বহে কাল নিরবধি-বিএনপির রাজনীতি কোন পথে? by এম আবদুল হাফিজ
রাজনীতিকে এক ধরনের যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছিলেন মাও সে তুং। সেই যুদ্ধে নেমে রাজনীতিকরা সবাই সব সময় জয়ের মুকুটই পরতে চান। কিন্তু সময়ে তাঁদের পরাজয়ের কণ্টক মুকুটও পরতে হয়। এটাই রাজনীতির বাস্তবতা। মাত্র দেড় বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দশম সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে আন্দাজ,
অনুমান ও বিতর্ক এখনই তুঙ্গে; কে হাসবে শেষ হাসিটি। কে পরবে জয়ের মুকুট। এ দেশের রাজনীতিতে দেড় বছর অনেক দীর্ঘ সময়। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনী সমীকরণ বদলে যাবে বারবার। তাই বলে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ থেমে নেই। প্রকারান্তরে এর মধ্যেই শুরু হয়েছে নির্বাচনের কাউন্টডাউন।
এখনকার হিসাব মতো নির্বাচনে মুখোমুখি হবেন জোটবদ্ধ হয়ে বা না হয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর আওয়ামী লীগ এবং তাঁর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া ও তাঁর নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং সম্ভবত সম্প্রতি অস্তিত্বে আসা ১৮-দলীয় জোট। উভয় প্রতিদ্বন্দ্বীর সমর্থক বা অনুসারী প্রায় সমান সমান হলেও শেখ হাসিনার বাড়তি শক্তি তাঁর ক্ষমতার দণ্ড। অবশ্য ক্ষমতায় থেকে বিগত বছরগুলোর ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে নির্বাচন করা সব সময় সুখকর নয়।
কোন ব্যবস্থা বা সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনো। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অনড় অবস্থান। বিরোধী দলের ধনুকভাঙা পণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু মহাজোট সরকার সাংবিধানিক সংশোধনী এনে নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সব ব্যবস্থা পাকাপাকি করে ফেলেছে এবং কৌশলে তার অনুকূলে যুক্তিজালও বিস্তার করেছে।
২০০৭ সালে নবম সংসদের নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের সমস্যা এতটা জটিল ছিল না। তারা শুধু সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান চেয়েছিল। তদানীন্তন জোট সরকার শুধু এটুকু লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল। বস্তুত জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার মুহূর্ত থেকেই আওয়ামী লীগের আন্দোলন-বিক্ষোভের কর্মসূচির সূত্রপাত হয়েছিল। এক-এগারো ঘটার আগ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। এক-এগারোর সরকারকে আওয়ামী লীগ তাদের আন্দোলনের ফসল বলেছিল। সরকারকে আগামী নির্বাচন পদ্ধতির সিদ্ধান্ত থেকে সরাতে বিএনপির কি রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখার শক্তি আছে?
