পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগটি ধারণা মাত্র ॥ আবুল হোসেন
পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি বলে আবারও দাবি করেছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এমপি। ধারণা থেকেই পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এ ব্যাপারে তিনি নিজের এবং আল্লাহর কাছে পরিষ্কার। তবে এ বিষয়ে দুদক কমিশনার মোঃ বদিউজ্জামান বলেছেন,
সব অভিযুক্তব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ সত্য হলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনে সৈয়দ আবুল হোসেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার এসব কথা বলেন।
গত মাসের ২৬ তারিখে দুদক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেন সাবেক এ যোগাযোগমন্ত্রীকে। দুদকের ডাকে সাড়া দিয়ে সোমবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ে হাজির হন তিনি। দুদক কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় প্রায় তিন ঘণ্টা আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান কর্মকর্তা মীর জয়নুল আবদীন শিবলী ও মির্জা জাহিদুল আলম।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে আবুল হোসেন সাংবাদিকদের আরও বলেন, পদ্মা সেতুর প্রতিটি কাজ সততা, নিষ্ঠা ও দ্রুততার সঙ্গে করা হয়েছে। এ সেতু প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের দুর্নীতি হয়নি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নিজের কাছে এবং আল্লার কাছে পরিষ্কার। সবার কাছে প্রশ্ন রেখে সাবেক এ যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য টাকা বরাদ্ধ ছিল ৩৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার। কিন্তু অভিযোগ ওঠে এ কাজের জন্য ৩৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ অবান্তর বলেও উল্লেখ করেন তিনি। নিজেকে সৎ লোক দাবি করে সদ্য পদত্যাগী এ মন্ত্রী বলেন, সততা, ভদ্রতা নিষ্ঠাই তাঁর জীবনের অহঙ্কার। যারা তাঁর সমালোচনা করেন তারা পক্ষান্তরে তার উপকার করেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, সমালোচকদের সমালোচনা তাঁর জীবনের সামনের দিনগুলো সুন্দর করবে। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করার পর সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেনÑ তা হলে আপনার পদত্যাগ কি ভুল ছিল? এ প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, আপনাদের কারণে পদত্যাগ করেছি।
দুদক কার্যালয়ে এক লিখিত বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কতিপয় সম্মানিত ব্যক্তি আমার মন্ত্রিসভায় থাকাটা পদ্মা সেতুর স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্তের পথে বাধা মনে করায় এবং মিডিয়ার সুধীজন ও শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শের প্রতিফলনে, স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে, পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বার্থে আমি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাই। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোন চাপ ছিল না, নির্দেশও ছিল না।
বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন নিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যক্রম সততা ও দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়িত হচ্ছিল দাবি করে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, কতিপয় স্বার্থান্বেষীদের অসত্য অভিযোগ আমলে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করেছে এবং পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির আগাম আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। অবান্তর, অবাস্তব, অসত্য ও ভিত্তিহীন দুর্নীতির অভিযোগের কথা বলে পদ্মা সেতুর টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় বিশ্বব্যাংক। কি লক্ষ্যে, কি উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্নকে ধূলিসাত করা হলো তা তার কছে বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ কার্যক্রমে দুর্নীতির কোন আশঙ্কার কথা বিশ্বব্যাংক কখনও তাকে জানায়নি। পদ্মা সেতু নিয়ে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে, মন্ত্রী হিসেবে আমার সম্পর্কে কেউ কোন অভিযোগ করলে, কোন অনিয়ম দৃষ্টিগোচর হলে আমার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের আলোচনা করা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে তাঁর পরিবারের কারও কোন ধরনের সম্পর্ক ছিল না। কোন সংশ্লিষ্টতাও নেই। তিনি বলেন, পৃথিবীতে এমন কোন ব্যক্তি নেই যে সাক্ষী দিতে পারে আমি কারও কাছে টাকা ও কমিশন গ্রহণ বা পার্সেন্টেজ চেয়েছি। হক-হালাল পথ ছাড়া অন্য কোনভাবে অর্থ উপার্জন করেছি। সততা, জবাবদিহিতা ইন্টিগ্রিটি, বিনয় এবং ভদ্রতা তার জীবনের শক্তি ও অহঙ্কার বলে দাবি করেন তিনি।
