ক্ষুদ্র ঋণে ঋণী তিন নারী by সালমা বেগম
নোবেল জয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুসের কথা বলতেই গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের সুবিদাভোগী সালেহা-রোজিনা-তাহসিনা কাঁদলেন। বললেন, তিনি তো আমাদের জন্মদাতা পিতার চেয়ে বেশি কিছু। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে নেই এজন্য আমরা উদ্বিগ্ন ও হতাশ।
বৃহষ্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রতিবাদ সভায় সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাজিপুর, চট্টগ্রামসহ সারা দেশ থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরা এসেছিলেন তাদের মনের অনুভুতি ও আকুতি জানাতে। এদের মধ্যে সালেহা-রোজিনা ও তাহসিনার কথা হয় বার্তা২৪ ডটনেট’র সংগে।
তারা সকলেই বললেন, গ্রামীণ ব্যাংক আমাদের শুধু ঋণ দেয়নি। সুখ-শান্তিতে নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকার জন্য জীবনের একটি গাইড লাইনও দিয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা আমাদের দারিদ্র্যতা তাড়িয়েছি এবং সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছি। ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছে। আমাদের সন্তানেরা উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে।
তারা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমাদের যখন ভিক্ষার ঝুলি হাতে নেয়ার মতো অবস্থা সহায়-সম্বল ছিল না, তখন গ্রামীণ ব্যাংক আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঋণ সহায়তা দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তাতে সংসার ভালই চলছে। সম্পদ বাড়ছে। তিন বেলা খেতে পারছি। শিশু সন্তানরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে না। গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চ শিক্ষ ঋণে কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ছাত্র অবস্থায় এই ঋণের টাকার কোনো সুদ দিতে হবে না। এমন ‘বান্ধব’ আমরা কোথায় পাবো। একজন পিতা দুইটি সন্তানকে খেতে দিতে পারে না। আর ড. ইউনুস ৮৪ লাখ গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যকে অন্তত দুইবেলা খাওয়া পড়ার ব্যবস্থা করেছেন। সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা মনে করি ড. ইউনুস আমাদের জন্মদাতা পিতার চেয়ে বেশি কিছু। তার বিরুদ্ধে যে যত কথাই বলুক আমরা তা এখন আর বিশ্বাস করি না।
গাজীপুর জেলার চৌরাস্তা পোতাদিয়া গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, ‘‘১৯৮৮ সালে দেড় হাজার টাকা ঋণ নেই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে। আমার স্বামী ভাড়ায় রিকসা চালাতেন। দৈনিক যা আয় হতো ভাড়ার টাকা মিটিয়ে তাতে সংসার চলতো না। প্রথম ঋণের টাকা দিয়ে আমার স্বামীকে একটা রিকশা কিনে দেই। এ টাকা পরিশোধ করার পর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আবার ঋণ নিয়ে ব্যাবসা শুরু করলাম। স্বামীকে আর রিকসা চালাতে দেইনি। এভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে থাকলে আমাকে বেশি টাকা ঋণ দিতে থাকে। এদিয়ে আমি আর আমার স্বামী ব্যাবসা করি। পর্যায়ক্রমে আমাদের ব্যাবসা সম্প্রসারণ হতে থাকে। এখন আমাদের গাজীপুর চৌরাস্তায় দু’টি দোকান আর একটি নিজস্ব ট্রাক আছে। এতে আমার সংসারের সকলের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া আরো ১২ জন বেতন ভূক্ত কর্মচারি রয়েছে। ’’
সালেহা বলেন, “আমার তিন ছেলে। অভাবের তাড়নায় ছেলেদের বেশি লেখাপড়া করাতে পারিনি। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে যদি আমি ঋণ না পেতাম তাহলে আমার ছেলেদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো না। সমাজে এরা হয়তো চোর ডাকাত বা সন্ত্রাসী হতো। আমি হয়তো বাসা-বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতাম। দুঃখ যন্ত্রণার জীবন বয়ে বেড়াতাম।
