ফিরে এসো মালালা by মইনউদ্দীন খান বাদল
ঘরে ঢুকতেই আমার স্ত্রী আমাকে বলল, মালালা গুলি খেয়েছে। আমি জীবনে দু'বার গুলি খেয়েছি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার অনুভূতিটি আমার জানা। অনেকদিন পর মনে হলো হৃৎপিণ্ডের খুব কাছাকাছি কোথাও গুলি খেলাম। কয়েক মুহূর্তের বোবা সময় কাটানোর পর সমস্ত সত্তা ছেয়ে গেল ক্রোধে।
ক্রোধ ওই অমানুষগুলোর প্রতি, যারা একটি ফুলকে ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছে। সোয়াতের বাগানের একমাত্র ফুল।
মালালার সঙ্গে আমার দেখা করাচিতে। মানবাধিকার কর্মী বন্ধু কেরামত আলীর অফিসে। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম আর শুনছিলাম মেয়েটির কথা, যে কি-না সোয়াতে তালেবানদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানে নারী জন্মের সমস্ত অপমানকে দু'হাতে সরিয়ে তালেবানি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে মেয়েটি। মালালা বলেছিল, তার সোয়াতের কথা। উচ্ছল পাহাড়ি নদী। আখরোটের বাগান। চিনার গাছ আর অভ্রভেদী পাহাড়ের কথা। উনুনের পাশে বসে মায়ের হাতে রুটি খাওয়া। বান্ধবীদের সঙ্গে আপেলের বনে হরিৎ হাসির হিরণ্যে হারিয়ে যাওয়ার কথা। একদিন এ রকম একটি স্বর্গে তালেবানরা এলো। নরক নেমে এলো হিন্দুকুশ থেকে।
ভ্রান্ত দর্শন মানুষকে অমানুষ বানিয়ে দেয়। মালালা দর্শন কপচায়নি কিন্তু জীবনের সমস্ত বিশ্বাসকে তার গভীর নীল দুটি চোখে এনে বলেছে, 'চাচা, আখেরি দমতক চেষ্টা করব। নিশ্চয়ই ওরা একদিন তাদের ভুল বুঝতে পারবে। আমার সোয়াত আমি ফিরে পাবো।'
হলুদ পাখির মতো মেয়েটিকে বললাম, তুমি তো অনেক বড় নেত্রী, বিশ্ব তোমায় চেনে, দাও, আমার ডায়েরিতে কিছু লিখে দাও। সে ইংরেজিতে লিখল পশতু কবিতা।
'অ্যায় জামা ওয়াতেনে দা লালুনে খাজানে জামা
এসত্রা হারা দারা কি দি
দা তুরো নিখানে জামা'
বললাম, ওয়াতেনে ছাড়া একছত্রও বুঝিনি। বলল, এই কবিতায় বলা হয়েছে, আমার দেশ মণি-মাণিক্যে ভরপুর। আর মানুষগুলো উঁচু পাহাড়ের মতো উঁচু। মেয়েটি তার দেশের মানুষগুলোকে উঁচু পাহাড়ের মতো দেখতে চেয়েছে অথচ সেই মানুষদের কেউ তাকে খুঁজে নিয়ে গুলি করেছে।
আমার হঠাৎ মনে হয়েছে, মালালা গুলি খায়নি। পাকিস্তানের আত্মা গুলি খেয়েছে। মালালার রক্তে পাকিস্তানের পবিত্র হওয়ার এই শেষ সুযোগ। হয় পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়াবে, না হয় কেন জানি না পাকিস্তানের অন্তর্যাত্রা শুরু হবে। বড্ড অভিশাপ আছে পাকিস্তানের ওপর। ৩০ লাখ নিরপরাধ বাঙালির অভিশাপ। তবুও, তবুও এক মালালা ইউসুফজাইয়ের জন্য সমস্ত অভিশাপ তুলে নিতে চাই। কারণ বাঙালি তো লড়াই করেছে 'একটি ফুলকে বাঁচাবার জন্য।'
১১ অক্টোবর ২০১২
মইনউদ্দীন খান বাদল
সংসদ সদস্য
মালালার সঙ্গে আমার দেখা করাচিতে। মানবাধিকার কর্মী বন্ধু কেরামত আলীর অফিসে। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম আর শুনছিলাম মেয়েটির কথা, যে কি-না সোয়াতে তালেবানদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানে নারী জন্মের সমস্ত অপমানকে দু'হাতে সরিয়ে তালেবানি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে মেয়েটি। মালালা বলেছিল, তার সোয়াতের কথা। উচ্ছল পাহাড়ি নদী। আখরোটের বাগান। চিনার গাছ আর অভ্রভেদী পাহাড়ের কথা। উনুনের পাশে বসে মায়ের হাতে রুটি খাওয়া। বান্ধবীদের সঙ্গে আপেলের বনে হরিৎ হাসির হিরণ্যে হারিয়ে যাওয়ার কথা। একদিন এ রকম একটি স্বর্গে তালেবানরা এলো। নরক নেমে এলো হিন্দুকুশ থেকে।
ভ্রান্ত দর্শন মানুষকে অমানুষ বানিয়ে দেয়। মালালা দর্শন কপচায়নি কিন্তু জীবনের সমস্ত বিশ্বাসকে তার গভীর নীল দুটি চোখে এনে বলেছে, 'চাচা, আখেরি দমতক চেষ্টা করব। নিশ্চয়ই ওরা একদিন তাদের ভুল বুঝতে পারবে। আমার সোয়াত আমি ফিরে পাবো।'
হলুদ পাখির মতো মেয়েটিকে বললাম, তুমি তো অনেক বড় নেত্রী, বিশ্ব তোমায় চেনে, দাও, আমার ডায়েরিতে কিছু লিখে দাও। সে ইংরেজিতে লিখল পশতু কবিতা।
'অ্যায় জামা ওয়াতেনে দা লালুনে খাজানে জামা
এসত্রা হারা দারা কি দি
দা তুরো নিখানে জামা'
বললাম, ওয়াতেনে ছাড়া একছত্রও বুঝিনি। বলল, এই কবিতায় বলা হয়েছে, আমার দেশ মণি-মাণিক্যে ভরপুর। আর মানুষগুলো উঁচু পাহাড়ের মতো উঁচু। মেয়েটি তার দেশের মানুষগুলোকে উঁচু পাহাড়ের মতো দেখতে চেয়েছে অথচ সেই মানুষদের কেউ তাকে খুঁজে নিয়ে গুলি করেছে।
আমার হঠাৎ মনে হয়েছে, মালালা গুলি খায়নি। পাকিস্তানের আত্মা গুলি খেয়েছে। মালালার রক্তে পাকিস্তানের পবিত্র হওয়ার এই শেষ সুযোগ। হয় পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়াবে, না হয় কেন জানি না পাকিস্তানের অন্তর্যাত্রা শুরু হবে। বড্ড অভিশাপ আছে পাকিস্তানের ওপর। ৩০ লাখ নিরপরাধ বাঙালির অভিশাপ। তবুও, তবুও এক মালালা ইউসুফজাইয়ের জন্য সমস্ত অভিশাপ তুলে নিতে চাই। কারণ বাঙালি তো লড়াই করেছে 'একটি ফুলকে বাঁচাবার জন্য।'
১১ অক্টোবর ২০১২
মইনউদ্দীন খান বাদল
সংসদ সদস্য
No comments