গরম যখন চরমে

বেশ কিছু দিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। বৃষ্টির দেখা নেই। মানুষ তবু পাখার বাতাস, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের হিমে গা জুড়াতে পারে, কিন্তু এমন কায়দা বিশাল প্রাণিজগতে আর কারও জানা নেই। এর পরও প্রাকৃতিক উপায়ে অনেক প্রাণী গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করে।


ভূচর প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাতির কথাই ধরো। প্রচণ্ড গরমের সময় ওরা দল বেঁধে গাছের ছায়া আর জলাশয় খুঁজে বেড়ায়। অল্প পানি আছে—এমন জলাধারেও কোনো সমস্যা নেই। দলবেঁধে সেখানেই গা জুড়াতে নেমে যাবে। কাদায় গড়াগড়ি করে শরীরজুড়ে লেপ্টে দেবে কাদা। হাতির কোঁচকানো চামড়ার ভাঁজ কাদা আটকাতে সহায়তা করে। এই কাদার প্রলেপ রোদের আঁচ থেকে রক্ষা করে ওদের।
হাতির মাথার দুই পাশে কুলোর মতো যে কান দুটো রয়েছে, এগুলোও গরম তাড়াতে বেশ কাজ দেয়। কান দুটো পাখার মতো নাড়িয়ে গায়ে বাতাস দিতে পারে ওরা।
মরু অঞ্চলে বাস করা বড় কানওলা এক জাতের ছোট শেয়ালও কানের মাধ্যমে বিশেষ রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় শরীর শীতল করে থাকে। শেয়াল, খরগোশ, বেজি—এমন অনেক গর্তে বাস করা প্রাণী প্রচণ্ড গরমের সময় মাটির ডেরায় গুটিয়ে থাকে। এতে রোদের তীব্র আঁচ থেকে রক্ষা পায় ওরা। মরু এলাকায় যেসব কাঠবিড়ালি রয়েছে, ওরা সাধারণত ঝুপো লেজের অধিকারী। রোমশ এই লেজ বেশ মোটাসোটা হয়। আর তা পিঠের ওপর তুলে দিলে ছাতার মতো প্রখর রোদ থেকে নিজেকে রক্ষা করে। মরু অঞ্চলে কিছু গিরগিটি আছে, খুব বেশি গরমে নাকি বালুর ওপর দিয়ে সবেগে ছুটতে থাকে ওরা। এটাই নাকি ওদের শরীর শীতল রাখার কৌশল।
গরমের সময় পুকুর-ডোবা পেলে হুঁশ থাকে না মহিষের। গলা অবধি শরীর পানিতে ডুবিয়ে ওরা বসে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। গরমের সময় বাঘ মামাও দিশে হারিয়ে ঠিক একই কাজ করে। তবে তারা মহিষের মতো এতটা সময় পানিতে থাকে না। গরু পানিতে নামতে তেমন পছন্দ করে না। ওদের নাকে রয়েছে ঘামগ্রন্থি। নাক দিয়ে ঘাম ঝরিয়ে শরীরটাকে ঠান্ডা করে তারা। ঘোড়ার আবার শরীরেই ঘামগ্রন্থি রয়েছে। ঘাম ঝরিয়ে গা থেকে তাপ বের করে দেয় ওরা।
গরমের সময় কুকুর জিভ বের করে হাঁ করে হাঁপায়। এভাবে শরীরের ভেতর হাওয়া ঢুকিয়ে শরীর ঠান্ডা রাখে তারা। কাকসহ অনেক পাখিও একই কাজ করে।
 শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
সূত্র: ডেজার্ট ইউএসএ, সায়েন্স।

No comments

Powered by Blogger.