রনিও ভূতকে ভয় পায় by হোসেন শহীদ
কামানিতলার জঙ্গলে কেউ যায় না। পাছে ভূতে ধরে, এই ভয়। জঙ্গলের মধ্যে আছে একটা খাল। ভূতেরা কাউকে একা পেলে, সেখানে নিয়ে নাকানি-চুবানি দেয়। জ্যান্ত পুঁতে ফেলে। দৈবাৎ ছেড়ে দিলেও, সে জ্যান্ত মরা হয়ে বেঁচে থাকে। চোখে দেখে না। কানে শোনে না।
এ রকম হবেই না বা কেন! ভূতের চড়-থাপ্পড় বলে কথা! বড়রা ওই জঙ্গলে যায় না। ছোটদের ওপর কারফিউ জারি করা আছে।
কিন্তু রনি ব্যতিক্রম। তার ওই জঙ্গলে যাওয়া চাই। পাখির বাসার খোঁজে। ডিম-ছানা নিয়ে আসতে। স্কুল ছুটির পর ভরদুপুরে সে কামানিতলায় যায়। বন্ধুরা বিস্মিত হয়। সুযোগ পেলে ভূতের ভয়ও দেখায়। দু-একজন সঙ্গে যেতে চায়। রনি পাত্তা দেয় না। প্রায়ই ঘুঘুর ছানা ধরে আনে। একটা খাঁচাও আছে ওর।
রনিকে হিংসা করে অনেকেই। সামনে কিছু বলে না। ভাবে ভূতের সঙ্গে রনির বন্ধুত্ব হয়েছে। তা না হলে দুপুরবেলায় জঙ্গলের বাঁশঝাড়ে ওঠা সম্ভব! বকের ছানা পেড়ে আনার সাহস হয় কোত্থেকে? অন্য কেউ তো জঙ্গলেই যেতে পারে না। বাঁশে ওঠা তো আকাশ-কুসুম কল্পনা। এসব কথা-ই হচ্ছিল মিলুদের আমবাগানে।
-ভূত রনিকে কিছু বলে না কেন? প্রশ্ন করল নুর।
-আমার তো মনে হয় রনিটাই ভূতের বাচ্চা। জবার দিল মিলু। পাশ থেকে বীরের ভঙ্গিতে ঝন্টু বলল, দূর; দুনিয়াতে ভূতটুত কিছু নেই।
-ঝন্টু যে কেমন বীরপুরুষ তা আমরা জানি। বলল মিলু। ভেটুলতলার মাঠে পরশু পাখির বাসা খুঁজতে গিয়েছিল ও। ওমা, হঠাৎ সে কী দৌড়! পূবপাড়ার কুঁজোবুড়ি ফিরছিল তখন। দূর থেকে তাকে দেখেই...।
মুহূর্তে ফ্যাকাশে হয়ে গেল ঝন্টুর মুখ। মিনমিনে গলায় বলল: আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।
সবাই নড়েচড়ে বসল। ঝন্টু বলল,
-আমরা সবাই তক্কে তক্কে থাকব; কখন রনি কামানিতলার জঙ্গলে যায়। আমরাও ওর পিছু পিছু যাব। দেখব ভূতের সঙ্গে ওর কেমন খাতির!
