চিকিৎসাযন্ত্র কেনা চলছেই, অর্ধেক ব্যবহূত হয় না by শিশির মোড়ল
সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজগুলোতে কত চিকিৎসা-যন্ত্রপাতি সরকার দিয়েছে, কত অব্যবহূত, কত নষ্ট, তার হিসাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরে নেই। তবে একাধিক জরিপে দেখা গেছে, সরবরাহ করা যন্ত্রপাতির কমই ব্যবহূত হয়।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চিকিৎসা-যন্ত্রপাতি নিয়ে একটি জরিপ (বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সার্ভে ২০০৮) করেছিল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ওই জরিপে বলা হচ্ছে, সরকারের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাত কর্মসূচির আওতায় যত চিকিৎসা-যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছিল, তার ৫০ শতাংশ ব্যবহূত হয়। ১৬ শতাংশ যন্ত্রের মোড়কই খোলা হয়নি। ১৭ শতাংশ নষ্ট। বাকি ১৭ শতাংশ ব্যবহারের উপযোগী হলেও ব্যবহার করা হয় না।
এরপর ২০০৯ সালে আরেকটি জরিপে (বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০০৯) দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেওয়া মৌলিক চিকিৎসা-সরঞ্জামের ৩০ শতাংশ চুরি যায়, অর্থাৎ জরিপের সময় তা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাওয়া যায়নি। সরবরাহ করা মৌলিক চিকিৎসা-যন্ত্রপাতির ৭৫ শতাংশ পাওয়া যায় মাত্র ১৮ শতাংশ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, যন্ত্রপাতির চাহিদা আছে কি না, সেটা নিরূপণ করা হয় না। যন্ত্র কে চালাবে, সেটা নিশ্চিত না করেই কেনা হয়ে থাকে। ফলে যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দেশে উপজেলা হাসপাতালের সংখ্যা ৪২২টি। কেন্দ্রীয় ঔষধাগার জানাচ্ছে, এসব হাসপাতালে এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসাউন্ড, অটোক্লেভ, অজ্ঞানকারক যন্ত্র, ডি-ফিব্রিলেটর, ইনকিউবেটর যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আছে রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষার যন্ত্রপাতি। জেলা ও সাধারণ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্র, যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ হাসপাতালের সংখ্যা ১২০টি। এসব হাসপাতালে যন্ত্রের সংখ্যা অনেক বেশি।
যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র জানায়, এসব হাসপাতালে এক্স-রে যন্ত্রের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৭০০। বর্তমানে এর অর্ধেক নষ্ট। শুধু এক্স-রে যন্ত্র নয়, সব যন্ত্রের একই অবস্থা। ২০০৮ ও ২০০৯-এর জরিপ সম্পর্কে ওই সূত্র বলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ।
কেন্দ্রীয় ঔষধাগার সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি কেনাকাটার এক-পঞ্চমাংশ খরচ করে ওষুধের জন্য, বাকি টাকা যন্ত্রপাতি ক্রয়ে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে খরচ করেছিল ২১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৮৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর গত অর্থবছরে খরচ করে ১৯০ লাখ টাকা।
জেলা পরিস্থিতি: বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রায় ১৪ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রোগীদের কাজে আসছে না। কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দক্ষ কারিগরি লোক নেই বলে ১৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহের পর থেকে চালু করা যায়নি। এখন সেগুলো নষ্ট হচ্ছে। আর এক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি মেরামতের অভাবে অকেজো পড়ে আছে।
একাধিক এক্স-রে, মেমোগ্রাফি, ইনসুলেটর, ইটিটি, ১১টি অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, চক্ষু বিভাগের ক্যামেরা, লেজার, হিমো ডায়ালাইসিস যন্ত্র নষ্ট হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। ছয় বছর ধরে পড়ে রয়েছে এনজিওগ্রাম, হূদ্যন্ত্র ও ফুসফুসের রোগনির্ণয়ের একাধিক যন্ত্র, হিমো ডায়ালাইসিস, ব্রাকি থেরাপি, ইটিটি, ক্যাথেল্যাবসহ বেশ কিছু যন্ত্র। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আফজালুর রহমান বলেন, টেকনিশিয়ান নিয়োগ না দিয়েই এসব মূল্যবান যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছিল। কোনো কোনোটির মোড়কই এখনো খোলা হয়নি।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ২০১০ সালের পর থেকে দুই দফায় প্রায় ২৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়। এসব যন্ত্রপাতির প্রায় সবই অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এসব যন্ত্র চালানোর কোনো লোক কলেজে নেই।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানিয়েছে, নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, অথচ কেন্দ্রটি চালু হচ্ছে না। বার্ন ইউনিটের জন্য পাঁচ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, সেটিও চালু হয়নি। চার কোটি টাকা দিয়ে কেনা সিটি স্ক্যান যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। আটটি অটোক্লেভ যন্ত্রও নষ্ট। এ ছাড়া একাধিক এক্স-রে যন্ত্র নষ্ট হয়ে আছে দীর্ঘদিন।
