হাতবদলেই দাম বাড়ে ৩ গুণ by রাজীব আহমেদ
শরৎকালে শীতের সবজি ফলাতে বেশ বেগ পেতে হয় কৃষককে। মৌসুমের তিন মাস আগেই ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাশাকের স্বাদ পেতে ভোক্তাকেও যথেষ্ট দাম দিতে হয়। ফসলের ক্ষেত থেকে রান্নাঘর, মাঝখানে সনাতনী বাজারব্যবস্থা।
হরিণাকুণ্ডুতে কৃষক যে লাউ বিক্রি করছেন সাত টাকায়, হাতিরপুল থেকে সে লাউ কিনতে হচ্ছে ৩৫ টাকায়।
নরসিংদীর ২০ টাকার শসা ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। কয়েক ধরনের ফড়িয়া, আড়তদার, পাইকার, খুচরা বিক্রেতার মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০ দফা হাতবদলে সবজির দাম বাড়ছে। হাতবদলের এ প্রক্রিয়ায় নতুন সংযোজন কারওয়ান বাজারের ভাসমান ফড়িয়া আর মহাস্থানগড়ের 'কমিশন এজেন্ট'; কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই যারা ফায়দা লুটছে। এদের চেষ্টা- কৃষককে কত কম দেওয়া যায়, আর ক্রেতার ঘাড়ে কত বেশি দাম চাপানো যায়। ফলে নৌকা, ভ্যান, ট্রাকে চড়ে কৃষকের ক্ষেতের স্তূপীকৃত শীতের সবজি যখন ক্রেতার হাতে পৌঁছায়, তখন তা হয়ে ওঠে 'মহার্ঘ্য'।
মহাস্থানগড়ের কৃষকের পণ্য আড়তে যায় কমিশন এজেন্টের মাধ্যমে। এই এজেন্টদের কোনো মেহনত নেই। শুধু আড়তদারকে কিনে দিয়ে মণে ১০-১৫ টাকা কমিশন নিয়ে নিচ্ছে তারা। অন্য দিকে কারওয়ান বাজারে রয়েছে ভাসমান ফড়িয়া, যারা আরো ভয়ংকর। মণে মাত্র ১০-১৫ টাকা নয়, তাদের কামাই মোটা দাগে। যখন যে সবজির সরবরাহ কম কিংবা চাহিদা বেশি, সেই সবজির দিকেই তাদের লক্ষ্য থাকে। পণ্য আনার ঝামেলা তাদের নেই, বিনিয়োগও নেই। জেলা থেকে কারওয়ান বাজারে সবজির ট্রাক আসার পর তারা মুখে মুখেই ফড়িয়াদের কাছ থেকে সবজি কিনে সেই সবজি আরেক ফড়িয়া বা আড়তে বেচে দেয়। বিনা পুঁজির ব্যবসায় মাঝখান থেকে কামিয়ে নেয় মোটা টাকা, যুক্ত হয় সবজির দামে।
পণ্যের সরবরাহ কম থাকুক আর বেশি থাকুক, কমিশন এজেন্ট বা আড়তদারদের লোকসান হয় না। দুই অবস্থাতেই কৃষকের লাভের অঙ্ক খুবই ছোট। বরং বেশি সরবরাহ হলে দাম এতটাই পড়ে যায় যে, বাজারে নিয়ে যাওয়ার ভ্যান ভাড়া পর্যন্ত ওঠে না। আবার সরবরাহ সংকটের সময় তাঁর হাতে প্রচুর পণ্যও থাকে না যে, বড় অঙ্কের টাকা আয় করবেন। কৃষকের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্যও বাজারে সুখবর থাকে না। মোকামে টমেটো পচে গেলেও ঢাকার খুচরা বাজারে তা ২০ টাকার নিচে নামে না।
সুযোগের খোঁজে ভ্রাম্যমাণ ফড়িয়ারা : গ্রামাঞ্চলের ফড়িয়ারা গ্রামে গ্রামে পণ্য কিনে স্থানীয় আড়তে নিয়ে যায়। জেলার ফড়িয়ারা তা ঢাকায় নিয়ে আসে। এই দুটি শ্রেণীর ফড়িয়া ছাড়া সনাতন বাজারব্যবস্থা অচল। কিন্তু কারওয়ান বাজারের ভ্রাম্যমাণ ফড়িয়াদের কাজ হলো শুধু দাম বাড়ানো। জেলা থেকে ঢাকায় পণ্যের জোগানে এদের কোনো ভূমিকা নেই।
