চারদিক-ফ্ল্যাটের বারান্দায় কাকের বাসা by কাজী আলী রেজা
বর্জ্যভুক প্রাণী কাক মানুষের অনেক উপকার করলেও এরা আমাদের পোষা পাখির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। নোংরা খাদ্যাভ্যাস, কর্কশ কণ্ঠ বা গায়ের রঙের কারণে হয়তো ওরা আমাদের অনেকের বিরক্তির কারণ। তাই কাক সম্ভবত বাসা বাঁধে মানুষের নাগালের বাইরে, গাছের মগডালে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে এর ব্যত্যয় ঘটে না, এমন নয়।
ঢাকার কেন্দ্রস্থল ঘনবসতির এক চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দায় মাটির টবে রাখা গাছে হঠাৎ দেখা গেল এক জোড়া কাক কানাকানি করছে। ফ্ল্যাটের কর্তা গভীর মনোযোগ সহকারে এই কাক দুটোর কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। দেখা গেল, ছোট টবের গাছের ঠিক মাঝখানে দু-একটি খড়কুটো। বোঝা গেল, বাসা বাঁধার চেষ্টা চলছে।
প্রায় পাঁচ-ছয় সপ্তাহ ধরে আপ্রাণ চেষ্টার পর তৈরি হলো বাসা। এ যেন এক মহাযজ্ঞ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে উড়ে উড়ে এসে বাসা বাঁধার এই চেষ্টা এত কাছ থেকে খুব কম লোকই হয়তো দেখেছে। বাসাটি তৈরি হলে দেখা গেল, এতে এহেন বস্তু নেই—যা অনুপস্থিত। টেলিফোনের তার, বৈদ্যুতিক তার, লৌহদণ্ড, টিনের টুকরা, গুনা থেকে শুরু করে খড়কুটা, গাছের ডাল, টুকরো কাপড়, দড়ি, পাজামার লেইস, সুতা—সবই আছে এতে।
সকাল-বিকেল টবের গাছের নিয়মিত পরিচর্যা চললেও তাতে কাকের বাসা বাঁধা থেমে থাকেনি। এক দিন এক অতিথি পরিবার ছোট ছেলে-মেয়েসহ বেড়াতে এসে টবের গাছে কাকের বাসা দেখে অদ্ভুত আনন্দে মোবাইল ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে গিয়ে বিস্ময়ে দেখতে পায়, বাসায় দুটো অনিন্দ্য সুন্দর ডিম! এত চমৎকার রঙিন ডিম আর কখনো দেখেনি তারা।
কিন্তু হায়, কিছুদিন পর এক রাত শেষে সকালে দেখা গেল বাসাটি খালি, ডিম দুটো বারান্দায় পড়ে আছে—ভাঙা। তার পর কেটে যায় সপ্তাহ-দশ দিন। আবার মেরামত করা বাসায় দেখা গেল, তিনটি ডিম। এবং এদের ভাগ্যও ঠিক একই রকম। হঠাৎ এক দিন দুটো ডিম উধাও, একটি ডিম বারান্দায়—ভাঙা, মেঝেতে লেপ্টে আছে।
তৃতীয়বারে সফলকাম হলো এরা। বাসা মেরামত এবং সঙ্গে পাঁচ-পাঁচটি ডিম। অতি যত্নে তা-দেওয়া ডিম থেকে এক দিন বেরিয়ে এল নতুন প্রাণ—একটি বাচ্চা; কালো নয়, পিং রঙের মুরগির বাচ্চাসম। কিন্তু হায়! চার-পাঁচ দিনের মাথায় বাসাটি আবারও খালি। ডিম নেই, বাচ্চাও নেই। শোকাহত কাক দুটোও বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে। অভিমানে দূরে দূরে বসে বাসার পানে চেয়ে থাকছে।
এ প্রসঙ্গে সেদিন কথা হচ্ছিল, বাংলাদেশের বিশিষ্ট পাখিবিশারদ এনামুল হকের সঙ্গে। তিনি জানালেন, বারবার হারিয়ে যাওয়া ডিমের রহস্য। বললেন, এটি কোকিলের কাজ। কোকিল তো নিজে বাসা বাঁধে না—তাই কাকের বাসায় ডিম পাড়তে এসে কাকের ডিমগুলো ফেলে দিয়ে নিজের ডিম পেড়ে যায়। এ ধরনের চেষ্টা এরা পরপর পাঁচবার পর্যন্ত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয়বার কাকের ডিম সরানোর পর কোকিল আর নিজের ডিম পাড়ার সময়-সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারার কারণেই হয়তো বাসাটি খালি ছিল। কিন্তু তৃতীয়বারে কোকিল সফল হয়েছে। আর বাচ্চা ফোটা পর্যন্ত কাক ডিমগুলো তা দিয়েছে। হয়তো একটু বড় হলে দেখা যেত, এটি কাকের বাচ্চা না হয়ে কোকিলের বাচ্চাই হয়েছে।
কাকের বাসা ও ডিমগুলো দেখলে অনেকের হয়তো মনে পড়তে পারে ২০০১ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের নোবেল পুরস্কারের সার্টিফিকেটে আঁকা পাখির বাসা ও ধরিত্রীর কথা। একটি বাসায় দুটি ডিম; আর কাকের ডিমের রঙের প্রায় আদলে আঁকা পৃথিবীর চিত্র। জাতিসংঘ তথ্যকেন্দ্রের গ্রন্থাগারে রাখা আছে সে সার্টিফিকেটের কপি।