যন্ত্র কিনতে মন্ত্রীকে মন্ত্রীর চিঠি: সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে চাহিদা বিবেচনা না করেই অতীতে যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, বর্তমান সরকারও তা করেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ২০১০ সালের ২ মার্চ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে লেখা দুটি চিঠিতে সাতটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কিনতে ১৫০ কোটি টাকা চান। এর মধ্যে খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ৫০ কোটি, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জন্য ১৫ কোটি, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ২০ কোটি, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের জন্য ১০ কোটি, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের জন্য ২০ কোটি, ঢাকা ডেন্টাল কলেজের জন্য ১৫ কোটি এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের জন্য ২০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
একই বছরের ২৪ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় ২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য ৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ১০ কোটি, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের জন্য আট কোটি, ঢাকা ডেন্টাল কলেজের জন্য আট কোটি ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের জন্য ১০ কোটি টাকা দেয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চিঠিতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের নাম উল্লেখ ছিল না। তবু ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় যথাক্রমে নয় ও পাঁচ কোটি টাকা।
অন্যদিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কথা উল্লেখ থাকলেও মন্ত্রণালয় ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে লিখেছিলেন, ‘উক্ত প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রূপে স্থাপনের জন্য ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন।’ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বরাদ্দপত্রের অনুলিপি নিয়ে এই প্রতিবেদক ২০১১ সালের ২১ ডিসেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে যান যন্ত্রপাতির পরিস্থিতি জানতে। ২২ ডিসেম্বর কর্তৃপক্ষ নতুন কেনা ১৪৬টি যন্ত্রের একটি তালিকা দেয়। সেই তালিকায় হূদেরাগ ও শল্যচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কোনো যন্ত্র নেই।
[প্রতিবেদন লেখায় সহযোগিতা করেছেন: রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুল হক, দিনাজপুর প্রতিনিধি আসাদুল্লাহ সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি আনোয়ার পারভেজ ও চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশ।]
এরপর ২০০৯ সালে আরেকটি জরিপে (বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০০৯) দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেওয়া মৌলিক চিকিৎসা-সরঞ্জামের ৩০ শতাংশ চুরি যায়, অর্থাৎ জরিপের সময় তা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাওয়া যায়নি। সরবরাহ করা মৌলিক চিকিৎসা-যন্ত্রপাতির ৭৫ শতাংশ পাওয়া যায় মাত্র ১৮ শতাংশ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, যন্ত্রপাতির চাহিদা আছে কি না, সেটা নিরূপণ করা হয় না। যন্ত্র কে চালাবে, সেটা নিশ্চিত না করেই কেনা হয়ে থাকে। ফলে যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দেশে উপজেলা হাসপাতালের সংখ্যা ৪২২টি। কেন্দ্রীয় ঔষধাগার জানাচ্ছে, এসব হাসপাতালে এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসাউন্ড, অটোক্লেভ, অজ্ঞানকারক যন্ত্র, ডি-ফিব্রিলেটর, ইনকিউবেটর যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আছে রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষার যন্ত্রপাতি। জেলা ও সাধারণ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্র, যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ হাসপাতালের সংখ্যা ১২০টি। এসব হাসপাতালে যন্ত্রের সংখ্যা অনেক বেশি।
যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র জানায়, এসব হাসপাতালে এক্স-রে যন্ত্রের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৭০০। বর্তমানে এর অর্ধেক নষ্ট। শুধু এক্স-রে যন্ত্র নয়, সব যন্ত্রের একই অবস্থা। ২০০৮ ও ২০০৯-এর জরিপ সম্পর্কে ওই সূত্র বলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ।
কেন্দ্রীয় ঔষধাগার সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি কেনাকাটার এক-পঞ্চমাংশ খরচ করে ওষুধের জন্য, বাকি টাকা যন্ত্রপাতি ক্রয়ে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে খরচ করেছিল ২১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৮৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর গত অর্থবছরে খরচ করে ১৯০ লাখ টাকা।