এসব ফড়িয়ার আগ্রহ সব ধরনের সবজির দিকে থাকে না। যেসব সবজির সংকট থাকে, বাজারে ভালো চাহিদা থাকে, সেসব সবজিই হাতবদল করে তারা। বর্তমানে তাদের কাছে আকর্ষণের বিষয় শসা। সংকটের কারণে বাজারে শসার দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকায় উঠেছে। রোজার সময় তাদের কাছে বেগুন, কাঁচামরিচ ইত্যাদির চাহিদা বেশি থাকে। আর মৌসুম পরিবর্তন বা বন্যার কারণে সবজির সংকট সৃষ্টি হলে এসব ব্যবসায়ী কমবেশি সব ধরনের সবজিই হাতবদল করে বলে জানা গেছে।
দেশের দূরদূরান্ত থেকে বহু দফা হাতবদলের পর যে সবজি ঢাকার কারওয়ান বাজারে আসে, তা সরাসরি আড়তে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু এসব ভ্রাম্যমাণ ফড়িয়ার কারণে অতিরিক্ত এক বা একাধিক দফা হাতবদল হচ্ছে। আর সংকট সৃষ্টি হলে এরা সবজির দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের আড়ত মালিক সমিতির সহসভাপতি ইয়াসিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, কারওয়ান বাজারে যেসব সবজি আসে, তা কোনো না কোন আড়ত মালিকের নামে আসে। আড়ত মালিককে কমিশন দেওয়ার পর ফড়িয়া ব্যবসায়ী ওই সবজি অন্য কারো কাছে বিক্রি করতেও পারে। সেটা তার বিষয়। তিনি জানান, কারওয়ান বাজারে দুই শ্রেণীর ফড়িয়া আছে। একশ্রেণী ট্রাক থেকে পণ্য কিনে বিক্রি করে। আরেক শ্রেণী যেসব পণ্য বিক্রি হয় না তা কিনে রেখে সারা দিন আড়তে বিক্রি করে। তিনি বলেন, পণ্যের পরিমাণ বেশি হলে অনেক সময় ফড়িয়ারা কয়েকজন মিলে কেনে। তারা সবাই কেনার টাকা দেয়। বিক্রি করে লাভ ভাগ করে নেয়।
কৃষক থেকে রান্নাঘর, দাম বেড়ে তিন গুণ : গত বুধবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান হাটে প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে আট থেকে ১০ টাকায়। বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে প্রতিটি লাউ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। নগরবাথান হাটে ৮-১০ টাকা বিক্রি হলেও অনেক কৃষকের ভাগ্যে সে দামও জোটেনি। একেবারেই প্রাথমিক স্তরে এক ধরনের ফড়িয়া আছে, যারা মাঠ থেকে সবজি কিনে গ্রামের হাটে নিয়ে যায়। স্থানীয় পর্যায়ের ফড়িয়ারা বিভিন্ন হাট থেকে সবজি কিনে জেলার বড় মোকামে নিয়ে যায়। আড়ত থেকে সেগুলো ট্রাকে ঢাকায় নিয়ে যায় আন্তজেলা ফড়িয়ারা। তারা কারওয়ান বাজারে গিয়ে অনেক সময় অন্য ফড়িয়াদের কাছে পণ্য বিক্রি করে। আবার আড়তে নিয়েও বিক্রি করে। আড়ত থেকে কিনে নেয় ঢাকার বাজারের বিক্রেতারা। তাদের কাছ থেকে কেনে খুচরা ক্রেতারা।
অনেক সময় কারওয়ান বাজারে ভালো দাম না পেলে ট্রাক চলে যায় যাত্রাবাড়ী বা অন্য কোনো বাজারে। এতে কারওয়ান বাজারে যে আড়তের নামে সবজি আসে, তার কমিশন দেওয়া লাগে। আবার যাত্রাবাড়ী বাজারে যে আড়তে সবজি যায় তাকেও কমিশন দেওয়া লাগে। তবে বিপণনের এই শৃঙ্খল যে সব ক্ষেত্রে একই রকম তা নয়। অনেক সময় হাতবদল কিছুটা কমও হয়।
