মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করুন by সলিল ত্রিপাঠি
ঢাকার
রাজপথে অভিজিৎ রায়ের ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড এটাই উন্মোচন করল যে, বাংলাদেশে
নিজেকে মুক্তভাবে প্রকাশ করা লেখকদের জন্য কতটা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অজ্ঞাত আততায়ীরা অভিজিৎ ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপর চাপাতি দিয়ে
নির্বিচারে হামলা চালায়। দু'জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
অভিজিতের মৃত্যু হয় অনতিবিলম্বে, রাফিদা এখনও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
অভিজিৎ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন সাহসী ব্লগার। তার ব্লগের নাম মুক্তমনা, সেখানে তিনি ধর্মীয় মৌলবাদ নিয়ে লিখতেন। সেই ওয়েবসাইটে এখন লেখা রয়েছে_ 'আমরা শোকাহত কিন্তু আমরা অপরাজিত'। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কারণে তিনি নিজের দেশের ধর্মীয় মৌলবাদীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড ইথিক্যাল ইউনিয়ন (আইএইচইইউ) দেখাচ্ছে, গত বছর এক উগ্রপন্থি লিখেছেন_ 'অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকেন, ফলে তাকে এখনই হত্যা করা সম্ভব নয়। যখন ফিরে আসবে, হত্যার শিকার হবে'। তিনি নিজেও এসব হুমকির ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। হুমকিগুলো তার বিপক্ষ মতের লোকজনের চূড়ান্ত অসহিষ্ণুতার নজির ছিল। তিনি কিছু হুমকির কথা আইএইচইইউকে জানিয়েছিলেন। কোনো কোনো হুমকি ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হতো; কিছু হুমকি অভিজিতের বই সরবরাহকারী একটি অনলাইন বুকস্টোরে পাঠানো হয়েছিল। বুকস্টোরটি তার বই রাখা বন্ধ করেছিল।
অভিজিৎই প্রথম লেখক নন, যার ওপর এভাবে হামলা করা হলো। ঠিক ১১ বছর আগে, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে অভিজিতের মতো করেই কোপানো হয়েছিল। তিনিও বইমেলা থেকে ফিরছিলেন। অধ্যাপক আজাদ হামলার পর বেঁচে গিয়েছিলেন; কিন্তু ওই বছরেরই শেষ দিকে জার্মানিতে এক বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মসূচিতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মারা যান। ২০০৯ সালে আজাদের পরিবার এর তদন্ত দাবি করেছিল। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়। তিনি গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থক ছিলেন। ওই মঞ্চের মাধ্যমে হাজার হাজার বাংলাদেশি অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাচ্ছিল। রাজীবের মতো অভিজিৎও অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। অভিযুক্তদের অধিকাংশই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে থাকা জামায়াতে ইসলামীর নেতা এবং সাবেক বিএনপি জোট সরকারের শরিক।
এসব হামলা ক্ষোভসঞ্চারী। বাংলাদেশের সরকারের, বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যখন নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে, উচিত হচ্ছে লেখকদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার সুরক্ষা করা। কিন্তু তার বদলে তারা মৌলবাদীদের তোষণের নীতি নিয়েছে। একই সঙ্গে, সরকার যখন মৌলবাদ মোকাবেলার দাবি করছে, তখন উদারপন্থি ব্লগারদের ঔপনিবেশিক আমলের আইনে বিচারের মুখোমুখি করছে। কিছু ব্লগার এখন নিরাপদ বোধ করছেন না এবং বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সামান্য যে ক'জন দেশে ফিরতে চান, তাদের জন্য অভিজিৎ রায় ভয়ঙ্কর পরিণতির নজির হিসেবে থাকলেন।
অভিজিতের প্রাণ হারানো তার পরিবারের জন্য অপূরণীয়। তাদের দেশ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের ভূমি, বাংলাদেশেরও চরম ক্ষতি হলো। এটা এমন একটি দেশে পরিণত হচ্ছে, যেখানে আততায়ীরা সাহস পাবে এবং নির্বিচার তৎপর থাকবে; অন্যদিকে লেখকদের বাধ্য করা হবে দেখেশুনে মত প্রকাশে। তাদের চিন্তা-ভাবনা মগজের কারাগারেই বন্দি রাখতে।