-কিন্তু রনি তো আমাদের দেখলে জঙ্গলে যাবে না।
-আমরা লুকিয়ে যাব। দূর থেকে পিছু নেব। কৌশলটা ভালো লাগল সবার। সিদ্ধান্ত হলো শিগগিরই পিছু নেবে রনির।
দুই
চাইলেই তো সব সম্ভব হয় না।। ঝোপ-ঝাড়ের আড়ালে ওরা লুকিয়ে থাকে। কিন্তু টের পায় না। রনি জঙ্গলে যায়। বকের ডিম, ঘুঘুর ছানা আনে। বন্ধুদের দেখায়। রনি বোধ হয় ওদের মতলবটা বুঝে গেছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এপাড়া-ওপাড়া ঘোরে। সুযোগবুঝে কামানিতলার জঙ্গলে যায়। কেউ বুঝতেও পারে না। রনি কখন আসে। কখন যায়।
নাছোড়বান্দা ঝন্টুরা হাল ছাড়ে না। ওরা দেখতে চায় রনির দৌড়। কয় দিন ওদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কামানিতলায় যায়। এরই মধ্যে একদিন ওরা স্কুলে গোপনে বাংলার আহমদ স্যারের কাছে নালিশ করে। ক্লাসে স্যার রনিকে বলে, শুধু ভালো ছাত্র হলেই চলবে না। পশু-পাখির প্রতিও প্রেম-ভালোবাসা থাকতে হবে। পাখি ধরে এনে খাঁচায় পোষা অন্যায়।
রনি বোঝে এসব ঝন্টুদের কাজ। ক্লাসের মধ্যেই বলে, নালিশ দিয়েছিস! বাহাদুরির মজা টের পাবি। ঝন্টু আমতা আমতা করে। বলে, না, নালিশ করিনি তো! মিথ্যে সাহস দেখায়। বলে, বাহাদুরির মজা টের পাব কোন দুঃখে? রনি কথা বলে না। সোজা স্কুলমাঠে রওনা দেয়।
একটা অদ্ভুত পরিকল্পনা দেয় মিলু। বন্ধুরা যাকে নিয়ে প্রায় ছড়া কাটে, ‘নাম তার মিলু/মাথাভর্তি ঘিলু।’ আজ ছড়া কাটে না। পরিকল্পনাটা পছন্দ হয়। পরদিন স্কুল ছুটির পর ওরা কামানিতলা যায়। কবরস্থানের দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। রনি বাড়ি ফেরে। কোনোরকমে দুটো ভাত খায়। তারপর হাঁটা দেয় কামানিতলার জঙ্গলের দিকে। কবরস্থানের কাছে আসে।
রঁনিঁ আঁজঁ তোঁরঁ এঁকঁদিঁনঁ কিঁ আঁঁমাঁরঁ এঁকঁদিঁন...।
কাঁমাাঁনিঁতঁলাঁয়ঁ যঁদি যাঁসঁ তোঁ-তোঁরঁ ঘাঁড়ঁ মঁটঁকাঁবোঁ...। ঝন্টু, মিলু, নুর একসঙ্গে বলে।
রনির সেকি চিৎকার—কে? অ্যাই-অ্যাই কে? কে?
কেঁ জাঁনঁতেঁ চাঁসঁ। তোঁরঁ বঁড়ঁ সাঁহঁসঁ। পেছন থেকে ঝন্টু বলে।
-আমার সাহস নাই, ভূতভাই! কেঁদে কেঁদে রনি বলে আর দীর্ঘশ্বাস নিতে থাকে।
-তাঁহঁলেঁ বাঁড়িঁরঁ দিঁকেঁ দৌঁড়ঁ দেঁ। আঁরঁ একঁটাঁ কঁথাঁ। খাঁচাঁরঁ সঁবঁ পাঁখিঁ ছেঁড়েঁ দিঁবিঁ। কাঁমাঁনিঁতলাঁয় আঁরঁ আঁসঁবিঁ নাঁ বুঁঁঝঁলিঁ। পাক্কা অভিনেতার মতো কথাগুলো নুর বলে।
শুকনো গলায় রনি বলে, জি ভূতভাই। সবকিছু করব। আমি এখন যাই।
যাঁ যাঁ ভাঁগঁ। মিলু বলল।
-জি যাচ্ছি, বলেই রনি বাড়ির পথে দৌড় দেয়।
বাড়ি ফিরে সত্যি সত্যিই রনি খাঁচার সব পাখি ছেড়ে দেয়। ওর মা-বাবা অবাক হয়। রনি বলে, আমি আর পাখি পুষব না। কামানিতলার জঙ্গলে পাখির ছানা-ডিম আনতে যাব না।
