২৯ রাজনীতিক ও ২৫ আইনজীবীর বিরুদ্ধে চার্জশিট-সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ মামলা
গত ২৯ এপ্রিল হরতালের সময় সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় ২৯ নেতা এবং পরবর্তী সময়ে আদালতে ভাঙচুরের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপিপন্থী ২৫ আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়।
গতকাল সকালের দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায়, আর বিকেলে কোতোয়ালি থানার পুলিশ আইনজীবীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে করা মামলায় চার্জশিট দাখিল করে।
বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা : বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভরতাবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া এমপি, শাম্মী আক্তার শিফা এমপি, বেগম রেহানা আক্তার রানু এমপি, নিলোফার চৌধুরী মনি এমপি, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এমপি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আ. মতিন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, যুবদলের সহদপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল, বিএনপির সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান রতন, মোরতাজুল করিম বাদরু, রেহানা আক্তার ডলি ও মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন ভুঁইয়া ওরফে বাদল।
চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পারস্পরিক সহযোগিতা, ষড়যন্ত্র, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, আর্থিক সহযোগিতা ও বিস্ফোরকদ্রব্যাদি সংগ্রহের সহায়তায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতিসাধনসহ গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন বাংলাদেশ সচিবালয়ের ২ নম্বর গেটের বাইরে ১০০ গজ পূর্ব দিকে ও সচিবালয়ের সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে গাড়ি রাখার গ্যারেজের পশ্চিম পাশে অজ্ঞাতপরিচয় দুজন মোটরসাইকেল আরোহীর দ্বারা দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মামলায় ২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ঘটনার প্রতিবাদে বিরোধী দলের ডাকা হরতাল চলাকালে গত ২৯ এপ্রিল সচিবালয়ে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় মির্জা ফখরুলসহ শরিক দলগুলের ২৮ নেতার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন ভুঁইয়া ওরফে বাদলকে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
মামলা স্থানান্তরিত : গতকাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর বিচারক বিকাশ কুমার সাহা বিচারের জন্য মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য আগামী ২৬ জুলাই দিন ধার্য করেন।
২৫ জন আসামি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করলে গত ১৪ মে তাঁদের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় দ্রুত বিচার আইনে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় তাঁরা কারাগারে আছেন। গত ১৬ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১০ মে মির্জা ফখরুলসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় ৪৩ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। যদিও পরে পাঁচ সংসদ সদস্যের জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।
ককটেল হামলাকারী শনাক্ত হয়নি : সচিবালয়ে হরতালে ককটলে নিক্ষেপকারী ছিল দুজন অজ্ঞাতপরিচয় মোটরসাইকেল আরোহী। এজাহার ও অভিযোগপত্রে তা-ই উল্লেখ রয়েছে। তবে তাঁদের শনাক্ত না করেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে ককটেল নিক্ষেপকারীদের সম্পর্কে বা তাদের পরিচয় সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। অথচ বিরোধী দলের নেতাদের ইন্ধনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তা ছাড়া ওই ককটেল দুটি বিস্ফোরকদ্রব্য ছিল, তা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে চার্জশিটে বলা হয়েছে।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট : এদিকে গতকাল বিএনপিপন্থী ২৫ আইনজীবী নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক আজিজুল ইসলাম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি মো. বোরহান উদ্দিন, সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, গোলাম মোস্তফা খান ও ইকবাল হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট এরশাদুল আলম ওরফে জর্জ, মো. হেলাল উদ্দিন, ওমর ফারুক ফারুকি, আবদুন নুর ভুঁইয়া বাবলু, আবদুল খালেক মিলন, জালাল আহমেদ দোলন, নুরুজ্জামান, জুলফিকার আলী হায়দার জীবন, এম মাসুদ রানা, মো. মজিবুর রহমান, খন্দকার দিদারুল ইসলাম, দিদার (ছোট), নুরুজ্জামান তপন, জ্যাকব, পাপ্পু, মহসিন মিয়া, কামাল হোসেন, সিমকি ইমাম ও শামীমা আক্তার শাম্মী। তাঁদের মধ্যে ২২ জন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। শেষোক্ত তিনজন পলাতক রয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও মালামাল ক্রোকের আবেদন করা হয়েছে।
