দুই বছর মেয়াদি এলএলবি ডিগ্রি বন্ধ হচ্ছে
সোলায়মান তুষার: দুই বছর মেয়াদি এলএলবি কোর্স করে আইনজীবী হওয়ার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ বছরের কোর্সের পর এলএলবি ডিগ্রি দেয়া হয়। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৪ বছরে এলএলবি ডিগ্রি শেষ করেন। ২ বছর মেয়াদি এলএলবি ডিগ্রির অনুমতি না দেয়া প্রসঙ্গে সমপ্রতি বার কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-কে চিঠি দিয়েছে। এ নিয়ে ইউজিসি’র পূর্ণাঙ্গ কমিটির বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে দুই বছরের ডিগ্রির পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত এসেছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। দুই বছর মেয়াদি ডিগ্রির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে দু’টো মতামতই এসেছে। আমরা বার কাউন্সিলের সঙ্গেও আলোচনা করবো। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইউজিসি সূত্র জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পর দুই বছরের এলএলবি কোর্স করানো হয়। বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতেও স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পর এলএলবি ডিগ্রি দেয়া হয়। বিশেষ করে সমপ্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দুই বছরের এলএলবি কোর্স খোলার প্রবণতা বেড়েছে। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর অনুমতি ছাড়াই কোর্স খুলে ডিগ্রি দিয়ে দিচ্ছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবশ্যই চার বছরের স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্স ছাড়া অন্য কোন কোর্স অথবা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়া হবে না। ইউজিসি’র পূর্ণাঙ্গ কমিশনের বৈঠকে এ আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন শর্ট কোর্সগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে এবং উচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে এ ধরনের আলোচনা হয়েছে। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খুলে দেশের কিছু অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান আইন পেশার ডিগ্রির সনদ বিতরণ করছে। এ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। সমপ্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদেশে বাংলাদেশী হাইকমিশন ও দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে চালু বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা সম্পর্কে একটি জরিপ ও তথ্যানুসন্ধান করেছে। হাই কমিশন ও দূতাবাসের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, দেশে চালু বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখাসমূহের কোন অনুমোদন নেই। তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনারও অনুমোদন দেয়া হয়নি শিক্ষা কার্যক্রমের মান নিয়ন্ত্রণকারী কোন দেশীয় সংস্থা থেকে। এরই প্রেক্ষিতে সমপ্রতি উচ্চ আদালত ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা পরিচালনার একটি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে। ইউজিসি’র পূর্ণাঙ্গ কমিশনের বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনার পর উপরিউক্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে, এলএলবি ও আইন সংক্রান্ত ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা সম্পর্কে এবং অন্যান্য বিষয়ে দু’বছরের চালু কোর্স সম্পর্কে নতুন নীতি-মালা ও নির্দেশনা প্রণয়ন করা হবে। বার কাউন্সিল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ইউজিসি এ ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট সুাপরিশ প্রণয়ন করবে। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত কলেজে দুই বছরের এলএলবি কোর্স সম্পন্ন করে আইন পেশায় নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিচ্ছে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সমপ্রতি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দু’বছরের এলএলবি কোর্স চালুর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউজিসি’র সূত্র জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ দুই বছরের এলএলবি কোর্সসহ চার বছরের নিচে অন্য যে কোন কোর্স অথবা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি এখন থেকে আর দেয়া হবে না। বর্তমানে চালু কোর্সগুলোর ব্যাপারে শিগগিরই একটি নির্দেশনা জারি করা হবে। ওই কোর্সগুলোয় নতুন করে কোন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ ও অনুমতি দেয়া হবে না। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু এলএলবি কোর্সের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বার কাউন্সিল এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যাপারটি সমাধানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শর্ট কোর্স বন্ধের ব্যাপারে নির্দেশনা সংবলিত সুপারিশ জারির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
No comments