তবুও বরষা...

অফিসগামী কর্তার মুখ সকালেই ভার ভার মনে হয়। মেঘের আড়াল থেকে সূর্য হাসার আগেই যদি কয়েক ফোঁটা জল ঝরে পড়ে, তবে তো কথাই নেই, মুখ ফসকে বেরিয়ে যাবে সেই বিরক্তি মাখা চিরায়ত, উক্তি “ধ্যাত, বৃষ্টি নামার আর সময় পেল না।’ অফিস ব্যাগটাকে আড়াল করে ছাতা খুলে কোনরকমে যাত্রা শুরুর প্রচেষ্টা, কখনও কখনও নিতান্ত অনিচ্ছায় তার সতর্ক পা ফেলা কর্মস্থলের উদ্দেশে।


ক্লাসে মূলধন ডেবিট না ক্রেডিটের অংশে বসবে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই ছাত্রীর, শিক্ষকের একটানা বক্তৃতা, বোর্ডের লেখা ছাপিয়ে তার দৃষ্টি জানালার বাইরে, ঝর ঝর, ক্রমশ সশব্দে নিজেকে প্রকাশ করার উন্মাতাল বাসনা নিয়ে যে জলধারা ঝরছে অবিরাম, তাই তাকে আনমনা, ভাবুক করে তুলেছে। গৃহবধূ রান্না ফেলে ঘরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছে রাস্তার ছিন্নমূল শিশুদের ফুটবল খেলা, শিশুরা তাদের স্বভাবসিদ্ধ নিষ্পাপ হৃদয় মেলে ধরেছে তাতে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ ঠিকই প্রিয়ার জন্য কদম ফুলের গাছের সন্ধানে বেরিয়েছে, ক্লাস আর কোচিং ফাঁকি দেয়া মেয়েগুলো তাদের ছেলে বন্ধুদের দেখার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছে নানারকম অজুহাত, বাবা মা’র কাছে। গৃহপরিচারিকা কাজ শেষে গৃহকর্ত্রীর দেয়া খাবার ঢেকে বাড়ি ফিরছে, তুমুল বর্ষণের হাত থেকে নিজের চাইতেও খাবারগুলো বাঁচানোর মূল্য তার কাছে অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা বেরিয়েছে দল বেঁধে বর্ষায় স্নাত হওয়ার আশায়। গিটারের তারে সুর তুলছে কেউ, বাকিরা একসাথে গলা মিলিয়েছে বৃষ্টির তালে।
এমনি নানা বিচিত্র আবহে বর্ষা আসে ইট, কাঠ, পাথরের এই যান্ত্রিক নগরে, নানা আঙ্গিকে তুলে ধরে তার রূপ, কর্মব্যস্ততার এই নাগরিক জীবনে কিছুটা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে দিতে।

রিফাত মুনীর ইতি
শেখেরটেক, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.