চারদিক- আমরা সবাই মিলব আজ by শিখতী সানী
আজ ১৩ অক্টোবর ২০১২। বন্ধু মিলবে আজ পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে। পুরোনো বন্ধু, নতুন বন্ধু আর ক্যাম্পাস-জীবনের অসংখ্য স্মৃতির আনাগোনায় মুখরিত হবে টিএসসি প্রাঙ্গণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) দিনভর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পুনর্মিলনী।
প্রথমবারের মতো বড় আকারে আড়ম্বরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিবার আয়োজন করছে এ ধরনের পুনর্মিলনী। আজ পুরোনোদের সঙ্গে মিলিত হবেন এই বিভাগের নতুন সদস্যরা। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ বছরের প্রাচীন এই বিভাগকে জানাবে শ্রদ্ধা, আর আগামীর পথে সফলভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুনদের জন্য থাকবে শুভকামনা।
পুনর্মিলনী মানেই খোঁজ মিলবে দূরের বন্ধুদের, কাছের বন্ধুদের আর তাঁদের সঙ্গে অসংখ্য স্মৃতির। দেরি করে ক্যাম্পাসে পৌঁছে রুম নম্বরের জন্য হন্তদন্ত হয়ে কলাভবনের দ্বিতীয় তলায় ছোটাছুটির স্মৃতি কিন্তু প্রায় সবারই আছে। একেকটি পড়ার বিষয়ের জন্য যখন নীলক্ষেত থেকে ফটোকপি আর উদ্ধৃত অংশ আসত, তখন সেগুলো নিতে একসঙ্গে সবার হুমড়ি খেয়ে পড়া। সকালের ক্লাসে মন নেই, মন পড়ে আছে টিএসসির বিখ্যাত এক টাকার চা কিংবা পাঁচ টাকার সমুচায়। সারা বছর তাড়া করত মরগ্যানথু, ম্যাকিয়াভেলি, ক্লজউয়িটজ, কৌটিল্য আর হান্টিংটন। অথচ পরীক্ষার হলে বসে এদের আর কোনো দেখা নেই।
নিচের রসিকতাগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের যেকোনো শিক্ষার্থী বুঝতে পারবেন: ১৬৪৮ সালে যেন কী একটা ঘটেছিল। পাকিস্তানের রাজধানী—মনে হয় গুলিস্তান। অমুক স্যারের ক্লাসে ভেটকি মাছের মতো কে হেসেছিল, তার সমাধান আজও মেলেনি। রসিকতাগুলো ধরতে পারছেন তো? ক্লাস শেষে আইআর লেনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা! ক্যাম্পাস-জীবনের দিনগুলোর রংই আলাদা! আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্থান পরিবর্তন হয়ে নতুন সামাজিক অনুষদ ভবনে গেলেও ২০২৪ রুম নম্বরকে ভুলে যাওয়ার নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের যাত্রা শুরু ১৯৪৭ সাল থেকে পূর্ণ বিভাগ হিসেবে। পাঠ্য বিষয়বস্তু বিস্তৃত ছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ১৯৪৭-৪৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৯-৭০ শিক্ষাবর্ষ থেকে তিন বছরের স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি চালু হয়। ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে ব্যাচেলর প্রোগ্রাম চার বছরের একটি সমন্বিত কোর্স পদ্ধতি হিসেবে চালু হয়। ২০০৬-০৭ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায়ে গ্রেডিং পয়েন্টে মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। ড. মাহমুদ হোসাইন ছিলেন বিভাগের প্রথম প্রধান। অধ্যাপক পি সি চক্রবর্তী ছিলেন দ্বিতীয়। এই বিভাগের বহু শিক্ষার্থী দেশীয় ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনামধন্য।
পুনর্মিলনীর সমন্বয়ক অধ্যাপক আকমল হোসেন বলছিলেন ১৯৭৮ সালে এই বিভাগে যোগদানের স্মৃতিগুলোর কথা। প্রতিটি ক্লাসে ২০-২৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ছিলেন না, শিক্ষক ছিলেন প্রায় ১০ জন। আজ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে। অধ্যাপক আবদুল আজিজকে পেয়েছিলেন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। অধ্যাপক আজিজ ছিলেন অসম্ভব কড়া ও নিয়মনিষ্ঠ। প্রতিদিন ক্লাস শেষে শিক্ষকদের একটি ফরম পূরণ করতে হতো। তাতে জানাতে হতো কতজন এসেছেন, কী পড়ানো হলো আজ ইত্যাদি।
‘এ বছরের প্রথম দিকে শিক্ষকদের সভায় একটি পুনর্মিলনী আয়োজন করার প্রস্তাব করা হয়। সবার এই প্রস্তাবে সমর্থন ছিল জোরালো। প্রথম দিকে তেমন সাড়া না মিললেও গত ঈদের পর থেকে পুরোনো শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ আগ্রহ দেখা যায়। সব মিলিয়ে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে প্রায় ৬৮০। আশা করছি, আজ পুরো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিবারের এক হাজার ১০০ জন সদস্যকে নিয়ে আমরা আনন্দের সঙ্গে এই আয়োজন উদ্যাপন করব।’ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের প্রত্যাশা, ‘পুরো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিবারের এক মিলনমেলায় একত্র হবে আজ। আমাদের পুরোনো অনেক শিক্ষার্থী নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল ও স্বনামধন্য। তাঁদের সঙ্গে নতুনদের মেলবন্ধন করিয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের অ্যালামনাইদের কার্যক্রম গতিশীল করতে চাই। এতে আমাদের নেটওয়ার্ক বাড়বে, যা আমাদের শিক্ষার্থীদের পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
