দুই কোটি মানুষ এখনো নিরাপদ পানি পায় না -এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন by পার্থ শঙ্কর সাহা
সুপেয় পানির ক্ষেত্রে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জিত হলেও দেশের ২ কোটি ৮ লাখ মানুষ এখনো নিরাপদ পানি পায় না। আর্সেনিক ও লবণাক্ততা বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত করছে। স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও এ খাতে এমডিজি পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ।
পানি ও স্যানিটেশন খাতে দেশের এই চিত্র উঠে এসেছে এমডিজি নিয়ে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদন জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম (জেএমপি) প্রতিবেদন নামে পরিচিত। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে এটি প্রকাশ করা হয়।
‘স্যানিটেশন ও সুপেয় পানি খাতে অগ্রগতি: এমডিজি মূল্যায়ন ২০১৫’ শীর্ষক জেএমপির এই প্রতিবেদনে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর পানি ও স্যানিটেশন খাতে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে ব্যবহার করা সব তথ্যই সরকারগুলোর সম্মতিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের এমডিজির লক্ষ্য ছিল ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ১৩ শতাংশ মানুষ এখনো অনিরাপদ উৎস থেকে পানি পান করে। ১৯৯০ সালে এই হার ছিল ২৬ শতাংশ। জেএমপির এবারের প্রতিবেদনে আর্সেনিক ও লবণাক্ততার ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
পানি ও স্যানিটেশনের দায়িত্বে আছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রায় দুই কোটি মানুষ নিরাপদ উৎস থেকে পানি পায় না—জেএমপির প্রতিবেদনের এই তথ্য মেনে নিতে নারাজ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোত্থেকে তথ্য নিয়ে তারা এসব করেছে তা জানি না।’ জেএমপির তথ্য সরকারের সম্মতিতে পাওয়া—এ কথা জানালে তিনি বলেন, ‘আমাদের উপকূলের কিছু জায়গায় সমস্যা আছে। সেখানে তো বিকল্প উৎসের ব্যবস্থা করেছি। আবার আর্সেনিক-প্রবণ এলাকায় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই এত মানুষ অনিরাপদ পানি খায়, তা মেনে নিতে পারছি না।’
জেএমপির প্রতিবেদনে স্যানিটেশন খাতে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। তবে এই অঞ্চলের নেপাল, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ১৯৯০ সালের তুলনায় খোলা জায়গায় মলত্যাগের প্রবণতা এই তিন দেশে ৩০ শতাংশের বেশি কমেছে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের ৩৪ শতাংশ লোক উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ করত। এখন মাত্র ১ শতাংশ মানুষ তা করে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় কোনো মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে না। তালিকায় এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
এই সাফল্য সত্ত্বেও স্যানিটেশন খাতে বাংলাদেশ এমডিজির লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। ওই লক্ষ্য অনুসারে এ বছরের মধ্যে ৬৬ শতাংশ মানুষের জন্য উন্নত ল্যাট্রিনের (পায়খানা) ব্যবস্থা করার কথা ছিল। জেএমপির প্রতিবেদন অনুসারে, এখন বাংলাদেশের ৬১ শতাংশ মানুষ উন্নত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৮ শতাংশ মানুষ এখনো অনুন্নত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। আর একাধিক পরিবার একই ল্যাট্রিন ব্যবহার করে, এমন মানুষের সংখ্যা ১০ শতাংশ। জেএমপির মানদণ্ড অনুযায়ী, কয়েকটি পরিবারের একই ল্যাট্রিন ব্যবহার করা মানসম্পন্ন স্যানিটেশন নয়।
পানি ও স্যানিটেশন বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এই দুই খাতে কিছু অর্জন হওয়ায় সরকারের মধ্যে আত্মতুষ্টিতে ভোগার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। আর দিন দিন তাই এই দুই খাতে বরাদ্দও কমছে। বেসরকারি সংস্থা এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের হিসাব অনুযায়ী, পানি ও স্যানিটেশনে ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ আর এবার রাখা হয়েছে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এবারের বাজেট বক্তৃতায় পানি ও স্যানিটেশন খাতে সরকারের নীতি কী হবে, তা নিয়ে কোনো বক্তব্যই নেই। এর আগের ছয়টি বক্তৃতাতে এই দুই খাত নিয়ে বক্তব্য ছিল। তবে অতিরঞ্জিত তথ্যও ছিল। যেমন ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ স্যানিটারি (স্বাস্থ্যসম্মত) ল্যাট্রিন ব্যবহার করে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইডের বাংলাদেশীয় প্রধান খায়রুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত সন্তোষজনক তথ্য দেওয়া হয়। সেই কারণে এবারের বাজেট বক্তৃতায় পানি ও স্যানিটেশন ক্ষেত্রটির উল্লেখই নেই। তিনি বলেন, সরকারি স্তরে ভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান দেওয়ার কারণে তাতে বিভ্রান্ত দাতা সংস্থাগুলো এই দুই খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার।
