‘নখদন্তহীন’ দুদকের ওপর যত কাজের বোঝা by অনিকা ফারজানা
কাজের চাপে ভারাক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু সে তুলনায় দক্ষ জনবল নেই। রয়েছে আইনি সীমাবদ্ধতাও। ফলে একসঙ্গে অনেক কাজে হাত দিলেও এগুলো ঠিকমতো শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
‘নখদন্তহীন’ এই প্রতিষ্ঠান এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও বড় বড় ঘটনার তদন্ত করছে।
‘নখদন্তহীন’ এই প্রতিষ্ঠান এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও বড় বড় ঘটনার তদন্ত করছে।
এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে অনিয়ম, ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় অর্থ কেলেঙ্কারি— সোনালী ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে হলমার্কের দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ডেসটিনির সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার প্রতারণা। আরও আছে রেলওয়ের নিয়োগ-বাণিজ্য ও সরকারের বিভিন্ন পদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগের নিয়মিত অনুসন্ধান।
জানা গেছে, এসবের পাশাপাশি দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান বিভাগ শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, সিমেন্স কেলেঙ্কারি, চিকিৎসা খাতে বিভিন্ন হাসপাতালের ক্রয় ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষা খাতের বই প্রকাশে সরকারি অর্থের নয়ছয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত, বিভিন্ন সাংসদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, পুলিশ বাহিনীর ওসিদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অনুসন্ধান, হাইকোর্টের বিচারক ও বেঞ্চ অফিসারদের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগেরও অনুসন্ধান করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বব্যাংকের কারণে পদ্মা সেতুর অনিয়মের অনুসন্ধান কার্যক্রম এখন একটু ধীর। কিন্তু হলমার্ক ও ডেসটিনির বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ অনুসন্ধানে কাজ করছেন ৩০ জন কর্মকর্তা। এসব অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছাড়া দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কোনো দক্ষ কর্মকর্তা নেই। বাকিদের অধিকাংশই দিনের কাজের চাপ সামলাতে ব্যস্ত থাকেন। আবার দুর্নীতির অভিযোগে নিজেদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হয় দুদককে।
জনবল সমস্যা: অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশব্যাপী দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ জন। বাকিরা তাঁদের সহকারী বা উপসহকারী। আর একজন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অন্তত ২৫টি করে মামলা বা অভিযোগের অনুসন্ধান থাকে। ফলে কমিশনের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ে (১৫ দিন) তাঁরা সুষ্ঠুভাবে তদন্তকাজ শেষ করতে পারেন না।
জনবলের প্রশ্নে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবলের ঘাটতি পূরণে ইতিমধ্যে কিছু নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখনো অনেক খালি পদ আছে। তবে পর্যায়ক্রমে আরও নিয়োগ দেওয়া হবে। কর্মকর্তাদের দক্ষতার প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, কর্মকর্তাদের মধ্যে দক্ষতা বাড়াতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো উচিত।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুদক হওয়ার কথা ছিল সম্পূর্ণ নতুন ও দক্ষ জনবল নিয়ে। কিন্তু তা না করে সাবেক দুর্নীতি দমন ব্যুরোকেই কমিশনে পরিণত করা হয়েছে। ফলে ব্যুরোর যাবতীয় নেতিবাচক প্রভাব বর্তমান কমিশন বয়ে নিয়ে চলেছে।
আইনি দুর্বলতা: সরকারের সাড়ে তিন বছরেও চূড়ান্ত হয়নি দুদক আইন। দুদকের অনুসন্ধানকালে কর্মকর্তারা দুদকের পক্ষে আলামত জব্দ, ব্যাংক হিসাব তলব বা প্রয়োজনে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেন না। ব্যাংক, এনবিআর বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থা থেকে তথ্য চেয়ে তা ঠিকমতো ও সময়মতো পাওয়া যায় না। কারণ, এতে আদালতের অনুমতি লাগে। আদালতে দুদক বনাম আসামি হওয়ার কথা, কিন্তু হয় রাষ্ট্র বনাম আসামি। অথচ দুদক স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারি ও প্রশাসনিক কোনো দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে পারে না দুদক। অনুসন্ধানকালে সন্দেহভাজন হিসেবে কাউকে গ্রেপ্তার বা মামলায় না জড়াতে পারা দুদক আইনের আরেকটি সীমাবদ্ধতা।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতায় আসার পর এত দিনেও বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘স্বাধীন দুদক’ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। উপরন্তু দুদক আইন সংশোধনের নামে পুরো বিষয়টিকে ঝুলিয়ে দিয়েছে। আর যে খসড়া আইন তারা প্রস্তাব করেছিল, সেটা বাস্তবায়িত হলে দুদকের যতটুকু স্বাধীনতা বর্তমানে রয়েছে, তা-ও চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আইনি দুর্বলতার কথা স্বীকার করে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, দুদক আইন আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। এ ছাড়া দুদকের পক্ষ থেকে মামলার পর বিচারিক প্রক্রিয়াটাও দ্রুত হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। চেয়ারম্যান বলেন, অনেক সময় বিচারিক প্রক্রিয়ার কারণেই দুর্নীতিবাজ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যায়।
গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে টিআইবির এক গোলটেবিল বৈঠকে দুদক চেয়ারম্যান বলেছিলেন ‘আশা করি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন না, যা দুদককে অকার্যকর বা নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে।’
সরকারি প্রভাব: দুদকের তদন্ত এবং অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সরকারের চাপ বা প্রভাবের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, পদ্মা সেতুর ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি ও সুরঞ্জিত-পুত্র সৌমেন সেনগুপ্ত টেলিকমের অনুসন্ধান দ্রুত শেষ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়ায় জনমনে এমন ধারণা জন্মেছে।