বিএনপি কদাচিৎ তার দুর্বলতাগুলোর সমীক্ষা চালিয়েছে। একই পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতারা জোট সরকার আমলে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে রাজপথে খণ্ডযুদ্ধ করেছে। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, জলকামান বা রাবার বুলেটের ঘায়ে জর্জরিত হয়েও প্রতিপক্ষকে ইট-পাটকেলে প্রত্যুত্তর দিয়েছে। সমপর্যায়ের বিএনপি নেতাদের সাহস থাকলেও এমন আন্দোলনের কষ্ট সহ্যের কোনো নিদর্শন নেই। তারা বড়জোর দলীয় অফিস, প্রেসক্লাব বা কোনো সেমিনারের ভেন্যুতে স্যুট-টাই পরিহিত অবস্থায় গরম গরম এবং যৌক্তিক বক্তৃতা দিতে পারদর্শী, এর বেশি কিছু নয়।
বিএনপির দুর্বলতার এখানেই শেষ নয়। চারদলীয় জোট সরকার আমলের দুষ্কার্যের দুর্গন্ধমুক্ত কি তারা সম্পূর্ণভাবে হতে পেরেছে! স্বীকার করি যে জিয়ার বিএনপি এ দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যা দিয়েছিল এবং যেভাবে সরকারকে কলুষমুক্ত রাখতে পেরেছিল, আজকে ম্যাডাম জিয়ার বিএনপি তা পারবে বলে বিশ্বাস করা যায় না।
তা ছাড়া জোট সরকারপ্রধান হিসেবে তাঁকে এবং তাঁর অনুগ্রহভাজনদের ঘিরে অনেক কুকীর্তির স্মৃতি এখনো জীবন্ত। তবু স্বীকার করতেই হবে যে তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা এখনো অম্লান। তারই কিছুটা স্ফুরণ দেশবাসী দেখল তাঁর সাম্প্রতিক উত্তরাঞ্চল সফরে। অবশ্য এরও নানা রকম ব্যাখ্যা আছে। আফটার অল তিনি জিয়ার সহধর্মিণী। তা ছাড়া মহাজোটের কাছ থেকে হতাশায় মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানুষের মধ্যে একটি বিকল্পের ক্রমবর্ধমান অন্বেষা দানা বেঁধে উঠছে।
মোদ্দা কথায় ফিরি আবার। দেশের কিছু বিশিষ্টজন দুই নেত্রীর একান্ত সংলাপের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে একটি নিষ্পত্তির পক্ষপাতী। ভালো কথা, এমনটি ঘটলে তো দেশবাসী হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। কিন্তু এতেও যদি খালেদা জিয়া অনমনীয়তার পরিচয় দেন, তা কিছু মাইনাস পয়েন্টই বয়ে আনবে। এ মুহূর্তে যখন আমরা বাংলাদেশে আগ্রহী প্রতিবেশী দেশসহ আমাদের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর পরিষ্কার মনোভাব জানি না, প্রতিদ্বন্দ্বীদের আপেক্ষিক শক্তি সম্বন্ধে আমরা
অস্পষ্টতায়ই থাকব।
বিএনপিতে বেশ কিছু অভিজ্ঞ আমলা, আইনজীবী এবং ব্যবসায়ী নেতৃত্বের পর্যায়ে যুক্ত আছেন। এ ক্ষেত্রে আগে আওয়ামী লীগকে দুর্বল ভাবা হতো। কিন্তু এখন সে অবস্থা পাল্টে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মৌচাকে এখন মধুপিয়াসী ব্যবসায়ীরা, অনেক শ্রেণী-পেশার বিশেষজ্ঞ, কুশলী এবং ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্যও উপদেষ্টা রয়েছেন। তাই দুঃশাসনে জোট সরকারের খুব পশ্চাতে না থাকলেও নির্বাচনী দৌড়ে আওয়ামীরা বেশ
এগিয়েই আছে।
সুতরাং বিএনপির জন্য এখন সংকটের পর সংকট। আন্দোলন ক্রমেই গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দেওয়ার বারবার ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও একটা না একটা অজুহাতে তা স্থগিত রাখারই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, একটি বিশৃঙ্খল অসংগঠিত বিএনপিতে। আওয়ামী লীগ আগে থেকেই আন্দোলনে-বিক্ষোভে প্রচণ্ড শক্তির অধিকারী। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা প্রকার কূটকৌশল এবং সেগুলো প্রয়োজন মতো প্রয়োগ করার দক্ষ কারিগর?
