দৃপ্তি চাষা এক সংগ্রামের নাম by শানু মোস্তাফিজ
রোদে
পোড়া শরীর আর পরনের মলিন সাদা থান দেখেই মনে হয়, দৃপ্তি চাষার (৫৪) জীবনটা
অন্য চা শ্রমিকদের চেয়ে বেশিই সংগ্রামের। কথা বলার সময় তার হিসাব-নিকাশ
দেখে মনে হয়, নেতৃত্বের গুণেই তিনি পাতি সর্দারনি হয়েছেন। প্রায় ১০ বছর ধরে
তিনি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার জুড়ি ভ্যালির কাপনাপাহাড় চা
বাগানে পাতি সর্দারনি (স্থায়ী) হিসেবে কাজ করছেন। থাকেন ওই বাগানের
টিলাবাড়ি লেবার লাইনে। দৃপ্তি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা চাষা সম্প্রদায়ের মানুষ।
খুব কম চা বাগানে পাতি সর্দারনি পদে স্থায়ীভাবে কাজ করেন নারীরা। দুই-চারজন থাকলেও তা অস্থায়ী ভিত্তিতে বলে জানা যায়। কিন্তু দৃপ্তি এই স্বল্পসংখ্যক নারী সর্দারনির মধ্যে একজন। তিনি বলেন, 'প্রায় ৩০ বছর ধরে এই বাগানে পাতা তোলার কাজ করেছি। এর পর আমার আচরণ, কাজ ও দক্ষতা দেখে কর্তৃপক্ষ আমাকে এ কাজের সুযোগ দেয়।' দৃপ্তি না বললেও বোঝা যায় বিষয়টি তত সহজ নয়। কেননা, চা বাগানগুলোতে নারীদের নেতৃত্বমূলক বা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কাজ করতে দেখা যায় না। খানিকটা সাহস করেই তিনি আরও বলেন, 'বাগানে মেয়েদের জন্য ভালো কিছু করা তত সহজ নয়। এখন অনেক মেয়েই পড়ালেখা শিখছে। বাগানে পড়ালেখা জানা মেয়ের সংখ্যাও অনেক। তারা চাইলেও বাগানের অফিস কিংবা কারখানায় কাজ করার সুযোগ পায় না।'
দারিদ্র্য এবং কাছাকাছি স্কুল না থাকার কারণে দৃপ্তির পড়ালেখা করার সুযোগ হয়নি। তবে বাগানে কাজ করতে এসে তিনি নাম দস্তখত করা শিখেছেন। ১৮ বছর বয়সে একজন চা শ্রমিকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ছোট ছোট চার ছেলেমেয়ে রেখে প্রায় ৩০ বছর আগে তার স্বামী যক্ষ্মা রোগে মারা যান। সে সময় তার কোনো সম্বল ছিল না। তার একার রোজগারে একটি মেয়ে, একটি শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেসহ তিন ছেলে নিয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। দিনের পর দিন তারা খেয়ে-না খেয়ে থেকেছেন। তখন মজুরিও কম ছিল। তাই সন্তানদের নিয়ে টিকে থাকার জন্য দৃপ্তিকে অনেক খাটতে হয়েছে। কষ্ট করে সেসব দিন পার করলেও এখনও তার সংসারে সচ্ছলতা আসেনি। তিনি বলেন, 'আমি এখন মাসে ২৩শ' টাকা বেতন পাই। কিন্তুু খরচ হয় এর চেয়ে অনেক বেশি। ছেলেরা বড় হয়েছে। তাদের আলাদা ঘর প্রয়োজন। দিতে পারছি না। ঋণ করে চলতে হয়। জিনিসপত্রের দামও বেশি। আমি কাজ অনুযায়ী বেতন পাই না।'
ওই বাগানে দৃপ্তি ছাড়া আরও একজন পাতি সর্দারনি অস্থায়ীভাবে কাজ করছেন। কিন্তু দৃপ্তির কাজ বেশি। তিনি প্রতিদিন প্রায় ২০০ পাত্তিওয়ালির দেখাশোনা করেন। তাদের পাতা তোলার জন্য চা গাছের লাইন (পাহি) ভাগ করে দেন। প্রত্যেকের কাছে গিয়ে তদারকি করেন। পাত্তিওয়ালিদের মধ্যে কোনো ধরনের ঝামেলা হলে মিটমাট করেন। তারা ঠিকভাবে পাতা তোলেন কিনা সেটা খেয়াল রাখেন। তাদের অসুখ-বিসুখ, সুবিধা-অসুবিধাও তিনি দেখে থাকেন।
দৃপ্তির নিজের অসুবিধাও কম নয়। তার মজবুত কর্মক্ষম শরীর দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। সচেতন বলে ডাক্তারের পরামর্শে তিনি নিয়মিত ওষুধ খান। সুস্থ থাকার চেষ্টা করেন। চা বাগানের নারীদের মধ্যে এই সচেতনতাও বিরল। তিনি বলেন, 'শুধু কাজ নয়, জীবনটাকেও সুন্দরভাবে সাজানো প্রয়োজন। তাই সন্তানদের বলি, বেশি সন্তান নেওয়ার কারণে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তোমরা বুঝে-শুনে সংসার গঠন কর।' দৃপ্তির এ কথাই প্রমাণ করে_ শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, ব্যক্তিজীবনেও নেতৃত্বের প্রয়োজন, যা জীবনকে অনেক সহজ ও সুন্দর করতে সাহায্য করে।
