যুদ্ধাপরাধীদের ৩০ দিনের মধ্যে আপীল করতে হবে- মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদন
যুদ্ধাপরাধীদের আপীলের সময়সীমা ৬০ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিনের বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (দ্বিতীয় সংশোধনী) আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। আপীলের সময়সীমা কমানোর সঙ্গে সঙ্গে রায়ের দিনই আসামি পক্ষ যেন এর অনুলিপি পায়, সেই বিধানও যোগ করা হয়েছে।
এছাড়া মন্ত্রিসভা গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) আইন ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধনী) আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ জারির পর কোন কার্যক্রম গ্রহণ না করায় মন্ত্রিসভা বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বরং বৈঠকে অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তরের লক্ষ্যে এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে মন্ত্রিসভায়। সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রথম এজেন্ডাটি ছিল গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধনী) আইন, ২০১২-এর খসড়ার অনুমোদন সংক্রান্ত। এজেন্ডাটির আলোচনার শুরুতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ জারি করার পরও গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ নিয়ে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বলেন, আগে জানতে হবে এখনও পর্যন্ত কেন সিলেকশন বোর্ড গঠন করা হয়নি? আর যদি তা না হবে তা হলে তড়িঘড়ি করে কেনই বা গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল? এখন তা আবার আইনে রূপ দিতে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। সৈয়দ আশরাফুলের এই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, সিলেকশন বোর্ড গঠনের জন্য বৈঠক ডাকা হয়েছিল, কিন্তু সে বৈঠকে কোরাম পূর্ণ হয় না। তাই সিলেকশন বোর্ড গঠন করা সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে অন্য আলোচনা শুরু করেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) (দ্বিতীয় সংশোধন) আইনের’ খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। বর্তমান আইনে ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর ৬০ দিন পর্যন্ত আপীলের সুযোগ রয়েছে। এটা সংশোধন করে সময়সীমা ৩০ দিন করা হচ্ছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এটি সংশোধন করা হচ্ছে। সচিব বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষের আপীল জমা দেয়ার সুবিধার জন্যই স্বাক্ষরিত কপি রায়ের দিনই সরবরাহের বিধান করা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ১১ নেতার বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে, এর মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় রায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মেয়াদ রয়েছে আরও এক বছর। যুদ্ধাপরাধের বিচার আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরও তিনটি আইনের খসড়াসহ চারটি বিষয় অনুমোদন এবং একটি আইনের খসড়া অনুমোদন না করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবার উপস্থাপনের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অনুমোদিত অন্য আইনের খসড়ার মধ্যে রয়েছে ‘গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধিত) আইন, ২০১২’ এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ২০১২।’ অন্যটি হলÑ ‘ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) বিশেষ বিধান আইন, ২০১২।’
প্রথম দুটি খসড়াই সম্প্রতি জারি করা দুটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, অধ্যাদেশ আকারে জারি করা আইনে জাতীয় সংসদের অনুমোদন নিতে অধ্যাদেশ জারির পরবর্তী সংসদে উপস্থাপন ও অনুমোদন করতে হয়।
মন্ত্রিসভা বিসিকের অধীনে সম্প্রতি শেষ হওয়া চারটি দারিদ্র্যবিমোচন প্রকল্পের সমন্বয়ে একটি ‘ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও কুটিরশিল্প ফাউন্ডেশন’ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। প্রস্তাবটি আগেও মন্ত্রিসভায় ট্রাস্ট আকারে অনুমোদনের জন্য তোলা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রিসভা একে ফাউন্ডেশন করার জন্য নতুন প্রস্তাব দিতে বলে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগে গ্রামীণ ব্যাংক সংশোধন করে গত ২২ আগস্ট একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এতে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে প্রক্রিয়া এবং যোগ্যতায় পরিবর্তন আনা হয়।
সংশোধিত অধ্যাদেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে পাঁচ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিটি গঠনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বোর্ডের চেয়ারম্যানকে। নির্বাচন কমিটি আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনজনের একটি প্যানেল মনোনীত করে তা ব্যাংকের পরিচালনাপর্ষদে জমা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এর মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ দেবে পরিচালনাপর্ষদ। গ্রামীণ ব্যাংকের এই অধ্যাদেশ সংশোধনের সমালোচনা করে আসছে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও এর সমালোচনা করেছে।
ইউনূসের সমালোচনার সঙ্গে মতৈক্য প্রকাশ করে বিএনপি বলেছে, তারা ক্ষমতায় গেলে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের এই সংশোধনী বাতিল করা হবে।
No comments