাইন লাইভস। বিড়ালের জান বহুতই শক্ত জান, এক্কেরে গণ্ডারের চামড়ার লাহান শক্ত। তয় আর চিন্তা কীয়ের।
তা সেই রেলের কামরায়ই একদিন উঠেছেন স্যুটেড-বুটেড অতীব চাল্লু বাক্যবাগীশ এক লোক। তার বেশভূষায় মুগ্ধ পাশের সিটের এক বাঙাল বলল, ভাইজানের কোটটা তো জব্বর। বিদেশি বুঝি? ওই লোক একটা উচ্চাঙ্গের হাসি দিয়ে বলল, জি। এই জ্যাকেটটা প্যারিস থেকে পাঠিয়েছেন আমার এক মামা। দাম পড়েছে সাড়ে তিন হাজার ডলার। 'আপনার প্যান্টটাও তো দারুণ। এটা কোথাকার?' কৌতূহলী প্রশ্নকর্তার দ্বিতীয় প্রশ্ন। এটা নিউ ইয়র্ক থেকে পাঠিয়েছেন আমার দুলাভাই। এটার দাম পড়েছে ষোল শ ডলার। 'আর টাইটা?' এটা লন্ডন থেকে পাঠিয়েছে আমার ছোট শালা। আর এই শার্টটা যে দেখছেন, এটা পাঠিয়েছে আমার এক বন্ধু টোকিও থেকে। 'জুতা জোড়াও কি বিদেশি?' বাঙাল প্রশ্নকর্তা চোখ ছানাবড়া করে জানতে চাইল। খুব একটা আত্মপ্রসাদের হাসি দিয়ে সেই চাল্লু মাল বলল, হ্যাঁ, এটা পাঠিয়েছে কেনিয়া থেকে আমার এক কাজিন। তারপর হাসতে হাসতে যোগ করল, আজ এমন হয়েছে, সবই অন্যের জিনিস আমার গায়ে। শুধু বলতে পারেন, গায়ের চামড়াটি ছাড়া। হাঃ হাঃ হাঃ।
পাশে বসা ছিল আমাদের কলতাবাজারের জুম্মন। সে আর পারল না। বলল, ভুল কইলেন, ভাইছাব। ওইটা ভি আপনার না, ওইটা গণ্ডারের।
(২)
আগামীকাল ঈদুল আজহা। চলতি কথায়, কোরবানির ঈদ। কী কোরবানি দেবেন? গরু? খাসি? উট? (আমার এক অকালে চলে যাওয়া সতীর্থ বন্ধু আমিনুল ইসলাম ডলু কোরবানির ঈদের আগের রাতে অবশ্যই একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করত, কী রে, তুই গরু না খাসি?)
আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য যা খুশি কোরবানি দিন, আপনাদের কোরবানির গোশত খেয়ে গরিব-মিসকিন খুশি হোক। সেই সঙ্গে আসুন, আমরা আমাদের মনের হিংসা-বিদ্বেষ-সন্ত্রাস, শয়তানি-দুষ্টামি-নষ্টামি, দুর্নীতি-ভণ্ডামিকেও কোরবানি দিই।...সবাইকে ঈদ মোবারক।
২২.১০.১২
গত ৭ অক্টোবর প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় 'সুরঞ্জিতের ছেলের ব্যবসা রেলের টাকায়' শিরোনামে যে বোমা-ফাটানো খবরটি বেরিয়েছে, তার কিয়দংশ উদ্ধার করি : '...সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গতকাল তাঁর নির্বাচনী এলাকা দিরাই উপজেলায় এক জনসভায় বলেছেন, তিনি নিষ্পাপ ও নিষ্কলঙ্ক।...কোথাকার কোন আজম। কস্মিনকালেও আমি তাকে দেখিনি। চিনিও না। এখন তাকে দিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এত দিন সে কোথায় ছিল।' (সুরঞ্জিত সেন মহাশয়ের 'এত দিন সে কোথায় ছিল' কথাটি শুনেই আমার আরেক সেনের কথা মনে পড়ল, তিনি জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন। সেই নূপুরনিক্বণের মতো শব্দগুলো : '...এত দিন কোথায় ছিলেন?/পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।' এ ধরনের একটা সিচুয়েশনের টোপ দেখিয়ে ড্রাইভার আজমকে দুদক তাদের তদন্ত কমিটির সামনে হাজির করার চেষ্টা করতে পারেন !)