ঢাকা শহরে প্রচুর কাক দেখা যায়। কারণ বর্জ্যভুক কাক ঢাকার ময়লা-আবর্জনা খেয়ে বেঁচে থাকে। আর কাক থাকা মানেই হলো কোকিলের উপস্থিতি। ঢাকার ময়লা-আবর্জনা যদি কোনোদিন সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়, তা হলে সেদিন হয়তো কাক থাকবে না—থাকবে না কোকিলও। বলেছেন পাখিবিশারদ ইনাম ভাই।
প্রায় পাঁচ-ছয় সপ্তাহ ধরে আপ্রাণ চেষ্টার পর তৈরি হলো বাসা। এ যেন এক মহাযজ্ঞ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে উড়ে উড়ে এসে বাসা বাঁধার এই চেষ্টা এত কাছ থেকে খুব কম লোকই হয়তো দেখেছে। বাসাটি তৈরি হলে দেখা গেল, এতে এহেন বস্তু নেই—যা অনুপস্থিত। টেলিফোনের তার, বৈদ্যুতিক তার, লৌহদণ্ড, টিনের টুকরা, গুনা থেকে শুরু করে খড়কুটা, গাছের ডাল, টুকরো কাপড়, দড়ি, পাজামার লেইস, সুতা—সবই আছে এতে।
সকাল-বিকেল টবের গাছের নিয়মিত পরিচর্যা চললেও তাতে কাকের বাসা বাঁধা থেমে থাকেনি। এক দিন এক অতিথি পরিবার ছোট ছেলে-মেয়েসহ বেড়াতে এসে টবের গাছে কাকের বাসা দেখে অদ্ভুত আনন্দে মোবাইল ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে গিয়ে বিস্ময়ে দেখতে পায়, বাসায় দুটো অনিন্দ্য সুন্দর ডিম! এত চমৎকার রঙিন ডিম আর কখনো দেখেনি তারা।
কিন্তু হায়, কিছুদিন পর এক রাত শেষে সকালে দেখা গেল বাসাটি খালি, ডিম দুটো বারান্দায় পড়ে আছে—ভাঙা। তার পর কেটে যায় সপ্তাহ-দশ দিন। আবার মেরামত করা বাসায় দেখা গেল, তিনটি ডিম। এবং এদের ভাগ্যও ঠিক একই রকম। হঠাৎ এক দিন দুটো ডিম উধাও, একটি ডিম বারান্দায়—ভাঙা, মেঝেতে লেপ্টে আছে।
তৃতীয়বারে সফলকাম হলো এরা। বাসা মেরামত এবং সঙ্গে পাঁচ-পাঁচটি ডিম। অতি যত্নে তা-দেওয়া ডিম থেকে এক দিন বেরিয়ে এল নতুন প্রাণ—একটি বাচ্চা; কালো নয়, পিং রঙের মুরগির বাচ্চাসম। কিন্তু হায়! চার-পাঁচ দিনের মাথায় বাসাটি আবারও খালি। ডিম নেই, বাচ্চাও নেই। শোকাহত কাক দুটোও বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে। অভিমানে দূরে দূরে বসে বাসার পানে চেয়ে থাকছে।
এ প্রসঙ্গে সেদিন কথা হচ্ছিল, বাংলাদেশের বিশিষ্ট পাখিবিশারদ এনামুল হকের সঙ্গে। তিনি জানালেন, বারবার হারিয়ে যাওয়া ডিমের রহস্য। বললেন, এটি কোকিলের কাজ। কোকিল তো নিজে বাসা বাঁধে না—তাই কাকের বাসায় ডিম পাড়তে এসে কাকের ডিমগুলো ফেলে দিয়ে নিজের ডিম পেড়ে যায়। এ ধরনের চেষ্টা এরা পরপর পাঁচবার পর্যন্ত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয়বার কাকের ডিম সরানোর পর কোকিল আর নিজের ডিম পাড়ার সময়-সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারার কারণেই হয়তো বাসাটি খালি ছিল। কিন্তু তৃতীয়বারে কোকিল সফল হয়েছে। আর বাচ্চা ফোটা পর্যন্ত কাক ডিমগুলো তা দিয়েছে। হয়তো একটু বড় হলে দেখা যেত, এটি কাকের বাচ্চা না হয়ে কোকিলের বাচ্চাই হয়েছে।
কাকের বাসা ও ডিমগুলো দেখলে অনেকের হয়তো মনে পড়তে পারে ২০০১ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের নোবেল পুরস্কারের সার্টিফিকেটে আঁকা পাখির বাসা ও ধরিত্রীর কথা। একটি বাসায় দুটি ডিম; আর কাকের ডিমের রঙের প্রায় আদলে আঁকা পৃথিবীর চিত্র। জাতিসংঘ তথ্যকেন্দ্রের গ্রন্থাগারে রাখা আছে সে সার্টিফিকেটের কপি।
ঢাকা শহরে প্রচুর কাক দেখা যায়। কারণ বর্জ্যভুক কাক ঢাকার ময়লা-আবর্জনা খেয়ে বেঁচে থাকে। আর কাক থাকা মানেই হলো কোকিলের উপস্থিতি। ঢাকার ময়লা-আবর্জনা যদি কোনোদিন সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়, তা হলে সেদিন হয়তো কাক থাকবে না—থাকবে না কোকিলও। বলেছেন পাখিবিশারদ ইনাম ভাই।
No comments