পারছে না দুদক ছাড়ছে ক্ষমতা: তদন্তে ঘাটতি ও প্রক্রিয়াগত ত্রুটিতে পার পাচ্ছে আসামিরা by মতলু মল্লিক
জালিয়াতি, প্রতারণা, মানিলন্ডারিং, ঘুষ লেনদেনসহ এ ধরনের অভিযোগের অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান শেষে মামলা দায়ের এবং পরে চার্জশিট দিয়েও আদালতে হেরে যাচ্ছে দুদক। তদন্তে ঘাটতি ও প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে আসামিরা। ফলে বিচার শেষেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অনুসন্ধান ও তদন্তে দুদক কর্মকর্তাদের শ্রম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পন্ড হচ্ছে। এছাড়া দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগের মধ্যে জালিয়াতি, প্রতারণা, মানিলন্ডারিং, ঘুষ লেনদেনসহ এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যাই বেশি। দুদকে দাখিল ছাড়াও একই ধরনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে দেশের বিভিন্ন থানায়। আইন অনুযায়ী এসব মামলা তদন্ত করে দুদক। দুদকের অনুমোদন ছাড়া এসব মামলার বিচারকাজও করতে পারেন না বিচারিক আদালত। বিশেষ আদালত ছাড়া দুদকের মামলায় বিচারের সুযোগ নেই। বিশেষ আদালতের সংখ্যাও অপ্রতুল। এ কারণে বিভিন্ন আদালতে মামলাজট লেগে আছে। এ অবস্থায় অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় দুদক। তাই কিছুদিন আগে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়, ব্যক্তিগত জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা, মানিলন্ডারিং, ঘুষ লেনদেনের কোনো অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান বা তদন্ত করবে না দুদক। তবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুদকের পুরনো আইনের আলোকে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়, সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ আমলে নেয়া হবে। এসব কারণে জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা, মানিলন্ডারিং, ঘুষ লেনদেনসহ এ ধরনের মামলার তদন্ত পুলিশের কাছে ফেরত দিতে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠায় দুদক। আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও একই ধরনের প্রস্তাব দেয়া হয়। এসব প্রস্তাবনার ভিত্তিতে সম্প্রতি মন্ত্রিসভা বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১৫ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। এখন বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন হবে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামান আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, দুর্নীতি দমন ব্যুরো আমলে সরকারি সম্পত্তি নিয়ে প্রতারণা বা জালিয়াতির ঘটনায় তদন্ত করা হতো। ২০০৪ সালে ব্যুরো বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ কারণে পরে দুদক আইনের সংশোধনীতে শুধু প্রতারণাসংক্রান্ত দন্ডবিধির ৪২০ ধারা তফসিলভুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালে সংশোধিত দুদক আইনে ৪২০ ধারা যুক্ত করা হলেও ঢালাওভাবে ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯ ও ৪৭১ একই ধরনের ধারাগুলো দুদক আইনের তফসিলভুক্ত করা হয়। তাই দুদকের পক্ষ থেকে আবারও প্রস্তাব করা হয়েছে, সরকারি সম্পত্তি নিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণা বিষয়ে তদন্ত করবে দুদক। আর বেসরকারি বা ব্যক্তিগত জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ তদন্ত করবে পুলিশ।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় দুদক। ওই সময় প্রণীত দুদক আইনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গ বা জালিয়াতিসংক্রান্ত দন্ড বিধি-৪০৮, ৪০৯ এবং ১৬৭ ধারা বলবৎ রাখা হয়। তবে আইনের অনেক ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে উল্লেখ করে ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিল ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্তি চেয়ে সংশোধনী চায় দুদক। ছয়টি বিষয়ের মধ্যে অন্যতম ছিল মানিলন্ডারিং অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত করা। অপর পাঁচটি বিষয় হলো- এক. ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তৎকালীন দুদক সচিব মোখলেছুর রহমানের অনুমোদন করা সার্বিক কার্যক্রমের বৈধতা প্রদান। দুই. গ্রেফতারের বিশেষ ক্ষমতা। অর্থাৎ অনুসন্ধান পর্যায়ে অথবা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতারের ক্ষমতা। তিন. জামিন অযোগ্যতা ও অপরাধের আমল যোগ্যতা। চার. কমিশনের অনুমোদন অপরিহার্যতা। পাঁচ. বিধির অবর্তমানে আদেশ দ্বারা কার্যক্রম পরিচালনা। এতেও দুদকের আইনি সীমাবদ্ধতা কাটেনি। আর্থিক ব্যবস্থাপনা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা দুদকের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে রাখতে একই বছর ২১ নভেম্বর আবারও আইন সংশোধন করে সংস্থাটিকে স্বাধীন, নিরপেক্ষর পাশাপাশি স্বশাসিত করা হয়। এরপরও দুদকের আইনে দুর্বলতা থেকে যায়। দুদকের মামলায় আদালতের বিচার কার্যক্রমে দুদককে না ডেকে শুধু রাষ্ট্রকে পক্ষ করা হয়। এক্ষেত্রে বিচারকাজে আইনানুগভাবে পিছিয়ে পড়ে দুদক। ফলে পরোক্ষভাবে এর সুফল পায় আসামিরা। এতে দুদককে পক্ষভুক্ত করার দাবি জানিয়ে ২০০৮ সালে আবার তৃতীয় দফা আইন সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠায় কমিশন। সে সময় বিষয়টির সুরাহা হয়নি; বরং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক আমলের সংশোধনীর কোনোটিই অনুমোদন দেয়নি। তবে দুদককে শক্তিশালী করার আশ্বাস দিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এ সময় প্রতারণাসংক্রান্ত ৪২০ ধারা দুদক আইনে তফসিলভুক্ত করার সুপারিশ জানায় দুদক। অবশেষে দুদকের জন্য কিছু ভালো ও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় যুক্ত করে ২০১৩ সালের নভেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধনী) আইন-২০১৩ পাস করে সরকার। এ আইনে সরকারি-কর্মকর্তা কমচারীদের গ্রেফতারের আগে সরকারের পূর্বানুমতির বিধানসহ দুদকের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ধারা যুক্ত করা হয়। অবশ্য পরে এসব বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করা হলে সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর কার্যকারিতা স্থগিত করেন আদালত।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় দুদক। ওই সময় প্রণীত দুদক আইনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গ বা জালিয়াতিসংক্রান্ত দন্ড বিধি-৪০৮, ৪০৯ এবং ১৬৭ ধারা বলবৎ রাখা হয়। তবে আইনের অনেক ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে উল্লেখ করে ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিল ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্তি চেয়ে সংশোধনী চায় দুদক। ছয়টি বিষয়ের মধ্যে অন্যতম ছিল মানিলন্ডারিং অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত করা। অপর পাঁচটি বিষয় হলো- এক. ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তৎকালীন দুদক সচিব মোখলেছুর রহমানের অনুমোদন করা সার্বিক কার্যক্রমের বৈধতা প্রদান। দুই. গ্রেফতারের বিশেষ ক্ষমতা। অর্থাৎ অনুসন্ধান পর্যায়ে অথবা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতারের ক্ষমতা। তিন. জামিন অযোগ্যতা ও অপরাধের আমল যোগ্যতা। চার. কমিশনের অনুমোদন অপরিহার্যতা। পাঁচ. বিধির অবর্তমানে আদেশ দ্বারা কার্যক্রম পরিচালনা। এতেও দুদকের আইনি সীমাবদ্ধতা কাটেনি। আর্থিক ব্যবস্থাপনা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা দুদকের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে রাখতে একই বছর ২১ নভেম্বর আবারও আইন সংশোধন করে সংস্থাটিকে স্বাধীন, নিরপেক্ষর পাশাপাশি স্বশাসিত করা হয়। এরপরও দুদকের আইনে দুর্বলতা থেকে যায়। দুদকের মামলায় আদালতের বিচার কার্যক্রমে দুদককে না ডেকে শুধু রাষ্ট্রকে পক্ষ করা হয়। এক্ষেত্রে বিচারকাজে আইনানুগভাবে পিছিয়ে পড়ে দুদক। ফলে পরোক্ষভাবে এর সুফল পায় আসামিরা। এতে দুদককে পক্ষভুক্ত করার দাবি জানিয়ে ২০০৮ সালে আবার তৃতীয় দফা আইন সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠায় কমিশন। সে সময় বিষয়টির সুরাহা হয়নি; বরং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক আমলের সংশোধনীর কোনোটিই অনুমোদন দেয়নি। তবে দুদককে শক্তিশালী করার আশ্বাস দিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এ সময় প্রতারণাসংক্রান্ত ৪২০ ধারা দুদক আইনে তফসিলভুক্ত করার সুপারিশ জানায় দুদক। অবশেষে দুদকের জন্য কিছু ভালো ও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় যুক্ত করে ২০১৩ সালের নভেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধনী) আইন-২০১৩ পাস করে সরকার। এ আইনে সরকারি-কর্মকর্তা কমচারীদের গ্রেফতারের আগে সরকারের পূর্বানুমতির বিধানসহ দুদকের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ধারা যুক্ত করা হয়। অবশ্য পরে এসব বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করা হলে সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর কার্যকারিতা স্থগিত করেন আদালত।
No comments