কিন্তু আসল কথাটি মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন তার পরেই। 'মিডিয়া আমার পেছনে ঘুরছে। তারা আগেও অনেক কিছু লিখেছে। কিন্তু রাজনীতিবিদদের চামড়া গণ্ডারের মতো। তাঁদের অনেক কিছু সইতে হয়।' এটা পড়ে এবার আমার মুখ দিয়ে বের হলো : সত্যি! জানতাম না তো। ছোটবেলায় এক মেষচর্মপরিহিত নেকড়ের গল্প পড়েছিলাম যে এইরূপ ছদ্মবেশ ধরে মেষের পালের ভেতর ঢুকে পড়ে ওই নিরীহ প্রাণীগুলোকে সংহার করত। কিন্তু এই গণ্ডারের চামড়াসংক্রান্ত আত্মস্বীকৃতি এটা কিসের ইঙ্গিত দেয়? রীতিমতো ভাবিয়ে তুলল বিষয়টি। গতকাল আমার এক নিষ্পাপ-নির্বিরোধ ঈশ্বরের মেষ বন্ধুকে ব্যাপারটি বলতেই সে বলল, তা কথাটি তো মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন- দুই সপ্তাহ আগে, কই আজতক তো তাঁর কোনো সগোত্র রাজনীতিবিদ কোনো প্রতিক্রিয়া জাহির করলেন না। তুমি এখন এই বাসি কথা কচলিয়ে চোলাই বানাচ্ছ কেন? জবাবে আমি বললাম, তাদের রি-অ্যাকশন টাইম তো প্রলম্বিত হওয়ারই কথা- বলেই সেই শিকারির গল্পটা আমি বললাম তাকে।
আফ্রিকার গহিন জঙ্গলে এক শিকারি পথ ভুল করে সোজা গিয়ে পড়েছে এক গণ্ডারের সামনে। সে জানে, গণ্ডারকে গুলি করেও কোনো লাভ নেই, বরং গুলি রিবাউন্ড করে এসে তার নিজের গায়েই লাগতে পারে। তখন সে বন্দুক ফেলে দিয়ে গণ্ডারের সামনে হাতজোড় করে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিল : 'হুজুর, আমাকে বাঁচান। আমি আর কোনো দিন আপনার রাজ্যে আসব না। আমাকে মেরে ফেললে আমার নতুন বিয়ে করা বৌটা অকালে বিধবা হয়ে যাবে। হুজুর আপনার পায়ে পড়ি। এই নাকে খত দিচ্ছি, আর কোনো দিন এ রকম বেআদবি করব না।'
এদিকে হয়েছে কি, ওই গণ্ডার তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে বিষণ্নতা রোগে ভুগছিল। ছয় মাস ধরে সে ঠিকমতো খায় না, নায় না, হাসি-ঠাট্টা-তামাশা একদম বন্ধ। এই লোকটাকে মেরে ফেললে তার কচি বৌটা বিধবা হয়ে যাবে শুনে তার মায়া হলো। অবশ্য নাকের ওপর খৰধারী গণ্ডার সাহেব লোকটার নাকখত দেওয়ার কথা শুনে বিরক্ত হলো মনে মনে। সে ভাবল, ব্যাটা গাধার নাকই নেই আর বলে কি না নাকখত দেবে। সে শিকারিকে বলল, দেখো মিয়া, ছয় মাস ধরে আমার জীবন থেকে আনন্দ-হাসি-গান উধাও হয়ে গেছে। আমি কত দিন প্রাণখুলে একটু হাসি না। আমার হাসি আসে না। তুমি যদি আমাকে একটু হাসাতে পার, তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেব। শুনেই শিকারি সাহেবের কলজেতে পানি এলো। সে গণ্ডারের কাছে গিয়ে তার পেটে, বগলে, ঘাড়ে বেদম কাতুকুতু দিতে শুরু করল। