বৌদ্ধপল্লিতে হামলার সুষ্ঠু তদন্ত হোক- রাজনৈতিক বাহাস বন্ধ করুন

কক্সবাজারের বিভিন্ন বৌদ্ধপল্লি ও বিহারে হামলার ঘটনা নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল যেভাবে একে অপরের ওপর দায় চাপাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, তা স্বভাবতই দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করছে। এ ধরনের ঘটনায় যেখানে দলমত-নির্বিশেষে সবার উচিত আক্রান্ত ও অসহায় এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো,


ভেঙে যাওয়া বসতবাড়ি ও বিহার নির্মাণে সর্বাত্মক সহায়তা করা, সেখানে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের বাগ্যুদ্ধ কোনোভাবেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় নয়।
প্রথমেই স্বীকার করতে হবে, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক। এই মানবতাবিরোধী অপরাধ যারাই ঘটিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৌদ্ধপল্লিতে হামলার জন্য বিএনপিদলীয় সাংসদকে দায়ী করেছেন, আঙুল তুলেছেন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রতি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটি বিএনপি ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কাজ। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দাবি, সরকারের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে। মওদুদ আহমদের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটিও গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে সরকারি দল ও সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছে।
প্রধান দুটি দলের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান কাম্য নয়। এতে আক্রান্ত বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী আশ্বস্ত হবে না, বরং তাদের মনে শঙ্কা বাড়বে। অতএব, বৌদ্ধপল্লিতে হামলার ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক বাহাস বন্ধ করুন।
ইতিমধ্যে ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেসব খবর এসেছে, তাতে স্পষ্ট যে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বড় দুই দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী কেউই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেননি। আর স্থানীয় পর্যায়ে প্রধান দুই দলের কেউ দায় এড়াতে পারে না। সেদিন প্রতিবাদ সভার নামে বক্তারা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। সেখানে এক পক্ষ উসকানি দিয়েছে এবং অন্য পক্ষ শান্তির ললিতবাণী শুনিয়েছে—এ কথা ভাবার কারণ নেই। অতএব, দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে উপশমের দিকেই মনোযোগ দিতে হবে।
সরকার ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখন সরকারের দায়িত্ব ঘটনার মূল হোতাদের খুঁজে বের করা। আর বিরোধী দলের উচিত সত্য উদ্ঘাটনে সহায়তা করা। সরকার সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তারা হাতিয়ার মাত্র। পেছনের শক্তি এখনো চিহ্নিত হয়নি।
এ কারণেই আমরা মনে করি, সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনের আগে এ নিয়ে কারও আগাম বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়। আক্রান্ত এলাকায় কেবল সরকারি ও বিরোধী দলের নেতারাই যাননি, গিয়েছেন নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। সত্য উদ্ঘাটনে তাঁদের বক্তব্য আমলে নিতে হবে। আমলে নিতে হবে এই হামলায় আক্রান্ত মানুষের বক্তব্যও। এ নিয়ে দলীয় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।

No comments

Powered by Blogger.