ভুলে গলদঘর্ম একাদশে ভর্তিচ্ছুরা- গার্লস কলেজে ছেলের মনোনয়ন
খাদিজা
ইউসুফ বিনতে ইভা। দিনাজপুর থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য
অনলাইনে রাজধানীর ৫টি কলেজে আবেদন করে। রোববার ফল প্রকাশের পর দেখতে পায়
তার পছন্দের প্রথম কলেজ শহীদ লে. কর্নেল আনোয়ার গার্লস কলেজে মনোনীত করা
হয়েছে। কিন্তু সে কোন কোটাধারীও নয়। কোটায় সে আবেদনও করেনি। বিষয়টি সমাধান
করতে ভর্তিচ্ছুর বড় ভাই যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ গতকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও
কলেজ পরিদর্শকের কাছে গিয়ে কোন সুরাহা পাননি। বোর্ড তাকে দ্বিতীয়
মেধাতালিকার জন্য অপেক্ষা করতে বলেছে। না হয় রিলিজ স্লিপ নিয়ে অন্য কোন
কলেজে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এদিকে আনোয়ার গার্লস কলেজ অধ্যক্ষ
তাকে সাফ জানিয়েছেন, কোটায় ভর্তি হতে হলে কোটার কাগজপত্র দেখাতে হবে।
যাকারিয়া জানান, এ খবর জানার পর তার বোন খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একই
রেজাল্ট করে তার সহপাঠীরা ধানমন্ডি আইডিয়াল, সিটি কলেজসহ নামীদামি কলেজে
মনোনীত হয়েছে।
রাজীব আহমেদ। রাজধানী শান্তিনগর একটি স্কুল থেকে পাস করার পর ৫টি কলেজ আবেদন করে। রোববার প্রকাশিত ফলে তাকে কোন কলেজেই ভর্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত করা হয়নি। উল্টো তাকে একটি মহিলা কলেজে মনোনীত করা হয়েছে। এ খবর শোনার পর বোর্ডের চেয়ারম্যানের রুমে এক ধরনের হাস্যরস তৈরি হয়। মহসিন ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.৭২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। স্মাট সিস্টেমে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য রাজধানীর ৪টি এবং ফেনীর সরকারি কলেজকে পছন্দের তালিকায় দেয়। কিন্তু ভর্তির ফল দেখে সে রীতিমতো হতবাক। তাকে ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার আবদুল জব্বার ডিগ্রি কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত করা হয়েছে। অথচ এ কলেজ সে আবেদনেই করেনি।
শুধু ইভা, রাজীব কিংবা মহসিন নয়- এ রকম হাজার হাজার ভুল ও অভিযোগের পাহাড় জমেছে ঢাকা বোর্ডে। রোববার ফল প্রকাশের পর থেকেই ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কলেজ পরিদর্শকের রুমের এ রকম সমস্যায় পড়া ভর্তিচ্ছুদের দীর্ঘলাইন। নানা অভিযোগ নিয়ে ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকরা ভিড় জমাচ্ছেন বোর্ডে। গতকাল বোর্ড চেয়ারম্যানের রুমের সামনে গিয়ে দেখা যায় পা ফেলানোর জায়গা নেই। বোর্ড চেয়ারম্যানও একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব কাজ বাদ দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান বা পরামর্শ দিতে ব্যস্ত। এ বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যেসব সমস্যা নিয়ে আসছেন, সবই সমাধানযোগ্য। কিন্তু সেটি করতে একটু সময় লাগবে। আমি যাকে যেভাবে পারছি পরামর্শ দিচ্ছি। কোথায় গেলে সমাধান পাবেন সেটি বলে দিচ্ছি। কিন্তু তারা মানতে চাচ্ছে না। কী করবো বলেন। সবাই তো আমাদের সন্তান। এদের কলেজে ভর্তির করানো দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু এবার নতুন একটি পদ্ধতি চালু হওয়ার কারণে বেশ জটিলতায় পড়েছি।
শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তির সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সাব সমন্বয় কমিটি কোন মনিটরিং সেল গঠন করেনি। তবে ১৫ই জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার জারি করার একাদশ শ্রেণীর ভর্তির জরুরি নির্দেশনায় বলা হয়, ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ৬টি, মাদরাসা বোর্ডে ৩টি এবং কারিগরি বোর্ডের জন্য ১টি নম্বরে ফোন করার জন্য বলা হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এ ১০টি নম্বরে কোন দিন ফোন করে কাউকে পাওয়া যায়নি। কখনও এসব নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
