ব্যাংকিং খাত-সুদের হার নিয়ন্ত্রণে থাকুক
ব্যাংকগুলো আমানতের জন্য সুদ বেশি দিলে ঋণের জন্যও সুদ বেশি নিতে হবে_ এটা অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম। অন্যথায় লোকসানের সম্ভাবনা থাকে। আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদানের জন্য সুদের হার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কী হওয়া উচিত সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বাজার অর্থনীতির সমর্থক অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ এ ভূমিকা থাকা আদৌ পছন্দ করেন না। তাদের কাছে বিষয়টি হস্তক্ষেপ বৈ কিছু নয়। কিন্তু বুধবার ব্যাংকার্স সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর 'ঘোষিত হারের বাইরে সুদ আরোপ না করতে' ব্যাংকগুলোকে যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন তাকে এভাবে দেখা ঠিক হবে বলে মনে হয় না। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা অর্থনীতিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বিশ্বব্যাপী চড়া। বিদ্যুৎ সরবরাহ অপ্রতুল এবং দামও ক্রমাগত বাড়ানো হচ্ছে। ছোট বা বড় যে কোনো শিল্প-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে তেল-বিদ্যুৎ অপরিহার্য। এসবের জন্য বর্ধিত মূল্য পরিশোধের পাশাপাশি যদি ব্যাংক ঋণের জন্যও চড়া হারে সুদ গুনতে হয় তাহলে উৎপাদন যেমন বিঘি্নত হতে পারে, তেমনি পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়ারও বিকল্প থাকে না। আমরা আশা করব যে, ব্যাংকগুলো ঋণের সুদের হার যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখার জন্য সচেষ্ট হবে। একই সঙ্গে আমানত সংগ্রহের জন্য পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়াও পরিহার করতে হবে। এক সময়ে অর্থনীতিতে সরকারি খাতের ছিল নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব। কিন্তু এখন ঋণ ও আমানতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রক বেসরকারি দেশীয় ব্যাংকগুলো। তাদের ব্যবসাও বাড়ছে। এসব ব্যাংকের পরিচালকমণ্ডলীতে যারা রয়েছেন তাদের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে শিল্প-বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা। ঋণের সুদের জন্য বাড়তি অর্থ প্রদান করতে হলে কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় সেটা তারা ভালোভাবেই উপলব্ধি করেন। ব্যাংক পরিচালনা পরিষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এটাও ভালো করে জানা রয়েছে, অর্থনীতির চাকা যত সচল হয় ব্যাংকের তত বেশি লাভ। সুদের হার বাড়িয়ে ব্যাংকের জন্য মুনাফা বাড়ানো, নাকি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারিত করার মধ্য দিয়ে নিজস্ব আয় বাড়িয়ে নেওয়া_ এ দুটির মধ্যে কোনটি বেছে নেওয়া ভালো সে সিদ্ধান্ত তাদের। ব্যাংকগুলো এখন যথেষ্ট মুনাফা করছে এবং স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য যথেষ্ট কাঙ্ক্ষিত। এ অবস্থায় সুদের হার নির্ধারণে তাদের আরও নমনীয় হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি। চলতি বছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির হার রেকর্ড পরিমাণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি-গ্যাসের মতো সুবিধা পর্যাপ্ত না হওয়ার পরও এ অর্জন আশাব্যঞ্জক। ব্যাংকগুলো সুদের হার নির্ধারণে আরও নমনীয় হলে শিল্প খাত আরও চাঙ্গা হতে পারে। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং সেটাও অর্থনীতির চাকা সচল করায় সহায়ক হবে। এ ধরনের ইতিবাচক চেইন এফেক্ট সৃষ্টিতে ব্যাংকগুলো আরও অবদান রাখবে, এটাই প্রত্যাশা। এতে কিন্তু তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং মুনাফা
বাড়িয়ে নেওয়ারও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বাড়িয়ে নেওয়ারও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
No comments