উপকূল লণ্ডভণ্ড-আবহাওয়া বিভাগ দায় এড়াতে পারে না
বুধবার গভীর রাতে উপকূলীয় পাঁচ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানির সংখ্যা প্রাথমিকভাবে সিডর ও আইলার তুলনায় কম হলেও চূড়ান্তভাবে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিখোঁজ চার শতাধিক ট্রলারে থাকা দুই হাজারের বেশি জেলের ভাগ্যে কী ঘটেছে, এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
আক্রান্ত স্থলভাগ যেভাবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে, তা থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের অসহায়ত্ব স্পষ্ট। সময়মতো পূর্বাভাস প্রচার করা গেলে তারা ঝড়ের আগেই নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারত। ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রামের সমুদ্রবর্তী জনপদগুলোতে নিরুদ্বেগে ঘুমিয়ে থাকা মানুষকেও এভাবে ঝড়ের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হতো না। জীবন ও সম্পত্তির এই ক্ষয়ক্ষতির দায় আবহাওয়া দফতর কি এড়াতে পারে? কারণ আমরা গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাপারে কোনো পূর্বাভাসই প্রতিষ্ঠানটি দিতে পারেনি। সাধারণ নিম্নচাপজনিত ততোধিক সাধারণ 'তিন নম্বর সতর্ক সংকেত' ঝুলিয়ে রেখে দায় সেরেছে। মানুষের জানমাল সুরক্ষার ব্যাপারে এমন গাফিলতির নজির আগে কখনও দেখা গেছে বলে মনে পড়ে না। আরও বিস্ময়কর হচ্ছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব স্বয়ং ফোন করে বুধবার বিকেলে চার নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু 'অফিস সময়' ফুরিয়ে যাওয়ার অজুহাতে সে নির্দেশ আমলে নেওয়া হয়নি। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এমন নির্লিপ্ততা নিছক দায়িত্বে অবহেলা নয়, তা ক্ষমাহীন ঔদ্ধত্য। সমকালের প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিবৃত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমরা আশা করি, ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন তৎপরতায় সতর্কতা সংকেত প্রচারের মতো গাফিলতির পুনরাবৃত্তি হবে না। নিখোঁজ জেলেদের খোঁজেও প্রশাসন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা প্রদর্শন করবে বলে প্রত্যাশা। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশ আবহমানকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে। কিন্তু সতর্কতা সংকেত ও পূর্বাভাস ব্যবস্থা এখন অতীতের চেয়ে উন্নত। সুতরাং পূর্ব সতর্কতা, উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় গলদ থাকলে সেই লড়াইয়ে জেতা অসম্ভব।
No comments