বিএনপির তদন্ত প্রতিবেদন-সরকারই রামুর ঘটনা ঘটিয়েছে
কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের পটিয়ায় সরকারের পরোক্ষ ইন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে বিএনপির তদন্ত কমিটি। তাদের অভিযোগ, দেশে জঙ্গি আছে তা প্রমাণ করতেই সরকার রামুর ঘটনা ঘটিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়। কমিটির প্রধান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ৬৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, 'আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে নিশ্চিত হয়েছি, বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনার দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনের কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে এ রকম ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা সরকারের নীরবতার বহিঃপ্রকাশ। এ থেকেই বোঝা যায়, পরোক্ষভাবে সরকারের ইন্ধনে হামলার ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছিল।'
রামুর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি মওদুদের। তিনি বলেন, সরকার এই কমিশন গঠন করে তদন্ত করলে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং এতে বিএনপি অবশ্যই সহযোগিতা করবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন না করা হলে অন্য কোনো তদন্ত প্রতিবেদন কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি দিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে না।
মওদুদ আহমদ বলেন, 'আমরা মনে করি, দুটি কারণে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রথমত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে বাধাগ্রস্ত করে দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্র হয়ে গেছে- এই ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা। কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না।' তিনি বলেন, রামুর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। যদি পূর্বপরিকল্পিত না হতো, প্রশাসন অতি স্বল্প সময়ে এবং খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিত।
বিএনপির এ নেতা বলেন, সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য যাদের মদদে এ ঘটনা ঘটেছে, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যারা যথাসময়ে দায়িত্ব পালন করেনি, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি জানান, রামুতে সাতটি, উখিয়ায় চারটি, টেকনাফে একটি এবং পটিয়ায় তিনটি- মোট ১৫টি বিহার ও প্যাগোডা বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ৩০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধবিহারে এমনভাবে হামলা করা হয়েছে, মনে হয়েছে, বোমা ফেলা হয়েছে। রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ায় বৌদ্ধ জনগণসহ ওই অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবি জানান তিনি।
মওদুদ বলেন, রামুর বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজলকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য মিথ্যাচার। তিনি বলেন, স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুরোধে কাজল ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন পরিস্থিতি শান্ত করতে। অথচ প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলে নিজের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন।
৬০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, 'সরকারের মদদে এই ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁরা আমাদের কাছে বলেছেন। ওই দিন রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত রামুর সাতটি বিহারে হামলা ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটল। ঘটনাস্থল থেকে থানা আধা কিলোমিটার, জেলা পুলিশ সদর দপ্তর মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে। সেনা ক্যাম্প চার কিলোমিটার দূরে। তারা কেউই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসেনি বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন।' তিনি বলেন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি প্রভৃতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে হামলাকারীরা এ ঘটনা ঘটাতে সাহস পেয়েছে। তাই সরকার কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারবে না।
মওদুদ আহমদ আরো বলেন, 'রামুতে এত ধ্বংসযজ্ঞ হলেও উত্তম বড়ুয়ার বাড়ি অক্ষত রয়েছে। কোনো আঘাতের চিহ্ন সেখানে আমরা দেখিনি। আমাদের তদন্ত কমিটির কাছে এটি দারুণভাবে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। যাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার উদ্ভব হয়েছে, সেই উত্তম বড়ুয়াকে সরকার জনসমক্ষে হাজির করেনি। এটা চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। উত্তম বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।' সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, গোলাম আকবর খন্দকার, গৌতম চক্রবর্তী ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া।
গত ১ অক্টোবর খালেদা জিয়া সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির সদস্যরা গত ৬ ও ৭ অক্টোবর রামু, উখিয়া, টেকনাফ, পটিয়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় ৬০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল ও সাক্ষীদের ভিডিওচিত্র তোলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উচ্চ ক্ষমতার তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি : রামুর ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। গতকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁরা এ দাবি জানান। দুপুরে ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, 'রামুর ঘটনার প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করুন, যাঁদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা কারো নেই। প্রয়োজনে সাবেক সিনিয়র বিচারপতিদের তদন্তের দায়িত্বভার দিন।'
সুশীল ফোরামের সভাপতি মো. জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
'দেশে সরকার আছে বলে মনে হয় না : এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, 'সরকারের সব কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি। দেশে সরকার আছে বলে আমরা মনে করি না।' গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মোটর চালক দল আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মোটর চালক দলের আহ্বায়ক সেলিম রেজা বাবু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরিন খান।
সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধ্বংসের জন্য দায়ী সরকার : এদিকে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জিয়া পরিষদ আয়েজিত 'রামুতে সংখ্যালঘুদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন ও বিএনপি অফিস অবরুদ্ধ করার' প্রতিবাদে মানববন্ধনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, সরকারি দলের ক্যাডাররাই রামুর বৌদ্ধমন্দির ও বসতিতে হামলা চালিয়ে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধ্বংস করেছে। ফারুক বলেন, রামুর ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন এক কথা, প্রধানমন্ত্রী বলেন আরেক কথা। ঘটনার প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতেই প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।
জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহার প্রমুখ।
« পূর্ববর্তী সংবাদ
মওদুদ আহমদ বলেন, 'আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে নিশ্চিত হয়েছি, বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনার দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনের কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে এ রকম ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা সরকারের নীরবতার বহিঃপ্রকাশ। এ থেকেই বোঝা যায়, পরোক্ষভাবে সরকারের ইন্ধনে হামলার ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছিল।'
রামুর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি মওদুদের। তিনি বলেন, সরকার এই কমিশন গঠন করে তদন্ত করলে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং এতে বিএনপি অবশ্যই সহযোগিতা করবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন না করা হলে অন্য কোনো তদন্ত প্রতিবেদন কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি দিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে না।
মওদুদ আহমদ বলেন, 'আমরা মনে করি, দুটি কারণে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রথমত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে বাধাগ্রস্ত করে দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্র হয়ে গেছে- এই ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা। কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না।' তিনি বলেন, রামুর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। যদি পূর্বপরিকল্পিত না হতো, প্রশাসন অতি স্বল্প সময়ে এবং খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিত।
বিএনপির এ নেতা বলেন, সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য যাদের মদদে এ ঘটনা ঘটেছে, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যারা যথাসময়ে দায়িত্ব পালন করেনি, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি জানান, রামুতে সাতটি, উখিয়ায় চারটি, টেকনাফে একটি এবং পটিয়ায় তিনটি- মোট ১৫টি বিহার ও প্যাগোডা বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ৩০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধবিহারে এমনভাবে হামলা করা হয়েছে, মনে হয়েছে, বোমা ফেলা হয়েছে। রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ায় বৌদ্ধ জনগণসহ ওই অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবি জানান তিনি।
মওদুদ বলেন, রামুর বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজলকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য মিথ্যাচার। তিনি বলেন, স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুরোধে কাজল ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন পরিস্থিতি শান্ত করতে। অথচ প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলে নিজের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন।
৬০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, 'সরকারের মদদে এই ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁরা আমাদের কাছে বলেছেন। ওই দিন রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত রামুর সাতটি বিহারে হামলা ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটল। ঘটনাস্থল থেকে থানা আধা কিলোমিটার, জেলা পুলিশ সদর দপ্তর মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে। সেনা ক্যাম্প চার কিলোমিটার দূরে। তারা কেউই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসেনি বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন।' তিনি বলেন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি প্রভৃতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে হামলাকারীরা এ ঘটনা ঘটাতে সাহস পেয়েছে। তাই সরকার কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারবে না।
মওদুদ আহমদ আরো বলেন, 'রামুতে এত ধ্বংসযজ্ঞ হলেও উত্তম বড়ুয়ার বাড়ি অক্ষত রয়েছে। কোনো আঘাতের চিহ্ন সেখানে আমরা দেখিনি। আমাদের তদন্ত কমিটির কাছে এটি দারুণভাবে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। যাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার উদ্ভব হয়েছে, সেই উত্তম বড়ুয়াকে সরকার জনসমক্ষে হাজির করেনি। এটা চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। উত্তম বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।' সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, গোলাম আকবর খন্দকার, গৌতম চক্রবর্তী ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া।
গত ১ অক্টোবর খালেদা জিয়া সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির সদস্যরা গত ৬ ও ৭ অক্টোবর রামু, উখিয়া, টেকনাফ, পটিয়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় ৬০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল ও সাক্ষীদের ভিডিওচিত্র তোলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উচ্চ ক্ষমতার তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি : রামুর ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। গতকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁরা এ দাবি জানান। দুপুরে ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, 'রামুর ঘটনার প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করুন, যাঁদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা কারো নেই। প্রয়োজনে সাবেক সিনিয়র বিচারপতিদের তদন্তের দায়িত্বভার দিন।'
সুশীল ফোরামের সভাপতি মো. জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
'দেশে সরকার আছে বলে মনে হয় না : এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, 'সরকারের সব কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি। দেশে সরকার আছে বলে আমরা মনে করি না।' গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মোটর চালক দল আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মোটর চালক দলের আহ্বায়ক সেলিম রেজা বাবু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরিন খান।
সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধ্বংসের জন্য দায়ী সরকার : এদিকে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জিয়া পরিষদ আয়েজিত 'রামুতে সংখ্যালঘুদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন ও বিএনপি অফিস অবরুদ্ধ করার' প্রতিবাদে মানববন্ধনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, সরকারি দলের ক্যাডাররাই রামুর বৌদ্ধমন্দির ও বসতিতে হামলা চালিয়ে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধ্বংস করেছে। ফারুক বলেন, রামুর ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন এক কথা, প্রধানমন্ত্রী বলেন আরেক কথা। ঘটনার প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতেই প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।
জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহার প্রমুখ।
« পূর্ববর্তী সংবাদ
No comments