গ্রিসের গণতন্ত্রে ইউরোপের হামলা by জোসেফ ই স্টিগলিৎজ
ইউরোপের
ভেতরে যে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ চলছে এবং তা থেকে যে তিক্ততা
সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বাইরের মানুষের কাছে মনে হতে পারে, এটা গ্রিস ও তার
ঋণদাতাদের মধ্যে চলমান খেলার শেষ পর্যায়। বস্তুত, ইউরোপীয় নেতারা শেষ
পর্যন্ত চলমান ঋণ-সংকটের আসল রূপ উন্মুক্ত করা শুরু করেছেন। আর এর উত্তরটা
সুখকর নয়: এটা যত না টাকা বা অর্থনীতির ব্যাপার, তার চেয়ে বেশি ক্ষমতা ও
গণতন্ত্রের ব্যাপার।
অবশ্যই, ট্রয়কা (ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল—আইএমএফ) পাঁচ বছর আগে গ্রিসের ওপর যে কর্মসূচি চাপিয়ে দিয়েছিল, তার অর্থনৈতিক প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর। এর ফলে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন ২৫ শতাংশ কমে যায়। আর কোনো মন্দা এমন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ছিল না বা তার ফলাফল এত বিপর্যয়কর ছিল না। উল্লেখ্য, গ্রিসে বর্তমানে তরুণদের বেকারত্বের হার ৬০ শতাংশ।
বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, ট্রয়কা এর কোনো কিছুরই দায়িত্ব নেয়নি। আবার তার ভবিষ্যদ্বাণী ও মডেল যে এতটা খারাপ ছিল, তাও তারা স্বীকার করেনি। এর চেয়েও বাজে ব্যাপার হচ্ছে, ইউরোপীয় নেতারা এ থেকে কিছু শেখেননি। ট্রয়কা এখনো দাবি করে যাচ্ছে, গ্রিসকে ২০১৮ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ উদ্বৃত্ত অর্জন করতে হবে।
সারা বিশ্বের অর্থনীতিবিদেরাই এই লক্ষ্যকে শাস্তির শামিল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কারণ, এর পেছনে ছুটলে দেশটির মন্দা আরও গভীর হবে। গ্রিস ঋণ পুনর্গঠনে যদি কল্পনাতীত সফলতা দেখায়, তাহলেও দেশটি মন্দার কবলেই থাকবে। সেখানকার ভোটাররা এ সপ্তাহের শেষের দিকে অনুষ্ঠেয় গণভোটে ট্রয়কার লক্ষ্যে সায় দিলে ব্যাপারটা এমনই হবে।
বিপুল অঙ্কের প্রাথমিক ঘাটতিকে উদ্বৃত্তে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে গ্রিস গত পাঁচ বছরে যে সফলতা দেখিয়েছে, খুব কম দেশই তা করতে পেরেছে। আর গ্রিস সরকারের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের কারণে মানুষকে অনেক ভুগতে হলেও ঋণদাতাদের দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে তারা বহুদূর অগ্রসর হয়েছিল।
আমাদের পরিষ্কার থাকতে হবে: গ্রিসকে যে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার প্রায় কিছুই গ্রিসের হাতে পৌঁছায়নি। বেসরকারি খাতের ঋণদাতাদের ঋণ পরিশোধে এটা ব্যয় হয়েছে, এর মধ্যে আছে জার্মান ও ফরাসি ব্যাংকগুলো। গ্রিস সামান্য কিছু পেলেও নিজেদের ব্যাংক-ব্যবস্থাকে বাঁচাতে তাকে অনেক অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। যে টাকা দাবি করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও অন্যান্য ‘আনুষ্ঠানিক’ ঋণদাতাদের তা দরকার নেই। ব্যবসার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যে টাকা পাওয়া যাবে, তা খুব সম্ভবত আবার গ্রিসকেই ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। কিন্তু আবারও বলতে হয়, এটা টাকার ব্যাপার নয়। বিষয়টা হচ্ছে, ‘সময়সীমা’ আরোপ করে গ্রিসকে নতি স্বীকারে ও গ্রহণযোগ্য নয়—এমন বিষয় গ্রহণ করতে বাধ্য করা। শুধু কৃচ্ছ্রসাধন নয়, আরও কিছু পশ্চাদ্গামী ও শাস্তিমূলক নীতি গ্রহণেও তাকে বাধ্য করা হয়েছে।