এ ছাড়া হেলাল উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান রোমেন, হেলাল, মনির, ফারদিন, জামাল আলী মিয়া ও মিলনকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। তাঁদের নাম এজাহারে থাকলেও ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় তাঁদেরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয় বলে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গত ২২ মে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা রাজনৈতিক কারণে আদালত বর্জন করে কালো পতাকা ও ব্যানারসহ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ঢাকা আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের রাস্তায় বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকেন। তাঁদের কারণে আদালতে আসা লোকজন ও যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। জঙ্গি মিছিল ও হুমকিমূলক স্লোগানের কারণে আদালতে আসা লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। আইনজীবীরা মিছিল করে মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনে প্রবেশ করে বিচারকদের দরজায় লাথি মারেন। মিছিলকারীরা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করেন। আসামিরা মিছিলে বিভিন্ন হুমকিমূলক স্লোগান দিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৃতীয় তলার স্টেনোগ্রাফারের অফিসের জানালার কাচ ভাঙচুর করেন।
গত ২২ মে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ডাকা আদালত বর্জন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সময় ঢাকার জজ আদালতে ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ২৯ আইনজীবীসহ ৯৯ আইনজীবীকে আসামি করে পুলিশ এ মামলা করে।
চার্জশিট প্রসঙ্গে মামলার আসামি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বোরহানউদ্দিন বলেন, এর আগে কখনো ঢাকা বারের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে কোনো মামলায় আসামি করা হয়নি। বারের সভাপতিকে অভিযোগপত্রে আসামি করে বারের সব আইনজীবীকেই অপমানিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ২৮ ও ২৯ মে বারের সাধারণ সভায় বারের সিনিয়র নেতারা সম্মিলিতভাবে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছিলেন। পরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু, সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহ আলম ও কাজী নজিবউল্লাহ হিরু মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হলো না। তিনি আরো বলেন, কথিত ভাঙচুরের ঘটনায় তিনি ছিলেন না বা এ ধরনের কোনো আদেশ বা নির্দেশ তিনি দেননি। শুধু রাজনৈতিক কারণেই তাঁর নাম এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু এ বিষয়ে বলেন, সাধারণ সভায় তাঁরা একসঙ্গে বসেছিলেন। তবে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে যে তাঁকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা তিনি অস্বীকার করেন। যেহেতু অভিযোগপত্র আদালতে এসেছে, সে ক্ষেত্রে আইনের বিধান অনুসারে মামলা চলবে।
অন্যদিকে, সকালে এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া এজাহারনামীয় ২২ আইনজীবী নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। গত ২৪ মে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করলে হাইকোর্ট ২২ আইনজীবীকে ১০ দিনের জন্য জামিন দেন। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ অনুযায়ী গতকাল ২২ আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম আইনজীবীদের আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামী ৩ জুন দিন ধার্য করেন। এ সময় পর্যন্ত তাঁদের জামিন বহাল থাকবে।
বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা : বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভরতাবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া এমপি, শাম্মী আক্তার শিফা এমপি, বেগম রেহানা আক্তার রানু এমপি, নিলোফার চৌধুরী মনি এমপি, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এমপি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আ. মতিন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, যুবদলের সহদপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল, বিএনপির সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান রতন, মোরতাজুল করিম বাদরু, রেহানা আক্তার ডলি ও মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন ভুঁইয়া ওরফে বাদল।
চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পারস্পরিক সহযোগিতা, ষড়যন্ত্র, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, আর্থিক সহযোগিতা ও বিস্ফোরকদ্রব্যাদি সংগ্রহের সহায়তায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতিসাধনসহ গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন বাংলাদেশ সচিবালয়ের ২ নম্বর গেটের বাইরে ১০০ গজ পূর্ব দিকে ও সচিবালয়ের সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে গাড়ি রাখার গ্যারেজের পশ্চিম পাশে অজ্ঞাতপরিচয় দুজন মোটরসাইকেল আরোহীর দ্বারা দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মামলায় ২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ঘটনার প্রতিবাদে বিরোধী দলের ডাকা হরতাল চলাকালে গত ২৯ এপ্রিল সচিবালয়ে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় মির্জা ফখরুলসহ শরিক দলগুলের ২৮ নেতার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন ভুঁইয়া ওরফে বাদলকে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
মামলা স্থানান্তরিত : গতকাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর বিচারক বিকাশ কুমার সাহা বিচারের জন্য মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য আগামী ২৬ জুলাই দিন ধার্য করেন।
২৫ জন আসামি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করলে গত ১৪ মে তাঁদের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় দ্রুত বিচার আইনে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় তাঁরা কারাগারে আছেন। গত ১৬ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১০ মে মির্জা ফখরুলসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় ৪৩ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। যদিও পরে পাঁচ সংসদ সদস্যের জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।
