আমি যেখানে যাই যৌনতা ধাওয়া করে
নতুন
চাকরি। তবু সাহসে ভর করে একদিন সটান গিয়ে হাজির হয়েছিলাম বস্-এর কাছে।
আর্জি একটাই, ছুটি চাই। উনি (এখনও কর্মসূত্রে আমাকে স্নেহ করেন) তাজ্জব,
‘‘ইয়ং ম্যান, ইউ হ্যাভ আ নিউ জব ইন ইওর পকেট।’’ বলেছিলাম, ‘‘আই নো স্যর।
বাট আই অ্যাম সাফারিং ফ্রম ডিফ্রেশন ডিনে। নিড আ ভেকেশন। উইল রিটার্ন ফ্রেশ
অ্যান্ড ফিট টু হিট দ্য বুল।’’ উনি খুশি হয়েছিলেন। অবসাদের কারণ জানতে
চাননি। এক কথায় দশ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন। আমিও পাড়ি দিয়েছিলাম
দার্জিলিং।
বাবা-মা অবাক হয়েছিলেন। সারা জীবন বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড় করে বেড়ানো এই আমি আচমকা কেন একা একা ‘ঘুম’-এর দেশে চললাম, সেটা তাঁদের ভাবিয়েছিল। কিন্তু আমার ও সবে মাথা দেওয়ার সময় নেই। হোটেল বুক করে সটান চড়ে পড়েছিলাম ট্রেনে। ‘‘মেফেয়ার’’-এর ঘরটায় যখন ঢুকলাম, মনে হল, এটাই স্বর্গ। মৃত্যুর মতো সুন্দর বস্তু যদি কোথাও পূর্ণতা পেয়ে থাকে, তা হলে সেটা এখানেই। ঢুকেই একটা বসার ঘর, সেটা পেরিয়ে বেডরুম। বসার ঘর থেকে বাইরে এলেই একটা ছোট্ট উঠোন মতো জায়গা। ছোট ছোট ঘাস, কেয়ারি করা ফুলগাছ। আর সামনে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড় পেরিয়ে মেঘেদের ছোঁওয়াছুঁয়ি খেলা।
ব্ল্যাকমেল-পর্বের পরে আমার এই বিশ্রামটা দরকার ছিল। দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। টিপটিপ বৃষ্টি, আকাশে মেঘ। হাঁটতে হাঁটতে ম্যালের পিছন দিকে একটা ফাঁকা জায়গায় চলে গেলাম। গাছে-মেঘে মিশে এখানে বেশ অন্ধকার। নৈঃশব্দের সঙ্গে দিব্য ঝগড়া চালিয়ে যাচ্ছে ঝিঁ-ঝিঁ পোকারা। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার হাতে চাকরি রয়েছে, সামনে ওই খাদ-পাহাড়ের সারির মতোই পড়ে রয়েছে কেরিয়ার, উন্নতি। অর্থভিত্তি মজবুত, যা আমার শিক্ষা আরও মজবুত করার ইঙ্গিত দিতে শুরু করে দিয়েছে। ওই দূরে আলো, হাত বাড়িয়েছে আমার দিকে। আর এই অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আমি। বেছে নিতে হবে। এই আলো, এই আঁধারিতে জীবন চলবে না। বাঁধ দিতে হবে। শরীরে বাঁধ দেওয়ার আগে আগল দিতে হবে মনে।
সিদ্ধান্ত নিলাম কলকাতায় ফিরে ট্রান্সফার নেব। ব্যাঙ্গালোর হলে ফরেন-টায় সুবিধে হবে। তাই দক্ষিণেই যাব ভেবে নিলাম। দক্ষিণে যাওয়া আমার হয়েছিল। সেখান থেকে পশ্চিমেও যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই দশটা দিনে যে ফের ঝড় বয়ে যাবে, সেটা আঁচ করা আমার পক্ষে কষ্টকর ছিল। এই যে একা দাঁড়িয়ে এত পরিকল্পনা করা, এ সবই আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আছড়ে পড়বে এই খাদে।
একটা সিগারেট ধরালাম। কিংগ সাইজ গোল্ড ফ্লেক। আমার বরাবরের প্রিয়। এক ইংরেজ কবির কবিতায় একটা শব্দ পড়েছলাম, ‘‘ভার্ডুরাস গ্লুম’’। অন্ধকার সবুজ। সেই অন্ধকার সবুজে আমার সিগারেটের ধূসর ধোঁওয়া ভাসতে ভাসতে যাচ্ছে। টিপটিপ করে বৃষ্টির ফোঁটা বিশাল ছাতাটায় পড়ছে। গায়ে লম্বা জ্যাকেটে শীত বাধ মানছে বেশ। স্যাঁতসেঁতে পাহাড় আমার খুব প্রিয়। বিশেষ করে এই ভেজা দার্জিলিং। আগামী দশ দিনে আমার জীবনে আরও একটা অধ্যায় রচিত হতে চলেছে। এখন চলছে তার পরদা ওঠানোর পালা।
(ক্রমশ...)
