আদমজী জুট মিল থেকে আদমজী ইপিজেড- ৯ বছরে ১৬৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি
এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল
বন্ধের আজ মঙ্গলবার ১৩তম বছর। সেখানে গড়ে উঠেছে আদমজী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ
অঞ্চল (ইপিজেড)। এ ইপিজেডে এখন কাজ করছে ৪১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। ৩১২
মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে গত ৯ বছরে আদমজী ইপিজেড থেকে
বিদেশে রপ্তানি হয়েছে ১৬৪১.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। ২০০২ সালের ৩০শে
জুন চারদলীয় জোট সরকার অব্যাহত লোকসানের অজুহাতে নারায়ণগঞ্জের
সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আদমজী জুট মিলটি চিরতরে বন্ধ করে দেয়। এতে
তাৎক্ষণিক প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা বেকার হয়ে পড়ে।
মিলটি বেপজার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এবং ২০০৬ সালের ৬ই মার্চ আদমজী
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (আদমজী ইপিজেড) যাত্রা শুরু হয়।
সূত্রমতে, ২৪৫.১২ একর জমির ওপর আদমজী ইপিজেড (এইপিজেড) স্থাপিত হয়েছে। এ ইপিজেডের মোট প্লটের সংখ্যা ২২৯টি। ইতিমধ্যে ৬০টি দেশী-বিদেশী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে দেশী মালিকানাধীন ১৮টি, বিদেশী মালিকানাধীন ২৬টি এবং যৌথ মালিকানাধীন ১৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ১০টি প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। বর্তমানে ৪৫টি কারখানা চালু রয়েছে। প্রতিটি প্লটের আয়তন ২ হাজার বর্গ মিটার। কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান ১০ এর অধিকও প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এসব কারখানায় গার্মেন্ট, জিপার, কার্টন, হ্যাঙ্গার, লেভেল, ট্যাগ, জুতা, সোয়েটার, টেক্সটাইল, মুজা, জুয়েলারি, পলি ও ডায়িংসহ ইত্যাদি পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। যা ১০০ ভাগ রপ্তানিযোগ্য। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে ৪১ হাজার শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। এর মধ্যে ২৩১ জন বিদেশী কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন। এ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা হয়েছে ৩১২ মিলিয়ন মার্কিন ডালার। হংকং, কানাডা, জাপান, রোমানিয়া, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, ইউইএ, আমেরিকা, থ্যাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইউক্রেন, দক্ষিণ কোরিয়া, কুয়েত, পর্তুগাল, চীন ও মরিশাসসহ বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ এই ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছে। আদমজী ইপিজেড থেকে ২০১৪-২০১৫ (মে-১৫) ৪২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৬৪১.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়।