তবে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দাবি করেন, বাস্তবে কমিশনের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। দুদক স্বাধীনভাবেই কাজ করছে।
এ বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে দুদকের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের মিলটা কাকতালীয়, নাকি বুঝেশুনে—সে প্রশ্ন আমাদেরও। বিশেষ করে, সৌমেন ও পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াটা একটু প্রশ্নবিদ্ধই বটে।’
জানা গেছে, এসবের পাশাপাশি দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান বিভাগ শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, সিমেন্স কেলেঙ্কারি, চিকিৎসা খাতে বিভিন্ন হাসপাতালের ক্রয় ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষা খাতের বই প্রকাশে সরকারি অর্থের নয়ছয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত, বিভিন্ন সাংসদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, পুলিশ বাহিনীর ওসিদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অনুসন্ধান, হাইকোর্টের বিচারক ও বেঞ্চ অফিসারদের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগেরও অনুসন্ধান করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বব্যাংকের কারণে পদ্মা সেতুর অনিয়মের অনুসন্ধান কার্যক্রম এখন একটু ধীর। কিন্তু হলমার্ক ও ডেসটিনির বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ অনুসন্ধানে কাজ করছেন ৩০ জন কর্মকর্তা। এসব অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছাড়া দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কোনো দক্ষ কর্মকর্তা নেই। বাকিদের অধিকাংশই দিনের কাজের চাপ সামলাতে ব্যস্ত থাকেন। আবার দুর্নীতির অভিযোগে নিজেদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হয় দুদককে।
জনবল সমস্যা: অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশব্যাপী দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ জন। বাকিরা তাঁদের সহকারী বা উপসহকারী। আর একজন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অন্তত ২৫টি করে মামলা বা অভিযোগের অনুসন্ধান থাকে। ফলে কমিশনের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ে (১৫ দিন) তাঁরা সুষ্ঠুভাবে তদন্তকাজ শেষ করতে পারেন না।
জনবলের প্রশ্নে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবলের ঘাটতি পূরণে ইতিমধ্যে কিছু নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখনো অনেক খালি পদ আছে। তবে পর্যায়ক্রমে আরও নিয়োগ দেওয়া হবে। কর্মকর্তাদের দক্ষতার প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, কর্মকর্তাদের মধ্যে দক্ষতা বাড়াতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো উচিত।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুদক হওয়ার কথা ছিল সম্পূর্ণ নতুন ও দক্ষ জনবল নিয়ে। কিন্তু তা না করে সাবেক দুর্নীতি দমন ব্যুরোকেই কমিশনে পরিণত করা হয়েছে। ফলে ব্যুরোর যাবতীয় নেতিবাচক প্রভাব বর্তমান কমিশন বয়ে নিয়ে চলেছে।
আইনি দুর্বলতা: সরকারের সাড়ে তিন বছরেও চূড়ান্ত হয়নি দুদক আইন। দুদকের অনুসন্ধানকালে কর্মকর্তারা দুদকের পক্ষে আলামত জব্দ, ব্যাংক হিসাব তলব বা প্রয়োজনে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেন না। ব্যাংক, এনবিআর বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থা থেকে তথ্য চেয়ে তা ঠিকমতো ও সময়মতো পাওয়া যায় না। কারণ, এতে আদালতের অনুমতি লাগে। আদালতে দুদক বনাম আসামি হওয়ার কথা, কিন্তু হয় রাষ্ট্র বনাম আসামি। অথচ দুদক স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারি ও প্রশাসনিক কোনো দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে পারে না দুদক। অনুসন্ধানকালে সন্দেহভাজন হিসেবে কাউকে গ্রেপ্তার বা মামলায় না জড়াতে পারা দুদক আইনের আরেকটি সীমাবদ্ধতা।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতায় আসার পর এত দিনেও বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘স্বাধীন দুদক’ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। উপরন্তু দুদক আইন সংশোধনের নামে পুরো বিষয়টিকে ঝুলিয়ে দিয়েছে। আর যে খসড়া আইন তারা প্রস্তাব করেছিল, সেটা বাস্তবায়িত হলে দুদকের যতটুকু স্বাধীনতা বর্তমানে রয়েছে, তা-ও চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আইনি দুর্বলতার কথা স্বীকার করে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, দুদক আইন আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। এ ছাড়া দুদকের পক্ষ থেকে মামলার পর বিচারিক প্রক্রিয়াটাও দ্রুত হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। চেয়ারম্যান বলেন, অনেক সময় বিচারিক প্রক্রিয়ার কারণেই দুর্নীতিবাজ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যায়।
গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে টিআইবির এক গোলটেবিল বৈঠকে দুদক চেয়ারম্যান বলেছিলেন ‘আশা করি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন না, যা দুদককে অকার্যকর বা নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে।’
সরকারি প্রভাব: দুদকের তদন্ত এবং অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সরকারের চাপ বা প্রভাবের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, পদ্মা সেতুর ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি ও সুরঞ্জিত-পুত্র সৌমেন সেনগুপ্ত টেলিকমের অনুসন্ধান দ্রুত শেষ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়ায় জনমনে এমন ধারণা জন্মেছে।
তবে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দাবি করেন, বাস্তবে কমিশনের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। দুদক স্বাধীনভাবেই কাজ করছে।
এ বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে দুদকের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের মিলটা কাকতালীয়, নাকি বুঝেশুনে—সে প্রশ্ন আমাদেরও। বিশেষ করে, সৌমেন ও পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াটা একটু প্রশ্নবিদ্ধই বটে।’
No comments