ভর্তিতে এ মহাভুল নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চলছে হিসাবনিকাশ। গতকাল রাজধানী অফিসার্স ক্লাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আয়োজনের ইফতার মাহফিলে শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের মুখে মুখে ছিল ভর্তিতে বিড়ম্বনার বিষয়টি। দিন দিন ভর্তির এ বিড়ম্বনা আরও বাড়বে বলে ঢাকা বোর্ডের সচিবকে বলতে শোনা যায়। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও সচিব এ বিষয়টি এড়িয়ে যান। সাংবাদিকদের অপেক্ষমাণ রেখে দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে যান শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান।
ভর্তিতে বিড়ম্বনায় পড়া শিক্ষার্থীরা জানায়, আগামীকাল প্রথম তালিকায় ভর্তির জন্য মনোনীতদের ভর্তির শেষদিন। কিন্তু আমাদের যে সমস্যা তার কোন সমাধান বোর্ড করে দিতে পারছে না। বোর্ড বলছে, দ্বিতীয় মেধাতালিকায় আমাদের সমস্যা সমাধান করে দেবে। ভর্তিচ্ছুরা জানান, প্রথম তালিকায় প্রায় সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে মনোনীত করা হয়েছে। ফলে দ্বিতীয় তালিকায় ভাল কলেজগুলোতে আর আসন ফাঁকা থাকবে না। ফলে আমরা যারা জিপিএ-৫ কিংবা এর কাছাকাছি রেজাল্ট করেছি প্রথম সারির কলেজ তো দূরে থাক তৃতীয় বা চতুর্থ সারির কলেজের স্থান হবে না।
তবে এ অভিযোগ মানতে রাজি নন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি মানবজমিনকে বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার যথাযথ যোগ্যতার কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, ভর্তিচ্ছুরা যেসব অভিযোগ নিয়ে আসছে এর বেশির ভাগই নিজেদের ভুলের কারণে। তারপর আমরা বলছি ওদের সমস্যার সমাধান করে দেবো।
ভোগান্তির নেপথ্যে যারা: স্মাট ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না ভর্তিচ্ছুদের। আবেদন থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ, সর্বশেষ ভর্তি হওয়ার কোন জায়গায় ভোগান্তি ছাড়ছে না শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। আবেদন করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী দেখে তারা আবেদন করার আগেই অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করে ফেলেছে। বোর্ড বিষয়টি তদন্ত করে দেখে দেশের কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এ ভর্তি প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ২৩টি বেশি কলেজকে শোকজ দেয়া হয়। সতর্ক করার ডজনখানে প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিতদের তথ্য সংশোধন করে আবার আবেদন করার জন্য প্রথমে ১৫ই জুন, পর সেটি বাড়িয়ে ২০শে জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। এ ছাড়া টেলিটকে টাকা পাঠানো, সার্ভারে প্রবেশ করতে না পারা ইত্যাদি সমস্যার কারণে আবেদনের সময় ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১শে জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর ফল প্রকাশ করতে গিয়ে চরম বিপত্তিতে পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৫ দফার সময় বাড়িয়ে ২১শে জুনের পরিবর্তে ফল প্রকাশ করা হয় ২৮শে জুন গভীর রাতে। ফল প্রকাশের পর ভুল-ত্রুটিসহ নানা ধরনের অভিযোগ আসতে থাকে। এ ছাড়া ট্রান্সক্রিপ্টে বড় ধরনের ভুল হওয়ার কারণে ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণ সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে ঢাকা বোর্ড। এ নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে ভর্তিচ্ছুদের। তবে বোর্ড বলছে, অনলাইন থেকে প্রিন্ট করা ট্রান্সক্রিপ্ট দিয়ে আপাতত ভর্তির কার্যত্রুম চালানো যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব ভোগান্তির পুরোটার জন্য দায়ী দুজন ব্যক্তি। একজন মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী আমলা। অন্যজন ঢাকা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুরুল কবির। তাদের একগুঁয়েমির কারণে আজকের এ ভোগান্তি।