আকিকা প্রসঙ্গে ইসলাম by মু. রফিউজ্জামান আকন্দ

আকিকা ইসলামী জীবনধারার অন্যতম এক বিধান। আকিকা ফরজ কিংবা ওয়াজিব ইবাদত না হলেও ইসলামী শরিয়তে এর গুরুত্ব অনেক। আকিকার মাধ্যমে সন্তানের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়, সন্তানের ওপর থেকে বালা-মুসিবত দূরীভূত হয়।


হাদিসে আছে, হজরত সালমান ইবনে আমের দাবি্ব (রা.) থেকে বর্ণিত_ তিনি বলেন, আমি হুজুরকে (সা.) বলতে শুনেছি, ছেলের (জন্মের সঙ্গে সঙ্গে) আকিকা করা আবশ্যক। অতএব তার তরফ থেকে রক্ত প্রবাহিত করো। অর্থাৎ জন্তু জবাই করো এবং তার (ওপর) থেকে কষ্ট দূর করো। (বুখারি শরিফ)
পারিভাষিক অর্থে আকিকা হলো, নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে বা এরপরে শুকরিয়াস্বরূপ তার জন্য আল্লাহর রাহে পশু জবাই করা। ইসলামী বিধানে আকিকা করা মুস্তাহাব আমল। আকিকার (পশুর) সংখ্যার ব্যাপারে বলা হয়েছে, নবজাত ছেলের জন্য দুটি ছাগল এবং কন্যাসন্তানের জন্য একটি ছাগল জবাই করা সুন্নত। তবে সামর্থ্য না থাকলে পুত্রসন্তানের জন্য একটি বকরি দিয়েও আকিকা করা যাবে। যেমন_ মহানবী (সা.) হজরত হাসানের (রা.) জন্য একটি বকরি দিয়ে আকিকা করেছিলেন।
কোরবানির জন্য যেসব পশু উপযুক্ত, আকিকার ক্ষেত্রেও সে ধরনের পশু জবাই করার নিয়ম। অর্থাৎ ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ বা উট দ্বারা আকিকা করতে হবে। কোরবানির সময়ও (জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) আকিকা করা যায়। কোরবানির পশুর মধ্যে গরু, মহিষ বা উটে পুত্রসন্তানের জন্য ২ ভাগ এবং মেয়েসন্তানের জন্য এক অংশের দ্বারা আকিকা করা শরিয়তসম্মত এবং এসব বড় পশুর একটির মধ্যে একাধিকজনের আকিকা জায়েজ।
আকিকার গোশত কোরবানির গোশতের মতো সবাই খেতে পারবে। এ গোশত তিন ভাগ করে এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের জন্য সদকা করে দেওয়া, এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বণ্টন করা এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য রাখা সুন্নত অথবা পুরোটা বণ্টন করা বা নিজের জন্য রাখাও বৈধ। এ ব্যাপারে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, আকিকার গোশত নিজেরাও খাবে এবং সদকাও করবে। আকিকার পশুর চামড়ার বিক্রয়লব্ধ টাকা গরিব-মিসকিনদের মধ্যে দান করে দেবে। আকিকার গোশত রান্না করেও বণ্টন করা যায়, আবার দাওয়াত দিয়ে লোকজনকে খাওয়ানোও জায়েজ আছে। কেউ নিজ সন্তানের আকিকা করতে অপারগ হলে তার পক্ষ থেকে অন্য যে কেউ আকিকা দিতে পারে। হাদিসে এসেছে, হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত_ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) হাসানের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকিকা করেছিলেন। (তিরিমিজি) আকিকার গোশত নবজাতকের পিতা-মাতা, দাদা-দাদি খেতে পারবে না বলে যে কথা শোনা যায়, তা সম্পূর্ণ ভুল। তবে উপহার-উপঢৌকনের প্রত্যাশায় লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে আকিকার অনুষ্ঠান করা বৈধ নয়। আকিকার মাধ্যমে সন্তানের অকল্যাণ, বালা-মুসিবত, রোগ-বালাই, নানা জটিলতা ও অশুভ বিষয়াদি দূর হয়। আকিকা করলে কিয়ামতের দিন সন্তান মা-বাবার জন্য সুপারিশ করবে। আকিকার মাধ্যমে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পারস্পরিক হৃদ্যতা, ভালোবাসা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।
 

No comments

Powered by Blogger.