২৪ বছর পর প্রমাণিত হলো তিনি মরেননি

ভারতের বিহারের রোহতাস জেলার বরুণ গ্রামের বাসিন্দা অশরফি দেবী। সরকারি মৃত্যুসনদ অনুযায়ী ১৯৮৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। কিন্তু আদতে তিনি বেঁচে আছেন এখনো। কিন্তু তিনি যে এখনো জীবিত, তা প্রমাণ করতেই কেটে গেছে বহু বছর।


দীর্ঘ ২৪ বছর আইনি লড়াইয়ের পর গত মে মাসে একটি গ্রাম-পঞ্চায়েত আদালত অশরফিকে জীবিত বলে রায় দিয়েছেন।
অশরফি জানান, ১২ বছর বয়সে মা-বাবা তাঁদেরই গ্রামের রাম জনম সিং নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেন। স্বামীর বাড়িতে পা রেখেই জানতে পারেন তিনি রাম জনমের প্রথম স্ত্রী নন। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর অশরফিকে বিয়ে করেন রাম জনম। অশরফি বলেন, ১৯ বছর বয়সে তিনি একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এর পর থেকেই স্বামী তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন করতে শুরু করেন। এর চার বছরের মাথায় স্বামী রাম জনম তাঁকে শিশুকন্যাসহ বাড়ি থেকে বের করে দিলে তিনি বাপের বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, তাঁর পাষণ্ড স্বামী তাঁকে মৃত দেখিয়ে জেলা পরিষদ থেকে একটি ভুয়া মৃত্যুসনদ তোলেন। পরে বিয়ে করেন আরও একটি।
অশরফির মৃত্যুসনদ ১৯৮৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইস্যু করা হয়। নিজেকে জীবিত প্রমাণের তাঁর চেষ্টাও সেই থেকে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ থেকে আদালত সব জায়গায় ধরনা দিয়েছি। কিন্তু কেউই আমাকে জীবিত প্রমাণ করতে পারেনি।’
কিন্তু এর পরও থেমে থাকেননি অশরফি। তিনি তাঁর মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে যেতেন। তবে স্বামী ও তাঁর তৃতীয় স্ত্রী তাঁদের হুমকি-ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিতেন। শুধু তাই নয়, মিথ্যা চুরির অভিযোগ এনে তাঁকে একবার জেলেও পাঠানো হয়। তিনি অবশেষে গত বছর গ্রাম-পঞ্চায়েতে একটি আবেদন করেন। পঞ্চায়েত প্রায় আট মাস তথ্য-প্রমাণাদি যাচাই বাছাই করে মে মাসে অশরফির পক্ষে রায় দেয়। এ সময় তাঁর স্বামী, গ্রাম্য মাতবর, পুলিশ, সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। রায়ের আনন্দে অশরফির মেয়ে বিমলা দেবী বলেন, ‘এটা আমার মায়ের পুনর্জন্মের মতো।’ বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.