ককটেল হামলাকারী শনাক্ত হয়নি : সচিবালয়ে হরতালে ককটলে নিক্ষেপকারী ছিল দুজন অজ্ঞাতপরিচয় মোটরসাইকেল আরোহী। এজাহার ও অভিযোগপত্রে তা-ই উল্লেখ রয়েছে। তবে তাঁদের শনাক্ত না করেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে ককটেল নিক্ষেপকারীদের সম্পর্কে বা তাদের পরিচয় সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। অথচ বিরোধী দলের নেতাদের ইন্ধনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তা ছাড়া ওই ককটেল দুটি বিস্ফোরকদ্রব্য ছিল, তা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে চার্জশিটে বলা হয়েছে।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট : এদিকে গতকাল বিএনপিপন্থী ২৫ আইনজীবী নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক আজিজুল ইসলাম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি মো. বোরহান উদ্দিন, সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, গোলাম মোস্তফা খান ও ইকবাল হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট এরশাদুল আলম ওরফে জর্জ, মো. হেলাল উদ্দিন, ওমর ফারুক ফারুকি, আবদুন নুর ভুঁইয়া বাবলু, আবদুল খালেক মিলন, জালাল আহমেদ দোলন, নুরুজ্জামান, জুলফিকার আলী হায়দার জীবন, এম মাসুদ রানা, মো. মজিবুর রহমান, খন্দকার দিদারুল ইসলাম, দিদার (ছোট), নুরুজ্জামান তপন, জ্যাকব, পাপ্পু, মহসিন মিয়া, কামাল হোসেন, সিমকি ইমাম ও শামীমা আক্তার শাম্মী। তাঁদের মধ্যে ২২ জন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। শেষোক্ত তিনজন পলাতক রয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও মালামাল ক্রোকের আবেদন করা হয়েছে।
এ ছাড়া হেলাল উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান রোমেন, হেলাল, মনির, ফারদিন, জামাল আলী মিয়া ও মিলনকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। তাঁদের নাম এজাহারে থাকলেও ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় তাঁদেরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয় বলে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গত ২২ মে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা রাজনৈতিক কারণে আদালত বর্জন করে কালো পতাকা ও ব্যানারসহ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ঢাকা আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের রাস্তায় বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকেন। তাঁদের কারণে আদালতে আসা লোকজন ও যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। জঙ্গি মিছিল ও হুমকিমূলক স্লোগানের কারণে আদালতে আসা লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। আইনজীবীরা মিছিল করে মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনে প্রবেশ করে বিচারকদের দরজায় লাথি মারেন। মিছিলকারীরা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করেন। আসামিরা মিছিলে বিভিন্ন হুমকিমূলক স্লোগান দিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৃতীয় তলার স্টেনোগ্রাফারের অফিসের জানালার কাচ ভাঙচুর করেন।
গত ২২ মে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ডাকা আদালত বর্জন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সময় ঢাকার জজ আদালতে ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ২৯ আইনজীবীসহ ৯৯ আইনজীবীকে আসামি করে পুলিশ এ মামলা করে।
চার্জশিট প্রসঙ্গে মামলার আসামি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বোরহানউদ্দিন বলেন, এর আগে কখনো ঢাকা বারের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে কোনো মামলায় আসামি করা হয়নি। বারের সভাপতিকে অভিযোগপত্রে আসামি করে বারের সব আইনজীবীকেই অপমানিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ২৮ ও ২৯ মে বারের সাধারণ সভায় বারের সিনিয়র নেতারা সম্মিলিতভাবে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছিলেন। পরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু, সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহ আলম ও কাজী নজিবউল্লাহ হিরু মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হলো না। তিনি আরো বলেন, কথিত ভাঙচুরের ঘটনায় তিনি ছিলেন না বা এ ধরনের কোনো আদেশ বা নির্দেশ তিনি দেননি। শুধু রাজনৈতিক কারণেই তাঁর নাম এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু এ বিষয়ে বলেন, সাধারণ সভায় তাঁরা একসঙ্গে বসেছিলেন। তবে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে যে তাঁকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা তিনি অস্বীকার করেন। যেহেতু অভিযোগপত্র আদালতে এসেছে, সে ক্ষেত্রে আইনের বিধান অনুসারে মামলা চলবে।
অন্যদিকে, সকালে এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া এজাহারনামীয় ২২ আইনজীবী নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। গত ২৪ মে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করলে হাইকোর্ট ২২ আইনজীবীকে ১০ দিনের জন্য জামিন দেন। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ অনুযায়ী গতকাল ২২ আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম আইনজীবীদের আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামী ৩ জুন দিন ধার্য করেন। এ সময় পর্যন্ত তাঁদের জামিন বহাল থাকবে।
No comments