ফুলের জন্য গাছে বেঁধে শিশুর ওপর পৈচাশিক নির্যাতন
গাছ
থেকে একটি মাত্র ফুল ছেঁড়ার অপরাধে এবার পিতৃহারা শিশু রবিউল ইসলামের ওপর
অমানুষিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে এখন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। শিশু রাকিব হত্যার রেশ কাটতে না
কাটতেই আবারও লোমহর্ষক শিশু নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে রোববার রাত ১০টার দিকে
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খানজাহান আলী হলসংলগ্ন ইসলামনগর এলাকায়। এ ঘটনায়
নির্যাতনের শিকার রবিউলের মা ফরিদা বেগম বাদী হয়ে নির্যাতনকারী
নাজিমুদ্দিন, তার স্ত্রী গোলেনূর খাতুন ও ছেলে দুর্জয় হোসেনের নামে মামলা
করেছে। আসামিদের মধ্যে গোলেনূরকে পুলিশ সোমবার সকালে গ্রেপ্তার করেছে।
নির্যাতিত রবিউল রূপসা সেতুর বাইপাস সড়কের কুয়েত মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণী
ছাত্র। একের পর এক শিশু নির্যাতনের ঘটনায় নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের
সঞ্চার হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সন্ধ্যার দিকে খুলনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের খানজাহান আলী হলসংলগ্ন ইসলামনগর এলাকার বাসিন্দা
নাজিমুদ্দিনের বাড়ির বাগান থেকে একই এলাকার মৃত আলতাফ সরদারের ছেলে রবিউল
ইসলাম একটি ফুল ছেঁড়ে। ফুলটি নিয়ে যাওয়ার সময় নাজিমুদ্দিনের স্ত্রী গোলেনূর
খাতুন ও ছেলে দুর্জয় হোসেন তাকে ধরে মারতে মারতে বাড়ির সামনের একটি গাছে
পিটমোড়া বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। বারবার কাকুতি-মিনুতি করেও রবিউল
পাষণ্ড মা-ছেলের হাত থেকে রেহায় পায়নি। তাদের লাঠির আঘাতে রবিউলের শরীর
ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। এমনকি তার মাথা ফেটে যায়। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন
এগিয়ে এলেও আদম ব্যবসায়ী নাজিমুদ্দিন এলাকার প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ
শিশুটিকে উদ্ধারে সাহস পায়নি। একপর্যায়ে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে
শিশুটির পরিবারের সদস্যরা হরিণটানা থানা থেকে পুলিশ এনে তাকে উদ্ধার করে।
পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছে।
নির্যাতিত শিশুর বড়বোন সাদিয়া আক্তার মুক্তা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন,
ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার আদরের ছোট ভাই রবিউল ইসলাম। তাকে মাদরাসায় পড়িয়ে
বড় আলেম বানানোর ইচ্ছা ছিল আমার পিতার। আমার পিতা মৃত্যুর পর থেকে আমরা
ভাই-বোন সবাই ওকে খুব আদর করি। রবিউল স্থানীয় পার্ক থেকে একটি ফুল হাতে
নিয়ে আদম ব্যাপারী নাজিমের বাসার সামনে দিয়ে আসছিল। এ সময় তার স্ত্রী ও
ছেলে তাকে ধরে নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
একপর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। খবর পেয়ে আমরা পুলিশ নিয়ে ওকে উদ্ধার করে
খুমেকে ভর্তি করি। ডাক্তার বলেছেন, ওর অবস্থা এখনও বিপদমুক্ত নয়। এ
নরপিশাচের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। আমরা অসহায় পরিবার। বর্তমানে
চরম নিরাপত্তাহীতায় রয়েছি। অভিযুক্ত নাজিমুদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। বাড়ির সামনে শিশুটিকে বেঁধে রাখা হয়েছে
শুনেছিলাম। এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের পরিবারের কেউ জড়িত নয়। বাংলাদেশ
মানবাধিকার সংস্থার খুলনার কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন,
শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত বিচার না হওয়ার কারণে একের পর এক শিশু
নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনাটি খুবই অমানবিক ও লোমহর্ষক। এ
নির্যাতনকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। এ
ব্যাপারে হরিণটানা থানার ওসি মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,
শিশু নির্যাতনের খবর পেয়ে রোববার রাত ১০টায় নাজিমুদ্দিনের বাড়ির সামনে
নারিকেলগাছের পাশ থেকে রবিউল ইসলামকে উদ্ধার করি। এ সময় তার মুখ কাপড় দিয়ে
বাঁধা ছিল। তার পাশ থেকে দুটি কচা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নির্যাতিত
রবিউলের মা ফরিদা বেগম বাদী মামলা করেছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি
গোলেনূরকে সোমবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের
চেষ্টা চলছে।
No comments