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সব কলেজে নতুন এ পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবের মধ্যে ছিল ব্যাপক মতানৈক্য। বিষয়টি এখন এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে দুজনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ চেয়েছিলেন সর্বনিম্ন ৩০০ শিক্ষার্থী পড়ায় এমন কলেজকে অনলাইনের অধীনে আনতে। একাধিক বৈঠকের এ ধররেন সিদ্ধান্তই বহাল ছিল। কিন্তু শিক্ষা সচিব হঠাৎ করে সারা দেশে ৮ হাজার ৮৮১টি সব কলেজকে নতুন এ পদ্ধতির অধীনে আনেন। মন্ত্রীর অসম্মতির পরও শিক্ষা সচিব এ কাজ করেছেন। সচিবের গোয়ার্তুমির কারণেই আজ লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ছাড়া ট্রান্সক্রিপ্টসহ বোর্ডের অধিকাংশ বিড়ম্বনার পেছনে বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুুরুল কবির জড়িত। তার নিজস্ব আইটি ফার্ম দিয়ে কাজ করানোর জন্য জেএসসি ফরম পূরণে বারবার ঝামেলায় পড়তে হয়েছে বোর্ডকে। সর্বশেষ ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণে কম্পিউটার শাখার প্রোগ্রামিংয়ের কারণে বিতরণ করার প্রায় ২ লাখ ট্রান্সক্রিপ্ট মহাভুল ধরা পড়ে। বাকি প্রায় দেড় ট্রান্সক্রিপ্টে একই ধরনের ভুল ছিল বলে জানা গেছে। ২৫শে জুন বিতরণ বন্ধ করার পর গতকাল পর্যন্ত ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণ বন্ধ রয়েছে।
তবে ভর্তির সার্বিক ভুলের দায়-দায়িত্ব শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তিনি সোমবার সাংবাদিকদের জানান, ভর্তি নিয়ে সৃষ্ট সব সমস্যার দায়দায়িত্ব আমার নিজের। আমার পরিকল্পনাতেই অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়াটি হচ্ছে। ভুল-ভ্রান্তি যা আছে এর সব দায় আমার উপর বর্তাবে।
সরকারের সিদ্ধান্তে অনলাইন ও এসএমএসের মধ্যে কলেজে ভর্তির ঘোষণা এলেও এসএসসি পাস করা প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী আবেদনই করতে পারেনি। নির্ধারিত ১৬ দিনে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে প্রায় ১১ লাখ ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী। এদের মধ্য থেকে মনোনীত হয়েছেন ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৪ শিক্ষার্থী।
রাজীব আহমেদ। রাজধানী শান্তিনগর একটি স্কুল থেকে পাস করার পর ৫টি কলেজ আবেদন করে। রোববার প্রকাশিত ফলে তাকে কোন কলেজেই ভর্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত করা হয়নি। উল্টো তাকে একটি মহিলা কলেজে মনোনীত করা হয়েছে। এ খবর শোনার পর বোর্ডের চেয়ারম্যানের রুমে এক ধরনের হাস্যরস তৈরি হয়। মহসিন ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.৭২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। স্মাট সিস্টেমে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য রাজধানীর ৪টি এবং ফেনীর সরকারি কলেজকে পছন্দের তালিকায় দেয়। কিন্তু ভর্তির ফল দেখে সে রীতিমতো হতবাক। তাকে ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার আবদুল জব্বার ডিগ্রি কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত করা হয়েছে। অথচ এ কলেজ সে আবেদনেই করেনি।