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। গণ্ডারের গোমড়া মুখ আরো গোমড়া হয়ে গেল। তখন শিকারি বলল, স্যার, আমি খুব ভালো হাসির গল্প বলতে পারি। শুনলে হাসতে হাসতে আপনার পেটে খিল ধরে যাবে। হুকুম করেন তো শোনাই দু-চারটা। 'ঠিক আছে, শোনাও,' গণ্ডার বলল। আরম্ভ হলো গল্প বলা। গোপাল ভাঁড় থেকে নাসিরুদ্দিন হোজা, আইরিশ-স্কটিশ থেকে বেলারুশ-রুশ- কিছু বাদ নেই; কিন্তু কোনো লাভ হলো না। গণ্ডার মুখটা সুকুমার রায়ের রামগরুড়ের ছানার মতো করে দাঁড়িয়ে থাকল। শিকারি বুঝল, সব শেষ। সে আবার চিৎকার দিয়ে মরাকান্না জুড়ে দিল : ও বৌ, বৌ গো, তুমি কোথায়। এ জীবনে আর দেখতে পাব না তোমাকে। গণ্ডারের মনটা আবার ভিজে গেল। সে বলল, যা ব্যাটা- তোকে এবার ছেড়ে দিলাম। তুই ফিরে যা তোর বৌয়ের কাছে। কিন্তু জীবনে আর এই পথ মাড়াবি না। শিকারি জান নিয়ে, বন্দুক নিয়ে ভাগল।
গ্রহের ফেরে রাস্তা ভুল করে ওই শিকারি এক মাস পরে আবার পড়ে গেল সেই গণ্ডারের সামনে। কিন্তু এবার সে তাজ্জব হয়ে দেখে গোমড়ামুখো গণ্ডার একা একা শুধু অট্টহাসি হাসছে, আর হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে মাটিতে। শিকারিকে দেখেই গণ্ডার একটুখানি স্বাভাবিক হয়ে বলল, আরে মিয়া, কোথায় ছিলে তুমি গত দু-তিন দিন? তোমাকে কত খুঁজছি আমি। কী সব দারুণ মজার গল্প শুনিয়ে গিয়েছিলে তুমি। আর এমন সব জায়গায় কাতুকুতু দিয়েছ, হাসতে হাসতে আমার জান যাচ্ছে।
শিকারি ভয়ে ভয়ে বলল, কিন্তু গল্প তো বলেছি এক মাস আগে। এখন হাসছ যে? 'কী যে বলো। আমার চামড়া দিয়ে ওই সব গল্পের রস ঢুকতে সময় লাগে না?' গণ্ডারের জবাব।
রাজনীতিবিদদের চামড়ার খবর সুরঞ্জিত সাহেবের বদান্যতায় এত দিনে জানা গেল। আমরা আশা করব, গত সাড়ে তিন বছর যেসব অকাম-কুকাম ঘটেছে, দেশে তার করুণ রস, বীভৎস রস একটু একটু করে হলেও চুইয়ে চুইয়ে এত দিনে কর্তৃপক্ষের মননে-মগজে প্রবেশ করতে পারছে। আর মাননীয় মন্ত্রী তাঁর নিজের এবং সগোত্রদের চামড়া সম্বন্ধে যে সার্টিফিকেটই দেন না কেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই না দেশের মানুষ এত কষ্ট করে ভোট দিয়ে নিশ্চয়ই একটা গণ্ডারকে ক্ষমতায় বসায়নি। তারা কোনো গণ্ডার মার্কা বাক্সেও ভোট দেয়নি।
আচ্ছা, রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে এ রকম ঢালাওভাবে কথাটি বলা কি ঠিক হয়েছে মাননীয় মন্ত্রীর? তিনি নিজের চামড়া সম্পর্কে ১০০ বার যা খুশি বলতে পারেন। সেই চামড়া সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কে বেশি ওয়াকিবহাল হবেন। আইন বিশেষজ্ঞ মাননীয় মন্ত্রী ভালো করেই জানেন, আইনের চোখে নিজের সম্পর্কে তাঁর জবানি শুধু 'এডমিসিবলই' নয়, প্রাইমারি এভিডেন্সও বটে। কিন্তু সব রাজনীতিবিদেরই কি চামড়া গণ্ডারের চামড়ার