চট্টগ্রামের তিন রুটে সোনা, ইয়াবা আর কোকেনের কারবার
বিমানবন্দর
দিয়ে ধরা পড়ছে কোটি টাকার সোনা। টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন মিয়ানমার
থেকে আসছে ইয়াবার বড় চালান। সর্বশেষ এই শঙ্কা আরও বাড়লো চট্টগ্রাম বন্দর
দিয়ে কৌশলে ভোজ্যতেলের আড়ালে ৩,০০০ কোটি টাকার কোকেন ধরা পড়ার ঘটনায়। নৌ,
বিমান আর স্থলপথ। তিন রুট দিয়েই দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে ঢুকছে
অবৈধ জিনিস। আন্ডারগ্রাউন্ডে এখন টার্গেটের এক নাম সাগরপাড়ের এই শহর।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে সুদূর আমেরিকা। সেখান থেকে অপরাধীরা কালোবাজার নিয়ন্ত্রণ
করতে বেছে নিচ্ছে বাংলাদেশের এই অঞ্চলকে।
একের পর এক চালান আটকের ঘটনায় উদ্বিগ্ন তাই পুলিশ প্রশাসনও। কোনভাবেই দমানো যাচ্ছে না কালোবাজারে অবৈধ সোনা আর মাদক পাচার। এসব ঘটনায় পুলিশ সদস্যদেরও জড়িত থাকার নাম বেরিয়ে আসছে একের পর এক।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও কোস্টগার্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের জন্য এখন অন্যতম প্রধান রুট কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের ওপারে ইয়াবা তৈরির জন্য গড়ে উঠেছে অন্তত ৪০টি কারখানা। গত দুই বছরে কক্সবাজারের টেকনাফ অঞ্চলে ছোট-বড় ইয়াবার চালান ধরা পড়েছে ৮০টিরও বেশি।
এরমধ্যে ন্যূনতম ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকার চালান রয়েছে ৩৪টি। সাগরপথে অপরাধীরা ইয়াবা পাচারের রুট পরিবর্তন করে অনেক সময় চট্টগ্রামের আনোয়ারা সৈকত ও সদরঘাটকে বেছে নিয়েছে। গত এক বছরে এসব জায়গা থেকে ধরা পড়েছে সর্বোচ্চ ২৪ কোটি টাকার ইয়াবার চালানও। এসব চালানের কিছু ধরা পড়লেও বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
গত ৬ মাসে টেকনাফে কোস্টগার্ড উদ্ধার করেছে তিন লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা। সর্বশেষ চলতি মাসের গত ২১শে জুন কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে ধরা পড়ে পুলিশ সদস্য স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্য এএসআই মাহফুজুর রহমান। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, এই কাজে তার সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রামের আরও ১০ পুলিশ সদস্য জড়িত। উদ্ধার করা ইয়াবার মূল্য ১০ কোটি টাকা।
তবে সবচেয়ে বড় চালানটি ধরা পড়ে সদরঘাটের কাছাকাছি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ৮৩ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় চালান। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ১০/১২টি সিন্ডিকেট।
নৌবাহিনীর এন্টি স্মাগলিং সেল-এর প্রধান কমান্ডার এম আতিকুর রহমান বলেন, আমরা বিস্মিত। হতভম্ব। পাচারকারী কিভাবে সাহস করছে এত ইয়াবা নিয়ে আসার। বর্তমানে টেকনাফে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়াকড়ি করা হয়েছে। আর সেই কারণে রুট বদল করে চট্টগ্রাম দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা।
তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সোচ্চার আছে নৌবাহিনী। অপারেশনের সময় পাচারকারীরা কখনও বোট রেখে পালিয়ে যায়।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সোনা চোরাচালানের এখন নিরাপদ রুট। গত দুই বছরে এখানে ধরা পড়ছে আড়াইশ কোটি টাকার সোনা। ধরা পড়ছে একের পর এক স্বর্ণের চালানও। সর্বশেষ ৪০টিরও বেশি বড় স্বর্ণের চালান আটক হওয়ার পর পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
ধারণা করা হচ্ছে, চোরাকারবারিরা প্রতিদিনই কৌশলে দেশের বাইরে থেকে কোটি টাকার সোনা বয়ে নিয়ে আসছেন। যা সহজে চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের।
