‘এক রাতে সুনীল আমার গায়ে হাত দিয়েছিল’
বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার টুইটারে সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করে থেমে থাকেন নি। তিনি এবার জানিয়েছেন, সুনীল এক রাতে তার বন্ধুদের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে তার হোটেলের ঘর থেকে ফিরে যাবার সময় তার গায়ে অশ্লীলভাবে হাত দিয়েছিল।
ঘটনার আকস্মিকতায় তসলিমা নাকি এতটাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন যে কি করবেন ভেবে পান নি। পরে এই ঘটনা নিয়ে তসলিমা নাকি ’রাস্তার ছেলে এবং কবি’ নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। তসলিমা দাবি করেছেন, কবিতাটি সুনীলকে নিয়েই লেখা। তবে তসলিমার এইসব অভিযোগ সম্পূর্ণভাবেই উড়িয়ে দিয়েছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এতদিন তসলিমা এ ব্যাপারটি নিয়ে চুপ ছিল কেন? সাহস থাকে তো আইনের সাহায্য নিক।
সুনীল মনে করেন, এসবই তসলিমার হতাশার বহিঃপ্রকাশ। আর তাই এসব তাকে মোটেই বিচলিত করে না। দুই বাংলার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক নিয়ে একসময় বই লিখে তসলিমা সাড়া ফেলেছিলেন। এজন্য বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ শামসুল হক তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেছিলেন। কলকাতাতেও এক কবি তসলিমার বিরুদ্ধে কোটি রুপির মানহানির মামলা করেছিলেন তার সম্পর্কে বইয়ে আপত্তিকর কিছু লেখার জন্য। তবে সেই সময় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে কোনও কথাই লেখেননি তসলিমা। এতদিন পরে সুনীল সম্পর্কে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনার কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, তসলিমার ’দ্বিখন্ডিত’ বইটি বাম সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ করার জন্য সুনীলই নাকি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যকে বলেছিলেন। তসলিমা এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। সুনীল অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি কখনই ’দ্বিখন্ডিত’ নিষিদ্ধ করার কথা বলেননি। বরং শঙ্খ ঘোষ সহ অন্যান্যদের সঙ্গে মিলে তিনি সেই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেই বলেছিলেন। এমনকি মিছিলও করেছিলেন। কিন্তু তসলিমা কেন বইটি নিষিদ্ধ করার পেছনে তিনিই প্রধান মাথা বলছেন তার কোনও কারণ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। সুনীল জানিয়েছেন, তসলিমার কলকাতায় ফেরার ব্যাপারে তিনি কখনও কোন উদ্যোগ নেননি ঠিকই,তবে তিনি এমন কোনও বড় মাপের ব্যক্তি নন যে, তার কথাতেই তসলিমার কলকাতায় আসা আটকে যাবে। সুনীল ও তসলিমার এই সাম্প্রতিক বিতর্ক নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেও। তবে ঘটনার সুত্রপাত, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের লেখা ‘মুসলমানদের করণীয়’ নামের একটি বই সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের কঠোর মনোভাবের বিরুদ্ধে সুনীলের মতামত থেকে। সুনীল যে কোনও বই নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে তার মত প্রকাশ করার পরই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন তসলিমা। গত ২রা সেপ্টেম্ব^র তিনি তার টুইটারে লিখেছেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বই নিষিদ্ধ করার পক্ষে। তিনি আমাকে এবং অন্যান্য মহিলাদের যৌন হয়রাণি করেছেন। তিনি সাহিত্য আকাদেমির সভাপতি। শেম! শেম!। তসলিমা আরও লিখেছেন , তার ’দ্বিখন্ডিত’ বইটি নিষিদ্ধ করার জন্য সুনীলই বাম সরকারকে বলেছিল। আর এখন তিনি বই নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে মতামত দিচ্ছেন। একজন ভন্ড। কোনও বাঙালির সাহস নেই ভন্ড ও মহিলাদের ব্যবহারকারি লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখোশটা ছিড়ে ফেলার।এই ট্যুইটার বোমার পর সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে তসলিমা বলেছেন, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলারা সবসময়ই যৌন হয়রাণির শিকার হন। আমি শুনেছি সুনীল অনেক মেয়েকেই যৌন হয়রানি করেছে। পুরুষদের সমাজে এটা খুবই সাধারণ। কিন্তু মহিলার এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারেন না চাকুরি হারাবার ভয়ে। আর লেকার দুনিয়ায় তো অনেক উঠতি তরুণ মেয়েরা বাঘা বাঘা লেখকদের শারিরীক যৌন সম্পর্কের শিকার হয়েছে। তসলিমার মতে, তাদের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে তারা কেউ এদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না। এরপরই তসলিমা জানিয়েছেন, অনেকদিন আগের একটি ঘটনার কথা। সেই সময় ফ্রান্স থেকে এসে তিনি কলকাতার একটি হোটেলে থাকছিলেন। সেই সময় এক রাতে সুনীল বন্ধুদের নিয়ে তার ঘরে ডিনার করতে এসেছিলেন। কিন্তু যাবার সময় সুনীল নাকি বিদায় দেবার সময় তার গায়ে এমনভাবে হাত দিয়েছিলেন যে, তসলিমা হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন। এই ঘটনায় তসলিমা প্রচন্ড মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তসলিমার দাবি, আমার মত প্রতিষ্ঠিত লেখিকার সঙ্গে যেখানে সুনীল এই ধরণের কাজ করেছে সেখানে অন্য মেয়েদের সঙ্গে যে সে এই ধরণের কাজ করেছে এটাই স্বাভাবিক। তসলিমা আরও জানিয়েছেন, আমি জানি সুনীলের সেই ক্ষমতা আছে যে আমাকে ভারত থেকে বিতাড়িত করার ক্ষেত্রে প্রভাব ঘাটাতে পারে। তবু তিনি সত্যি বলে যাবেন বলে জানিয়েছেন। তসলিমা দাবি করেছেন, তার আত্মজীবনীর তৃতীয় খন্ড ’দ্বিখন্ডিত’তে অনেকের মুখোশ খুলে দেয়ার পর সুনীল নাকি তাকে বলেছিল, ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রকাশ্যে না আনতে। তবে তসলিমা জানিয়েছেন, সুনীলের মত ’অর্ধেক জীবন’ তিনি লিখবেন না। তার কাছে কোনও কিছুই গোপনীয় নয়। আর সত্যি বলার জন্য অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তবু সত্যি বলে যাবেন বলে তিনি গোষণা দিয়েছেন। তসলিমা বর্তমানে দিল্লির এক অজ্ঞাত স্থানে ভারত সরকারের নিরাপত্তা সুরক্ষায় অবস্থান করছেন। ২০০৭ সালে কলকাতায় মুসলমানদের একাংশের হিংসাত্মক বিক্ষোভের পরই তসলিমাকে কলকাতা ছেড়ে যেতে হয়। তার পর থেকে তার আর কলকাতায় ফেরা হয়নি। অথচ তসলিমা কলকাতায় ফিরতে চান। তিনি মনে করেন, কলকাতা তার দ্বিতীয় ঘর। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে এনে মুসলমানদের চক্ষুশূল হতে চায় না কোনও রাজনৈতিক দলই। ফলে কলকাতায় ফেরার জন্য তার কোন আবেদনে কোন সরকারই কর্ণপাত করছে না।
No comments