ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন: দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ- ক্ষমতাসীনদের কবজায় পশুর হাট by শরিফুল হাসান
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি দক্ষিণ) কোরবানির পশুর সবগুলো হাটের প্রাথমিক ইজারা পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, এই প্রক্রিয়ায় তাঁদের সহায়তা করেছে খোদ ডিসিসি দক্ষিণের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি অংশ।
সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, এবার অনেকটা গোপনে দরপত্রের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য ঈদের ছুটিতে পত্রিকায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। আর সাধারণ ঠিকাদারেরা যাতে দরপত্রে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য শিডিউলের মূল্যও এবার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে নির্দিষ্ট চক্রের বাইরে এবার কেউ দরপত্রে অংশ নিতে পারেননি।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সবকিছু নিয়মমাফিকই করেছি।’ ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের হাট ইজারা পাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ দরদাতা দেখেছি। কে কোন দলের রাজনীতি করে, সেটি আমাদের জানা নেই। আর এখনো ইজারা চূড়ান্ত করা হয়নি। আজ মঙ্গলবার ডিসিসিতে দরপত্র কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। কোনো অভিযোগ থাকলে সেখানে খতিয়ে দেখা হবে।’
প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পশুর হাটের ইজারার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি।
ছুটির অবসরে: পবিত্র শবে কদরের ছুটির দিনে ১৬ আগস্ট ১০টি হাটের ইজারার জন্য সংবাদপত্রে দরপত্রের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আর দরপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ছিল ২৮ আগস্ট।
সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির অবসরে কোরবানির পশুর হাটের দরপত্র আহ্বানের এ ঘটনা ডিসিসির ইতিহাসে এই প্রথম। কারণ ১৬ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ঈদের ছুটি ছিল। এরপর দুই দিন অফিস খোলার পর আবার শুক্র ও শনিবারের ছুটি। এতে সাধারণ ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে যায়।
শিডিউলের মূল্য বেশি: সাধারণ ঠিকাদারেরা বলছেন, তাঁরা যাতে দরপত্রে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য শিডিউলের মূল্যও এবার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ডিসিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর শিডিউলের মূল্য ৫০০ কিংবা এক হাজার টাকা থাকলেও এবার আরমানিটোলা হাটের জন্য শিডিউলের মূল্য ছিল ৬৬ হাজার ২০০ টাকা।
অতিরিক্ত এই মূল্যের কারণে কাজ পাবেন এমন চক্রের বাইরে কেউ শিডিউল কিনতেই পারেননি। আরমানিটোলা হাটের মতোই প্রতিটি হাটের এবার শিডিউলের মূল্য ছিল অনেক বেশি।
ডিসিসি সূত্র জানায়, ১০০ শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়েছে মাত্র ৩৫টি। এর মধ্যে ১০টি হাটের মধ্যে ছয়টির বিপরীতেই তিনটি করে দরপত্র জমা পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আগে থেকে বিশেষ চক্রের সঙ্গে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সমঝোতা হয়েছে।
ডিসিসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবার শিডিউলের মূল্য ৫০০ বা এক হাজার টাকা হওয়ার কারণে শত শত ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নেন। এর ফলে ডিসিসির বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়।
শিডিউলের অতিরিক্ত মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর যে টাকায় একেকটি হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই এবার শিডিউলের মূল্য দেওয়া হয়েছে। তাই হয়তো একটু বেশি দর হয়েছে।’
যাঁরা কাজ পেয়েছেন: সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আরমানিটোলা হাটের প্রাথমিক ইজারা পেয়েছেন বংশাল থানা যুবলীগের সভাপতি হাজি আরমান। তাঁর দর ছিল চার কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই হাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলেন কোতোয়ালি-বংশাল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান। তাঁর দর ছিল চার কোটি ৩৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার চেয়ে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা বেশি দর দিয়ে আরমান ওই হাট নিয়েছে। আমার দর ডিসিসির লোকজন জানতো। তারাই আরমানকে সেটি জানিয়ে দিয়েছে।’
২০ লাখ পাঁচ হাজার টাকা দর দিয়ে জিগাতলার হাজারীবাগ মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাফিজ উদ্দিন। তিনি সাংসদ শেখ ফজলে নূরের কর্মী বলে পরিচিত। গত বছরও সাংসদের কর্মীরাই এই হাট নিয়ন্ত্রণ করেন।
ছয় লাখ ১৬ হাজার আট টাকা দর দিয়ে রহমতগঞ্জ খেলার মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ হাজি সেলিমের কর্মী হাজি শফি মাহমুদ।
১২ লাখ পাঁচ হাজার টাকা দর দিয়ে মেরাদিয়া বাজারের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন এ বি এম আহম্মদ। গত বছর এই মাঠের দর উঠেছিল ৩৪ লাখ দুই হাজার টাকা। ছয় লাখ ৫১ হাজার টাকা দর দিয়ে সাদেক হোসেন খোকা মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন স্থানীয় যুবলীগের নেতা আনোয়ার হোসেন। ৩২ লাখ টাকা দর দিয়ে গোলাপবাগ মাঠের পাশে খালি জায়গার জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন আশরাফুল ইসলাম। পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা দর দিয়ে উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন নুরুল কবির।