সর্বশেষ গত ৯ই এপ্রিল চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকার একটি গুদাম ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ সোনা। যার দাম ২০ কোটি টাকা। এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে দুই ব্যক্তিকেও। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশকে। এর আগে আমিরাত থেকে আসা একটি উড়োজাহাজে পাওয়া গেছে ৪৮ কেজি সোনা। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৭ কোটি টাকার বেশি। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় দুবাইয়ের ফ্লাইটের সিটের নিচের কুশনের ভেতরে সোনার বারগুলো লুকানো ছিল।
গত ১৮ই নভেম্বর দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট (বিজি-০৪৮)যোগে আসা এক যাত্রীর লাগেজ তল্লাশি করে ফটিকছড়ির খায়রুল বশর নামের এক যাত্রীর ব্যাগের ভেতর থেকে ১২৮টি বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন ১৫ কেজি বা এক হাজার ২৮০ তোলা। দাম ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানান, চালান ধরার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় নিরাপদ রুট হিসেবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে বেছে নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। আর্চওয়ে-মেটাল ডিটেক্টর না থাকা, স্ক্যানার মেশিন নষ্ট হওয়া, আন্তর্জাতিক রুটের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের একই ফ্লাইটে পরিবহনসহ নানাবিধ সুযোগের কারণে সোনার চোরাচালান বেড়েছে বলে ধারণা সকলের।
বিমানবন্দরে সোনা পাচারের ঘটনায় বেশির ভাগ মামলা দায়ের হয়েছে বন্দর নগরীর পতেঙ্গা থানায়। এই থানাতেই গত ৩ বছরে ৬০টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু মামলাগুলোতে উঠে আসেনি কোন পাচারকারী কিংবা সোনা বহনকারীর নাম।
অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুলিশের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা চার্জশিট থেকে বহনকারী কিংবা আমদানিকারকদের নাম বাদ দিয়ে দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে তারা অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা যায়নি বলে মন্তব্য করে তা দাখিল করছেন।
পুলিশের এমন গাফিলতির কারণে চোরাকারবারিরা আরও দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি ঘটনায় সোনার বার উদ্ধারের পর বহনকারী লোকদের ছেড়ে দেয়ার একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে।
শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, ভারতের চোরাই বাজারের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বাংলাদেশের এসব সোনার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিরা। গত বেশ কয়েক বছর ধরে দেশটির সরকার সোনা আমদানির ওপর শুল্ক চার শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করেছে।
সূর্যমুখী তেলের নামে ৩,০০০ কোটি টাকার কোকেন ধরা পড়ার ঘটনায় বিশ্ব মিডিয়ায় আবারও আলোচনায় আসে চট্টগ্রাম। দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র মাদক পাচারের জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও। এই ঘটনার সঙ্গে বিদেশের একটি সিন্ডিকেটও বড়ভাবে জড়িত বলে মনে করছেন তারা।
সানফ্লাওয়ার তেল আমদানির ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা ১০৭টি কনটেইনারের একটিতে গত ২৭শে জুন তরল কোকেনের অস্তিত্ব মিলে। ঢাকার বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর পর তারা কোকেন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত ৮ই জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও নৌবাহিনীর ল্যাবের প্রাথমিক পরীক্ষায় কোন তরল কোকেন না থাকার কথা জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হোসাইন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে দেশের বাইরের একটি চক্র জড়িত এটা নিশ্চিত। তারা রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চট্টগ্রাম বন্দরকে বেছে নিয়েছে। আমাদের গঠিত কমিটি ঘটনার সূত্র অনুসন্ধান করবে।
পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, চট্টগ্রামকে যাতে কেউ অপরাধীদের অভয়ারণ্য বানাতে না পারে সেদিকে নজর রয়েছে আমাদের। বিমানবন্দরে সোনা পাচারের ঘটনায় সতর্ক আছে পুলিশ প্রশাসন। একইসঙ্গে ইয়াবার রুট হিসেবে টেকনাফকে ব্যবহার করার বিষয়টি উদ্বেগজনক। তবে তা কমে আসছে।
