আরেক দফা বাড়ল লবণের দাম by রাজীব আহমেদ
নিত্যপ্রয়োজনীয় লবণের দাম আরেক দফা বেড়েছে। মোড়কজাত প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে এখন ৩৫ টাকায়। সপ্তাহ খানেক আগেও প্রতি কেজি লবণের দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। দেশের লবণ পরিশোধনকারী বড় কোম্পানিগুলো মিলে এই দাম বাড়িয়েছে। গত চার মাসে এ নিয়ে লবণের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বাড়ল। শতকরা হিসাবে যা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। গত ডিসেম্বরেও কোম্পানিভেদে প্রতি কেজি লবণের দাম ছিল ২৫ থেকে ২৭ টাকা। দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে পরিশোধন কোম্পানিগুলো বলছে, দেশে উৎপাদন কম হওয়ায় অপরিশোধিত লবণের দাম অনেক বাড়তি। এ কারণে ভোক্তাপর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। এসিআই সল্ট গত ২৮ মার্চ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলকে চিঠি দিয়ে জানায়, তারা মোড়কজাত লবণের দাম কেজিতে ২ টাকা বাড়িয়ে ৩৪ টাকা করেছে। ৩০ মার্চ এসে আরেকটি চিঠিতে কোম্পানিটি কেজিতে আরও ১ টাকা দাম বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করার কথা জানায়। মোল্লা সল্ট ও কনফিডেন্স সল্ট একইভাবে চিঠির মাধ্যমে লবণের দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছে ট্যারিফ কমিশনকে। নতুন দামের লবণ বাজারে এসেছে গত সপ্তাহে। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ইফতি জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. সবুজ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানেই লবণের দাম ৫ টাকা বেড়েছে। এখন প্রায় সব কোম্পানির চিকন লবণ (ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত) ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ১৫ টাকার মোটা লবণ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে। এদিকে লবণের দাম নিয়ে গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সভায় লবণ মিলমালিকেরা দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য আমদানির অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান। অন্যদিকে লবণ চাষি সমিতি মৌসুমের বাকি দিনগুলোতে বাড়তি উৎপাদনের কথা জানায়। এ অবস্থায় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে কক্সবাজারে গিয়ে উৎপাদনের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে। এরপরই আমদানির অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। লবণনীতি ২০১১ অনুযায়ী ২০১৫ সালে দেশে লবণের চাহিদা ছিল ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টন। এ বছর এই চাহিদা কিছুটা বাড়বে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে ৯ লাখ ৮০ হাজার টন। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ১২ লাখ ৩৪ হাজার টন। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় হচ্ছে লবণ উৎপাদনের মৌসুম। কনফিডেন্স সল্টের মহাব্যবস্থাপক মো. শামসুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গত নভেম্বরেও ২৬ টাকা কেজি দরে লবণ বিক্রি করা হয়েছে। এরপর থেকে কয়েক দফা বেড়ে তা ৩৫ টাকায় উঠেছে। এসিআই সল্টের বাণিজ্য পরিচালক কামরুল হাসান বলেন, গত বছর এই সময়ে এসিআইয়ের প্রতি কেজি লবণের দাম ছিল ২৫ টাকা। এরপর কয়েক দফা বেড়ে এখন তা ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ট্যারিফ কমিশনে ৫ এপ্রিল দেওয়া আরেক চিঠিতে এসিআই জানিয়েছে, এ বছর দেশে ১০ লাখ টন লবণের ঘাটতি তৈরি হবে। বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, লবণের দাম বাড়ার বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে। কোম্পানিগুলো লবণ আমদানি করতে চায়। কিন্তু সরকার আমদানি করতে দিতে নারাজ। বর্তমানে দেশে ভোজ্য লবণ আমদানি নিষিদ্ধ।
No comments