জেলা পরিস্থিতি: বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রায় ১৪ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রোগীদের কাজে আসছে না। কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দক্ষ কারিগরি লোক নেই বলে ১৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহের পর থেকে চালু করা যায়নি। এখন সেগুলো নষ্ট হচ্ছে। আর এক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি মেরামতের অভাবে অকেজো পড়ে আছে।
একাধিক এক্স-রে, মেমোগ্রাফি, ইনসুলেটর, ইটিটি, ১১টি অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, চক্ষু বিভাগের ক্যামেরা, লেজার, হিমো ডায়ালাইসিস যন্ত্র নষ্ট হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। ছয় বছর ধরে পড়ে রয়েছে এনজিওগ্রাম, হূদ্যন্ত্র ও ফুসফুসের রোগনির্ণয়ের একাধিক যন্ত্র, হিমো ডায়ালাইসিস, ব্রাকি থেরাপি, ইটিটি, ক্যাথেল্যাবসহ বেশ কিছু যন্ত্র। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আফজালুর রহমান বলেন, টেকনিশিয়ান নিয়োগ না দিয়েই এসব মূল্যবান যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছিল। কোনো কোনোটির মোড়কই এখনো খোলা হয়নি।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ২০১০ সালের পর থেকে দুই দফায় প্রায় ২৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়। এসব যন্ত্রপাতির প্রায় সবই অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এসব যন্ত্র চালানোর কোনো লোক কলেজে নেই।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানিয়েছে, নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, অথচ কেন্দ্রটি চালু হচ্ছে না। বার্ন ইউনিটের জন্য পাঁচ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, সেটিও চালু হয়নি। চার কোটি টাকা দিয়ে কেনা সিটি স্ক্যান যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। আটটি অটোক্লেভ যন্ত্রও নষ্ট। এ ছাড়া একাধিক এক্স-রে যন্ত্র নষ্ট হয়ে আছে দীর্ঘদিন।
যন্ত্র কিনতে মন্ত্রীকে মন্ত্রীর চিঠি: সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে চাহিদা বিবেচনা না করেই অতীতে যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, বর্তমান সরকারও তা করেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ২০১০ সালের ২ মার্চ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে লেখা দুটি চিঠিতে সাতটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কিনতে ১৫০ কোটি টাকা চান। এর মধ্যে খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ৫০ কোটি, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জন্য ১৫ কোটি, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ২০ কোটি, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের জন্য ১০ কোটি, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের জন্য ২০ কোটি, ঢাকা ডেন্টাল কলেজের জন্য ১৫ কোটি এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের জন্য ২০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
একই বছরের ২৪ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় ২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য ৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ১০ কোটি, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের জন্য আট কোটি, ঢাকা ডেন্টাল কলেজের জন্য আট কোটি ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের জন্য ১০ কোটি টাকা দেয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চিঠিতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের নাম উল্লেখ ছিল না। তবু ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় যথাক্রমে নয় ও পাঁচ কোটি টাকা।
অন্যদিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কথা উল্লেখ থাকলেও মন্ত্রণালয় ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে লিখেছিলেন, ‘উক্ত প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রূপে স্থাপনের জন্য ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন।’ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বরাদ্দপত্রের অনুলিপি নিয়ে এই প্রতিবেদক ২০১১ সালের ২১ ডিসেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে যান যন্ত্রপাতির পরিস্থিতি জানতে। ২২ ডিসেম্বর কর্তৃপক্ষ নতুন কেনা ১৪৬টি যন্ত্রের একটি তালিকা দেয়। সেই তালিকায় হূদেরাগ ও শল্যচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কোনো যন্ত্র নেই।
[প্রতিবেদন লেখায় সহযোগিতা করেছেন: রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুল হক, দিনাজপুর প্রতিনিধি আসাদুল্লাহ সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি আনোয়ার পারভেজ ও চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশ।]
No comments