তিনি আরও বলেন, কোকেন ধরা পড়ার ঘটনায় কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। ধারণা করছি, বিদেশের মাফিয়া চক্র এখানে জাল ফেলেছে। তবে আমাদের দেশে কোকেন এখনও অতোটা সয়লাব হয়নি। তাই দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।
একের পর এক চালান আটকের ঘটনায় উদ্বিগ্ন তাই পুলিশ প্রশাসনও। কোনভাবেই দমানো যাচ্ছে না কালোবাজারে অবৈধ সোনা আর মাদক পাচার। এসব ঘটনায় পুলিশ সদস্যদেরও জড়িত থাকার নাম বেরিয়ে আসছে একের পর এক।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও কোস্টগার্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের জন্য এখন অন্যতম প্রধান রুট কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের ওপারে ইয়াবা তৈরির জন্য গড়ে উঠেছে অন্তত ৪০টি কারখানা। গত দুই বছরে কক্সবাজারের টেকনাফ অঞ্চলে ছোট-বড় ইয়াবার চালান ধরা পড়েছে ৮০টিরও বেশি।
এরমধ্যে ন্যূনতম ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকার চালান রয়েছে ৩৪টি। সাগরপথে অপরাধীরা ইয়াবা পাচারের রুট পরিবর্তন করে অনেক সময় চট্টগ্রামের আনোয়ারা সৈকত ও সদরঘাটকে বেছে নিয়েছে। গত এক বছরে এসব জায়গা থেকে ধরা পড়েছে সর্বোচ্চ ২৪ কোটি টাকার ইয়াবার চালানও। এসব চালানের কিছু ধরা পড়লেও বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
গত ৬ মাসে টেকনাফে কোস্টগার্ড উদ্ধার করেছে তিন লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা। সর্বশেষ চলতি মাসের গত ২১শে জুন কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে ধরা পড়ে পুলিশ সদস্য স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্য এএসআই মাহফুজুর রহমান। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, এই কাজে তার সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রামের আরও ১০ পুলিশ সদস্য জড়িত। উদ্ধার করা ইয়াবার মূল্য ১০ কোটি টাকা।
তবে সবচেয়ে বড় চালানটি ধরা পড়ে সদরঘাটের কাছাকাছি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ৮৩ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় চালান। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ১০/১২টি সিন্ডিকেট।
নৌবাহিনীর এন্টি স্মাগলিং সেল-এর প্রধান কমান্ডার এম আতিকুর রহমান বলেন, আমরা বিস্মিত। হতভম্ব। পাচারকারী কিভাবে সাহস করছে এত ইয়াবা নিয়ে আসার। বর্তমানে টেকনাফে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়াকড়ি করা হয়েছে। আর সেই কারণে রুট বদল করে চট্টগ্রাম দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা।
তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সোচ্চার আছে নৌবাহিনী। অপারেশনের সময় পাচারকারীরা কখনও বোট রেখে পালিয়ে যায়।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সোনা চোরাচালানের এখন নিরাপদ রুট। গত দুই বছরে এখানে ধরা পড়ছে আড়াইশ কোটি টাকার সোনা। ধরা পড়ছে একের পর এক স্বর্ণের চালানও। সর্বশেষ ৪০টিরও বেশি বড় স্বর্ণের চালান আটক হওয়ার পর পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
ধারণা করা হচ্ছে, চোরাকারবারিরা প্রতিদিনই কৌশলে দেশের বাইরে থেকে কোটি টাকার সোনা বয়ে নিয়ে আসছেন। যা সহজে চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের।
সর্বশেষ গত ৯ই এপ্রিল চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকার একটি গুদাম ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ সোনা। যার দাম ২০ কোটি টাকা। এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে দুই ব্যক্তিকেও। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশকে। এর আগে আমিরাত থেকে আসা একটি উড়োজাহাজে পাওয়া গেছে ৪৮ কেজি সোনা। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৭ কোটি টাকার বেশি। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় দুবাইয়ের ফ্লাইটের সিটের নিচের কুশনের ভেতরে সোনার বারগুলো লুকানো ছিল।