শুধু ইভা, রাজীব কিংবা মহসিন নয়- এ রকম হাজার হাজার ভুল ও অভিযোগের পাহাড় জমেছে ঢাকা বোর্ডে। রোববার ফল প্রকাশের পর থেকেই ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কলেজ পরিদর্শকের রুমের এ রকম সমস্যায় পড়া ভর্তিচ্ছুদের দীর্ঘলাইন। নানা অভিযোগ নিয়ে ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকরা ভিড় জমাচ্ছেন বোর্ডে। গতকাল বোর্ড চেয়ারম্যানের রুমের সামনে গিয়ে দেখা যায় পা ফেলানোর জায়গা নেই। বোর্ড চেয়ারম্যানও একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব কাজ বাদ দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান বা পরামর্শ দিতে ব্যস্ত। এ বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যেসব সমস্যা নিয়ে আসছেন, সবই সমাধানযোগ্য। কিন্তু সেটি করতে একটু সময় লাগবে। আমি যাকে যেভাবে পারছি পরামর্শ দিচ্ছি। কোথায় গেলে সমাধান পাবেন সেটি বলে দিচ্ছি। কিন্তু তারা মানতে চাচ্ছে না। কী করবো বলেন। সবাই তো আমাদের সন্তান। এদের কলেজে ভর্তির করানো দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু এবার নতুন একটি পদ্ধতি চালু হওয়ার কারণে বেশ জটিলতায় পড়েছি।
শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তির সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সাব সমন্বয় কমিটি কোন মনিটরিং সেল গঠন করেনি। তবে ১৫ই জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার জারি করার একাদশ শ্রেণীর ভর্তির জরুরি নির্দেশনায় বলা হয়, ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ৬টি, মাদরাসা বোর্ডে ৩টি এবং কারিগরি বোর্ডের জন্য ১টি নম্বরে ফোন করার জন্য বলা হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এ ১০টি নম্বরে কোন দিন ফোন করে কাউকে পাওয়া যায়নি। কখনও এসব নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
ভর্তিতে এ মহাভুল নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চলছে হিসাবনিকাশ। গতকাল রাজধানী অফিসার্স ক্লাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আয়োজনের ইফতার মাহফিলে শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের মুখে মুখে ছিল ভর্তিতে বিড়ম্বনার বিষয়টি। দিন দিন ভর্তির এ বিড়ম্বনা আরও বাড়বে বলে ঢাকা বোর্ডের সচিবকে বলতে শোনা যায়। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও সচিব এ বিষয়টি এড়িয়ে যান। সাংবাদিকদের অপেক্ষমাণ রেখে দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে যান শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান।
ভর্তিতে বিড়ম্বনায় পড়া শিক্ষার্থীরা জানায়, আগামীকাল প্রথম তালিকায় ভর্তির জন্য মনোনীতদের ভর্তির শেষদিন। কিন্তু আমাদের যে সমস্যা তার কোন সমাধান বোর্ড করে দিতে পারছে না। বোর্ড বলছে, দ্বিতীয় মেধাতালিকায় আমাদের সমস্যা সমাধান করে দেবে। ভর্তিচ্ছুরা জানান, প্রথম তালিকায় প্রায় সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে মনোনীত করা হয়েছে। ফলে দ্বিতীয় তালিকায় ভাল কলেজগুলোতে আর আসন ফাঁকা থাকবে না। ফলে আমরা যারা জিপিএ-৫ কিংবা এর কাছাকাছি রেজাল্ট করেছি প্রথম সারির কলেজ তো দূরে থাক তৃতীয় বা চতুর্থ সারির কলেজের স্থান হবে না।
তবে এ অভিযোগ মানতে রাজি নন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি মানবজমিনকে বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার যথাযথ যোগ্যতার কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, ভর্তিচ্ছুরা যেসব অভিযোগ নিয়ে আসছে এর বেশির ভাগই নিজেদের ভুলের কারণে। তারপর আমরা বলছি ওদের সমস্যার সমাধান করে দেবো।
ভোগান্তির নেপথ্যে যারা: স্মাট ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না ভর্তিচ্ছুদের। আবেদন থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ, সর্বশেষ ভর্তি হওয়ার কোন জায়গায় ভোগান্তি ছাড়ছে না শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। আবেদন করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী দেখে তারা আবেদন করার আগেই অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করে ফেলেছে। বোর্ড বিষয়টি তদন্ত করে দেখে দেশের কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এ ভর্তি