মতো মোটা, নিরেট, দুর্ভেদ্য? বাইরের জগতের কোনো কিছুই কি তাদের অন্তর্লোকে প্রবেশাধিকার পায় না? মানুষের দুঃখ-দারিদ্র্য, জরা-মৃত্যু, ব্যথা-বেদনা- কোনো কিছুই কি স্পর্শ করে না তাদের? গণ্ডারের স্ত্রীবিয়োগ-ব্যথার কথা শুধু গল্পেই শোনা যেতে পারে, বাস্তবে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসা, হাসি-কান্না, সমবেদনা-সহানুভূতি- এসব শুধু গবেষণার বিষয় হতে পারে। মানুষের মধ্যেও কি তাহলে এসব মানবিক অনুভূতি হ্রাস পেতে পেতে গবেষণার বিষয় হয়ে যাচ্ছে? সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মহাশয়ের ৫০ বছরের রাজনীতি কি তাঁকে সেই পর্যায়ে নিয়ে গেছে? যে নির্বাচনী এলাকায় তিনি তাঁর এবং অন্য সব রাজনীতিবিদের চামড়া গণ্ডারের চামড়া উল্লেখ করে বক্তৃতা দিয়ে এসেছেন, এটা তো সেই এলাকাবাসীর জন্য একটা বড় দুঃসংবাদ। তারা যদি বলে, আমরা নিরন্তর আমাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনায় দোলায়িত রক্ত-মাংসের একজন মানুষকে রাজনীতিবিদ হিসেবে, আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে পেতে চাই, আমরা গণ্ডার-চর্মাবৃত কোনো 'রোবট' চাই না, তাহলে কী খুব ভুল বলবে তারা? রাজনীতিবিদদের চামড়া গণ্ডারের মতো...কথাটা তো আমার মনে হয় অত্যন্ত নিষ্ঠুর শোনায়। এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় না, আপনারা সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত পুত্র শোকে যতই কাতর হোন না কেন, দ্রব্যমূল্যের জাঁতাকলে হোন না কেন, যতই নিষ্পেষিত, শেয়ারবাজারে সর্বস্ব খুইয়ে গলায় দড়ি দিন কিংবা হলমার্ক-ডেসটিনি এই জাতির জালিয়াতির যত বড় হলমার্কই হোক আর নিয়ামক হোক- জাতির ডেসটিনির, আমরা কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেঁধেছি কুলো। আমাদের গায়ের ওপর সাঁটা লৌহবর্ম ভেদ করে কোনো কিছুই আমাদের মর্মমূলে প্রবেশ করতে পারবে না।
অথচ এই রাজনীতিবিদরাই নিজেদের প্রয়োজনে মানুষের পায়ে পড়তেও রাজি। ভোটের সময় তো আছেই, এমনকি মিটিংয়ে লোক নিয়ে যেতেও কত তোষামোদ : লক্ষ্মী ভাইটি, তোমরা না গেলে নেতার কাছে মান-ইজ্জত থাকবে না আমার। ওই সব ঠেকার কালে রাস্তাঘাট বানিয়ে দেওয়া, স্কুল-কলেজে দালান দেওয়া, পোলা-মাইয়ার লেখাপড়া-বিয়েশাদি, অসুখ-বিসুখের চিকিৎসা প্রভৃতির কত ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি। এমনকি আসমানের চান্দ চাইলে তা-ও কবুল। তারপর? কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরালে পাজি। 'স্যার এখন ব্যস্ত, পরে আইয়ো', এসব শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। স্যার তো আর তখন স্যার নয়, অমাবস্যার চাঁদ। যে চামড়াটি ভোটের আগে ছিল নরম কাদামাটির বানানো, এখন ওটা গণ্ডারের। এখন সংবেদনশীলতার সংটুকুই কেবল বাকি।