কিন্তু একটি পণ্যের দাম ঢাকার খুচরা বাজারে ৩০ টাকা হলেও ১০ টাকারও কম পান কৃষক। ঢাকা মহানগর মাছ ও কাঁচাবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন শিকদার কালের কণ্ঠকে জানান, যখন সবজির সংকট বেশি থাকে তখন হাতবদলও বেশি হয়। সংকট না থাকলে পাঁচ-ছয় দফা হাতবদলে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছায়। আড়ত মালিক এক বাজারে দাম কম থাকলে সবজির ট্রাক অন্য বাজারে পাঠিয়ে দেন। এতে একটি সবজির ওপর দুই আড়ত মালিক কমিশন পান।
সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ে খুচরা বিক্রেতাদের হাতে। কারওয়ান বাজার থেকে কোনো সবজি ২০ টাকায় কিনে তারা ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তারা ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ তোলে আড়তমালিকদের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, পাঁচ কেজি সবজি কিনলে তাতে আধা কেজি পরিমাণ ঘাটতি হয়। ফলে ৩০ টাকা দরে কেনা পাঁচ কেজি সবজির দাম ১৫০ টাকার বদলে দাঁড়ায় ১৬৭ টাকার বেশি। ঢাকার আড়তগুলোতে ডিজিটাল পাল্লা চালুর দাবি খুচরা বিক্রেতাদের।
কৃষকের ক্ষেত্রে ৪৫ কেজিতে মণ : কৃষকের লোকসান শুধু দামে নয়, পণ্যের পরিমাপেও বেশি দিতে হয় কৃষককে। জেলার মোকামগুলোতে প্রতি মণে কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৪৫ কেজি সবজি। আবার কোথাও তা ৪২ কেজি। কিন্তু বিক্রির সময় মণে ৪০ কেজিই দেওয়া হয়। অর্থাৎ, পরিবহনজনিত অপচয়ের অংশটি কৃষকদের কাছ থেকেই আদায় করেন ব্যবসায়ীরা। কোনো কৃষক ১০ টাকা দরে বেগুন বিক্রি করলে এক মণে পাচ্ছেন ৪০০ টাকা। এতে কেজিপ্রতি তাঁর প্রকৃত দাম পড়ছে ৯ টাকারও কম।
নরসিংদীর ২০ টাকার শসা ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। কয়েক ধরনের ফড়িয়া, আড়তদার, পাইকার, খুচরা বিক্রেতার মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০ দফা হাতবদলে সবজির দাম বাড়ছে। হাতবদলের এ প্রক্রিয়ায় নতুন সংযোজন কারওয়ান বাজারের ভাসমান ফড়িয়া আর মহাস্থানগড়ের 'কমিশন এজেন্ট'; কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই যারা ফায়দা লুটছে। এদের চেষ্টা- কৃষককে কত কম দেওয়া যায়, আর ক্রেতার ঘাড়ে কত বেশি দাম চাপানো যায়। ফলে নৌকা, ভ্যান, ট্রাকে চড়ে কৃষকের ক্ষেতের স্তূপীকৃত শীতের সবজি যখন ক্রেতার হাতে পৌঁছায়, তখন তা হয়ে ওঠে 'মহার্ঘ্য'।
মহাস্থানগড়ের কৃষকের পণ্য আড়তে যায় কমিশন এজেন্টের মাধ্যমে। এই এজেন্টদের কোনো মেহনত নেই। শুধু আড়তদারকে কিনে দিয়ে মণে ১০-১৫ টাকা কমিশন নিয়ে নিচ্ছে তারা। অন্য দিকে কারওয়ান বাজারে রয়েছে ভাসমান ফড়িয়া, যারা আরো ভয়ংকর। মণে মাত্র ১০-১৫ টাকা নয়, তাদের কামাই মোটা দাগে। যখন যে সবজির সরবরাহ কম কিংবা চাহিদা বেশি, সেই সবজির দিকেই তাদের লক্ষ্য থাকে। পণ্য আনার ঝামেলা তাদের নেই, বিনিয়োগও নেই। জেলা থেকে কারওয়ান বাজারে সবজির ট্রাক আসার পর তারা মুখে মুখেই ফড়িয়াদের কাছ থেকে সবজি কিনে সেই সবজি আরেক ফড়িয়া বা আড়তে বেচে দেয়। বিনা পুঁজির ব্যবসায় মাঝখান থেকে কামিয়ে নেয় মোটা টাকা, যুক্ত হয় সবজির দামে।
