সীমান্তে হত্যা- অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য
সীমান্তে
বাংলাদেশি হত্যা বন্ধে ভারতের দিলি্লর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অঙ্গীকার যে কতবার
ব্যক্ত হয়েছে তার হিসাব রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। সামান্য অপরাধে কিংবা
নিতান্তই সন্দেহবশত অনেক নিরীহ মানুষ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে চলেছেন।
কিন্তু অবস্থা যেন রবীন্দ্রনাথের 'প্রশ্ন' কবিতার মতো_ 'প্রতিকারহীন
শক্তের অপরাধে/বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে'। ভারতের তরফে বারবার বলা
হচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণ 'জিরোতে নামিয়ে আনা হবে'। কিন্তু কোনো
প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাসেই কাজ হচ্ছে না। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর
থেকে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসের ১ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত বেনাপোল সীমান্ত
এলাকায় ৪ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে।
তাদের নির্যাতনে আহত হয়েছেন আরও অন্তত পাঁচজন। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের হাতে দুই বাংলাদেশি নাগরিক নিহত
হয়েছেন। তারা ভারত থেকে গরু আনতে গিয়েছিলেন, এমন দাবি সে দেশের
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে দিনাজপুরের বিরামপুরের
অচিন্তপুর সীমান্তে এক বাংলাদেশি কৃষক জমিতে বোরো ধান চাষের সময় গুলিবিদ্ধ
হয়ে মারা যান। তার লাশ নিয়ে গিয়েছিল বিএসএফ সদস্যরা। পরে পতাকা বৈঠক করে
লাশ ফেরত আনতে হয়। গত শুক্রবার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার খালিশাকোটাল
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ী। ২০১৪
সালে একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের হিসাবে বলা হয়েছে, এক বছরে সীমান্তে
বিএসএফের হাতে অন্তত ২৬ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। বছরের পর বছর এভাবে
ঘটছে অমানবিক ও অযৌক্তিক মৃত্যুর ঘটনা। বাংলাদেশ ও ভারত দুটি ঘনিষ্ঠ
প্রতিবেশী দেশ। দুই দেশের রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ভারতীয়
সীমান্তরক্ষী বাহিনী কেন তাহলে এ দেশের নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করবে?
অন্য দেশের ভূখণ্ডে কেউ এমনকি অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করলেও কিন্তু তাকে
গুলি করা যায় না। ভারতের সীমান্তরক্ষীদের এ বিষয়টি অজানা থাকার কথা নয়।
চাঞ্চল্যকর ফেলানী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে বিএসএফের এক
সদস্যের বিচার চলছে ভারতেই। সেখানে আন্তর্জাতিক আইন আলোচনায় আসছে বারবার।
কেউ আইন লঙ্ঘন করলে তাকে বিএসএফ গ্রেফতার করতে পারে কিংবা বাংলাদেশে ফেরত
পাঠাতে পারে। কিন্তু তার পরিবর্তে বারবার কেন এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটবে?
আমরা আশা করব, ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের বারবার প্রদত্ত আশ্বাস-অঙ্গীকার
রক্ষার জন্য ভারতের সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশিদের সঙ্গে সহিষ্ণু ও মানবিক
আচরণ করবে। এর ব্যত্যয় যখনই ঘটবে সেটা উপেক্ষা বা লঘু করে দেখা চলবে না।
বরং দোষীদের বিরুদ্ধে গ্রহণ করতে হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
No comments