যে হোটেলে কেউ থাকতে চান না
গ্রিসের কস দ্বীপে পরিত্যক্ত একটি হোটেলের বারান্দায় লবিতে আশ্রয় নিয়েছেন একদল অভিবাসী। মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপে আশ্রয়ের সন্ধানে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তাঁরা গ্রিসে পৌঁছান।। এএফপি |
ডজন খানেক লোক পানিশূন্য সুইমিংপুলে বসে আছেন। অন্যরা হোটেলের অভ্যর্থনাকক্ষে মাদুরের ওপর গাদাগাদি করে। তাঁবুগুলোও একসঙ্গে জোড়াতালি দিয়ে গাছের ডালে বেঁধে রাখা। মাঠ ব্যবহার হচ্ছে টয়লেট হিসেবে। আর এর বেড়ায় শুকাতে দেওয়া হয়েছে ভেজা কাপড়। এ দৃশ্য গ্রিসের কস দ্বীপের পরিত্যক্ত কাপ্তেন এইলাস হোটেলের। যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশ থেকে পালিয়ে আসা অভিবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। তবে বেশির ভাগ অভিবাসীর কাছেই এটি এখন এক আতঙ্কের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক হাজার অভিবাসী এ আতঙ্ক নিয়েই এখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। ইরান থেকে কস দ্বীপের এ আশ্রয়কেন্দ্রে আসা হতভাগ্য এই অভিবাসীদেরই একজন বেনহা। দুর্দশার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বললেন, এখানের অবস্থা খুবই খারাপ। রাতে বিদ্যুৎ থাকে না। সন্ধ্যা সাতটা থেকে আটটার মধ্যেই আমাদের ঘুমিয়ে পড়তে হয়। এটা খুবই দুঃখজনক। গুম-বোমা হামলার ভয়ে আফগানিস্তানের হেরাত থেকে পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক হয়ে পাচারকারীদের মাধ্যমে গ্রিসে পালিয়ে এসেছেন ২৫ বছর বয়সী এরশা। তিনি বললেন, ‘আমি এখানে ১৭ দিন ধরে আছি, গত চার দিনে কেউ আমাদের খাবার দিতে আসেনি। কখনো কখনো কেউ খাবার নিয়ে এলেও তা আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল না।’ আশ্রয়কেন্দ্রটিতে স্বাস্থ্যসেবার কাজে নিয়োজিত দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বলেছে, এই জায়গা মানুষের থাকার অযোগ্য। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংস্থার মুখপাত্র জুলিয়া কোউরাফা বলেন, ২০-২৫ দিন খাবার ও বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষের পক্ষে থাকা অসম্ভব। আমরা কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, এই দুরবস্থা দ্রুত পাল্টে ফেলে তারা অভিবাসীদের দায়িত্ব নিক। দুরবস্থার জন্য এথেন্স ও কস কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলছে, তাদের লোকবল ঘাটতির কথা। অভিবাসী সংকট মোকাবিলা নিয়ে গ্রিসের ডানপন্থীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া ইইউ গত শুক্রবার দ্রুত গ্রিসে নতুন অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র স্টেলা নানোউ আশঙ্কা করছেন, অর্থ সাহায্য আসতে দেরি হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, এখানকার মানুষ এখন খুবই ক্ষুধার্ত। নেই খাবার বিতরণের সুশৃঙ্খল কোনো ব্যবস্থা। এটা আসলে কোনো আশ্রয়কেন্দ্রই নয়। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ শরণার্থী সংকট পার করছে ইউরোপ। ইইউর অভিবাসনবিষয়ক কমিশনার দিমিত্রিস আভ্রামোপোলাস গত শুক্রবার এ সংকটকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সংকট হিসেবে অভিহিত করেছেন। সম্প্রতি এই আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবী দম্পতি সাইরাস ও তাঁর স্ত্রী ব্রুক ফুট কিছু খাবার, পানি ও বাচ্চাদের জন্য ন্যাপকিন অভিবাসীদের মধ্যে বিতরণ করছেন। বাচ্চাদের হাতে রঙিন বই আর রংপেনসিলও তুলে দিচ্ছিলেন তাঁরা। ৪০ বছর বয়সী সাইরাস এএফপিকে বলেন, আমরা খুব সাধারণ মানুষ। এখানে শুধু তাঁদের পাশে হাত বাড়িয়ে দিতে এসেছি। শরণার্থীরাও আপনার-আমার মতো মানুষ। এ পৃথিবীতে এতটুকু বাঁচার পথই কেবল খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। এএফপি।
No comments