অন্ধকারে পুলিশ, তবে জঙ্গির দিকে ইঙ্গিত
হাতে
কোনো সূত্র না থাকলেও দুই প্রকাশক ও দুই লেখকের ওপর হামলার জন্য
আনসারউল্লাহ বাংলা টিমকে সন্দেহ করছে পুলিশ। কর্মকর্তারা বলছেন, হামলার ধরন
দেখে তাঁরা এ রকম ধারণা করছেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন
পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আসলেই কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, সে সম্পর্কে
কোনো তথ্য নেই তাঁদের হাতে। অন্ধকারে হাতড়াচ্ছেন সবাই। হত্যার ধরন দেখে
তাঁরা কেবল ধারণাই করতে পারছেন।
গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে কুপিয়ে হত্যা করা হয় জাগৃতি প্রকাশনের মালিক ফয়সল আরেফিন ওরফে দীপনকে। একই সময়ে লালমাটিয়ায় আরেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর মালিক আহমেদুর রশীদ (টুটুল) এবং তাঁর সঙ্গে থাকা দুই ব্লগার সুদীপ কুমার বর্মণ (রণদীপম বসু নামে পরিচিত) ও তারেক রহিমকে একইভাবে কুপিয়ে আহত করা হয়। লেখক ও প্রকৌশলী তারেক রহিমকে গুলিও করা হয়েছে, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তাঁদের তিনজনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ দুটি হামলার ঘটনায় গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফয়সল ও আহমেদুর দুজনই গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একই রকমের হামলায় নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক।
এ হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন আজিজ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এবং গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন। আগামী মঙ্গলবার সারা দেশে আধা বেলা হরতাল ডেকেছে গণজাগরণ মঞ্চ।
গতকাল পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ আজিজ সুপার মার্কেটের আটটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ভিডিও ফুটেজ দেখে হত্যাকারী চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘটনার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ। এর বাইরে পুলিশের কাছে আর কোনো সূত্র আছে কি না, তা জানা যায়নি।
হত্যার পর শনিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, আগের পাঁচজন ব্লগারকে হত্যা এবং শনিবারে আজিজ সুপার মার্কেট ও লালমাটিয়ায় হামলার ধরন একই। এ সবই একই সূত্রে গাঁথা।
গত দুই বছর নাশকতা দমনে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারলেও উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দক্ষতা দেখাতে পারেনি বলে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও বলছেন, ‘গোপন-অতর্কিত হামলা থেকে কেউই নিরাপদ নয়, আমিও নই।’ দুর্বৃত্তদের হামলায় আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তবে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি হয়নি বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব দেশেই এ রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। আনসারুল্লাহ, জেএমবি বা আইএস—যারাই এটা করুক না কেন, তারা যুদ্ধাপরাধী বা জামায়াত-শিবিরের লোক। যারাই জড়িত থাকুক না কেন, আমরা খুঁজে বের করব।’
আরও এক ধাপ এগিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ নিহত প্রকাশক ফয়সলের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক খুনিদের রাজনৈতিক ‘মতাদর্শে’ বিশ্বাসী, তাই ছেলে হত্যার বিচার চান না বলে মন্তব্য করেছেন। একজন বাবা হিসেবে অধ্যাপক ফজলুল হকের বক্তব্যে তিনি নিজে লজ্জিত বলে মন্তব্য করেন হানিফ।
তবে এসব হামলা ঠেকানো কঠিন বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। গতকাল মিন্টো রোডে ডিবির দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এগুলো ‘টার্গেটেড কিলিং’। দৃশ্যমান পুলিশের নিরাপত্তা দিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করা কঠিন। এ ধরনের বিশেষায়িত অপরাধের ঘটনা ও জঙ্গিবাদ ঠেকাতে দরকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। অন্য দেশে থাকলেও বাংলাদেশে এ ইউনিট নেই।
মনিরুল বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা তাদের সঙ্গে যুক্তরা পরিকল্পিতভাবে দুটি ঘটনা ঘটিয়েছে। একই ছাতার নিচ থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে হামলাকারীরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে ঘটনা দুটি ঘটিয়েছে। হত্যায় অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন জড়িত কি না, সে বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অনেকগুলো ঘটনায় অনেক জঙ্গি ধরা পড়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ঘটনা ঘটিয়ে আনসার বাংলা বা আনসার আল ইসলামের নাম দিয়ে দায় স্বীকার করছে।
এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যার অগ্রগতি বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ডিবি ১১টি আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ে (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) পাঠিয়েছিল। সেই প্রতিবেদন এখনো দেয়নি এফবিআই। তা ছাড়া এফবিআইয়ের কাছ থেকে তাঁরা এখনো তদন্ত-সহায়তা পাননি বলে জানান। তিনি বলেন, ডিএমপির দক্ষতা ও জনবল দিয়ে এফবিআইয়ের সহায়তা ছাড়াই ডিএমপি শনিবারের দুটি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে।
ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার গত শনিবারের হামলার বিষয়ে বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা চাপাতি চালাতে পারদর্শী। কিন্তু গতকাল লালমাটিয়ায় হামলাকারীরা পিস্তল চালানোর সময় দুটি তাজা গুলি পড়ে গেছে। এ থেকে মনে হচ্ছে, হামলাকারীরা পেশাদার খুনি নয়। তিনি বলেন, শাহবাগ ও মোহাম্মদপুর থানার পাশাপাশি ডিবি ও অন্য গোয়েন্দা সংস্থা খুনিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
পুলিশি সাহায্য চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেছিলেন হামলার শিকার শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ। এরপরও কেন হামলা এড়ানো গেল না, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ এ রকম অনেক ঘটনা প্রতিরোধ করেছে। অহমেদুর রশীদ জিডি করার পর পুলিশ সেখানে গিয়েছে। এরপরও হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, তবে অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক ফয়সল আরেফিন হুমকির বিষয়ে পুলিশকে জানাননি। জানালে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তিনি বলেন, কারও হুমকি বা নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে তা যেন পুলিশকে জানানো হয়। গোয়েন্দা ব্যবহার করে এমন আরও ঝুঁকির বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, এ পর্যন্ত তাঁরা ৪০ জনের মতো আনসারউল্লাহ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, আনসারউল্লাহ বা একই ধরনের অন্য সংগঠনগুলো বিকশিত হওয়ার ধাপ চারটি। প্রথম ধাপ হচ্ছে দাওয়াত। এই ধাপে তারা মানুষকে জিহাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানায়। দ্বিতীয় ধাপে আছে ইদাদ। এই ধাপে তারা আনসার তৈরি করে। এই ধাপে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। তৃতীয় ধাপ হচ্ছে রিবাত। এই পর্যায়ে হামলা ও গোপন জায়গা থেকে বার্তা পাঠিয়ে হামলার দায় স্বীকার করার কথাও বলা আছে। শেষ পর্যায়ে হচ্ছে কতল। তাদের মতে, ‘জিহাদ’ ব্যর্থ হলে নির্বিচার হত্যা বা কতল অনিবার্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ব্লগার রাজীব হায়দার খুনের ঘটনার সঙ্গে এ ঘটনার সবচেয়ে বেশি মিল আছে। ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্লবীতে ওই খুনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া যুবকেরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট দল গড়ে উঠেছে। এসব দলে আছে কম বয়সীরা। তারা জীবন দেওয়ার জন্য মরিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়া আরও কয়েকজন একই ধরনের তথ্য দিয়েছে। পুলিশের ধারণা, এই দলগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। কিন্তু তারা এদের নেটওয়ার্কে যেতে পারছে না।
এদিকে গতকাল সময় প্রকাশনা সংস্থার মালিক ফরিদ আহমেদকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি ও গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসুকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে বাপ্পাদিত্য প্রথম আলোকে বলেন, রাত নয়টা নয় মিনিটে একটি নম্বর বিহীন মুঠোফোন খুদে বার্তায় তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়।
গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে কুপিয়ে হত্যা করা হয় জাগৃতি প্রকাশনের মালিক ফয়সল আরেফিন ওরফে দীপনকে। একই সময়ে লালমাটিয়ায় আরেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর মালিক আহমেদুর রশীদ (টুটুল) এবং তাঁর সঙ্গে থাকা দুই ব্লগার সুদীপ কুমার বর্মণ (রণদীপম বসু নামে পরিচিত) ও তারেক রহিমকে একইভাবে কুপিয়ে আহত করা হয়। লেখক ও প্রকৌশলী তারেক রহিমকে গুলিও করা হয়েছে, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তাঁদের তিনজনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ দুটি হামলার ঘটনায় গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফয়সল ও আহমেদুর দুজনই গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একই রকমের হামলায় নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক।
এ হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন আজিজ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এবং গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন। আগামী মঙ্গলবার সারা দেশে আধা বেলা হরতাল ডেকেছে গণজাগরণ মঞ্চ।
গতকাল পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ আজিজ সুপার মার্কেটের আটটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ভিডিও ফুটেজ দেখে হত্যাকারী চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘটনার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ। এর বাইরে পুলিশের কাছে আর কোনো সূত্র আছে কি না, তা জানা যায়নি।
হত্যার পর শনিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, আগের পাঁচজন ব্লগারকে হত্যা এবং শনিবারে আজিজ সুপার মার্কেট ও লালমাটিয়ায় হামলার ধরন একই। এ সবই একই সূত্রে গাঁথা।
গত দুই বছর নাশকতা দমনে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারলেও উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দক্ষতা দেখাতে পারেনি বলে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও বলছেন, ‘গোপন-অতর্কিত হামলা থেকে কেউই নিরাপদ নয়, আমিও নই।’ দুর্বৃত্তদের হামলায় আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তবে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি হয়নি বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব দেশেই এ রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। আনসারুল্লাহ, জেএমবি বা আইএস—যারাই এটা করুক না কেন, তারা যুদ্ধাপরাধী বা জামায়াত-শিবিরের লোক। যারাই জড়িত থাকুক না কেন, আমরা খুঁজে বের করব।’