সাত লাখ টাকা দর দিয়ে ধূপখোলা ইস্ট এন্ড ক্লাব মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন হাজি মোহাম্মদ লিয়াকত। ২০ লাখ ১০ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দর দিয়ে ব্রাদার্স ইউনিয়ন-সংলগ্ন বালুর মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন শহিদউদ্দিন আহমেদ। আট লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন হাজি মোহাম্মদ রুবেল।
সাধারণ ঠিকাদারেরা জানিয়েছেন, যাঁরা ইজারা পেয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সবকিছু নিয়মমাফিকই করেছি।’ ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের হাট ইজারা পাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ দরদাতা দেখেছি। কে কোন দলের রাজনীতি করে, সেটি আমাদের জানা নেই। আর এখনো ইজারা চূড়ান্ত করা হয়নি। আজ মঙ্গলবার ডিসিসিতে দরপত্র কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। কোনো অভিযোগ থাকলে সেখানে খতিয়ে দেখা হবে।’
প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পশুর হাটের ইজারার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি।
ছুটির অবসরে: পবিত্র শবে কদরের ছুটির দিনে ১৬ আগস্ট ১০টি হাটের ইজারার জন্য সংবাদপত্রে দরপত্রের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আর দরপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ছিল ২৮ আগস্ট।
সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির অবসরে কোরবানির পশুর হাটের দরপত্র আহ্বানের এ ঘটনা ডিসিসির ইতিহাসে এই প্রথম। কারণ ১৬ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ঈদের ছুটি ছিল। এরপর দুই দিন অফিস খোলার পর আবার শুক্র ও শনিবারের ছুটি। এতে সাধারণ ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে যায়।
শিডিউলের মূল্য বেশি: সাধারণ ঠিকাদারেরা বলছেন, তাঁরা যাতে দরপত্রে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য শিডিউলের মূল্যও এবার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ডিসিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর শিডিউলের মূল্য ৫০০ কিংবা এক হাজার টাকা থাকলেও এবার আরমানিটোলা হাটের জন্য শিডিউলের মূল্য ছিল ৬৬ হাজার ২০০ টাকা।
অতিরিক্ত এই মূল্যের কারণে কাজ পাবেন এমন চক্রের বাইরে কেউ শিডিউল কিনতেই পারেননি। আরমানিটোলা হাটের মতোই প্রতিটি হাটের এবার শিডিউলের মূল্য ছিল অনেক বেশি।
ডিসিসি সূত্র জানায়, ১০০ শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়েছে মাত্র ৩৫টি। এর মধ্যে ১০টি হাটের মধ্যে ছয়টির বিপরীতেই তিনটি করে দরপত্র জমা পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আগে থেকে বিশেষ চক্রের সঙ্গে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সমঝোতা হয়েছে।
ডিসিসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবার শিডিউলের মূল্য ৫০০ বা এক হাজার টাকা হওয়ার কারণে শত শত ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নেন। এর ফলে ডিসিসির বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়।
শিডিউলের অতিরিক্ত মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর যে টাকায় একেকটি হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই এবার শিডিউলের মূল্য দেওয়া হয়েছে। তাই হয়তো একটু বেশি দর হয়েছে।’
যাঁরা কাজ পেয়েছেন: সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আরমানিটোলা হাটের প্রাথমিক ইজারা পেয়েছেন বংশাল থানা যুবলীগের সভাপতি হাজি আরমান। তাঁর দর ছিল চার কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই হাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলেন কোতোয়ালি-বংশাল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান। তাঁর দর ছিল চার কোটি ৩৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার চেয়ে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা বেশি দর দিয়ে আরমান ওই হাট নিয়েছে। আমার দর ডিসিসির লোকজন জানতো। তারাই আরমানকে সেটি জানিয়ে দিয়েছে।’
২০ লাখ পাঁচ হাজার টাকা দর দিয়ে জিগাতলার হাজারীবাগ মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাফিজ উদ্দিন। তিনি সাংসদ শেখ ফজলে নূরের কর্মী বলে পরিচিত। গত বছরও সাংসদের কর্মীরাই এই হাট নিয়ন্ত্রণ করেন।
ছয় লাখ ১৬ হাজার আট টাকা দর দিয়ে রহমতগঞ্জ খেলার মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ হাজি সেলিমের কর্মী হাজি শফি মাহমুদ।
১২ লাখ পাঁচ হাজার টাকা দর দিয়ে মেরাদিয়া বাজারের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন এ বি এম আহম্মদ। গত বছর এই মাঠের দর উঠেছিল ৩৪ লাখ দুই হাজার টাকা। ছয় লাখ ৫১ হাজার টাকা দর দিয়ে সাদেক হোসেন খোকা মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন স্থানীয় যুবলীগের নেতা আনোয়ার হোসেন। ৩২ লাখ টাকা দর দিয়ে গোলাপবাগ মাঠের পাশে খালি জায়গার জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন আশরাফুল ইসলাম। পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা দর দিয়ে উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন নুরুল কবির।
সাত লাখ টাকা দর দিয়ে ধূপখোলা ইস্ট এন্ড ক্লাব মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন হাজি মোহাম্মদ লিয়াকত। ২০ লাখ ১০ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দর দিয়ে ব্রাদার্স ইউনিয়ন-সংলগ্ন বালুর মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন শহিদউদ্দিন আহমেদ। আট লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন হাজি মোহাম্মদ রুবেল।
সাধারণ ঠিকাদারেরা জানিয়েছেন, যাঁরা ইজারা পেয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
No comments