পেছনের কথা: তৎকালীন পাকিস্তানের ২২ পরিবারের অন্যতম ধনাঢ্য আদমজী পরিবারের তিন ভাই ওয়াহেদ আদমজী ওরফে দাউদ আদমজী, জাকারিয়া আদমজী ও গুল মোহাম্মদ যৌথভাবে ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ২৯৪ দশমিক ৮৮ একর জমি নিয়ে আদমজী জুট মিলস নির্মাণ করেন। ১৯৫১ সালের ১২ই ডিসেম্বর ১৭০০ হেসিয়ান ও ১০০০ সেকিং লুম দিয়ে এই মিলের উৎপাদন শুরু হয়। তখন প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত আদমজী জুটমিলে প্রতিদিন গড়ে ২৮৮ টন পাটের চট উৎপাদন করা হতো। তখন মিলে ৩ হাজার ৩০০টি তাঁতকল বসানো হয়। ওই সময় মিলের উৎপাদন থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো। আদমজীর চটের ব্যাগ ও বস্তার একটি অংশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হতো। ৪ নাম্বার মিলে তৈরি উন্নতমানের ব্রডলুম, জিও নামে পাটজাত পণ্য পুরোটাই বিদেশে রপ্তানি হতো। ৫নং মিলে (এবিসি) তৈরি হতো লেমিনেটেড পলি ব্যাগ। ৬নং মিলটি ছিল ওয়ার্কশপ। শুরুতে প্রায় ১০০ টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হলেও ধীরে ধীরে তা বেড়ে আড়াই শ’ টনে উন্নীত হয়। ওই সময় মিলটিতে ২৪ হাজার ৯১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক চাকরি করতেন।
মিল কম্পাউন্ডের মধ্যে ছিল আদমজী হাইস্কুল, আদমজী গার্লস হাইস্কুল, আদমজী শ্রমিক কল্যাণ হাইস্কুল এবং আদমজী ইসলামীয়া সিনিয়র মাদরাসা। এ ছাড়াও মিল কম্পাউন্ডে ছিল খাজা মইনুদ্দিন হাফেজি মাদরাসা, হিলফুল ফুজল কওমি মাদরাসা, আশ্রাফুল উলুম নূরানী মক্তব, মুক্তিযোদ্ধা প্র্রাইমারি স্কুল এবং পথকলি শিশু কল্যাণ প্রাইমারি স্কুল। এর মধ্যে চালু রয়েছে শুধু পথকলি শিশু কল্যাণ প্রাইমারি স্কুলটি। আর ভবন হিসেবে টিকে আছে আদমজী হাইস্কুল ভবনটি। যা এখন ব্যবহার হচ্ছে র্যবে’র ক্যাম্প হিসেবে। এ ছাড়া পুরানো আর কোন প্রতিষ্ঠানেরই অস্তিত্ব নেই।
১৯৫১ সালে আদমজী জুট মিল স্থাপিত হয় এবং ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আদমজী হাইস্কুল। শিক্ষকদের দাবি ছিল, আদমজী শুধু চটের বস্তা তৈরিরই জায়গা ছিল না, এখান থেকে তৈরি হয়েছে মেধাবী শিক্ষার্থীও। ১৯৮০ সালে আদমজী হাইস্কুলের এক ছাত্র উচ্চ-মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগে ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান দখল করে। ১৯৯৬ সালে এসএসসি’তে মানবিক বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করে আরেক ছাত্র এবং ২০০০ সালে একই বিভাগের এক শিক্ষার্থী অর্জন করেন তৃতীয় স্থান। কিন্তু মিল বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে এতসব অর্জনেরও ইতিহাস।
সূত্রমতে, ২৪৫.১২ একর জমির ওপর আদমজী ইপিজেড (এইপিজেড) স্থাপিত হয়েছে। এ ইপিজেডের মোট প্লটের সংখ্যা ২২৯টি। ইতিমধ্যে ৬০টি দেশী-বিদেশী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে দেশী মালিকানাধীন ১৮টি, বিদেশী মালিকানাধীন ২৬টি এবং যৌথ মালিকানাধীন ১৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ১০টি প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। বর্তমানে ৪৫টি কারখানা চালু রয়েছে। প্রতিটি প্লটের আয়তন ২ হাজার বর্গ মিটার। কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান ১০ এর অধিকও প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এসব কারখানায় গার্মেন্ট, জিপার, কার্টন, হ্যাঙ্গার, লেভেল, ট্যাগ, জুতা, সোয়েটার, টেক্সটাইল, মুজা, জুয়েলারি, পলি ও ডায়িংসহ ইত্যাদি পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। যা ১০০ ভাগ রপ্তানিযোগ্য। