পুষ্টির অভাবে খাটো শিশু
দেশে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলেও সেগুলো যে খুব কাজে আসেনি, তা বোঝা গেল গত রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এক সিম্পোজিয়ামে তুলে ধরা পুষ্টি পরিস্থিতির চিত্রে। সিম্পোজিয়ামে বলা হয়েছে, দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩৬ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির। আর এক-তৃতীয়াংশ নারী অপুষ্টিতে ভুগছেন। এই নারীদের বেশির ভাগই গর্ভকালীন রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। নিঃসন্দেহে দেশের পুষ্টি পরিস্থিতির এই চিত্র উদ্বেগজনক। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় এবং জন্মের পর প্রথম তিন বছরে যথাযথ পুষ্টি না পেলে সেই শিশু খর্বকায় হয়। এ ছাড়া ঘন ঘন সংক্রমণ হলেও শিশু খর্বাকৃতির হতে পারে। বয়সের তুলনায় এদের উচ্চতা কম থাকে। এমন শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটতে দেরি হয়। এদের বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা যেমন কম থাকে, তেমনি দেখা যায় এরা স্কুলে খারাপ করে। পাঁচ বছরের কম বয়সী এসব শিশুর মধ্যে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ও মৃত্যুহার বেশি। প্রাপ্তবয়সে এদের মধ্যে স্থূলকায় হওয়ার ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও বেশি। শিশুর খর্বকায় হওয়া রোধ করতে শিশুর পুষ্টির জোগান যেমন লাগবে, তেমনি মায়ের পুষ্টি পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া পুষ্টি সম্পর্কে মায়েদের সচেতন হতে হবে। আমাদের বেশির ভাগ মা-ই জানেন না, তাঁর শিশুর জন্য কোন খাবারটি পুষ্টিকর। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চাকে অবশ্যই শালদুধ পান করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া জন্মের পর ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমরা নিশ্চয়ই চাই না যে আমাদের দেশে আরও খর্বাকৃতির ও কম ওজনের শিশু জন্ম নিক। আজকের শিশুরাই সামনে তাদের মেধা ও শ্রমশক্তি দিয়ে দেশ পরিচালনা করবে। তাদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার বিষয়ে নজর দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেওকার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ্যমগুলো।
No comments