বন্ধুর হাতে খুন-অবক্ষয়ের সীমান্তে সমাজ!

যে বা যারা বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সহপাঠীকে অপহরণ করে তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করতে পারে এবং মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা করতে পারে তাদের কোনোভাবেই বন্ধু বলা যায় কি-না সে প্রশ্ন উঠবে স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে অপহরণ ও হত্যাকারীদের 'বন্ধু' বলেই অভিহিত করা হয়েছে।


আর তথাকথিত এই বন্ধুদের হাতেই নিহত হয়েছে স্কুলছাত্র সাজ্জাদ হোসেন। চট্টগ্রামে হিমাদ্রী মজুমদার হিমুর বিরুদ্ধে যারা হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দিয়েছিল, তাকে ফেলে দিয়েছিল ছাদ থেকে তাদেরও বন্ধু বলে অভিহিত করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো, হত্যাকারীরা কিছুতেই বন্ধু নয়, হতেও পারে না। বস্তুত সহপাঠীদের বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করার যে রেওয়াজ চলে আসছে তা একটি বিশেষ সামাজিক অবস্থাতেই সত্য। পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ও সহপাঠীদের মধ্যে পারিবারিক ও সামাজিক যোগাযোগের ভিত্তি থাকলেই বন্ধু বলে অভিহিত করা হয় তাদের। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক সম্পর্ক ভাঙনের এমনই সীমান্তে পেঁৗছেছে যে, সহপাঠীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠাই মুশকিল। বরং কিছু দুঃখজনক ও নৃশংস ঘটনা বলছে, তথাকথিত এই বন্ধুদের থেকে সাবধান থাকাই ভালো। অভিভাবকদের দৃষ্টি এদিকে আকৃষ্ট হওয়া দরকার। শুধু অভিভাবক নয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদেরও সজাগ হতে হবে। কেননা নানা ঘটনায় এটি বিশ্বাস করার প্রেক্ষাপট গড়ে উঠেছে যে, স্কুল ও কলেজ পর্যায়গুলোতে মাদক-সন্ত্রাসসহ নানা অপরাধ ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। কোমলমতি শিশুরা হয়ে উঠছে অপরাধী আর সে অপরাধের শিকার হচ্ছে সহপাঠীরা। প্রতিনিয়ত ছোট ছোট বহু ঘটনা ঘটছে। বড় ঘটনা ঘটলে তা সকলের নজরে আসছে কিন্তু ছোট বহু ঘটনাও আমলে নেওয়ার মতো। আমরা মনে করি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো বটেই_ স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষেরও উচিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ নজর রাখা। সহপাঠী ও বন্ধুদের হাতে বন্ধু খুনের ঘটনা যে সামাজিক অস্থিরতাকে সামনে আনছে তা অব্যাহতভাবে চলতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.