এর আগে আবুল হোসেনকে ঠিকাদার নিয়োগের দুর্নীতির বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল দুদক। সে অভিযোগটিতে দুর্নীতি হয়নি বলে দুদক জানিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু করা হয় পরামর্শক প্রাক্যাচাই প্রক্রিয়ার দুর্নীতির অভিযোগ, যা এখন অব্যাহত রয়েছে। এ অভিযোগের বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় সংসদের এক হুইপের ছোট ভাই, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, চার প্রকৌশলী, এসএনসি লাভালিনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াউল হক এবং অপর চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের ১২ প্রতিনিধি এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ ২১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একই বিষয়ে পদ্মা সেতুর মূল্যায়ন কিমিটির সঙ্গেও আলাপ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
এ তদন্তের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানান দুদকের কমিশনার মোঃ বদিউজ্জামান। তবে প্রয়োজনে আরও অনুসন্ধান চালানো হবে। তার কার্যালয়ে সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ পর্যন্ত যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা প্রতিবেদন জমা দেবে কমিশনে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিশ্বব্যাংক থেকে পাঠানো চিঠিতে মশিউর রহমানের নাম নেই বলেও জানান তিনি। তবে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মশিউর রহমানের নাম এসেছে কিনা তা তিনি জানেন না। কারণ জিজ্ঞাসাবাদে কারও নাম এলে তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। আবুল হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করার বিষয়টি দুদক কমিশনারকে সাংবাদিকরা জাননোর পর তিনি বলেন, সব অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ঝুলে যাওয়ার পর এক পর্যায়ে যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে আবুল হোসেনকে সরিয়ে দেয়া হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। তবে বিশ্বব্যাংকের শর্ত ছিল, মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, তখনকার সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের আর দায়িত্বে থাকা চলবে না। একই সঙ্গে দুদকের তদন্ত কাজের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের একটি প্যানেলকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সেই শর্ত পূরণ না হওয়ায় চলতি বছর এপ্রিলে চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংককে ফেরানোর উদ্যোগের মধ্যেই গত ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন আবুল হোসেন। এর ঠিক এক মাস পর তা গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান।
উল্লেখ্য, ঠিকাদার নিয়োগ ও পরামর্শক প্রাক্যাচাই প্রক্রিয়াতে দুর্নীতির অভিযোগেই গত বছর সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের চুক্তি স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৯ জুন চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। ২শ’ ৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ দেয়ার কথা ছিল ১শ’ ২০ কোটি ডলার।
সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনে সৈয়দ আবুল হোসেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার এসব কথা বলেন।
গত মাসের ২৬ তারিখে দুদক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেন সাবেক এ যোগাযোগমন্ত্রীকে। দুদকের ডাকে সাড়া দিয়ে সোমবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ে হাজির হন তিনি। দুদক কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় প্রায় তিন ঘণ্টা আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান কর্মকর্তা মীর জয়নুল আবদীন শিবলী ও মির্জা জাহিদুল আলম।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে আবুল হোসেন সাংবাদিকদের আরও বলেন, পদ্মা সেতুর প্রতিটি কাজ সততা, নিষ্ঠা ও দ্রুততার সঙ্গে করা হয়েছে। এ সেতু প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের দুর্নীতি হয়নি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নিজের কাছে এবং আল্লার কাছে পরিষ্কার। সবার কাছে প্রশ্ন রেখে সাবেক এ যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য টাকা বরাদ্ধ ছিল ৩৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার। কিন্তু অভিযোগ ওঠে এ কাজের জন্য ৩৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ অবান্তর বলেও উল্লেখ করেন তিনি। নিজেকে সৎ লোক দাবি করে সদ্য পদত্যাগী এ মন্ত্রী বলেন, সততা, ভদ্রতা নিষ্ঠাই তাঁর জীবনের অহঙ্কার। যারা তাঁর সমালোচনা করেন তারা পক্ষান্তরে তার উপকার করেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, সমালোচকদের সমালোচনা তাঁর জীবনের সামনের দিনগুলো সুন্দর করবে। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করার পর সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেনÑ তা হলে আপনার পদত্যাগ কি ভুল ছিল? এ প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, আপনাদের কারণে পদত্যাগ করেছি।
দুদক কার্যালয়ে এক লিখিত বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কতিপয় সম্মানিত ব্যক্তি আমার মন্ত্রিসভায় থাকাটা পদ্মা সেতুর স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্তের পথে বাধা মনে করায় এবং মিডিয়ার সুধীজন ও শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শের প্রতিফলনে, স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে, পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বার্থে আমি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাই। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোন চাপ ছিল না, নির্দেশও ছিল না।
বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন নিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যক্রম সততা ও দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়িত হচ্ছিল দাবি করে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, কতিপয় স্বার্থান্বেষীদের অসত্য অভিযোগ আমলে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করেছে এবং পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির আগাম আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। অবান্তর, অবাস্তব, অসত্য ও ভিত্তিহীন দুর্নীতির অভিযোগের কথা বলে পদ্মা সেতুর টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় বিশ্বব্যাংক। কি লক্ষ্যে, কি উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্নকে ধূলিসাত করা হলো তা তার কছে বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ কার্যক্রমে দুর্নীতির কোন আশঙ্কার কথা বিশ্বব্যাংক কখনও তাকে জানায়নি। পদ্মা সেতু নিয়ে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে, মন্ত্রী হিসেবে আমার সম্পর্কে কেউ কোন অভিযোগ করলে, কোন অনিয়ম দৃষ্টিগোচর হলে আমার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের আলোচনা করা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে তাঁর পরিবারের কারও কোন ধরনের সম্পর্ক ছিল না। কোন সংশ্লিষ্টতাও নেই। তিনি বলেন, পৃথিবীতে এমন কোন ব্যক্তি নেই যে সাক্ষী দিতে পারে আমি কারও কাছে টাকা ও কমিশন গ্রহণ বা পার্সেন্টেজ চেয়েছি। হক-হালাল পথ ছাড়া অন্য কোনভাবে অর্থ উপার্জন করেছি। সততা, জবাবদিহিতা ইন্টিগ্রিটি, বিনয় এবং ভদ্রতা তার জীবনের শক্তি ও অহঙ্কার বলে দাবি করেন তিনি।
এর আগে আবুল হোসেনকে ঠিকাদার নিয়োগের দুর্নীতির বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল দুদক। সে অভিযোগটিতে দুর্নীতি হয়নি বলে দুদক জানিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু করা হয় পরামর্শক প্রাক্যাচাই প্রক্রিয়ার দুর্নীতির অভিযোগ, যা এখন অব্যাহত রয়েছে। এ অভিযোগের বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় সংসদের এক হুইপের ছোট ভাই, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, চার প্রকৌশলী, এসএনসি লাভালিনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াউল হক এবং অপর চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের ১২ প্রতিনিধি এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ ২১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একই বিষয়ে পদ্মা সেতুর মূল্যায়ন কিমিটির সঙ্গেও আলাপ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
এ তদন্তের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানান দুদকের কমিশনার মোঃ বদিউজ্জামান। তবে প্রয়োজনে আরও অনুসন্ধান চালানো হবে। তার কার্যালয়ে সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ পর্যন্ত যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা প্রতিবেদন জমা দেবে কমিশনে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিশ্বব্যাংক থেকে পাঠানো চিঠিতে মশিউর রহমানের নাম নেই বলেও জানান তিনি। তবে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মশিউর রহমানের নাম এসেছে কিনা তা তিনি জানেন না। কারণ জিজ্ঞাসাবাদে কারও নাম এলে তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। আবুল হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করার বিষয়টি দুদক কমিশনারকে সাংবাদিকরা জাননোর পর তিনি বলেন, সব অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ঝুলে যাওয়ার পর এক পর্যায়ে যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে আবুল হোসেনকে সরিয়ে দেয়া হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। তবে বিশ্বব্যাংকের শর্ত ছিল, মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, তখনকার সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের আর দায়িত্বে থাকা চলবে না। একই সঙ্গে দুদকের তদন্ত কাজের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের একটি প্যানেলকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সেই শর্ত পূরণ না হওয়ায় চলতি বছর এপ্রিলে চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংককে ফেরানোর উদ্যোগের মধ্যেই গত ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন আবুল হোসেন। এর ঠিক এক মাস পর তা গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান।
উল্লেখ্য, ঠিকাদার নিয়োগ ও পরামর্শক প্রাক্যাচাই প্রক্রিয়াতে দুর্নীতির অভিযোগেই গত বছর সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের চুক্তি স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৯ জুন চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। ২শ’ ৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ দেয়ার কথা ছিল ১শ’ ২০ কোটি ডলার।
No comments