শিখতী সানী
পুনর্মিলনী মানেই খোঁজ মিলবে দূরের বন্ধুদের, কাছের বন্ধুদের আর তাঁদের সঙ্গে অসংখ্য স্মৃতির। দেরি করে ক্যাম্পাসে পৌঁছে রুম নম্বরের জন্য হন্তদন্ত হয়ে কলাভবনের দ্বিতীয় তলায় ছোটাছুটির স্মৃতি কিন্তু প্রায় সবারই আছে। একেকটি পড়ার বিষয়ের জন্য যখন নীলক্ষেত থেকে ফটোকপি আর উদ্ধৃত অংশ আসত, তখন সেগুলো নিতে একসঙ্গে সবার হুমড়ি খেয়ে পড়া। সকালের ক্লাসে মন নেই, মন পড়ে আছে টিএসসির বিখ্যাত এক টাকার চা কিংবা পাঁচ টাকার সমুচায়। সারা বছর তাড়া করত মরগ্যানথু, ম্যাকিয়াভেলি, ক্লজউয়িটজ, কৌটিল্য আর হান্টিংটন। অথচ পরীক্ষার হলে বসে এদের আর কোনো দেখা নেই।
নিচের রসিকতাগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের যেকোনো শিক্ষার্থী বুঝতে পারবেন: ১৬৪৮ সালে যেন কী একটা ঘটেছিল। পাকিস্তানের রাজধানী—মনে হয় গুলিস্তান। অমুক স্যারের ক্লাসে ভেটকি মাছের মতো কে হেসেছিল, তার সমাধান আজও মেলেনি। রসিকতাগুলো ধরতে পারছেন তো? ক্লাস শেষে আইআর লেনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা! ক্যাম্পাস-জীবনের দিনগুলোর রংই আলাদা! আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্থান পরিবর্তন হয়ে নতুন সামাজিক অনুষদ ভবনে গেলেও ২০২৪ রুম নম্বরকে ভুলে যাওয়ার নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের যাত্রা শুরু ১৯৪৭ সাল থেকে পূর্ণ বিভাগ হিসেবে। পাঠ্য বিষয়বস্তু বিস্তৃত ছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ১৯৪৭-৪৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৯-৭০ শিক্ষাবর্ষ থেকে তিন বছরের স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি চালু হয়। ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে ব্যাচেলর প্রোগ্রাম চার বছরের একটি সমন্বিত কোর্স পদ্ধতি হিসেবে চালু হয়। ২০০৬-০৭ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায়ে গ্রেডিং পয়েন্টে মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। ড. মাহমুদ হোসাইন ছিলেন বিভাগের প্রথম প্রধান। অধ্যাপক পি সি চক্রবর্তী ছিলেন দ্বিতীয়। এই বিভাগের বহু শিক্ষার্থী দেশীয় ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনামধন্য।
পুনর্মিলনীর সমন্বয়ক অধ্যাপক আকমল হোসেন বলছিলেন ১৯৭৮ সালে এই বিভাগে যোগদানের স্মৃতিগুলোর কথা। প্রতিটি ক্লাসে ২০-২৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ছিলেন না, শিক্ষক ছিলেন প্রায় ১০ জন। আজ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে। অধ্যাপক আবদুল আজিজকে পেয়েছিলেন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। অধ্যাপক আজিজ ছিলেন অসম্ভব কড়া ও নিয়মনিষ্ঠ। প্রতিদিন ক্লাস শেষে শিক্ষকদের একটি ফরম পূরণ করতে হতো। তাতে জানাতে হতো কতজন এসেছেন, কী পড়ানো হলো আজ ইত্যাদি।
‘এ বছরের প্রথম দিকে শিক্ষকদের সভায় একটি পুনর্মিলনী আয়োজন করার প্রস্তাব করা হয়। সবার এই প্রস্তাবে সমর্থন ছিল জোরালো। প্রথম দিকে তেমন সাড়া না মিললেও গত ঈদের পর থেকে পুরোনো শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ আগ্রহ দেখা যায়। সব মিলিয়ে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে প্রায় ৬৮০। আশা করছি, আজ পুরো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিবারের এক হাজার ১০০ জন সদস্যকে নিয়ে আমরা আনন্দের সঙ্গে এই আয়োজন উদ্যাপন করব।’ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের প্রত্যাশা, ‘পুরো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিবারের এক মিলনমেলায় একত্র হবে আজ। আমাদের পুরোনো অনেক শিক্ষার্থী নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল ও স্বনামধন্য। তাঁদের সঙ্গে নতুনদের মেলবন্ধন করিয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের অ্যালামনাইদের কার্যক্রম গতিশীল করতে চাই। এতে আমাদের নেটওয়ার্ক বাড়বে, যা আমাদের শিক্ষার্থীদের পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
শিখতী সানী
No comments