কিন্তু ইউরোপ কেন এটা করবে? ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা গণভোটের বিরোধিতা করছেন কেন? আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে গ্রিসের ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময় ছিল ৩০ জুন, সেটাই বা আইএমএফ পেছানোর বিরুদ্ধে ছিল কেন? ইউরোপ কি তাহলে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক নয়? গ্রিসের জনগণ দেশটিতে চলমান কৃচ্ছ্রসাধন শেষ করতে চায়—এমন একটি দলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল এ বছরের জানুয়ারিতে। সরকার যদি শুধু তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চাইত, তাহলে তারা ইতিমধ্যে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করত। কিন্তু আর্থিক পুনরুদ্ধার (বেইলআউট) কর্মসূচি বাস্তবায়নে ঋণদাতা দেশ ও সংস্থাগুলো গ্রিসকে যে প্রস্তাব দিয়েছে, গ্রিসের সরকার সে-বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার জনগণের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে। এটি তাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু এ বিষয়ে জনগণের রায় নেওয়ার ব্যাপারটা ইউরোজোনের রাজনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আসলে এই ইউরোজোন কখনোই গণতান্ত্রিক ব্যাপার ছিল না। এর অধিকাংশ সদস্যদেশই নিজেদের মুদ্রার সার্বভৌমত্ব ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) হাতে তুলে দেওয়ার আগে জনগণের রায় নেয়নি। সুইডেন তার জনগণের রায় চাইলে সুইডিশরা ‘না’ বলেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল, তাদের দেশের মুদ্রানীতি যদি এমন একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে তুলে দেওয়া হয়, যারা একনিষ্ঠভাবে শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ে কাজ করে, তাহলে তাদের দেশে বেকারত্ব বাড়বে (আর সেটা হলে আর্থিক স্থিতিশীলতায় যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা হবে না)। আর এতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, ইউরোজোনের অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক মডেল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ক্ষমতা সম্পর্কের ভিত্তিতে, যার কারণে শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
আর এটা তো সত্য, ইউরোজোন এই সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক করার ১৬ বছর পর আমরা গণতন্ত্রহীনতা দেখছি। অনেক ইউরোপীয় নেতাই গ্রিসের বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসের পতন দেখতে চান। সর্বোপরি, যে রাজনীতি সারা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই অসমতা বাড়িয়েছে, তার বিরোধিতা করে গ্রিসে এমন সরকার থাকলে তা এই রাজনীতির জন্য অস্বস্তিকরই বটে। গ্রিসের এই সরকার আবার সম্পদের অপরিসীম ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরতে চায়। মনে হয়, এই অগণতান্ত্রিক শক্তি এটা বিশ্বাস করে যে গ্রিসের বামপন্থী সরকারকে জনগণের ম্যান্ডেটবিরোধী চুক্তি করতে বাধ্য করে তারা তাকে গদি থেকে নামাতে পারবে।
গ্রিসের নাগরিকরা ৫ জুলাই কীভাবে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে তাঁদের উপদেশ দেওয়া কঠিন। কারণ, ট্রয়কার শর্ত মেনে নেওয়া বা না-নেওয়া কোনোটিই খুব সহজ ব্যাপার হবে না। তারা যা-ই করুক, উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি থাকবেই। তারা ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে দেশটি অনিঃশেষ মন্দার কবলে পড়বে। সেটা হলে দেশটি একদম নিঃস্ব হয়ে যাবে, যারা নিজেদের সব সম্পদ বিক্রি করে দিতে ও যাদের মেধাবী তরুণেরা দেশান্তরি হতে বাধ্য হবে, তাদের ঋণ তখন হয়তো মওকুফ হয়ে যাবে। হয়তো মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়ে গ্রিস শেষমেশ বিশ্বব্যাংকের সহায়তা পাবে। আগামী দশকে হয়তো এ রকম হবে বা তারও পরের দশকে সেটা হতে পারে।
অন্যদিকে, গ্রিকরা ‘না’ ভোট দিলে দেশটি অন্তত তার শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের নিয়তি নিজেই নির্ধারণ করার সুযোগ পাবে। সেটা হলে গ্রিস নিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ পাবে। সেটা হয়তো অতীতের মতো অত সমৃদ্ধিশালী হবে না, কিন্তু বর্তমানে যে অন্যায্য অত্যাচার তাদের সইতে হচ্ছে, তা থেকে তারা অন্তত রেহাই পাবে।