কিন্তু লোকে তো আপনাদের গণ্ডার হিসেবে দেখতে চায় না, তারা মানুষ হিসেবেই দেখতে চায়। আর এই গণ্ডারই বা কেমন গণ্ডার। পাঁচ বছর পর এর চামড়া আবার বিড়ালের পাতলা চামড়া হয়ে যায়। কখনো গণ্ডার, কখনো বিড়াল, কখনো বা আবার কালো বিড়াল। ভারি মজা তো। রেলের কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে এই মাননীয় মন্ত্রীকেই কত না হেনস্তা হতে হলো। ভাগ্যিস, মাননীয় মন্ত্রীর ভাষ্যমতো তাঁর/তাঁদের চামড়াটি গণ্ডারের। নইলে কী যে হতো। আর ইংরেজিতে একটা কথা আছে না, আ ক্যাট হ্যাজ নাইন লাইভস। বিড়ালের জান বহুতই শক্ত জান, এক্কেরে গণ্ডারের চামড়ার লাহান শক্ত। তয় আর চিন্তা কীয়ের।
তা সেই রেলের কামরায়ই একদিন উঠেছেন স্যুটেড-বুটেড অতীব চাল্লু বাক্যবাগীশ এক লোক। তার বেশভূষায় মুগ্ধ পাশের সিটের এক বাঙাল বলল, ভাইজানের কোটটা তো জব্বর। বিদেশি বুঝি? ওই লোক একটা উচ্চাঙ্গের হাসি দিয়ে বলল, জি। এই জ্যাকেটটা প্যারিস থেকে পাঠিয়েছেন আমার এক মামা। দাম পড়েছে সাড়ে তিন হাজার ডলার। 'আপনার প্যান্টটাও তো দারুণ। এটা কোথাকার?' কৌতূহলী প্রশ্নকর্তার দ্বিতীয় প্রশ্ন। এটা নিউ ইয়র্ক থেকে পাঠিয়েছেন আমার দুলাভাই। এটার দাম পড়েছে ষোল শ ডলার। 'আর টাইটা?' এটা লন্ডন থেকে পাঠিয়েছে আমার ছোট শালা। আর এই শার্টটা যে দেখছেন, এটা পাঠিয়েছে আমার এক বন্ধু টোকিও থেকে। 'জুতা জোড়াও কি বিদেশি?' বাঙাল প্রশ্নকর্তা চোখ ছানাবড়া করে জানতে চাইল। খুব একটা আত্মপ্রসাদের হাসি দিয়ে সেই চাল্লু মাল বলল, হ্যাঁ, এটা পাঠিয়েছে কেনিয়া থেকে আমার এক কাজিন। তারপর হাসতে হাসতে যোগ করল, আজ এমন হয়েছে, সবই অন্যের জিনিস আমার গায়ে। শুধু বলতে পারেন, গায়ের চামড়াটি ছাড়া। হাঃ হাঃ হাঃ।
পাশে বসা ছিল আমাদের কলতাবাজারের জুম্মন। সে আর পারল না। বলল, ভুল কইলেন, ভাইছাব। ওইটা ভি আপনার না, ওইটা গণ্ডারের।
(২)
আগামীকাল ঈদুল আজহা। চলতি কথায়, কোরবানির ঈদ। কী কোরবানি দেবেন? গরু? খাসি? উট? (আমার এক অকালে চলে যাওয়া সতীর্থ বন্ধু আমিনুল ইসলাম ডলু কোরবানির ঈদের আগের রাতে অবশ্যই একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করত, কী রে, তুই গরু না খাসি?)
আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য যা খুশি কোরবানি দিন, আপনাদের কোরবানির গোশত খেয়ে গরিব-মিসকিন খুশি হোক। সেই সঙ্গে আসুন, আমরা আমাদের মনের হিংসা-বিদ্বেষ-সন্ত্রাস, শয়তানি-দুষ্টামি-নষ্টামি, দুর্নীতি-ভণ্ডামিকেও কোরবানি দিই।...সবাইকে ঈদ মোবারক।
২২.১০.১২
No comments