অনেক দিন হয় রনি আর জঙ্গলে যায় না। ওদের বার্ষিক পরীক্ষা চলে এসেছে। পড়াশোনার খুব চাপ। এরই মধ্যে টিফিনে গল্পের সময় মিলু কবরস্থানে ভূতের রহস্যটা খুলে বলে। রনি রাগ করে না। বলে, ভালোই হয়েছে; এখন আমি পড়াশোনা আর খেলাধুলা নিয়ে আছি। জঙ্গলে পাখির বাসার খোঁজে যাই না।
রনির ভালোমানুষিতে মিলু এবার বলে, ভূতের বুদ্ধিটা কিন্তু আমাদের আহমদ স্যার দিয়েছেন। উনি বলেছিলেন, কামানিতলার জঙ্গলে কোনো ভূত নেই। সাহস করে গেলে যে কেউ যেতে পারে। তোমরা রনিকে ভূতের ভয় দেখাও, ও ভালো হয়ে যাবে।
মিলুর কথায় এবার ঝন্টু ছড়া কাটে, ‘ওর নাম মিলু/মাথায় নাই ঘিলু!’ বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে হেসে ওঠে। এমনকি মিলুও ওদের দুষ্টুমিতে না হেসে পারে না।
কিন্তু রনি ব্যতিক্রম। তার ওই জঙ্গলে যাওয়া চাই। পাখির বাসার খোঁজে। ডিম-ছানা নিয়ে আসতে। স্কুল ছুটির পর ভরদুপুরে সে কামানিতলায় যায়। বন্ধুরা বিস্মিত হয়। সুযোগ পেলে ভূতের ভয়ও দেখায়। দু-একজন সঙ্গে যেতে চায়। রনি পাত্তা দেয় না। প্রায়ই ঘুঘুর ছানা ধরে আনে। একটা খাঁচাও আছে ওর।
রনিকে হিংসা করে অনেকেই। সামনে কিছু বলে না। ভাবে ভূতের সঙ্গে রনির বন্ধুত্ব হয়েছে। তা না হলে দুপুরবেলায় জঙ্গলের বাঁশঝাড়ে ওঠা সম্ভব! বকের ছানা পেড়ে আনার সাহস হয় কোত্থেকে? অন্য কেউ তো জঙ্গলেই যেতে পারে না। বাঁশে ওঠা তো আকাশ-কুসুম কল্পনা। এসব কথা-ই হচ্ছিল মিলুদের আমবাগানে।
-ভূত রনিকে কিছু বলে না কেন? প্রশ্ন করল নুর।
-আমার তো মনে হয় রনিটাই ভূতের বাচ্চা। জবার দিল মিলু। পাশ থেকে বীরের ভঙ্গিতে ঝন্টু বলল, দূর; দুনিয়াতে ভূতটুত কিছু নেই।
-ঝন্টু যে কেমন বীরপুরুষ তা আমরা জানি। বলল মিলু। ভেটুলতলার মাঠে পরশু পাখির বাসা খুঁজতে গিয়েছিল ও। ওমা, হঠাৎ সে কী দৌড়! পূবপাড়ার কুঁজোবুড়ি ফিরছিল তখন। দূর থেকে তাকে দেখেই...।
মুহূর্তে ফ্যাকাশে হয়ে গেল ঝন্টুর মুখ। মিনমিনে গলায় বলল: আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।
সবাই নড়েচড়ে বসল। ঝন্টু বলল,
-আমরা সবাই তক্কে তক্কে থাকব; কখন রনি কামানিতলার জঙ্গলে যায়। আমরাও ওর পিছু পিছু যাব। দেখব ভূতের সঙ্গে ওর কেমন খাতির!
-কিন্তু রনি তো আমাদের দেখলে জঙ্গলে যাবে না।
-আমরা লুকিয়ে যাব। দূর থেকে পিছু নেব। কৌশলটা ভালো লাগল সবার। সিদ্ধান্ত হলো শিগগিরই পিছু নেবে রনির।
দুই
চাইলেই তো সব সম্ভব হয় না।। ঝোপ-ঝাড়ের আড়ালে ওরা লুকিয়ে থাকে। কিন্তু টের পায় না। রনি জঙ্গলে যায়। বকের ডিম, ঘুঘুর ছানা আনে। বন্ধুদের দেখায়। রনি বোধ হয় ওদের মতলবটা বুঝে গেছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এপাড়া-ওপাড়া ঘোরে। সুযোগবুঝে কামানিতলার জঙ্গলে যায়। কেউ বুঝতেও পারে না। রনি কখন আসে। কখন যায়।
