পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র- ৩০ বছরেও সংস্কার হয়নি, ভোগান্তিতে মৎস্যজীবীরা

নানা সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উপকূলীয় জেলা বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। দক্ষিণাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মৎস্যকেন্দ্রটি ১৯৮১ সালে প্রায় নয় একর জমির ওপর নির্মাণ করে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)।


এরপর ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্প্রসারণ, সংস্কার ও আধুনিকায়ন না করায় অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মৎস্যজীবীরা।
স্থানীয় মৎস্যজীবী, ট্রলার মালিক সমিতি ও মৎস্য আড়তদার সমিতি সূত্রে জানা গেছে, মাছ পরিবহনে ব্যবহূত অবতরণ কেন্দ্রসংলগ্ন পাথরঘাটা-চরখালী ৫০ কিলোমিটার সড়কটি ‘মরণফাঁদ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবতরণ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত জেটিঘাটের অভাব রয়েছে। এ কেন্দ্রের দুটি বরফকলের একটি পরিত্যক্ত অবস্থায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। যে বরফকলটি চালু আছে, সেটি থেকে উৎপাদিত বরফের মানও খুব একটা ভালো নয়। ফলে বেসরকারি বরফকল থেকে জেলেদের চড়া দামে বরফ কিনতে হচ্ছে। তিন টন ধারণক্ষমতার হিমাগার দুটিও পরিত্যক্ত অবস্থায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। অবতরণ কেন্দ্রের ভবনটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে অকশন-শেডটি সংস্কারের অভাবে ও মেঝের পলেস্তারা উঠে যাওয়ায় মাছের মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্যাকিং-শেড না থাকায় এখানে প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে বিএফডিসিতে পর্যাপ্ত ট্রাক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তায় যত্রতত্র ট্রাক পার্কিং করে মাছ প্যাকিং করা হচ্ছে।
জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি শুধু দক্ষিণাঞ্চলেই নয়, এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ মৎস্যবন্দর। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ ইলিশ বিদেশে রপ্তানি হয়, তার প্রায় ৬০ শতাংশ এই বন্দর থেকে সরবরাহ করা হয়। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় আড়াই লাখ জেলে ও ট্রলার মালিকেরা এ অবতরণ কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সাগরে মাছ শিকার করতে যাওয়ার প্রস্তুতি থেকে শুরু করে মাছ বিক্রি করা পর্যন্ত জেলেরা বিএফডিসি থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে ও জেলেদের সময় বাঁচাতে এ অবতরণ কেন্দ্রটির সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন।
পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি নূরুল আমিন বলেন, রাস্তা খারাপ থাকার কারণে মাছ বহনকারী ট্রাক বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় দুই দিন ধরে আটকে থাকে। ফলে ওই সময় তাঁদের কোটি কোটি টাকার মাছ নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া এ মৎস্য বন্দরে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। প্রায় সময়ই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা টিটি, ডিডির অনুকূলে প্রয়োজনীয় অর্থ পাথরঘাটার ব্যাংকগুলো সরবরাহ করতে পারছে না। মৎস্য বন্দরের ভেতরেই বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি শাখা স্থাপন করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
বরগুনা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিদিন এ বন্দরে কয়েক শ ট্রলার নোঙর করার জন্য এলেও জেটিঘাট রয়েছে মাত্র ১০টি। ফলে নোঙর করার জন্য ট্রলারগুলোকে দীর্ঘ সময় নদীতে অপেক্ষা করতে হয়। এ বন্দরে আরও কমপক্ষে সাতটি জেটিঘাট প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে বিএফডিসি পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার হুমায়ুন কবীর বলেন, আড়তদারদের মাধ্যমে এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ কেন্দ্রটির সংস্কার ও আধুনিকায়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.