পণ্যের সরবরাহ কম থাকুক আর বেশি থাকুক, কমিশন এজেন্ট বা আড়তদারদের লোকসান হয় না। দুই অবস্থাতেই কৃষকের লাভের অঙ্ক খুবই ছোট। বরং বেশি সরবরাহ হলে দাম এতটাই পড়ে যায় যে, বাজারে নিয়ে যাওয়ার ভ্যান ভাড়া পর্যন্ত ওঠে না। আবার সরবরাহ সংকটের সময় তাঁর হাতে প্রচুর পণ্যও থাকে না যে, বড় অঙ্কের টাকা আয় করবেন। কৃষকের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্যও বাজারে সুখবর থাকে না। মোকামে টমেটো পচে গেলেও ঢাকার খুচরা বাজারে তা ২০ টাকার নিচে নামে না।
সুযোগের খোঁজে ভ্রাম্যমাণ ফড়িয়ারা : গ্রামাঞ্চলের ফড়িয়ারা গ্রামে গ্রামে পণ্য কিনে স্থানীয় আড়তে নিয়ে যায়। জেলার ফড়িয়ারা তা ঢাকায় নিয়ে আসে। এই দুটি শ্রেণীর ফড়িয়া ছাড়া সনাতন বাজারব্যবস্থা অচল। কিন্তু কারওয়ান বাজারের ভ্রাম্যমাণ ফড়িয়াদের কাজ হলো শুধু দাম বাড়ানো। জেলা থেকে ঢাকায় পণ্যের জোগানে এদের কোনো ভূমিকা নেই।
এসব ফড়িয়ার আগ্রহ সব ধরনের সবজির দিকে থাকে না। যেসব সবজির সংকট থাকে, বাজারে ভালো চাহিদা থাকে, সেসব সবজিই হাতবদল করে তারা। বর্তমানে তাদের কাছে আকর্ষণের বিষয় শসা। সংকটের কারণে বাজারে শসার দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকায় উঠেছে। রোজার সময় তাদের কাছে বেগুন, কাঁচামরিচ ইত্যাদির চাহিদা বেশি থাকে। আর মৌসুম পরিবর্তন বা বন্যার কারণে সবজির সংকট সৃষ্টি হলে এসব ব্যবসায়ী কমবেশি সব ধরনের সবজিই হাতবদল করে বলে জানা গেছে।
দেশের দূরদূরান্ত থেকে বহু দফা হাতবদলের পর যে সবজি ঢাকার কারওয়ান বাজারে আসে, তা সরাসরি আড়তে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু এসব ভ্রাম্যমাণ ফড়িয়ার কারণে অতিরিক্ত এক বা একাধিক দফা হাতবদল হচ্ছে। আর সংকট সৃষ্টি হলে এরা সবজির দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের আড়ত মালিক সমিতির সহসভাপতি ইয়াসিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, কারওয়ান বাজারে যেসব সবজি আসে, তা কোনো না কোন আড়ত মালিকের নামে আসে। আড়ত মালিককে কমিশন দেওয়ার পর ফড়িয়া ব্যবসায়ী ওই সবজি অন্য কারো কাছে বিক্রি করতেও পারে। সেটা তার বিষয়। তিনি জানান, কারওয়ান বাজারে দুই শ্রেণীর ফড়িয়া আছে। একশ্রেণী ট্রাক থেকে পণ্য কিনে বিক্রি করে। আরেক শ্রেণী যেসব পণ্য বিক্রি হয় না তা কিনে রেখে সারা দিন আড়তে বিক্রি করে। তিনি বলেন, পণ্যের পরিমাণ বেশি হলে অনেক সময় ফড়িয়ারা কয়েকজন মিলে কেনে। তারা সবাই কেনার টাকা দেয়। বিক্রি করে লাভ ভাগ করে নেয়।