গত ১৮ই নভেম্বর দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট (বিজি-০৪৮)যোগে আসা এক যাত্রীর লাগেজ তল্লাশি করে ফটিকছড়ির খায়রুল বশর নামের এক যাত্রীর ব্যাগের ভেতর থেকে ১২৮টি বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন ১৫ কেজি বা এক হাজার ২৮০ তোলা। দাম ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানান, চালান ধরার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় নিরাপদ রুট হিসেবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে বেছে নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। আর্চওয়ে-মেটাল ডিটেক্টর না থাকা, স্ক্যানার মেশিন নষ্ট হওয়া, আন্তর্জাতিক রুটের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের একই ফ্লাইটে পরিবহনসহ নানাবিধ সুযোগের কারণে সোনার চোরাচালান বেড়েছে বলে ধারণা সকলের।
বিমানবন্দরে সোনা পাচারের ঘটনায় বেশির ভাগ মামলা দায়ের হয়েছে বন্দর নগরীর পতেঙ্গা থানায়। এই থানাতেই গত ৩ বছরে ৬০টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু মামলাগুলোতে উঠে আসেনি কোন পাচারকারী কিংবা সোনা বহনকারীর নাম।
অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুলিশের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা চার্জশিট থেকে বহনকারী কিংবা আমদানিকারকদের নাম বাদ দিয়ে দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে তারা অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা যায়নি বলে মন্তব্য করে তা দাখিল করছেন।
পুলিশের এমন গাফিলতির কারণে চোরাকারবারিরা আরও দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি ঘটনায় সোনার বার উদ্ধারের পর বহনকারী লোকদের ছেড়ে দেয়ার একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে।
শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, ভারতের চোরাই বাজারের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বাংলাদেশের এসব সোনার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিরা। গত বেশ কয়েক বছর ধরে দেশটির সরকার সোনা আমদানির ওপর শুল্ক চার শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করেছে।
সূর্যমুখী তেলের নামে ৩,০০০ কোটি টাকার কোকেন ধরা পড়ার ঘটনায় বিশ্ব মিডিয়ায় আবারও আলোচনায় আসে চট্টগ্রাম। দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র মাদক পাচারের জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও। এই ঘটনার সঙ্গে বিদেশের একটি সিন্ডিকেটও বড়ভাবে জড়িত বলে মনে করছেন তারা।
সানফ্লাওয়ার তেল আমদানির ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা ১০৭টি কনটেইনারের একটিতে গত ২৭শে জুন তরল কোকেনের অস্তিত্ব মিলে। ঢাকার বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর পর তারা কোকেন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত ৮ই জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও নৌবাহিনীর ল্যাবের প্রাথমিক পরীক্ষায় কোন তরল কোকেন না থাকার কথা জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হোসাইন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে দেশের বাইরের একটি চক্র জড়িত এটা নিশ্চিত। তারা রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চট্টগ্রাম বন্দরকে বেছে নিয়েছে। আমাদের গঠিত কমিটি ঘটনার সূত্র অনুসন্ধান করবে।
পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, চট্টগ্রামকে যাতে কেউ অপরাধীদের অভয়ারণ্য বানাতে না পারে সেদিকে নজর রয়েছে আমাদের। বিমানবন্দরে সোনা পাচারের ঘটনায় সতর্ক আছে পুলিশ প্রশাসন। একইসঙ্গে ইয়াবার রুট হিসেবে টেকনাফকে ব্যবহার করার বিষয়টি উদ্বেগজনক। তবে তা কমে আসছে।
তিনি আরও বলেন, কোকেন ধরা পড়ার ঘটনায় কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। ধারণা করছি, বিদেশের মাফিয়া চক্র এখানে জাল ফেলেছে। তবে আমাদের দেশে কোকেন এখনও অতোটা সয়লাব হয়নি। তাই দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।
No comments