প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ২৩টি বেশি কলেজকে শোকজ দেয়া হয়। সতর্ক করার ডজনখানে প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিতদের তথ্য সংশোধন করে আবার আবেদন করার জন্য প্রথমে ১৫ই জুন, পর সেটি বাড়িয়ে ২০শে জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। এ ছাড়া টেলিটকে টাকা পাঠানো, সার্ভারে প্রবেশ করতে না পারা ইত্যাদি সমস্যার কারণে আবেদনের সময় ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১শে জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর ফল প্রকাশ করতে গিয়ে চরম বিপত্তিতে পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৫ দফার সময় বাড়িয়ে ২১শে জুনের পরিবর্তে ফল প্রকাশ করা হয় ২৮শে জুন গভীর রাতে। ফল প্রকাশের পর ভুল-ত্রুটিসহ নানা ধরনের অভিযোগ আসতে থাকে। এ ছাড়া ট্রান্সক্রিপ্টে বড় ধরনের ভুল হওয়ার কারণে ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণ সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে ঢাকা বোর্ড। এ নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে ভর্তিচ্ছুদের। তবে বোর্ড বলছে, অনলাইন থেকে প্রিন্ট করা ট্রান্সক্রিপ্ট দিয়ে আপাতত ভর্তির কার্যত্রুম চালানো যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব ভোগান্তির পুরোটার জন্য দায়ী দুজন ব্যক্তি। একজন মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী আমলা। অন্যজন ঢাকা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুরুল কবির। তাদের একগুঁয়েমির কারণে আজকের এ ভোগান্তি।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সব কলেজে নতুন এ পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবের মধ্যে ছিল ব্যাপক মতানৈক্য। বিষয়টি এখন এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে দুজনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ চেয়েছিলেন সর্বনিম্ন ৩০০ শিক্ষার্থী পড়ায় এমন কলেজকে অনলাইনের অধীনে আনতে। একাধিক বৈঠকের এ ধররেন সিদ্ধান্তই বহাল ছিল। কিন্তু শিক্ষা সচিব হঠাৎ করে সারা দেশে ৮ হাজার ৮৮১টি সব কলেজকে নতুন এ পদ্ধতির অধীনে আনেন। মন্ত্রীর অসম্মতির পরও শিক্ষা সচিব এ কাজ করেছেন। সচিবের গোয়ার্তুমির কারণেই আজ লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ছাড়া ট্রান্সক্রিপ্টসহ বোর্ডের অধিকাংশ বিড়ম্বনার পেছনে বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুুরুল কবির জড়িত। তার নিজস্ব আইটি ফার্ম দিয়ে কাজ করানোর জন্য জেএসসি ফরম পূরণে বারবার ঝামেলায় পড়তে হয়েছে বোর্ডকে। সর্বশেষ ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণে কম্পিউটার শাখার প্রোগ্রামিংয়ের কারণে বিতরণ করার প্রায় ২ লাখ ট্রান্সক্রিপ্ট মহাভুল ধরা পড়ে। বাকি প্রায় দেড় ট্রান্সক্রিপ্টে একই ধরনের ভুল ছিল বলে জানা গেছে। ২৫শে জুন বিতরণ বন্ধ করার পর গতকাল পর্যন্ত ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণ বন্ধ রয়েছে।
তবে ভর্তির সার্বিক ভুলের দায়-দায়িত্ব শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তিনি সোমবার সাংবাদিকদের জানান, ভর্তি নিয়ে সৃষ্ট সব সমস্যার দায়দায়িত্ব আমার নিজের। আমার পরিকল্পনাতেই অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়াটি হচ্ছে। ভুল-ভ্রান্তি যা আছে এর সব দায় আমার উপর বর্তাবে।
সরকারের সিদ্ধান্তে অনলাইন ও এসএমএসের মধ্যে কলেজে ভর্তির ঘোষণা এলেও এসএসসি পাস করা প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী আবেদনই করতে পারেনি। নির্ধারিত ১৬ দিনে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে প্রায় ১১ লাখ ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী। এদের মধ্য থেকে মনোনীত হয়েছেন ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৪ শিক্ষার্থী।
No comments