নাছোড়বান্দা ঝন্টুরা হাল ছাড়ে না। ওরা দেখতে চায় রনির দৌড়। কয় দিন ওদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কামানিতলায় যায়। এরই মধ্যে একদিন ওরা স্কুলে গোপনে বাংলার আহমদ স্যারের কাছে নালিশ করে। ক্লাসে স্যার রনিকে বলে, শুধু ভালো ছাত্র হলেই চলবে না। পশু-পাখির প্রতিও প্রেম-ভালোবাসা থাকতে হবে। পাখি ধরে এনে খাঁচায় পোষা অন্যায়।
রনি বোঝে এসব ঝন্টুদের কাজ। ক্লাসের মধ্যেই বলে, নালিশ দিয়েছিস! বাহাদুরির মজা টের পাবি। ঝন্টু আমতা আমতা করে। বলে, না, নালিশ করিনি তো! মিথ্যে সাহস দেখায়। বলে, বাহাদুরির মজা টের পাব কোন দুঃখে? রনি কথা বলে না। সোজা স্কুলমাঠে রওনা দেয়।
একটা অদ্ভুত পরিকল্পনা দেয় মিলু। বন্ধুরা যাকে নিয়ে প্রায় ছড়া কাটে, ‘নাম তার মিলু/মাথাভর্তি ঘিলু।’ আজ ছড়া কাটে না। পরিকল্পনাটা পছন্দ হয়। পরদিন স্কুল ছুটির পর ওরা কামানিতলা যায়। কবরস্থানের দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। রনি বাড়ি ফেরে। কোনোরকমে দুটো ভাত খায়। তারপর হাঁটা দেয় কামানিতলার জঙ্গলের দিকে। কবরস্থানের কাছে আসে।
রঁনিঁ আঁজঁ তোঁরঁ এঁকঁদিঁনঁ কিঁ আঁঁমাঁরঁ এঁকঁদিঁন...।
কাঁমাাঁনিঁতঁলাঁয়ঁ যঁদি যাঁসঁ তোঁ-তোঁরঁ ঘাঁড়ঁ মঁটঁকাঁবোঁ...। ঝন্টু, মিলু, নুর একসঙ্গে বলে।
রনির সেকি চিৎকার—কে? অ্যাই-অ্যাই কে? কে?
কেঁ জাঁনঁতেঁ চাঁসঁ। তোঁরঁ বঁড়ঁ সাঁহঁসঁ। পেছন থেকে ঝন্টু বলে।
-আমার সাহস নাই, ভূতভাই! কেঁদে কেঁদে রনি বলে আর দীর্ঘশ্বাস নিতে থাকে।
-তাঁহঁলেঁ বাঁড়িঁরঁ দিঁকেঁ দৌঁড়ঁ দেঁ। আঁরঁ একঁটাঁ কঁথাঁ। খাঁচাঁরঁ সঁবঁ পাঁখিঁ ছেঁড়েঁ দিঁবিঁ। কাঁমাঁনিঁতলাঁয় আঁরঁ আঁসঁবিঁ নাঁ বুঁঁঝঁলিঁ। পাক্কা অভিনেতার মতো কথাগুলো নুর বলে।
শুকনো গলায় রনি বলে, জি ভূতভাই। সবকিছু করব। আমি এখন যাই।
যাঁ যাঁ ভাঁগঁ। মিলু বলল।
-জি যাচ্ছি, বলেই রনি বাড়ির পথে দৌড় দেয়।
বাড়ি ফিরে সত্যি সত্যিই রনি খাঁচার সব পাখি ছেড়ে দেয়। ওর মা-বাবা অবাক হয়। রনি বলে, আমি আর পাখি পুষব না। কামানিতলার জঙ্গলে পাখির ছানা-ডিম আনতে যাব না।
অনেক দিন হয় রনি আর জঙ্গলে যায় না। ওদের বার্ষিক পরীক্ষা চলে এসেছে। পড়াশোনার খুব চাপ। এরই মধ্যে টিফিনে গল্পের সময় মিলু কবরস্থানে ভূতের রহস্যটা খুলে বলে। রনি রাগ করে না। বলে, ভালোই হয়েছে; এখন আমি পড়াশোনা আর খেলাধুলা নিয়ে আছি। জঙ্গলে পাখির বাসার খোঁজে যাই না।
রনির ভালোমানুষিতে মিলু এবার বলে, ভূতের বুদ্ধিটা কিন্তু আমাদের আহমদ স্যার দিয়েছেন। উনি বলেছিলেন, কামানিতলার জঙ্গলে কোনো ভূত নেই। সাহস করে গেলে যে কেউ যেতে পারে। তোমরা রনিকে ভূতের ভয় দেখাও, ও ভালো হয়ে যাবে।
মিলুর কথায় এবার ঝন্টু ছড়া কাটে, ‘ওর নাম মিলু/মাথায় নাই ঘিলু!’ বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে হেসে ওঠে। এমনকি মিলুও ওদের দুষ্টুমিতে না হেসে পারে না।
No comments