আমি জানি, এ পরিস্থিতিতে আমি কিসে ভোট দিতাম।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জোসেফ ই স্টিগলিৎজ: নোবেল বিজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ।
অবশ্যই, ট্রয়কা (ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল—আইএমএফ) পাঁচ বছর আগে গ্রিসের ওপর যে কর্মসূচি চাপিয়ে দিয়েছিল, তার অর্থনৈতিক প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর। এর ফলে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন ২৫ শতাংশ কমে যায়। আর কোনো মন্দা এমন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ছিল না বা তার ফলাফল এত বিপর্যয়কর ছিল না। উল্লেখ্য, গ্রিসে বর্তমানে তরুণদের বেকারত্বের হার ৬০ শতাংশ।
বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, ট্রয়কা এর কোনো কিছুরই দায়িত্ব নেয়নি। আবার তার ভবিষ্যদ্বাণী ও মডেল যে এতটা খারাপ ছিল, তাও তারা স্বীকার করেনি। এর চেয়েও বাজে ব্যাপার হচ্ছে, ইউরোপীয় নেতারা এ থেকে কিছু শেখেননি। ট্রয়কা এখনো দাবি করে যাচ্ছে, গ্রিসকে ২০১৮ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ উদ্বৃত্ত অর্জন করতে হবে।
সারা বিশ্বের অর্থনীতিবিদেরাই এই লক্ষ্যকে শাস্তির শামিল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কারণ, এর পেছনে ছুটলে দেশটির মন্দা আরও গভীর হবে। গ্রিস ঋণ পুনর্গঠনে যদি কল্পনাতীত সফলতা দেখায়, তাহলেও দেশটি মন্দার কবলেই থাকবে। সেখানকার ভোটাররা এ সপ্তাহের শেষের দিকে অনুষ্ঠেয় গণভোটে ট্রয়কার লক্ষ্যে সায় দিলে ব্যাপারটা এমনই হবে।
বিপুল অঙ্কের প্রাথমিক ঘাটতিকে উদ্বৃত্তে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে গ্রিস গত পাঁচ বছরে যে সফলতা দেখিয়েছে, খুব কম দেশই তা করতে পেরেছে। আর গ্রিস সরকারের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের কারণে মানুষকে অনেক ভুগতে হলেও ঋণদাতাদের দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে তারা বহুদূর অগ্রসর হয়েছিল।
আমাদের পরিষ্কার থাকতে হবে: গ্রিসকে যে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার প্রায় কিছুই গ্রিসের হাতে পৌঁছায়নি। বেসরকারি খাতের ঋণদাতাদের ঋণ পরিশোধে এটা ব্যয় হয়েছে, এর মধ্যে আছে জার্মান ও ফরাসি ব্যাংকগুলো। গ্রিস সামান্য কিছু পেলেও নিজেদের ব্যাংক-ব্যবস্থাকে বাঁচাতে তাকে অনেক অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। যে টাকা দাবি করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও অন্যান্য ‘আনুষ্ঠানিক’ ঋণদাতাদের তা দরকার নেই। ব্যবসার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যে টাকা পাওয়া যাবে, তা খুব সম্ভবত আবার গ্রিসকেই ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। কিন্তু আবারও বলতে হয়, এটা টাকার ব্যাপার নয়। বিষয়টা হচ্ছে, ‘সময়সীমা’ আরোপ করে গ্রিসকে নতি স্বীকারে ও গ্রহণযোগ্য নয়—এমন বিষয় গ্রহণ করতে বাধ্য করা। শুধু কৃচ্ছ্রসাধন নয়, আরও কিছু পশ্চাদ্গামী ও শাস্তিমূলক নীতি গ্রহণেও তাকে বাধ্য করা হয়েছে।
কিন্তু ইউরোপ কেন এটা করবে? ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা গণভোটের বিরোধিতা করছেন কেন? আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে গ্রিসের ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময় ছিল ৩০ জুন, সেটাই বা আইএমএফ পেছানোর বিরুদ্ধে ছিল কেন? ইউরোপ কি তাহলে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক নয়? গ্রিসের জনগণ দেশটিতে চলমান কৃচ্ছ্রসাধন শেষ করতে চায়—এমন একটি দলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল এ বছরের জানুয়ারিতে। সরকার যদি শুধু তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চাইত, তাহলে তারা