কোনোটাতেই আগে নজর দেওয়া হয়নি by মির্জ্জা এ বি আজিজুল ইসলাম
বাংলাদেশে এখন দুটি অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে জনগণের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এর একটি হলো ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড এবং এর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ বিষয়ে অভিযোগ। অন্যটি হলো হলমার্ক কম্পানির গৃহীত অস্বাভাবিক পরিমাণ অর্থ।
এখন দুটি ঘটনাই আদালতে গড়িয়েছে এবং বিজ্ঞ আদালত তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এবং উচ্চপর্যায়ে জড়িত কয়েকজন এখন বিহাইন্ড দ্য বার। তবে দুটি ঘটনার মধ্যে একটি পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, ডেসটিনি কোনো ব্যাংকিং অপারেশন প্রতিষ্ঠান নয়। যদিও এক ধরনের ব্যাংকিংয়ের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। তবে তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল কিছু লোক রিক্রুট করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া। এ ব্যাপারটিতে সরকারের আগেই বড় করে নজর দেওয়া উচিত ছিল। যথাসময়ে এদের ঠেকানো গেলে এত বড় অঙ্কের অর্থের ক্ষতি জনগণের ওপর চাপত না। যা হোক, এখন বিজ্ঞ আদালত এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাদের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে দেখা সম্ভব। যেমন- কোন কোন এখতিয়ার তাদের ছিল এবং তারা করেছেটা কী? জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ যদি প্রদর্শন করতে না পারে, তাহলে তা নিশ্চয়ই মানি লন্ডারিংসহ গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে চলে যায়। আর সে কারণে যথাযথভাবেই ডেসটিনির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এসেছে।
দ্বিতীয়টি হলো হলমার্ক। হলমার্ক নিয়ে আমি দুটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। এই হলমার্কের ঋণ নিয়ে প্রাথমিকভাবে বোর্ডের যথাযথ তদারকির ব্যবস্থা করা হয়নি। মনিটরিং হয়নি। যার কারণে ব্যবস্থাপক এ ধরনের একটি ঋণের অনুমোদন দিয়েছেন। আমি অনেকবার গণমাধ্যমে বলেছি, দুর্নীতি দমন সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল। এই কেলেঙ্কারির ব্যাপারে প্রথমত ব্যাংকের বোর্ডের দায় সর্বাধিক বলে আমি মনে করি। লক্ষ করলেই দেখা যাবে, কলমানি বাজারে একসময় সোনালী ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোকে অর্থ ঋণ দিত। অথচ এই ব্যাংককেই আবার ধার নিতে হয়েছে। এই যে পরিবর্তন, এ সম্পর্কে বোর্ডের জ্ঞাত থাকা উচিত ছিল। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি করপোরেট ব্যাংকের ছয় মাস পর পর অডিট হওয়ার কথা। কিন্তু এ ব্যাংকে দেড় বছরেও কোনো অডিট হয়নি। যদিও মামলার ব্যাপারে জানানো হয়েছে যে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিক অনুসন্ধানে আসেনি; কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই সেটা আসবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
কয়েক দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, লন্ডনে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড থেকে ৬৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে। বৈদেশিক এলসির টাকা না দিয়ে ওই টাকা সোনালী ব্যাংককে পরিশোধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। বোর্ডের নিশ্চয়ই এসব দেখা উচিত ছিল।
আর তৃতীয় ব্যর্থতাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিম, গোয়েন্দা টিমসহ অনেক শাখা রয়েছে। সেই শাখাগুলো কী করেছে?
দুদক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংককে মামলা করতে বলেছিল। কিন্তু তার আগেই এ বিষয়টি যখন নজরে আসে, তখন সোনালী ব্যাংকের উচিত ছিল কোনো জটিলতায় না গিয়ে টাকা উদ্ধারে নেমে পড়া। ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং হলমার্কের কর্ণধার ২৭ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে।
এখন যে পর্যায়ে বিষয়টি গেছে, তাতে এ বিষয়গুলো শক্ত আইনি-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আগাবে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা স্রেফ উধাও হয়ে যাওয়ার কারণে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক। এখানে মানি লন্ডারিংয়ের ব্যাপার রয়েছে, তছরুপের ব্যাপার রয়েছে। ফলে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করবে এবং বিচার বিভাগ সে অনুযায়ী নিশ্চয়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। এ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাদের বিরুদ্ধে এই দুটি ঘটনায় বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এবং যে অর্থ জনগণের ও রাষ্ট্রের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেছে, সেই অর্থ আদায়ের জন্য অভিযুক্তদের অন্য সব ব্যক্তিগত সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
লেখক : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ
দ্বিতীয়টি হলো হলমার্ক। হলমার্ক নিয়ে আমি দুটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। এই হলমার্কের ঋণ নিয়ে প্রাথমিকভাবে বোর্ডের যথাযথ তদারকির ব্যবস্থা করা হয়নি। মনিটরিং হয়নি। যার কারণে ব্যবস্থাপক এ ধরনের একটি ঋণের অনুমোদন দিয়েছেন। আমি অনেকবার গণমাধ্যমে বলেছি, দুর্নীতি দমন সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল। এই কেলেঙ্কারির ব্যাপারে প্রথমত ব্যাংকের বোর্ডের দায় সর্বাধিক বলে আমি মনে করি। লক্ষ করলেই দেখা যাবে, কলমানি বাজারে একসময় সোনালী ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোকে অর্থ ঋণ দিত। অথচ এই ব্যাংককেই আবার ধার নিতে হয়েছে। এই যে পরিবর্তন, এ সম্পর্কে বোর্ডের জ্ঞাত থাকা উচিত ছিল। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি করপোরেট ব্যাংকের ছয় মাস পর পর অডিট হওয়ার কথা। কিন্তু এ ব্যাংকে দেড় বছরেও কোনো অডিট হয়নি। যদিও মামলার ব্যাপারে জানানো হয়েছে যে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিক অনুসন্ধানে আসেনি; কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই সেটা আসবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
কয়েক দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, লন্ডনে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড থেকে ৬৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে। বৈদেশিক এলসির টাকা না দিয়ে ওই টাকা সোনালী ব্যাংককে পরিশোধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। বোর্ডের নিশ্চয়ই এসব দেখা উচিত ছিল।
আর তৃতীয় ব্যর্থতাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিম, গোয়েন্দা টিমসহ অনেক শাখা রয়েছে। সেই শাখাগুলো কী করেছে?
দুদক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংককে মামলা করতে বলেছিল। কিন্তু তার আগেই এ বিষয়টি যখন নজরে আসে, তখন সোনালী ব্যাংকের উচিত ছিল কোনো জটিলতায় না গিয়ে টাকা উদ্ধারে নেমে পড়া। ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং হলমার্কের কর্ণধার ২৭ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে।
এখন যে পর্যায়ে বিষয়টি গেছে, তাতে এ বিষয়গুলো শক্ত আইনি-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আগাবে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা স্রেফ উধাও হয়ে যাওয়ার কারণে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক। এখানে মানি লন্ডারিংয়ের ব্যাপার রয়েছে, তছরুপের ব্যাপার রয়েছে। ফলে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করবে এবং বিচার বিভাগ সে অনুযায়ী নিশ্চয়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। এ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাদের বিরুদ্ধে এই দুটি ঘটনায় বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এবং যে অর্থ জনগণের ও রাষ্ট্রের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেছে, সেই অর্থ আদায়ের জন্য অভিযুক্তদের অন্য সব ব্যক্তিগত সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
লেখক : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ
No comments