পবিত্র কোরআনের আলো-মানবজাতি সৃষ্টির প্রস্তাবনা

৩০। ওয়াইজ কালা রাব্বুকা লিলমালা-য়িকাতি ইনি্ন জা-ই'লুন ফিল আরদ্বি খালি-ফাতান; কালু_আতাজআ'লু ফিহা মায়িঁ্যইউফছিদু ফিহা ওইয়াছফিকুদ্ দিমাআ; ওয়ানাহনু নুছাবি্বহু বিহামদিকা ওয়ানুকাদ্দিছু লাকা; কালা ইনি্ন আ'লামু মা-লা-তা'লামুন।


৩১। ওয়া আল্লামা আ-দামাল আছমা-আ কুল্লাহা ছুম্মা আ'রাদ্বাহুম আ'লাল মালাঈকাতি; ফাকালা আম্বিউ-নি বিআছমা-ই হাউলাই ইন কুনতুম সাদিকিন।
৩২। কালু-ছুবহাকা লাই'লমা লানা ইল্লা মা আল্লামতানা; ইন্নাকা আনতাল আ'লিমুল হাকিম।
৩৩। কালা ইয়া-আদামু আম্বি'হুম বিআছমায়িহিম; ফালাম্মা-আম্বায়াহুম বিআছমা-য়িহিম; কালা আলাম আকুল্লাকুম ইনি্ন আ'লামু গাইবাচ্ছামাওয়াতি ওয়ালআরদ্বি; ওয়া আ'লামু মা তুবদ্বু-না ওয়ামা কুনতুম তাকতুমুন। [সুরা বাকারা : আয়াত-৩০-৩৩]

অনুবাদ : ৩০। যখন আপনার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা মানবজাতি পাঠাতে চাই; তারা বলল, আপনি কি এমন কাউকে খলিফা করে পাঠাতে চান, যারা জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে এবং (স্বার্থের জন্য) তারা রক্তপাত ঘটাবে, আমরাই তো আপনার প্রশংসাসহকারে আপনার তাসবিহ পড়ছি এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি; আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।
৩১। আল্লাহ তায়ালা অতঃপর আদমকে (প্রয়োজনীয়) সব জিনিসের নাম শিখিয়ে দিলেন, পরে তিনি সেগুলো ফেরেশতাদের কাছে পেশ করে বললেন (তোমাদের আশঙ্কার ব্যাপারে), তোমরা যদি সত্যবাদী হও (তাহলে) তোমরা আমাকে এ নামগুলো বলো তো?
৩২। ফেরেশতারা বলল (হে আল্লাহ তায়ালা), আপনি পবিত্র, আমাদের তো (এর বাইরে আর) কিছুই জানা নেই, যা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন; আপনিই একমাত্র জ্ঞানী, একমাত্র কুশলী।
৩৩। আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-কে বললেন, তুমি তাদের কাছে তাদের নামগুলো বলে দাও, অতএব আদম তাদের (সামনে) নামগুলো যখন বলে দিল, তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি যে আমি আকাশ ও জমিনের যাবতীয় না দেখা বস্তু জানি এবং তোমরা যা কিছু প্রকাশ করো আর যা কিছু গোপন করো আমি তাও ভালোভাবে জানি।

ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতি সৃষ্টিতে তাঁর নিজের প্রস্তাবনার কথা তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তায়ালা সমগ্র বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন, তার প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। এখানে মানবজাতির গুরুত্ব ও মর্যাদা মানুষকে অনুধাবন করানোর জন্যই মানুষ সৃষ্টির প্রস্তাবনা এবং এ-সংক্রান্ত কথোপকথন উপস্থাপন করেছেন। তিনি মানুষ সৃষ্টিকে নিজের খলিফা বা প্রতিনিধি পাঠানো বলে অভিহিত করেছেন। এখানে খলিফা বলতে মানবজাতিকে বোঝানো হয়েছে।
মানবজাতি কেন সৃষ্টির সেরা তা আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে খুব স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। ফেরেশতারা বলেছিলেন, মানবজাতি পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে_কলহ-বিবাদ ও সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, রক্তপাত ঘটাবে। ফেরেশতাদের বক্তব্য ছিল তারাই তো আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছে। পৃথিবীতে মানুষ পাঠানোর প্রয়োজন কী? আল্লাহ তায়ালা এক বাক্যে তখন জবাব দিলেন, 'আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।' এটা চিরন্তন সত্য, আল্লাহ যা জানেন তাঁর সৃষ্টি তা জানে না। তবে এখানে এ কথাটার বিশেষ তাৎপর্য আছে, যা পরবর্তী আয়াতগুলোতে স্পষ্ট হয়েছে।
পরবর্তী আয়াতগুলোতে আল্লাহর প্রথম নবী আদম (আ.)-এর বিষয়ে বলতে গিয়ে ফেরেশতাদের চেয়ে আদমের শ্রেষ্ঠত্ব কোথায় এর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেছেন। কোরআন মজিদের আরো অন্যান্য আয়াত এবং হাদিসের মাধ্যমে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মর্মবাণী বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মূলত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এই জায়গায়, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন, ভালো-মন্দ দুটোর ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন, পাশবিক ও জৈবিক চাহিদাসহ একে নিয়ন্ত্রণ করার মানবিক গুণাবলি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আল্লাহ নিজে তাকে জ্ঞান দান করেছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.