সবারই জানা, আওয়ামী শাসকদের দুর্বিনীত দুর্নীতি, অন্যায়, অনিয়মসহ অনেক ব্যর্থতা সত্ত্বেও একটি দুর্বল বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীন দলটি। তবে নির্বাচনী জয়-পরাজয়ের প্রশ্নে আগামী দেড় বছরের সময়ই মূলধন। এ সময় অনেক বিষয়ে দীর্ঘ মনে হলেও বিভিন্ন ইস্যুতে আপাত অনমনীয় একটি সরকারের প্রতিকূলে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য খুব দীর্ঘ নয়। শুধু বিবৃতি-বক্তব্য নয়, বিএনপিকে রাজপথের শক্তি সঞ্চয়েও সমকক্ষ হতে হবে।
বিগত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের আন্দোলন-বিক্ষোভের ক্ষমতা ও তা সংগঠনে তার কৌশল দেখে অভিভূত হতাম। সে সময় রাজপথে আওয়ামীদের লড়াকু ভূমিকা দর্শনে ইনতিফাদার নতুন সংস্করণ শীর্ষক একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম, যা যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছিল। ফিলিস্তিনিদের ইনতিফাদার প্রচণ্ডতাকে ঠেকাতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন অসলো শান্তিপ্রক্রিয়ার সূচনা করেছিলেন। বিএনপি আন্দোলনে প্রচণ্ডতা যদি আনতেও পারে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তূণে তা ঠেকানোর অনেক অস্ত্রই আছে।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইএসএস
এখনকার হিসাব মতো নির্বাচনে মুখোমুখি হবেন জোটবদ্ধ হয়ে বা না হয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর আওয়ামী লীগ এবং তাঁর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া ও তাঁর নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং সম্ভবত সম্প্রতি অস্তিত্বে আসা ১৮-দলীয় জোট। উভয় প্রতিদ্বন্দ্বীর সমর্থক বা অনুসারী প্রায় সমান সমান হলেও শেখ হাসিনার বাড়তি শক্তি তাঁর ক্ষমতার দণ্ড। অবশ্য ক্ষমতায় থেকে বিগত বছরগুলোর ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে নির্বাচন করা সব সময় সুখকর নয়।
কোন ব্যবস্থা বা সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনো। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অনড় অবস্থান। বিরোধী দলের ধনুকভাঙা পণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু মহাজোট সরকার সাংবিধানিক সংশোধনী এনে নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সব ব্যবস্থা পাকাপাকি করে ফেলেছে এবং কৌশলে তার অনুকূলে যুক্তিজালও বিস্তার করেছে।
২০০৭ সালে নবম সংসদের নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের সমস্যা এতটা জটিল ছিল না। তারা শুধু সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান চেয়েছিল। তদানীন্তন জোট সরকার শুধু এটুকু লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল। বস্তুত জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার মুহূর্ত থেকেই আওয়ামী লীগের আন্দোলন-বিক্ষোভের কর্মসূচির সূত্রপাত হয়েছিল। এক-এগারো ঘটার আগ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। এক-এগারোর সরকারকে আওয়ামী লীগ তাদের আন্দোলনের ফসল বলেছিল। সরকারকে আগামী নির্বাচন পদ্ধতির সিদ্ধান্ত থেকে সরাতে বিএনপির কি রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখার শক্তি আছে?
বিএনপি কদাচিৎ তার দুর্বলতাগুলোর সমীক্ষা চালিয়েছে। একই পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতারা জোট সরকার আমলে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে রাজপথে খণ্ডযুদ্ধ করেছে। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, জলকামান বা রাবার বুলেটের ঘায়ে জর্জরিত হয়েও প্রতিপক্ষকে ইট-পাটকেলে প্রত্যুত্তর দিয়েছে। সমপর্যায়ের বিএনপি নেতাদের সাহস থাকলেও এমন আন্দোলনের কষ্ট সহ্যের কোনো নিদর্শন নেই। তারা বড়জোর দলীয় অফিস, প্রেসক্লাব বা কোনো সেমিনারের ভেন্যুতে স্যুট-টাই পরিহিত অবস্থায় গরম গরম এবং যৌক্তিক বক্তৃতা দিতে পারদর্শী, এর বেশি কিছু নয়।
