আলোর মিছিলে আসুন by মতিউর রহমান

সারা পৃথিবীর দেশে দেশে, ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে যত পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তা করেছে তরুণেরা। বাংলাদেশেও ভাষার অধিকার, স্বাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের সংগ্রামে তরুণেরাই পালন করেছে সাহসী ভূমিকা। রবীন্দ্রনাথ সেই কবে ডাক দিয়ে গেছেন, ‘ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা/ ওরে সবুজ ওরে অবুঝ আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ/ এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার’।

কিন্তু আমাদের চারদিকে তাকালে মনে হয়, আমরা যেন রবীন্দ্রনাথের বর্ণিত প্রবীণের জগতে স্থির হয়ে আছি, চক্ষুকর্ণ দুটি ডানায় আমরা ঢেকে রেখে ঝিমুচ্ছি। সত্য বটে, আমাদের চারপাশে অনেক সমস্যা। কিন্তু সমস্যা থাকা মানে সমাধানও রয়েছে। সমস্যার সঙ্গে বসবাস করতে করতে আমরা যেন ভুলে না যাই যে সমস্যাটাই শেষ কথা নয়, সমাধানটাই আসল, সত্যিকারের পরিবর্তন।
কিন্তু সমাধান তো আপনা-আপনিই হবে না। তার জন্য দরকার উদ্যোগ। কিন্তু আমাদের সবার মধ্যেই একটা প্রবণতা গড়ে উঠছে, আমরা সমস্যার সমাধান না খুঁজে সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে চলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কাউকে ঘুষ নিতে দেখলেও আমরা পাশ কাটিয়ে যাই, ঘুষ দিতে দেখলেও আমাদের বিকার হয় না। ছিনতাই হতে দেখলে নিজের জীবনটাকে নিয়ে সটকে পড়ি। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, নারীর প্রতি অবমাননা, যৌন হয়রানি, ইভ টিজিং, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, কর্তব্যে অবহেলা—এত কিছু দেখেও আমাদের বিবেক জাগ্রত হয় না।
আমাদের অনেকেরই মনোভাব— কী দরকার ঝামেলায় গিয়ে। যেন আমরা বেছে নিয়েছি উটপাখির জীবন। উটপাখি নাকি ঝড় এলে বালুতে মুখ গুঁজে থাকে, যেন কিছুই ঘটছে না। আমরাও যেন সেই রকম। কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখলেই পাশ কাটিয়ে যাই। মাথা গোঁজার জন্য খুঁজতে থাকি আড়াল, বালুর স্তূপ। এভাবে মাথা নিচু করে বেঁচে থাকা আর কত দিন?
কিন্তু একা একা সমস্যার সমাধান করাও সম্ভব নয়। অনেকে মিলে ভাবলে, সমাধানের উপায় খুঁজলে, উদ্যোগী হলে, চেষ্টা করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। সে জন্য সবার আগে দরকার নিজেকে বদলানো; তারপর একসঙ্গে আওয়াজ তোলা, মাথা তুলে দাঁড়ানো। এ ক্ষেত্রে তরুণেরাই সবচেয়ে কার্যকর, সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এখানেই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ডাক দিতে হয় তরুণদের উদ্দেশে, আধমরাদের ঘা দিতে তরুণেরা যেন জেগে ওঠে; কালবোশেখির মতো তারুণ্য এসে যেন নতুনের কেতন উড়িয়ে দেয়; দুর্বলেরে রক্ষা করে যেন দুর্জনেরে হানতে পারে প্রতিরোধে আর প্রতিবাদের গণতান্ত্রিক ভাষায়।
জন্মলগ্ন থেকেই প্রথম আলোর রয়েছে তরুণদের প্রতি পক্ষপাত। সেই বিবেচনায় আমরা প্রতিবছর ‘গণিত অলিম্পিয়াড’ আর ‘ভাষা প্রতিযোগ’ করি। মেধাবী ছাত্রদের সংবর্ধনা দিই। দরিদ্র মেধাবীদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক উৎসব, বিজ্ঞান মেলা প্রভৃতি আয়োজনে সহযোগিতা করি। এ ছাড়া দেশজুড়ে রয়েছে প্রথম আলো বন্ধুসভার হাজার হাজার তরুণ ছেলেমেয়ে। সারা বছর তারা নিজেদের নানা ইতিবাচক কাজে যুক্ত রাখে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের আশা-জাগানিয়া তরুণেরা বদলে দেবে সমাজ ও দেশ।
বদলে যাওয়া আর বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে প্রথম আলো সব সময়ই সক্রিয়। এবার সময়ের প্রয়োজনে আমরা নিতে চাইছি আরও একটি প্রয়াস। এগিয়ে যেতে চাইছি আরেকটি ধাপ। এমন একটা জায়গা আমরা তৈরি করতে চাইছি, যেখানে সমাজ ও দেশের কল্যাণের জন্য কথা হবে, সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু কথা আর আলোচনাতেই সবকিছু ফুরিয়ে যাবে না; চেষ্টা থাকবে সমস্যার সমাধানে পৌঁছানোর, যেখানে শুধু কথা হবে না, কাজও হবে।
সময়ের দাবি মেটাতেই প্রথম আলোর নতুন প্রয়াস: ‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’। সমস্যা দেখে উটপাখির মতো বালুতে মুখ না গুঁজে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার আওয়াজ উঠবে সে মিছিলে।
আসুন, বদলে দেওয়ার সে মিছিলে যোগ দিই সবাই। মাথা তুলি, আওয়াজ ওঠাই। অনলাইনে, কাজের ক্ষেত্রে, ঘরে ঘরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, পাড়ায়, মহল্লায়—সর্বত্র। নিজেকে বদলাব ইতিবাচকভাবে, সমাজটাকে বদলে নেব আলোর পথে—এই আমাদের অঙ্গীকার। সবাই মিলে চেষ্টা করলে কোনো সমস্যাই সমস্যা হয়ে থাকবে না, তার সমাধান আসবেই।
‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’-এ যোগ দিতে www.bodlejaobodledao.com লগইন করুন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনিও যোগ দিন বদলে যাওয়া আর বদলে দেওয়ার অভিযাত্রায়। কথা বলুন, সমাধানের পথ খোঁজার প্রক্রিয়ায় অংশ নিন। আসুন, সবাই মিলে নেমে পড়ি সমস্যার সমাধানে। জনমত গড়ে তুলি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিই, কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করি, কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙাই; যেখানে সম্ভব, সেখানে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে বদলে দিই যত অনিয়ম, দূর করি যত সমস্যার জগদ্দল পাথর। এসএমএস করতে পারেন ২২২১ নম্বরে। পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন—সব মাধ্যমেই সক্রিয় থাকবে ‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’।
আমাদের তরুণেরা আবারও আমাদের জন্য তৈরি করবে নতুন ইতিহাস—এই ভরসা আমাদের আছে।

No comments

Powered by Blogger.