এ আচরণ কাম্য নয়-ভালো পুলিশের এই কি নমুনা!

আবার অভিযোগের তীর পুলিশের দিকে। এবার গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ। আগের দিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে। পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, পুলিশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।


সেই ভালোর নমুনাও একই দিনে পাওয়া গেল ঢাকার অদূরে গাজীপুরে। সেখানে পরোয়ানাভুক্ত আসামি ধরে পুলিশ তুলে দিয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে। সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে হাতকড়া পরা ব্যবসায়ীকে। অভিযুক্ত উপপরিদর্শককে এরই মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পুলিশের হেফাজতে আসামির মৃত্যুর ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। থানা হাজতে পিটিয়ে মেরেছে পুলিশ। ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধ ইত্যাদি নামের গল্প তো আছেই। যেসব গল্পে শুধু কিছু নাম বদলে যায়। দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত সেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকেও বোধ হয় এবার হার মানাবে গাজীপুরের এ ঘটনাটি। কারণ আটক করার পর পুলিশ কাউকে প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দিচ্ছে- এমন ঘটনা বোধ হয় এটাই প্রথম। ঘটনার পর নতুন গল্প সাজানোর চেষ্টা হয়েছে। অভিযুক্ত দারোগা ও থানার ওসি সাজিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন গল্প। সেখানেই পুলিশ হারিয়েছে বিশ্বাসযোগ্যতা। ঘটনাটি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ্যদর্শী এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, 'একটি মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে কালীগঞ্জ থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নৃপেন চন্দ্র দে আরো তিনজন আনসার সদস্য নিয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বড়গাঁও বাজার এলাকা থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর বাজারের অনেক লোকের সামনেই তাকে হাতকড়া পরিয়ে একটি অটোরিকশায় বসিয়ে থানার দিকে রওনা হন তাঁরা।' মামুনের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, থানায় যাওয়ার পথে সাবেক ইউপি সদস্য হেকিম ফরাজি ও তার ভাতিজা জাহাঙ্গীর ফরাজির নেতৃত্বে অপেক্ষমাণ সাত-আটজন সন্ত্রাসীর হাতে মামুনকে তুলে দেয় পুলিশ। সন্ত্রাসীরা পুলিশের সামনেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে মামুনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়। হত্যাকাণ্ডের পরপরই মামুনের হাতকড়া খুলে নেয় পুলিশ।
অন্যদিকে কালীগঞ্জ থানার এসআই নৃপেন চন্দ্র দে দাবি করেন, 'তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে মামুনকে গ্রেপ্তার করতে বড়গাঁও বাজারে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে না পেয়ে ফিরে আসেন।' কালীগঞ্জ থানার ওসির ভাষ্য অবশ্য ভিন্ন। তিনি বলেছেন, 'মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে এসআই নৃপেন চন্দ্র দেসহ চার পুলিশ সদস্য মামুনকে বড়গাঁও বাজার থেকে গ্রেপ্তার করেন। থানায় নিয়ে আসার পথে রাত ৮টার দিকে রামচন্দ্রপুরে অনেক লোক হামলা চালিয়ে মামুনকে ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু রাতে অনেক লোক থাকায় কার না কার গায়ে গুলি লাগে, এই ভয়ে পুলিশ গুলি চালায়নি। পরে রাত ১২টার দিকে মামুনের লাশ উদ্ধার করা হয়।'
পুলিশ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, কালীগঞ্জের ঘটনার মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণ হয়ে গেল। এর জন্য মামুনকে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী-বাক্য যে মিথ্যা হতে পারে না, সেটা মানুষের জানা হয়ে গেল। ধরে নিতে হবে ওসির কথাই সত্য। মামুনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসছিল পুলিশ। মামুন যদি পালিয়ে যেতেন কিংবা পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতেন, অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর উপদেশ মেনে চলতেন, তাহলে হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেন তিনি। আবার থানার ওসির কথা সত্য বলে ধরে নিলে বলতে হবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাটি ঠিক। পুলিশ এত ভালো হয়ে গেছে যে সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তারকৃত আসামি ছিনিয়ে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করলেও নিরীহ জনতার জীবনের নিরাপত্তার জন্য তারা গুলি না চালিয়ে দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
যেকোনো সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য একটি পক্ষ নেপথ্যে ষড়যন্ত্র করে। পুলিশের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর কথা হাস্যরসের সৃষ্টি করছে- এটাও সরকারের ভাবমূর্তির জন্য সহায়ক নয়। বিষয়টি একটু গভীরভাবে ভেবে দেখলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হবে।

No comments

Powered by Blogger.