ইতিমধ্যে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করত। কিন্তু আর্থিক পুনরুদ্ধার (বেইলআউট) কর্মসূচি বাস্তবায়নে ঋণদাতা দেশ ও সংস্থাগুলো গ্রিসকে যে প্রস্তাব দিয়েছে, গ্রিসের সরকার সে-বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার জনগণের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে। এটি তাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু এ বিষয়ে জনগণের রায় নেওয়ার ব্যাপারটা ইউরোজোনের রাজনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আসলে এই ইউরোজোন কখনোই গণতান্ত্রিক ব্যাপার ছিল না। এর অধিকাংশ সদস্যদেশই নিজেদের মুদ্রার সার্বভৌমত্ব ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) হাতে তুলে দেওয়ার আগে জনগণের রায় নেয়নি। সুইডেন তার জনগণের রায় চাইলে সুইডিশরা ‘না’ বলেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল, তাদের দেশের মুদ্রানীতি যদি এমন একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে তুলে দেওয়া হয়, যারা একনিষ্ঠভাবে শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ে কাজ করে, তাহলে তাদের দেশে বেকারত্ব বাড়বে (আর সেটা হলে আর্থিক স্থিতিশীলতায় যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা হবে না)। আর এতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, ইউরোজোনের অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক মডেল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ক্ষমতা সম্পর্কের ভিত্তিতে, যার কারণে শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
আর এটা তো সত্য, ইউরোজোন এই সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক করার ১৬ বছর পর আমরা গণতন্ত্রহীনতা দেখছি। অনেক ইউরোপীয় নেতাই গ্রিসের বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসের পতন দেখতে চান। সর্বোপরি, যে রাজনীতি সারা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই অসমতা বাড়িয়েছে, তার বিরোধিতা করে গ্রিসে এমন সরকার থাকলে তা এই রাজনীতির জন্য অস্বস্তিকরই বটে। গ্রিসের এই সরকার আবার সম্পদের অপরিসীম ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরতে চায়। মনে হয়, এই অগণতান্ত্রিক শক্তি এটা বিশ্বাস করে যে গ্রিসের বামপন্থী সরকারকে জনগণের ম্যান্ডেটবিরোধী চুক্তি করতে বাধ্য করে তারা তাকে গদি থেকে নামাতে পারবে।
গ্রিসের নাগরিকরা ৫ জুলাই কীভাবে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে তাঁদের উপদেশ দেওয়া কঠিন। কারণ, ট্রয়কার শর্ত মেনে নেওয়া বা না-নেওয়া কোনোটিই খুব সহজ ব্যাপার হবে না। তারা যা-ই করুক, উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি থাকবেই। তারা ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে দেশটি অনিঃশেষ মন্দার কবলে পড়বে। সেটা হলে দেশটি একদম নিঃস্ব হয়ে যাবে, যারা নিজেদের সব সম্পদ বিক্রি করে দিতে ও যাদের মেধাবী তরুণেরা দেশান্তরি হতে বাধ্য হবে, তাদের ঋণ তখন হয়তো মওকুফ হয়ে যাবে। হয়তো মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়ে গ্রিস শেষমেশ বিশ্বব্যাংকের সহায়তা পাবে। আগামী দশকে হয়তো এ রকম হবে বা তারও পরের দশকে সেটা হতে পারে।
অন্যদিকে, গ্রিকরা ‘না’ ভোট দিলে দেশটি অন্তত তার শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের নিয়তি নিজেই নির্ধারণ করার সুযোগ পাবে। সেটা হলে গ্রিস নিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ পাবে। সেটা হয়তো অতীতের মতো অত সমৃদ্ধিশালী হবে না, কিন্তু বর্তমানে যে অন্যায্য অত্যাচার তাদের সইতে হচ্ছে, তা থেকে তারা অন্তত রেহাই পাবে।
আমি জানি, এ পরিস্থিতিতে আমি কিসে ভোট দিতাম।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জোসেফ ই স্টিগলিৎজ: নোবেল বিজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ।
No comments