স 'দ্য কর্নেল হু উড নট রিপেন্ট : দ্য বাংলাদেশ ওয়ার অ্যান্ড ইটস ইউনিক লিগ্যাসি' গ্রন্থের লেখক এবং ইংলিশ পিইএনের সাবেক বোর্ড মেম্বার; সংস্থাটির ওয়েবসাইট থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তরিত
অভিজিৎ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন সাহসী ব্লগার। তার ব্লগের নাম মুক্তমনা, সেখানে তিনি ধর্মীয় মৌলবাদ নিয়ে লিখতেন। সেই ওয়েবসাইটে এখন লেখা রয়েছে_ 'আমরা শোকাহত কিন্তু আমরা অপরাজিত'। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কারণে তিনি নিজের দেশের ধর্মীয় মৌলবাদীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড ইথিক্যাল ইউনিয়ন (আইএইচইইউ) দেখাচ্ছে, গত বছর এক উগ্রপন্থি লিখেছেন_ 'অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকেন, ফলে তাকে এখনই হত্যা করা সম্ভব নয়। যখন ফিরে আসবে, হত্যার শিকার হবে'। তিনি নিজেও এসব হুমকির ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। হুমকিগুলো তার বিপক্ষ মতের লোকজনের চূড়ান্ত অসহিষ্ণুতার নজির ছিল। তিনি কিছু হুমকির কথা আইএইচইইউকে জানিয়েছিলেন। কোনো কোনো হুমকি ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হতো; কিছু হুমকি অভিজিতের বই সরবরাহকারী একটি অনলাইন বুকস্টোরে পাঠানো হয়েছিল। বুকস্টোরটি তার বই রাখা বন্ধ করেছিল।
অভিজিৎই প্রথম লেখক নন, যার ওপর এভাবে হামলা করা হলো। ঠিক ১১ বছর আগে, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে অভিজিতের মতো করেই কোপানো হয়েছিল। তিনিও বইমেলা থেকে ফিরছিলেন। অধ্যাপক আজাদ হামলার পর বেঁচে গিয়েছিলেন; কিন্তু ওই বছরেরই শেষ দিকে জার্মানিতে এক বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মসূচিতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মারা যান। ২০০৯ সালে আজাদের পরিবার এর তদন্ত দাবি করেছিল। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়। তিনি গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থক ছিলেন। ওই মঞ্চের মাধ্যমে হাজার হাজার বাংলাদেশি অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাচ্ছিল। রাজীবের মতো অভিজিৎও অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। অভিযুক্তদের অধিকাংশই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে থাকা জামায়াতে ইসলামীর নেতা এবং সাবেক বিএনপি জোট সরকারের শরিক।
এসব হামলা ক্ষোভসঞ্চারী। বাংলাদেশের সরকারের, বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যখন নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে, উচিত হচ্ছে লেখকদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার সুরক্ষা করা। কিন্তু তার বদলে তারা মৌলবাদীদের তোষণের নীতি নিয়েছে। একই সঙ্গে, সরকার যখন মৌলবাদ মোকাবেলার দাবি করছে, তখন উদারপন্থি ব্লগারদের ঔপনিবেশিক আমলের আইনে বিচারের মুখোমুখি করছে। কিছু ব্লগার এখন নিরাপদ বোধ করছেন না এবং বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সামান্য যে ক'জন দেশে ফিরতে চান, তাদের জন্য অভিজিৎ রায় ভয়ঙ্কর পরিণতির নজির হিসেবে থাকলেন।
অভিজিতের প্রাণ হারানো তার পরিবারের জন্য অপূরণীয়। তাদের দেশ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের ভূমি, বাংলাদেশেরও চরম ক্ষতি হলো। এটা এমন একটি দেশে পরিণত হচ্ছে, যেখানে আততায়ীরা সাহস পাবে এবং নির্বিচার তৎপর থাকবে; অন্যদিকে লেখকদের বাধ্য করা হবে দেখেশুনে মত প্রকাশে। তাদের চিন্তা-ভাবনা মগজের কারাগারেই বন্দি রাখতে।
স 'দ্য কর্নেল হু উড নট রিপেন্ট : দ্য বাংলাদেশ ওয়ার অ্যান্ড ইটস ইউনিক লিগ্যাসি' গ্রন্থের লেখক এবং ইংলিশ পিইএনের সাবেক বোর্ড মেম্বার; সংস্থাটির ওয়েবসাইট থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তরিত
No comments