আরও এক ধাপ এগিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ নিহত প্রকাশক ফয়সলের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক খুনিদের রাজনৈতিক ‘মতাদর্শে’ বিশ্বাসী, তাই ছেলে হত্যার বিচার চান না বলে মন্তব্য করেছেন। একজন বাবা হিসেবে অধ্যাপক ফজলুল হকের বক্তব্যে তিনি নিজে লজ্জিত বলে মন্তব্য করেন হানিফ।
তবে এসব হামলা ঠেকানো কঠিন বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। গতকাল মিন্টো রোডে ডিবির দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এগুলো ‘টার্গেটেড কিলিং’। দৃশ্যমান পুলিশের নিরাপত্তা দিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করা কঠিন। এ ধরনের বিশেষায়িত অপরাধের ঘটনা ও জঙ্গিবাদ ঠেকাতে দরকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। অন্য দেশে থাকলেও বাংলাদেশে এ ইউনিট নেই।
মনিরুল বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা তাদের সঙ্গে যুক্তরা পরিকল্পিতভাবে দুটি ঘটনা ঘটিয়েছে। একই ছাতার নিচ থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে হামলাকারীরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে ঘটনা দুটি ঘটিয়েছে। হত্যায় অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন জড়িত কি না, সে বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অনেকগুলো ঘটনায় অনেক জঙ্গি ধরা পড়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ঘটনা ঘটিয়ে আনসার বাংলা বা আনসার আল ইসলামের নাম দিয়ে দায় স্বীকার করছে।
এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যার অগ্রগতি বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ডিবি ১১টি আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ে (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) পাঠিয়েছিল। সেই প্রতিবেদন এখনো দেয়নি এফবিআই। তা ছাড়া এফবিআইয়ের কাছ থেকে তাঁরা এখনো তদন্ত-সহায়তা পাননি বলে জানান। তিনি বলেন, ডিএমপির দক্ষতা ও জনবল দিয়ে এফবিআইয়ের সহায়তা ছাড়াই ডিএমপি শনিবারের দুটি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে।
ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার গত শনিবারের হামলার বিষয়ে বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা চাপাতি চালাতে পারদর্শী। কিন্তু গতকাল লালমাটিয়ায় হামলাকারীরা পিস্তল চালানোর সময় দুটি তাজা গুলি পড়ে গেছে। এ থেকে মনে হচ্ছে, হামলাকারীরা পেশাদার খুনি নয়। তিনি বলেন, শাহবাগ ও মোহাম্মদপুর থানার পাশাপাশি ডিবি ও অন্য গোয়েন্দা সংস্থা খুনিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
পুলিশি সাহায্য চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেছিলেন হামলার শিকার শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ। এরপরও কেন হামলা এড়ানো গেল না, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ এ রকম অনেক ঘটনা প্রতিরোধ করেছে। অহমেদুর রশীদ জিডি করার পর পুলিশ সেখানে গিয়েছে। এরপরও হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, তবে অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক ফয়সল আরেফিন হুমকির বিষয়ে পুলিশকে জানাননি। জানালে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তিনি বলেন, কারও হুমকি বা নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে তা যেন পুলিশকে জানানো হয়। গোয়েন্দা ব্যবহার করে এমন আরও ঝুঁকির বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, এ পর্যন্ত তাঁরা ৪০ জনের মতো আনসারউল্লাহ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, আনসারউল্লাহ বা একই ধরনের অন্য সংগঠনগুলো বিকশিত হওয়ার ধাপ চারটি। প্রথম ধাপ হচ্ছে দাওয়াত। এই ধাপে তারা মানুষকে জিহাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানায়। দ্বিতীয় ধাপে আছে ইদাদ। এই ধাপে তারা আনসার তৈরি করে। এই ধাপে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। তৃতীয় ধাপ হচ্ছে রিবাত। এই পর্যায়ে হামলা ও গোপন জায়গা থেকে বার্তা পাঠিয়ে হামলার দায় স্বীকার করার কথাও বলা আছে। শেষ পর্যায়ে হচ্ছে কতল। তাদের মতে, ‘জিহাদ’ ব্যর্থ হলে নির্বিচার হত্যা বা কতল অনিবার্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ব্লগার রাজীব হায়দার খুনের ঘটনার সঙ্গে এ ঘটনার সবচেয়ে বেশি মিল আছে। ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্লবীতে ওই খুনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া যুবকেরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট দল গড়ে উঠেছে। এসব দলে আছে কম বয়সীরা। তারা জীবন দেওয়ার জন্য মরিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়া আরও কয়েকজন একই ধরনের তথ্য দিয়েছে। পুলিশের ধারণা, এই দলগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। কিন্তু তারা এদের নেটওয়ার্কে যেতে পারছে না।
এদিকে গতকাল সময় প্রকাশনা সংস্থার মালিক ফরিদ আহমেদকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি ও গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসুকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে বাপ্পাদিত্য প্রথম আলোকে বলেন, রাত নয়টা নয় মিনিটে একটি নম্বর বিহীন মুঠোফোন খুদে বার্তায় তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়।
No comments