খুব কম চা বাগানে পাতি সর্দারনি পদে স্থায়ীভাবে কাজ করেন নারীরা। দুই-চারজন থাকলেও তা অস্থায়ী ভিত্তিতে বলে জানা যায়। কিন্তু দৃপ্তি এই স্বল্পসংখ্যক নারী সর্দারনির মধ্যে একজন। তিনি বলেন, 'প্রায় ৩০ বছর ধরে এই বাগানে পাতা তোলার কাজ করেছি। এর পর আমার আচরণ, কাজ ও দক্ষতা দেখে কর্তৃপক্ষ আমাকে এ কাজের সুযোগ দেয়।' দৃপ্তি না বললেও বোঝা যায় বিষয়টি তত সহজ নয়। কেননা, চা বাগানগুলোতে নারীদের নেতৃত্বমূলক বা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কাজ করতে দেখা যায় না। খানিকটা সাহস করেই তিনি আরও বলেন, 'বাগানে মেয়েদের জন্য ভালো কিছু করা তত সহজ নয়। এখন অনেক মেয়েই পড়ালেখা শিখছে। বাগানে পড়ালেখা জানা মেয়ের সংখ্যাও অনেক। তারা চাইলেও বাগানের অফিস কিংবা কারখানায় কাজ করার সুযোগ পায় না।'
দারিদ্র্য এবং কাছাকাছি স্কুল না থাকার কারণে দৃপ্তির পড়ালেখা করার সুযোগ হয়নি। তবে বাগানে কাজ করতে এসে তিনি নাম দস্তখত করা শিখেছেন। ১৮ বছর বয়সে একজন চা শ্রমিকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ছোট ছোট চার ছেলেমেয়ে রেখে প্রায় ৩০ বছর আগে তার স্বামী যক্ষ্মা রোগে মারা যান। সে সময় তার কোনো সম্বল ছিল না। তার একার রোজগারে একটি মেয়ে, একটি শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেসহ তিন ছেলে নিয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। দিনের পর দিন তারা খেয়ে-না খেয়ে থেকেছেন। তখন মজুরিও কম ছিল। তাই সন্তানদের নিয়ে টিকে থাকার জন্য দৃপ্তিকে অনেক খাটতে হয়েছে। কষ্ট করে সেসব দিন পার করলেও এখনও তার সংসারে সচ্ছলতা আসেনি। তিনি বলেন, 'আমি এখন মাসে ২৩শ' টাকা বেতন পাই। কিন্তুু খরচ হয় এর চেয়ে অনেক বেশি। ছেলেরা বড় হয়েছে। তাদের আলাদা ঘর প্রয়োজন। দিতে পারছি না। ঋণ করে চলতে হয়। জিনিসপত্রের দামও বেশি। আমি কাজ অনুযায়ী বেতন পাই না।'
ওই বাগানে দৃপ্তি ছাড়া আরও একজন পাতি সর্দারনি অস্থায়ীভাবে কাজ করছেন। কিন্তু দৃপ্তির কাজ বেশি। তিনি প্রতিদিন প্রায় ২০০ পাত্তিওয়ালির দেখাশোনা করেন। তাদের পাতা তোলার জন্য চা গাছের লাইন (পাহি) ভাগ করে দেন। প্রত্যেকের কাছে গিয়ে তদারকি করেন। পাত্তিওয়ালিদের মধ্যে কোনো ধরনের ঝামেলা হলে মিটমাট করেন। তারা ঠিকভাবে পাতা তোলেন কিনা সেটা খেয়াল রাখেন। তাদের অসুখ-বিসুখ, সুবিধা-অসুবিধাও তিনি দেখে থাকেন।
দৃপ্তির নিজের অসুবিধাও কম নয়। তার মজবুত কর্মক্ষম শরীর দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। সচেতন বলে ডাক্তারের পরামর্শে তিনি নিয়মিত ওষুধ খান। সুস্থ থাকার চেষ্টা করেন। চা বাগানের নারীদের মধ্যে এই সচেতনতাও বিরল। তিনি বলেন, 'শুধু কাজ নয়, জীবনটাকেও সুন্দরভাবে সাজানো প্রয়োজন। তাই সন্তানদের বলি, বেশি সন্তান নেওয়ার কারণে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তোমরা বুঝে-শুনে সংসার গঠন কর।' দৃপ্তির এ কথাই প্রমাণ করে_ শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, ব্যক্তিজীবনেও নেতৃত্বের প্রয়োজন, যা জীবনকে অনেক সহজ ও সুন্দর করতে সাহায্য করে।
No comments