তিনি বলেন, আমার মতো এই গাজীপুরে তিন হাজার মহিলা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। চার হাজার ঋণ গ্রহীতা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলার রাউতারা গ্রামের রোজিনা বেগম বলেন, ‘‘আজ থেকে চব্বিশ বছর আগে আমি ছিলাম হত দরিদ্র। দিনে এক বেলা খাবার জুটত না। স্বামী কৃষিকাজ করতেন। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল। নুন আনতে পানতা ফুরানোর অবস্থা। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে প্রথমে দুই হাজার টাকা ঋণ নেই। সেই টাকা দিয়ে ধান-চালের ব্যাবসা শুরু করি। এরপর দ্বিতীয় কিস্তিতে চার হাজার টাকা নিলাম । এভাবে আমি ঋণ নিতে থাকি। আর ব্যাবসায় আস্তে আস্তে উন্নতি হতে থাকে। এর পর আমাকে পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি।"
রোজিনা বলেন, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছে। ছোট ছেলেও তেজগাও কলেজে অনার্স পড়ে। আমার দুই ছেলের পড়াশুনা করাতে পারতাম না যদি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সূদবিহিন উচ্চ শিক্ষ ঋণ না পেতাম।
তিনি বলেন, এক সময় আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকাতো না। আজ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে সাধারণ মানুষ সবাই আমার কাছে আসে পরামর্শ এবং সহযোগিতা নেয়ার জন্য। আমাদের এলাকায় পাঁচ হাজার মহিলা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলার চোকাইতলা গ্রামের তাহসিনা খাতুন বলেন, “আমি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২০০৫ সালে সাড়ে পাচঁ হাজার টাকা ঋণ নেই। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার আগে আমি সোনালী ব্যাংকে যাই ঋণ নেয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের মতো গরিব মানুষের এই সব ব্যাংকর শর্তপূরণ সম্ভব নয়। ঋণ পাওয়াটা ছিল আমাদের জন্য খুবই কঠিন। আমাকে ব্যাংক থেকে বললো বাড়ির দলিল ও জামিনদার দিতে হবে। এছাড়া আরো কত ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে। শেষ পর্যন্ত আর ঋণ নেয়া হলো না। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে খুব সহজে ঋণ পেলাম। এই টাকা তুলে আমার স্বামীর ফার্মেসি ব্যাবসায় বিনিয়োগ করি। বর্তমানে আমি সাড়ে তিন লাখ টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি।”
তাসসিনা বলেন, আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে অর্নাস ৩য় বর্ষে পড়ছে। ছোট মেয়ে মাওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের ১ম বর্ষে পড়ছে। পড়াশুনা করাতে অনেক খরচ। তাই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে উচ্চ শিক্ষা ঋণ নিয়েছি। এর মধ্যে আমার ছোট মেয়ে গ্রামীণ কল্যাণ বৃত্তি পাবে মাসে তিন হাজার টাকা।
তারা সকলেই বললেন, গ্রামীণ ব্যাংক আমাদের শুধু ঋণ দেয়নি। সুখ-শান্তিতে নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকার জন্য জীবনের একটি গাইড লাইনও দিয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা আমাদের দারিদ্র্যতা তাড়িয়েছি এবং সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছি। ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছে। আমাদের সন্তানেরা উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে।
তারা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমাদের যখন ভিক্ষার ঝুলি হাতে নেয়ার মতো অবস্থা সহায়-সম্বল ছিল না, তখন গ্রামীণ ব্যাংক আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঋণ সহায়তা দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তাতে সংসার ভালই চলছে। সম্পদ বাড়ছে। তিন বেলা খেতে পারছি। শিশু সন্তানরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে না। গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চ শিক্ষ ঋণে কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ছাত্র অবস্থায় এই ঋণের টাকার কোনো সুদ দিতে হবে না। এমন ‘বান্ধব’ আমরা কোথায় পাবো। একজন পিতা দুইটি সন্তানকে খেতে দিতে পারে না। আর ড. ইউনুস ৮৪ লাখ গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যকে অন্তত দুইবেলা খাওয়া পড়ার ব্যবস্থা করেছেন। সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা মনে করি ড. ইউনুস আমাদের জন্মদাতা পিতার চেয়ে বেশি কিছু। তার বিরুদ্ধে যে যত কথাই বলুক আমরা তা এখন আর বিশ্বাস করি না।