কৃষক থেকে রান্নাঘর, দাম বেড়ে তিন গুণ : গত বুধবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান হাটে প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে আট থেকে ১০ টাকায়। বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে প্রতিটি লাউ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। নগরবাথান হাটে ৮-১০ টাকা বিক্রি হলেও অনেক কৃষকের ভাগ্যে সে দামও জোটেনি। একেবারেই প্রাথমিক স্তরে এক ধরনের ফড়িয়া আছে, যারা মাঠ থেকে সবজি কিনে গ্রামের হাটে নিয়ে যায়। স্থানীয় পর্যায়ের ফড়িয়ারা বিভিন্ন হাট থেকে সবজি কিনে জেলার বড় মোকামে নিয়ে যায়। আড়ত থেকে সেগুলো ট্রাকে ঢাকায় নিয়ে যায় আন্তজেলা ফড়িয়ারা। তারা কারওয়ান বাজারে গিয়ে অনেক সময় অন্য ফড়িয়াদের কাছে পণ্য বিক্রি করে। আবার আড়তে নিয়েও বিক্রি করে। আড়ত থেকে কিনে নেয় ঢাকার বাজারের বিক্রেতারা। তাদের কাছ থেকে কেনে খুচরা ক্রেতারা।
অনেক সময় কারওয়ান বাজারে ভালো দাম না পেলে ট্রাক চলে যায় যাত্রাবাড়ী বা অন্য কোনো বাজারে। এতে কারওয়ান বাজারে যে আড়তের নামে সবজি আসে, তার কমিশন দেওয়া লাগে। আবার যাত্রাবাড়ী বাজারে যে আড়তে সবজি যায় তাকেও কমিশন দেওয়া লাগে। তবে বিপণনের এই শৃঙ্খল যে সব ক্ষেত্রে একই রকম তা নয়। অনেক সময় হাতবদল কিছুটা কমও হয়।
কিন্তু একটি পণ্যের দাম ঢাকার খুচরা বাজারে ৩০ টাকা হলেও ১০ টাকারও কম পান কৃষক। ঢাকা মহানগর মাছ ও কাঁচাবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন শিকদার কালের কণ্ঠকে জানান, যখন সবজির সংকট বেশি থাকে তখন হাতবদলও বেশি হয়। সংকট না থাকলে পাঁচ-ছয় দফা হাতবদলে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছায়। আড়ত মালিক এক বাজারে দাম কম থাকলে সবজির ট্রাক অন্য বাজারে পাঠিয়ে দেন। এতে একটি সবজির ওপর দুই আড়ত মালিক কমিশন পান।
সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ে খুচরা বিক্রেতাদের হাতে। কারওয়ান বাজার থেকে কোনো সবজি ২০ টাকায় কিনে তারা ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তারা ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ তোলে আড়তমালিকদের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, পাঁচ কেজি সবজি কিনলে তাতে আধা কেজি পরিমাণ ঘাটতি হয়। ফলে ৩০ টাকা দরে কেনা পাঁচ কেজি সবজির দাম ১৫০ টাকার বদলে দাঁড়ায় ১৬৭ টাকার বেশি। ঢাকার আড়তগুলোতে ডিজিটাল পাল্লা চালুর দাবি খুচরা বিক্রেতাদের।
কৃষকের ক্ষেত্রে ৪৫ কেজিতে মণ : কৃষকের লোকসান শুধু দামে নয়, পণ্যের পরিমাপেও বেশি দিতে হয় কৃষককে। জেলার মোকামগুলোতে প্রতি মণে কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৪৫ কেজি সবজি। আবার কোথাও তা ৪২ কেজি। কিন্তু বিক্রির সময় মণে ৪০ কেজিই দেওয়া হয়। অর্থাৎ, পরিবহনজনিত অপচয়ের অংশটি কৃষকদের কাছ থেকেই আদায় করেন ব্যবসায়ীরা। কোনো কৃষক ১০ টাকা দরে বেগুন বিক্রি করলে এক মণে পাচ্ছেন ৪০০ টাকা। এতে কেজিপ্রতি তাঁর প্রকৃত দাম পড়ছে ৯ টাকারও কম।
No comments