পারমাণবিক দুর্ঘটনার দায় বিদেশী অপারেটরদের
সংসদ রিপোর্টার: বিদেশী অপারেটরদের পারমাণবিক দুর্ঘটনা-সম্পর্কিত দায়ের আওতায় রেখে জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১২’ পাস হয়েছে। গতকাল সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এ সময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় এমপিরা অনুপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিলের ওপর দেয়া সংশোধনী, জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নাকচ হয়। বিলে প্রযুুক্তি চুরি এবং গুপ্তচরবৃত্তির জন্য কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। গত ২৭শে মে বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়। পরে এটি পরীক্ষা করে সংসদে রিপোর্ট দিতে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। বুধবার বিলটির ওপর সংসদে রিপোর্ট জমা দেয় কমিটি। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রবর্তন হলে বাংলাদেশে পারমাণবিক শক্তির শাস্তিপূর্ণ ব্যবহারের পথ প্রশস্ত হবে। এতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পরমাণু শক্তি ও বিকিরণ উৎসের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। বাংলাদেশে পরমাণু শক্তি ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা হয়। ১৯৯৭ সালে এ আইনের অধীনে পারমাণবিক নিরপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালার মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এককভাবে পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাস্তবায়নকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে দ্বৈত ভূমিকা পালন করছে। যা আন্তর্জাতিক চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মান ও চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করার, নিউক্লীয় দায় ও পরিধি নির্ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত বিধান করতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন ও কারিগরি মতামত, দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিলের খসড়া করা হয়েছে।’ বিলের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে যেখানেই ক্ষতি সংঘটিত হোক না কেন, নিউক্লীয় স্থাপনার অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর কেবল নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য দায়ী হবে। তবে প্রমাণিত হতে হবে যে ওই ক্ষতি অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর কর্তৃক পরিচালিত নিউক্লীয় স্থাপনায় কোন ঘটনার ফলে সংঘটিত হয়েছে। কোন পদার্থ চুরি হলে তার দায়ও সর্বশেষ অপারেটরের ওপর বর্তাবে। বিলে বলা হয়েছে, একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য নিয়ে পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন হবে। কর্তৃপক্ষের কাজ হবে নিউক্লীয় নিরাপত্তা, বিকিরণ সুরক্ষা, সিকিউরিটি, আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং ভৌত সুরক্ষা-সম্পর্কিত বিধান যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করা। মাটি, পানি ও বায়ু এবং মানুষ ও জীবজন্তুর আহার জাতীয় বস্তুর ওপর তেজষ্ক্রিয়ার মাত্রা নির্ধারণও কর্তৃপক্ষের কাজ হবে। বিলে কর্তৃপক্ষের ৩৬টি কাজের বিষয়ে বলা হয়েছে। বিলের ৬৬ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারের অনুমতি নিয়ে কর্তৃপক্ষ নিউক্লীয় নিরাপত্তা এবং বিকিরণ সুরক্ষায় জাতীয়, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং বিদেশী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সির সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করতে পারবে। বিলের ৫৩ ধারায় এ আইনের অধীন অনুমোদন গ্রহণ করা ব্যক্তি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করলে সর্বনিম্ন এক বছর ও সর্বোচ্চ ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা নর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া বিলে আরও কিছু শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। নিউক্লীয় স্থাপনায় কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত হামলা করলে তা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের ও সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অথবা সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। স্বতন্ত্র এমপি ফজলুল আজিম বিল নিয়ে কথা বলতে চাইলে সময় বৃদ্ধি না করায় ওয়াক আউট করেন।
No comments