তামিলদের সমর্থনে হচ্ছে বিক্রমাসিংহের সরকার
কলম্বোতে নিজ বাসভবনের সামনে হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে ও তাঁর স্ত্রী মাইথ্রি বিক্রমাসিংহে। এএফপি |
সংখ্যালঘু তামিলদের সমর্থন নিয়ে গতকাল বুধবার নতুন সরকার গঠনের কাজ শুরু করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে দেশটির সব দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্কারবাদী এই নেতা। খবর এএফপির। গত সোমবার অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহের সংস্কারমূলক কর্মসূচির পক্ষে বড় ধরনের সমর্থন মিলেছে। তাঁর রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) মোট ২২৫টি আসনের মধ্যে ১০৬টি পেয়েছে। সংখ্যাটা আগের নির্বাচনের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। এর মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। রাজাপক্ষের দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ) পেয়েছে ৯৫টি আসন। রাজাপক্ষে নিজেও একটি আসনে জয়ী হয়েছেন। রাজাপক্ষের আমলেই শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করায় পশ্চিমাদের সমর্থন হারান তিনি। তবে ওই পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে সক্ষম হওয়ায় রাজাপক্ষে সংখ্যাগুরু সিংহলি সম্প্রদায়ের একটা অংশের কাছে আজও নায়ক। মূলত এই বিভাজনের রাজনীতি করায় ক্রমেই জনসমর্থন হারিয়েছেন তিনি।
বিভাজনের রাজনীতির অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে। রাজধানী কলম্বোয় সরকারি বাসভবনে গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের কথা ভাবুন, জনগণের কথা ভাবুন। আমরা এ দেশে ঐক্য অর্জন করতে সক্ষম। কেউই বিভাজনের রাজনীতিতে ফিরবেন না। আমরা তা হতে দেব না।’ বিক্রমাসিংহের দল ইউএনপি মোট ১০৬টি আসন পেলেও ২২৫ আসনবিশিষ্ট পার্লামেন্টে সরকার গঠনে দরকার অন্তত ১১৩টি আসন। তবে সংখ্যালঘু তামিলদের সমর্থন পাওয়ায় তাঁর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না। ১৬টি আসন পাওয়া তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (টিএনএ) এরই মধ্যে ইউএনপিকে ‘ইস্যুভিত্তিক’ সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। টিএনএর এমপি ধর্মলিংগাম সিথাদথান গতকাল বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলের আসনে বসলেও সরকারের প্রতি সমর্থন দেব। এটা হবে ইস্যুভিত্তিক সমর্থন। কিন্তু আমরা মনে করি, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করতে পারব।’ মূলত এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তামিলরা একটা অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে। কারণ, তাদের দলের সমর্থন ছাড়া সরকার গঠনের সুযোগ নেই। বিক্রমাসিংহের ইউএনপি বলেছে, তারা রাজাপক্ষের নির্দেশে ২০০৯ সালে কমবেশি ৪০ হাজার বেসামরিক তামিলকে হত্যার অভিযোগ তদন্ত করবে। ওই বছর গৃহযুদ্ধে তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজাপক্ষে অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করার আন্তর্জাতিক আহ্বানগুলো অবজ্ঞা করে আসছিলেন। আজন্ম সংস্কারবাদী: সবে গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী হন ৬৬ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহে। এই সময়েই পাশ্চাত্যের পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ ভারতের কাছ থেকেও অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়েছেন মুক্তবাজার অর্থনীতির এই সমর্থক।
গত ৮ জানুয়ারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার দীর্ঘদিনের নেতা মাহিন্দা রাজাপক্ষে তাঁরই সাবেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাইথ্রিপালা সিরিসেনার হাতে অপ্রত্যাশিতভাবে ধরাশায়ী হওয়ার পর ভাগ্য খুলে যায় বিক্রমাসিংহের। সিরিসেনা রাজাপক্ষের সঙ্গ ত্যাগ করে বিক্রমাসিংহের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন করে সাফল্য পান। দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী করেন বিক্রমাসিংহেকে। নতুন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে আরও বেশি ক্ষমতাবান হচ্ছেন বিক্রমাসিংহে। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। জানুয়ারি মাসে দেওয়া সংস্কার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সিরিসেনা প্রেসিডেন্টের অনেকগুলো নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফিরিয়ে দেবেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে রাজাপক্ষে এসব ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন। বিক্রমাসিংহে প্রায় সাংবাদিকই হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৩ সালে তাঁর পরিবারের মালিকানাধীন পত্রিকাটি সরকার নিয়ে নেওয়ায় সাংবাদিকতার পেশা থেকে বঞ্চিত হন তিনি। এরপর তিনি মনোযোগ দেন রাজনীতিতে। এর আগে ১৯৯৩ সালে ও ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিক্রমাসিংহে। এ ছাড়া ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিক্রমাসিংহের জেতার সম্ভাবনা ছিল। তবে নির্বাচনের মাত্র তিন দিন আগে আত্মঘাতী হামলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা আহত হন। এরপর ভোটারদের সহানুভূতি পেয়ে সামান্য ব্যবধানে জয়ী হন চন্দ্রিকা।
No comments