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে ৪১ হাজার শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। এর মধ্যে ২৩১ জন বিদেশী কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন। এ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা হয়েছে ৩১২ মিলিয়ন মার্কিন ডালার। হংকং, কানাডা, জাপান, রোমানিয়া, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, ইউইএ, আমেরিকা, থ্যাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইউক্রেন, দক্ষিণ কোরিয়া, কুয়েত, পর্তুগাল, চীন ও মরিশাসসহ বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ এই ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছে। আদমজী ইপিজেড থেকে ২০১৪-২০১৫ (মে-১৫) ৪২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৬৪১.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়।
পেছনের কথা: তৎকালীন পাকিস্তানের ২২ পরিবারের অন্যতম ধনাঢ্য আদমজী পরিবারের তিন ভাই ওয়াহেদ আদমজী ওরফে দাউদ আদমজী, জাকারিয়া আদমজী ও গুল মোহাম্মদ যৌথভাবে ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ২৯৪ দশমিক ৮৮ একর জমি নিয়ে আদমজী জুট মিলস নির্মাণ করেন। ১৯৫১ সালের ১২ই ডিসেম্বর ১৭০০ হেসিয়ান ও ১০০০ সেকিং লুম দিয়ে এই মিলের উৎপাদন শুরু হয়। তখন প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত আদমজী জুটমিলে প্রতিদিন গড়ে ২৮৮ টন পাটের চট উৎপাদন করা হতো। তখন মিলে ৩ হাজার ৩০০টি তাঁতকল বসানো হয়। ওই সময় মিলের উৎপাদন থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো। আদমজীর চটের ব্যাগ ও বস্তার একটি অংশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হতো। ৪ নাম্বার মিলে তৈরি উন্নতমানের ব্রডলুম, জিও নামে পাটজাত পণ্য পুরোটাই বিদেশে রপ্তানি হতো। ৫নং মিলে (এবিসি) তৈরি হতো লেমিনেটেড পলি ব্যাগ। ৬নং মিলটি ছিল ওয়ার্কশপ। শুরুতে প্রায় ১০০ টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হলেও ধীরে ধীরে তা বেড়ে আড়াই শ’ টনে উন্নীত হয়। ওই সময় মিলটিতে ২৪ হাজার ৯১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক চাকরি করতেন।
মিল কম্পাউন্ডের মধ্যে ছিল আদমজী হাইস্কুল, আদমজী গার্লস হাইস্কুল, আদমজী শ্রমিক কল্যাণ হাইস্কুল এবং আদমজী ইসলামীয়া সিনিয়র মাদরাসা। এ ছাড়াও মিল কম্পাউন্ডে ছিল খাজা মইনুদ্দিন হাফেজি মাদরাসা, হিলফুল ফুজল কওমি মাদরাসা, আশ্রাফুল উলুম নূরানী মক্তব, মুক্তিযোদ্ধা প্র্রাইমারি স্কুল এবং পথকলি শিশু কল্যাণ প্রাইমারি স্কুল। এর মধ্যে চালু রয়েছে শুধু পথকলি শিশু কল্যাণ প্রাইমারি স্কুলটি। আর ভবন হিসেবে টিকে আছে আদমজী হাইস্কুল ভবনটি। যা এখন ব্যবহার হচ্ছে র্যবে’র ক্যাম্প হিসেবে। এ ছাড়া পুরানো আর কোন প্রতিষ্ঠানেরই অস্তিত্ব নেই।
১৯৫১ সালে আদমজী জুট মিল স্থাপিত হয় এবং ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আদমজী হাইস্কুল। শিক্ষকদের দাবি ছিল, আদমজী শুধু চটের বস্তা তৈরিরই জায়গা ছিল না, এখান থেকে তৈরি হয়েছে মেধাবী শিক্ষার্থীও। ১৯৮০ সালে আদমজী হাইস্কুলের এক ছাত্র উচ্চ-মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগে ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান দখল করে। ১৯৯৬ সালে এসএসসি’তে মানবিক বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করে আরেক ছাত্র এবং ২০০০ সালে একই বিভাগের এক শিক্ষার্থী অর্জন করেন তৃতীয় স্থান। কিন্তু মিল বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে এতসব অর্জনেরও ইতিহাস।
No comments