পানি ও স্যানিটেশন খাতে দেশের এই চিত্র উঠে এসেছে এমডিজি নিয়ে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদন জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম (জেএমপি) প্রতিবেদন নামে পরিচিত। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে এটি প্রকাশ করা হয়।
‘স্যানিটেশন ও সুপেয় পানি খাতে অগ্রগতি: এমডিজি মূল্যায়ন ২০১৫’ শীর্ষক জেএমপির এই প্রতিবেদনে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর পানি ও স্যানিটেশন খাতে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে ব্যবহার করা সব তথ্যই সরকারগুলোর সম্মতিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের এমডিজির লক্ষ্য ছিল ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ১৩ শতাংশ মানুষ এখনো অনিরাপদ উৎস থেকে পানি পান করে। ১৯৯০ সালে এই হার ছিল ২৬ শতাংশ। জেএমপির এবারের প্রতিবেদনে আর্সেনিক ও লবণাক্ততার ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
পানি ও স্যানিটেশনের দায়িত্বে আছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রায় দুই কোটি মানুষ নিরাপদ উৎস থেকে পানি পায় না—জেএমপির প্রতিবেদনের এই তথ্য মেনে নিতে নারাজ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোত্থেকে তথ্য নিয়ে তারা এসব করেছে তা জানি না।’ জেএমপির তথ্য সরকারের সম্মতিতে পাওয়া—এ কথা জানালে তিনি বলেন, ‘আমাদের উপকূলের কিছু জায়গায় সমস্যা আছে। সেখানে তো বিকল্প উৎসের ব্যবস্থা করেছি। আবার আর্সেনিক-প্রবণ এলাকায় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই এত মানুষ অনিরাপদ পানি খায়, তা মেনে নিতে পারছি না।’
জেএমপির প্রতিবেদনে স্যানিটেশন খাতে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। তবে এই অঞ্চলের নেপাল, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ১৯৯০ সালের তুলনায় খোলা জায়গায় মলত্যাগের প্রবণতা এই তিন দেশে ৩০ শতাংশের বেশি কমেছে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের ৩৪ শতাংশ লোক উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ করত। এখন মাত্র ১ শতাংশ মানুষ তা করে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় কোনো মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে না। তালিকায় এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
এই সাফল্য সত্ত্বেও স্যানিটেশন খাতে বাংলাদেশ এমডিজির লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। ওই লক্ষ্য অনুসারে এ বছরের মধ্যে ৬৬ শতাংশ মানুষের জন্য উন্নত ল্যাট্রিনের (পায়খানা) ব্যবস্থা করার কথা ছিল। জেএমপির প্রতিবেদন অনুসারে, এখন বাংলাদেশের ৬১ শতাংশ মানুষ উন্নত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৮ শতাংশ মানুষ এখনো অনুন্নত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। আর একাধিক পরিবার একই ল্যাট্রিন ব্যবহার করে, এমন মানুষের সংখ্যা ১০ শতাংশ। জেএমপির মানদণ্ড অনুযায়ী, কয়েকটি পরিবারের একই ল্যাট্রিন ব্যবহার করা মানসম্পন্ন স্যানিটেশন নয়।
পানি ও স্যানিটেশন বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এই দুই খাতে কিছু অর্জন হওয়ায় সরকারের মধ্যে আত্মতুষ্টিতে ভোগার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। আর দিন দিন তাই এই দুই খাতে বরাদ্দও কমছে। বেসরকারি সংস্থা এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের হিসাব অনুযায়ী, পানি ও স্যানিটেশনে ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ আর এবার রাখা হয়েছে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এবারের বাজেট বক্তৃতায় পানি ও স্যানিটেশন খাতে সরকারের নীতি কী হবে, তা নিয়ে কোনো বক্তব্যই নেই। এর আগের ছয়টি বক্তৃতাতে এই দুই খাত নিয়ে বক্তব্য ছিল। তবে অতিরঞ্জিত তথ্যও ছিল। যেমন ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ স্যানিটারি (স্বাস্থ্যসম্মত) ল্যাট্রিন ব্যবহার করে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইডের বাংলাদেশীয় প্রধান খায়রুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত সন্তোষজনক তথ্য দেওয়া হয়। সেই কারণে এবারের বাজেট বক্তৃতায় পানি ও স্যানিটেশন ক্ষেত্রটির উল্লেখই নেই। তিনি বলেন, সরকারি স্তরে ভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান দেওয়ার কারণে তাতে বিভ্রান্ত দাতা সংস্থাগুলো এই দুই খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার।
No comments