বিএনপির দুর্বলতার এখানেই শেষ নয়। চারদলীয় জোট সরকার আমলের দুষ্কার্যের দুর্গন্ধমুক্ত কি তারা সম্পূর্ণভাবে হতে পেরেছে! স্বীকার করি যে জিয়ার বিএনপি এ দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যা দিয়েছিল এবং যেভাবে সরকারকে কলুষমুক্ত রাখতে পেরেছিল, আজকে ম্যাডাম জিয়ার বিএনপি তা পারবে বলে বিশ্বাস করা যায় না।
তা ছাড়া জোট সরকারপ্রধান হিসেবে তাঁকে এবং তাঁর অনুগ্রহভাজনদের ঘিরে অনেক কুকীর্তির স্মৃতি এখনো জীবন্ত। তবু স্বীকার করতেই হবে যে তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা এখনো অম্লান। তারই কিছুটা স্ফুরণ দেশবাসী দেখল তাঁর সাম্প্রতিক উত্তরাঞ্চল সফরে। অবশ্য এরও নানা রকম ব্যাখ্যা আছে। আফটার অল তিনি জিয়ার সহধর্মিণী। তা ছাড়া মহাজোটের কাছ থেকে হতাশায় মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানুষের মধ্যে একটি বিকল্পের ক্রমবর্ধমান অন্বেষা দানা বেঁধে উঠছে।
মোদ্দা কথায় ফিরি আবার। দেশের কিছু বিশিষ্টজন দুই নেত্রীর একান্ত সংলাপের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে একটি নিষ্পত্তির পক্ষপাতী। ভালো কথা, এমনটি ঘটলে তো দেশবাসী হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। কিন্তু এতেও যদি খালেদা জিয়া অনমনীয়তার পরিচয় দেন, তা কিছু মাইনাস পয়েন্টই বয়ে আনবে। এ মুহূর্তে যখন আমরা বাংলাদেশে আগ্রহী প্রতিবেশী দেশসহ আমাদের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর পরিষ্কার মনোভাব জানি না, প্রতিদ্বন্দ্বীদের আপেক্ষিক শক্তি সম্বন্ধে আমরা
অস্পষ্টতায়ই থাকব।
বিএনপিতে বেশ কিছু অভিজ্ঞ আমলা, আইনজীবী এবং ব্যবসায়ী নেতৃত্বের পর্যায়ে যুক্ত আছেন। এ ক্ষেত্রে আগে আওয়ামী লীগকে দুর্বল ভাবা হতো। কিন্তু এখন সে অবস্থা পাল্টে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মৌচাকে এখন মধুপিয়াসী ব্যবসায়ীরা, অনেক শ্রেণী-পেশার বিশেষজ্ঞ, কুশলী এবং ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্যও উপদেষ্টা রয়েছেন। তাই দুঃশাসনে জোট সরকারের খুব পশ্চাতে না থাকলেও নির্বাচনী দৌড়ে আওয়ামীরা বেশ
এগিয়েই আছে।
সুতরাং বিএনপির জন্য এখন সংকটের পর সংকট। আন্দোলন ক্রমেই গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দেওয়ার বারবার ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও একটা না একটা অজুহাতে তা স্থগিত রাখারই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, একটি বিশৃঙ্খল অসংগঠিত বিএনপিতে। আওয়ামী লীগ আগে থেকেই আন্দোলনে-বিক্ষোভে প্রচণ্ড শক্তির অধিকারী। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা প্রকার কূটকৌশল এবং সেগুলো প্রয়োজন মতো প্রয়োগ করার দক্ষ কারিগর?
সবারই জানা, আওয়ামী শাসকদের দুর্বিনীত দুর্নীতি, অন্যায়, অনিয়মসহ অনেক ব্যর্থতা সত্ত্বেও একটি দুর্বল বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীন দলটি। তবে নির্বাচনী জয়-পরাজয়ের প্রশ্নে আগামী দেড় বছরের সময়ই মূলধন। এ সময় অনেক বিষয়ে দীর্ঘ মনে হলেও বিভিন্ন ইস্যুতে আপাত অনমনীয় একটি সরকারের প্রতিকূলে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য খুব দীর্ঘ নয়। শুধু বিবৃতি-বক্তব্য নয়, বিএনপিকে রাজপথের শক্তি সঞ্চয়েও সমকক্ষ হতে হবে।
বিগত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের আন্দোলন-বিক্ষোভের ক্ষমতা ও তা সংগঠনে তার কৌশল দেখে অভিভূত হতাম। সে সময় রাজপথে আওয়ামীদের লড়াকু ভূমিকা দর্শনে ইনতিফাদার নতুন সংস্করণ শীর্ষক একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম, যা যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছিল। ফিলিস্তিনিদের ইনতিফাদার প্রচণ্ডতাকে ঠেকাতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন অসলো শান্তিপ্রক্রিয়ার সূচনা করেছিলেন। বিএনপি আন্দোলনে প্রচণ্ডতা যদি আনতেও পারে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তূণে তা ঠেকানোর অনেক অস্ত্রই আছে।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইএসএস
No comments