দোষী প্রমাণিত হলে অর্থ ফেরত দেবে আরসিবিসি
রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) অর্থ পাচারের অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের একটি নির্দিষ্ট অংশ জরিমানা হিসেবে ফেরত দেবে। ফিলিপাইনের ব্লু রিবন সিনেট কমিটির শুনানিতে অংশ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এ কথা জানান আরসিবিসির প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো তান। দেশটির সানস্টার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনেটর রালফ রেকটো গতকাল শুনানির শুরুতেই লরেঞ্জো তানের কাছে আরসিবিসির মুনাফা, মোট সম্পদ, মোট মূলধন ও বাজার মূলধন সম্পর্কে জানতে চান। তান জানান, গত বছর আরসিবিসি ৫২০ কোটি পেসো (ফিলিপাইনের মুদ্রা) মুনাফা করেছে। এ সময় আরসিবিসির মোট মূলধনের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি পেসো। রালফ রেকটো বলেন, চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৩ কোটি ডলার ফেরত পাওয়া যাবে এমনটা ধরে নিয়ে বাকি অর্থ যদি আরসিবিসিকে ফেরত দিতে বলা হয়, তাহলে সেটা তাদের মুনাফা থেকে দেওয়া যেতে পারে। এ জন্য ফিলিপিনো মুদ্রায় শোধ করতে হবে ২২০ কোটি পেসো। এরপরও তাদের মুনাফা থাকবে ৩০০ কোটি পেসো। এতে আরসিবিসির প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। জবাবে লরেঞ্জো তান বলেন, ‘অর্থ পাচারে আরসিবিসির সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে আমি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে বলব।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্তা ‘জরুরি’ ছিল না: ফিলিপাইনের আরেক গণমাধ্যম র্যাপলার-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ স্থানান্তর বন্ধে সুইফটের (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) মাধ্যমে আরসিবিসির কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো বার্তাগুলোতে পরিষ্কার বক্তব্য ছিল না বলে দাবি করেছেন ব্যাংকটির লিগ্যাল অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান মারিয়া সেসিলিয়া ইস্তাভিলো। গতকালের সিনেট শুনানিতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো বার্তায় ‘অতি জরুরি’ কোনো বক্তব্য ছিল না। কিছু বার্তার বিষয়বস্তুও পরিষ্কার ছিল না। সেসিলিয়া ইস্তাভিলো আরও জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি সুইফট থেকে আরসিবিসির কাছে মোট ৭৯০টি বার্তা আসে। এর মধ্যে ১১১টি বার্তা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। পাঠানো সব বার্তাই ‘সাধারণ গুরুত্বের’ হওয়ায় সেগুলো সাধারণ ক্রম অনুযায়ী পড়া হয়। তখন সিনেটর তেওফিস্তো গুইংগোনা বলেন, বিদেশের একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বার্তা পাওয়ার ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না। এ থেকেই ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করা উচিত ছিল আরসিবিসির। আরসিবিসির আইনজীবীরা এ সময় জানান, সুইফটের বার্তাগুলো যে বাংলাদেশ ব্যাংকের, এটা তাদের জানা ছিল না। ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট-বিষয়ক এক কর্মকর্তা জানান, সুইফট বার্তায় অবশ্যই প্রেরক ব্যাংকের নাম এবং সেটি কোন দেশ থেকে এসেছে তা উল্লেখ করা থাকে। আরসিবিসি সেটা জানত না, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মায়া সান্তোসকে বাড়তি সময় দিল ডিওজে: সানস্টার-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরসিবিসির বরখাস্ত শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের জবাব দিতে তাঁকে বাড়তি আরও সময় দিয়েছে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে)। আত্মপক্ষ সমর্থনে মায়া সান্তোসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইন থেকে পাচারের ঘটনায় দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিওজের প্রথম শুনানি ছিল গতকাল মঙ্গলবার। আর্থিক লেনদেনের সনদই নেই ফিলরেমের: এদিকে প্রথম আলোর ম্যানিলা প্রতিনিধি জানান, ফিলিপাইন থেকে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের এ ধরনের ব্যবসা করার কোনো আইনগত সনদ নেই। ফিলিপাইনের রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা ব্যুরো অব ইন্টারনাল রেভিনিউর (বিআইআর) কমিশনার কিম হেনারেস গতকালের সিনেট শুনানিতে এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ফিলরেমের স্থল পরিবহন ঠিকাদারি ব্যবসা করার সনদ আছে, কিন্তু অর্থ লেনদেন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোনো সনদ নেই। ম্যানিলা প্রতিনিধি আরও জানান, অর্থ পাচারে দোষী প্রমাণিত হলে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিটি অবৈধ লেনদেনের জন্য শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার পেসো জরিমানা করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নেস্তর এসপেনিলা শুনানিতে এমন তথ্য জানিয়ে বলেন, এর সঙ্গে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা রকমের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
No comments