গাজীপুর জেলার চৌরাস্তা পোতাদিয়া গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, ‘‘১৯৮৮ সালে দেড় হাজার টাকা ঋণ নেই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে। আমার স্বামী ভাড়ায় রিকসা চালাতেন। দৈনিক যা আয় হতো ভাড়ার টাকা মিটিয়ে তাতে সংসার চলতো না। প্রথম ঋণের টাকা দিয়ে আমার স্বামীকে একটা রিকশা কিনে দেই। এ টাকা পরিশোধ করার পর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আবার ঋণ নিয়ে ব্যাবসা শুরু করলাম। স্বামীকে আর রিকসা চালাতে দেইনি। এভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে থাকলে আমাকে বেশি টাকা ঋণ দিতে থাকে। এদিয়ে আমি আর আমার স্বামী ব্যাবসা করি। পর্যায়ক্রমে আমাদের ব্যাবসা সম্প্রসারণ হতে থাকে। এখন আমাদের গাজীপুর চৌরাস্তায় দু’টি দোকান আর একটি নিজস্ব ট্রাক আছে। এতে আমার সংসারের সকলের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া আরো ১২ জন বেতন ভূক্ত কর্মচারি রয়েছে। ’’
সালেহা বলেন, “আমার তিন ছেলে। অভাবের তাড়নায় ছেলেদের বেশি লেখাপড়া করাতে পারিনি। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে যদি আমি ঋণ না পেতাম তাহলে আমার ছেলেদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো না। সমাজে এরা হয়তো চোর ডাকাত বা সন্ত্রাসী হতো। আমি হয়তো বাসা-বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতাম। দুঃখ যন্ত্রণার জীবন বয়ে বেড়াতাম।
তিনি বলেন, আমার মতো এই গাজীপুরে তিন হাজার মহিলা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। চার হাজার ঋণ গ্রহীতা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলার রাউতারা গ্রামের রোজিনা বেগম বলেন, ‘‘আজ থেকে চব্বিশ বছর আগে আমি ছিলাম হত দরিদ্র। দিনে এক বেলা খাবার জুটত না। স্বামী কৃষিকাজ করতেন। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল। নুন আনতে পানতা ফুরানোর অবস্থা। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে প্রথমে দুই হাজার টাকা ঋণ নেই। সেই টাকা দিয়ে ধান-চালের ব্যাবসা শুরু করি। এরপর দ্বিতীয় কিস্তিতে চার হাজার টাকা নিলাম । এভাবে আমি ঋণ নিতে থাকি। আর ব্যাবসায় আস্তে আস্তে উন্নতি হতে থাকে। এর পর আমাকে পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি।"
রোজিনা বলেন, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছে। ছোট ছেলেও তেজগাও কলেজে অনার্স পড়ে। আমার দুই ছেলের পড়াশুনা করাতে পারতাম না যদি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সূদবিহিন উচ্চ শিক্ষ ঋণ না পেতাম।
তিনি বলেন, এক সময় আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকাতো না। আজ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে সাধারণ মানুষ সবাই আমার কাছে আসে পরামর্শ এবং সহযোগিতা নেয়ার জন্য। আমাদের এলাকায় পাঁচ হাজার মহিলা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলার চোকাইতলা গ্রামের তাহসিনা খাতুন বলেন, “আমি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২০০৫ সালে সাড়ে পাচঁ হাজার টাকা ঋণ নেই। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার আগে আমি সোনালী ব্যাংকে যাই ঋণ নেয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের মতো গরিব মানুষের এই সব ব্যাংকর শর্তপূরণ সম্ভব নয়। ঋণ পাওয়াটা ছিল আমাদের জন্য খুবই কঠিন। আমাকে ব্যাংক থেকে বললো বাড়ির দলিল ও জামিনদার দিতে হবে। এছাড়া আরো কত ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে। শেষ পর্যন্ত আর ঋণ নেয়া হলো না। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে খুব সহজে ঋণ পেলাম। এই টাকা তুলে আমার স্বামীর ফার্মেসি ব্যাবসায় বিনিয়োগ করি। বর্তমানে আমি সাড়ে তিন লাখ টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি।”
তাসসিনা বলেন, আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে অর্নাস ৩য় বর্ষে পড়ছে। ছোট মেয়ে মাওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের ১ম বর্ষে পড়ছে। পড়াশুনা করাতে অনেক খরচ। তাই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে উচ্চ শিক্ষা ঋণ নিয়েছি। এর মধ্যে আমার ছোট মেয়ে গ্রামীণ কল্যাণ বৃত্তি পাবে মাসে তিন হাজার টাকা।
No comments