ডেসটিনিতে প্রশাসক-সৎ ও যোগ্যদের দায়িত্ব দিন

বড় ধরনের আর্থিক প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগ পরপর দুটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত রোববার গ্রেফতার করা হয়েছে হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদকে।


বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) হারুন-অর-রশিদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ_ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তিন হাজার ২৮৫ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ অন্যত্র স্থানান্তর। দুদক বলছে, তাদের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে অবৈধ পন্থায় অর্থ পাচারের তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। এভাবে শুধু হাজার হাজার বিনিয়োগকারী নয়, দেশেরও ক্ষতি করা হয়েছে। এ গ্রুপটি বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষকে রাতারাতি বড় লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অর্থ জমা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। অন্যদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও বলা হয়, গ্রুপের ২২ জন পরিচালক/শেয়ারহোল্ডার নিজেদের মধ্যে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন সম্পন্ন করেছে। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের মাধ্যমে ১৬ শতাংশ সুদে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কারাগারে নিক্ষেপ এবং দুর্নীতি-অনিয়মে আকণ্ঠ নিমজ্জিত এ গ্রুপের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার প্রশাসক নিয়োগ করতে চলেছে, এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মো. গোলাম হোসেন। এ জন্য প্রয়োজনে আইনের সংশোধনী আনা হবে। এ সিদ্ধান্ত ভালো কি মন্দ, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের চোখের সামনেই ডেসটিনি গ্রুপের কর্ণধাররা বছরের পর বছর প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পেরেছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে অনেক প্রতিবেদন এসেছে। ভুক্তভোগীদের দিক থেকেও অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সরকার চোখ-কান বন্ধ রেখেছে। যেন কিছু দেখেনি, কিছু শোনেনি। একই ধরনের অভিযোগ সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক গ্রুপকে দেওয়া ঋণ বিষয়েও। স্বল্প সময়ের মধ্যে তারা একটি শাখা থেকে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিল এবং অভ্যন্তরীণ অডিটেও তা ধরা পড়ল; কিন্তু ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদ তা উপেক্ষা করে গেল। ডেসটিনির সঙ্গে নানাভাবে কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। কেউ জীবনের শেষ সঞ্চয় তাদের হাতে তুলে দিয়েছে অনেক লাভের আশায়। কেউবা সেখানে শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া অর্থে চালাচ্ছে সংসার। প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের দায়ভার কয়েক লাখ মানুষের ওপরে বর্তানো যায় না। সরকার নিযুক্ত প্রশাসক ও পরিচালনা পরিষদ যদি রাতারাতি স্ফীত হয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে পারে তাহলে সাধুবাদ পাবে। ডেসটিনির মালিকানায় যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদও রয়েছে। কিছু সম্পত্তি বেনামে থাকাও অসম্ভব নয়। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে এসব যেন হাতছাড়া না হয়, তা অবশ্যই নিশ্চিত করা চাই। সঙ্গত কারণেই আমরা প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অনুসরণের পরামর্শ দেব। বিভিন্ন সময়ে শিল্প-বাণিজ্যের অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারের মালিকানায় এসেছে। কিন্তু সেগুলোর অভিজ্ঞতা তিক্ত। পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের কেউ কেউ নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে এসব প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার করেছে এবং তার দায় চূড়ান্তভাবে চেপেছে সরকারের ওপর। ডেসটিনি পরিচালনার ক্ষেত্রে এমন পরিণতি প্রত্যাশিত নয়। সরকারি কোনো কর্মকর্তার ওপর এ ভার না দিয়ে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের একটি দলকে এ দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ জানাব। তাদের কাজে সরকারের সহযোগিতা থাকবে, কিন্তু কথায় কথায় হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.