সূত্র: এবেলা
বাবা-মা অবাক হয়েছিলেন। সারা জীবন বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড় করে বেড়ানো এই আমি আচমকা কেন একা একা ‘ঘুম’-এর দেশে চললাম, সেটা তাঁদের ভাবিয়েছিল। কিন্তু আমার ও সবে মাথা দেওয়ার সময় নেই। হোটেল বুক করে সটান চড়ে পড়েছিলাম ট্রেনে। ‘‘মেফেয়ার’’-এর ঘরটায় যখন ঢুকলাম, মনে হল, এটাই স্বর্গ। মৃত্যুর মতো সুন্দর বস্তু যদি কোথাও পূর্ণতা পেয়ে থাকে, তা হলে সেটা এখানেই। ঢুকেই একটা বসার ঘর, সেটা পেরিয়ে বেডরুম। বসার ঘর থেকে বাইরে এলেই একটা ছোট্ট উঠোন মতো জায়গা। ছোট ছোট ঘাস, কেয়ারি করা ফুলগাছ। আর সামনে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড় পেরিয়ে মেঘেদের ছোঁওয়াছুঁয়ি খেলা।
ব্ল্যাকমেল-পর্বের পরে আমার এই বিশ্রামটা দরকার ছিল। দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। টিপটিপ বৃষ্টি, আকাশে মেঘ। হাঁটতে হাঁটতে ম্যালের পিছন দিকে একটা ফাঁকা জায়গায় চলে গেলাম। গাছে-মেঘে মিশে এখানে বেশ অন্ধকার। নৈঃশব্দের সঙ্গে দিব্য ঝগড়া চালিয়ে যাচ্ছে ঝিঁ-ঝিঁ পোকারা। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার হাতে চাকরি রয়েছে, সামনে ওই খাদ-পাহাড়ের সারির মতোই পড়ে রয়েছে কেরিয়ার, উন্নতি। অর্থভিত্তি মজবুত, যা আমার শিক্ষা আরও মজবুত করার ইঙ্গিত দিতে শুরু করে দিয়েছে। ওই দূরে আলো, হাত বাড়িয়েছে আমার দিকে। আর এই অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আমি। বেছে নিতে হবে। এই আলো, এই আঁধারিতে জীবন চলবে না। বাঁধ দিতে হবে। শরীরে বাঁধ দেওয়ার আগে আগল দিতে হবে মনে।
সিদ্ধান্ত নিলাম কলকাতায় ফিরে ট্রান্সফার নেব। ব্যাঙ্গালোর হলে ফরেন-টায় সুবিধে হবে। তাই দক্ষিণেই যাব ভেবে নিলাম। দক্ষিণে যাওয়া আমার হয়েছিল। সেখান থেকে পশ্চিমেও যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই দশটা দিনে যে ফের ঝড় বয়ে যাবে, সেটা আঁচ করা আমার পক্ষে কষ্টকর ছিল। এই যে একা দাঁড়িয়ে এত পরিকল্পনা করা, এ সবই আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আছড়ে পড়বে এই খাদে।
একটা সিগারেট ধরালাম। কিংগ সাইজ গোল্ড ফ্লেক। আমার বরাবরের প্রিয়। এক ইংরেজ কবির কবিতায় একটা শব্দ পড়েছলাম, ‘‘ভার্ডুরাস গ্লুম’’। অন্ধকার সবুজ। সেই অন্ধকার সবুজে আমার সিগারেটের ধূসর ধোঁওয়া ভাসতে ভাসতে যাচ্ছে। টিপটিপ করে বৃষ্টির ফোঁটা বিশাল ছাতাটায় পড়ছে। গায়ে লম্বা জ্যাকেটে শীত বাধ মানছে বেশ। স্যাঁতসেঁতে পাহাড় আমার খুব প্রিয়। বিশেষ করে এই ভেজা দার্জিলিং। আগামী দশ দিনে আমার জীবনে আরও একটা অধ্যায় রচিত হতে চলেছে। এখন চলছে তার পরদা ওঠানোর পালা।
(ক্রমশ...)
সূত্র: এবেলা
No comments